পাক পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। নামাজ পড়ার আগে এবং পাক পবিত্র থাকার জন্য স্বয়ং আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) অজুর ওসিয়ত করে গেছেন। নামাজ পড়ার আগে অজু করতেই হবে। অজু ছাড়া নামাজ হবে না। অজু করার জন্য অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি তা জানতে হবে। আজকে আমরা সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে বলবো।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যার অজু করা নেই, তার নামাজ হবে না (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৯৮)। রাসুল (সাঃ) আরও বলেছেন যখন কোনো মুসলমান উত্তমরূপে অজু শেষ করে, এরপর মন লাগিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (মুসলিম)।
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি
আশা করি, আপনারা সকলেই জানেন অজু কি ও কীভাবে করতে হয়। তাই সেটা নিয়ে আলাদাভাবে বললাম না।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি দৈনিক অজু করে কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির শরীর থেকে জ্যোতি ছড়াতে থাকবে। নবীজী বলেছেন অজুকারী ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন তিনি চিনতে ভুল করবেন না। তাই তিনি বলেছেন যেসকল ব্যক্তি কিয়ামতের দিন হাত, পা ও চেহারার জ্যোতি বাড়াতে চায় তারা যেন অজু করে (বুখারী)। পবিত্র কোরআনে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সুরা মায়েদার আয়াত নং ০৬ এ নামাজ পড়ার আগে অজু করার আদেশ করেছেন।
অজুর ফরজ কয়টি তা রাসুল (সাঃ) ও তার সাহাবীরা নির্দিষ্ট করে বলেননি। তবে, অজু কীভাবে করতে হয় তা ওনারা ধাপে ধাপে বলে গিয়েছেন। নবীজীর উক্ত হাদিসগুলোকে ব্যাখ্যা করে বিজ্ঞ ফকীহগণ অজুর ফরজ ৪ টি বলেছেন। অজুর ৪ টি ফরজ হচ্ছে-
১. সমস্ত মুখমণ্ডল ভালোভাবে ধৌত করা
২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করা
৩. মাথা মাসেহ করা
৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা
সমস্ত মুখমণ্ডল ভালভাবে ধৌত করা
অজুর করার সময় দুই হাতে পানি নিয়ে সমস্ত মুখ মণ্ডল ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, মুখমণ্ডলের কোন অংশ যেন বাদ না যায়। পুরো মুখমণ্ডল যেন ভিজে। অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি এর পরবর্তী ধাপ দেখবো আমরা।
দুই হাত কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করা
মুখমণ্ডল পরিষ্কার করা হয়ে গেলে দুই হাত কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে ধৌত করতে হবে। নারী বা পুরুষ কোন প্রকার ঘড়ি কিংবা অন্য কিছু পরে থাকলে সম্ভব হলে তা খুলে ফেলতে হবে। কিংবা তা নাড়িয়ে নাড়িয়ে হাতদুটো পরিষ্কার করতে হবে। হাদিস মোতাবেক একবার, দু’বার এবং সর্বোচ্চ তিনবার হাত ধৌত করা যাবে।
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি | মাথা মাসেহ করা
রাসুল (সাঃ) দুই হাত ভিজিয়ে মাথা মাসেহ করতেন। মাসেহ করার সময় দুই হাতের আঙুল এক জায়গায় নিসে এসে সামনের দিকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত মাথা মাসেহ করতে হবে। ঘাড় পর্যন্ত মাথা মাসেহ করা হয়ে গেলে আবার সেখান থেকে শুরু করে সামনের দিকে মাসেহ করতে হবে। এভাবে একবার করতে হবে। এরপর হাতের শাহাদাত আঙুল দুটি ভিজিয়ে কানের ভাঁজে ঘোরাতে হবে।
দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা
দুই পায়ের টাখনু পর্যন্ত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এবং পায়ের আঙুলগুলোর মধ্যাংশে ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে পা দুটি ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এর মধ্যে দিয়ে অজু শেষ হলো। এখন নামাজ পড়ার নিয়মানুযায়ী শুদ্ধভাবে নামাজ পড়তে হবে।
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি | হাদিসের রেফারেন্স
অনেক ব্যক্তি অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি তা জানার পাশাপাশি হাদিসের রেফারেন্স জানতে চায়। সেজন্য উপরে যা যা বলা হয়েছে সেসবের রেফারেন্স দেওয়া হলো। আপনারা গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
- সহীহ বুখারি, হাদিস : ১৪২, ১৬৪ ও ১৮৫
- সহীহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৫, ২৩৬ ও ২৪৬
- সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১২১ ও ১২৩
- সহীহ আবূ দাউদ হাদিস: ১০০ ও ১০৭
প্রায়ই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন: মুখমণ্ডলের কতটুকু অংশ ধৌত করতে হবে?
উত্তর: কপালের উপরে অংশ থেকে নিচের অংশ এবং এক কানের গোড়া হতে অপর কানের গোড়া পর্যন্ত।
প্রশ্ন: মাথা কতটুকু মাসেহ করতে হবে?
উত্তর: অধিকাংশ ফকীহগণের মতে পুরো মাথা মাসেহ করতে হবে।
প্রশ্ন: অজুর তারতীব রক্ষা করাও কি ফরজ?
উত্তর: কিছু ফকীহগণের মতে অজুতে তারতীব রক্ষা করাটাও ফরজের অংশ। তারতীব অর্থাৎ, ক্রমান্বয়ে ধাপে ধাপে অজু করা।
প্রশ্ন: প্রত্যেকটি অঙ্গ কতবার করে ধুতে হবে?
উত্তর: প্রত্যেকটি অঙ্গ সর্বনিম্ন একবার এবং সর্বোচ্চ তিনবার ধৌত করা যাবে। এর বেশী করা যাবে না।
শেষ কথা
অজুর ফরজ কয়টি ও কি কি তা নবীজী নির্দিষ্ট করে বলেননি। অজু কীভাবে করতে হবে। কি কি নিয়ম পালন করতে হবে তা তিনি বলে গিয়েছেন। তবে বিজ্ঞ ফকীহগণ অজুর মধ্যে মুখ্য বিষয়গুলোকে অজুর ফরজ বলে উল্লেখ করেছেন। আমাদের উচিত নবীজীর দেখানো পথে অজু করা।
Discussion about this post