অদল বদল গল্পের প্রশ্ন উত্তর : পান্নালাল প্যাটেল (১৯১২-১৯৮৯) : গুজরাতি ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক পান্নালাল প্যাটেল রাজস্থানের দুঙ্গারপুরে জন্মগ্রহণ করেন। সাধারণ মানুষ আর গ্রামজীবন তার রচনায় প্রধান গুরুত্ব পেয়েছে। ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়েও তিনি বিশেষ পাণ্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন।
তার উল্লেখযোগ্য গল্পসংগ্রহ “সাচা সম্মান’, “জিন্দেগি কা খেল” “লাখ চোরাসি” “সুখ দুখনান সাথী, “কোই দেশি কোই পরদেশি’, “আসমানি নজর” প্রভৃতি সাহিত্যকীর্তির জন্য তিনি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পণ্ডিত রাম সুবর্চন্দ্রক এবং ১৯৮৫ খ্রিস্টান জ্ঞানগীঠ পুরস্কার লাভ করেন।
অদল বদল গল্পের প্রশ্ন উত্তর
বহু বিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১. যে-দিনের পড়ন্ত বিকেলের কাহিনি গল্পে তুলে ধরা হয়েছে, সেদিন ছিল
ক. দুর্গাপূজা
খ. হোলি
গ. বড়োদিন
ঘ. বুদ্ধপূর্ণিমা
২. গ্রামের একদল ছেলে কোন গাছের নীচে জড়ো হয়েছিল?
ক. নিমগাছ
খ. আমগাছ
গ. জামগাছ
ঘ. বটগাছ
৩. অমৃতের বয়স কত বছর?
ক. দশ বছর
খ. ন-বছর
গ. এগারো বছর
ঘ. বারো বছর
৪. অমৃত ও ইসাবের কোন জিনিসটি একই রকম?
ক. প্যান্ট
খ. জামা
গ. টুপি
ঘ. হাতঘড়ি
৫. অমৃত কুস্তি করলে কে তাকে ঠ্যাঙাবে?
ক. তার বাবা
খ. তার কাকা
গ. তার মা
ঘ. তার জ্যাঠা
৬. “এদের বাড়ি দুটোও মুখোমুখি।”—বাড়ি দুটি কোথায় ?
ক. গতির মোড়ে
খ. শহরের মাঝখানে
গ. রাস্তার মোড়ে
ঘ. মাঠের ধারে
৭. “দুই বন্ধুতে মিলে শান-বাঁধানো ফুটপাথে এসে বসতে…।”—দুই বন্ধু।
ক. কৃষাণ ও ইসাব
খ. কৃশানু ও ইসাব
গ. অমৃত ও ইসাব
ঘ. অমৃত ও বিমল
৮. ইসাবের মতো জামা না-পেলে অমৃত কোথায় যাবে না?
ক. মামার বাড়ি
খ. মাসির বাড়ি
গ. পিসির বাড়ি
ঘ. স্কুলে
৯. “এসো, আমরা কুস্তি লড়ি।”—এই কথাটি কার গলা জড়িয়ে ধরে বলা হয়েছিল?
ক. অমৃতের
খ. ইসাবের
গ. কালিয়ার
ঘ. পাঠানের
১০. “মেজাজ চড়ে গেল।”—কার?
ক. ইসাবের
খ. ইসাবের বাবার
গ. অমৃতের
ঘ. কালিয়ার
অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন
১. ‘অদল বদল’ গল্পটির লেখক কে?
উত্তরঃ ‘অদল বদল’ গল্পটির লেখক হলেন পান্নালাল প্যাটেল।
২. হোলির দিনের কোন্ সময়ের কথা গল্পে তুলে ধরেছেন লেখক?
উত্তরঃ হোলির দিনের পড়ন্ত বিকেলের কথা গল্পে তুলে ধরেছেন লেখক।
৩. নিমগাছের নীচে একদল ছেলে জড়ো হয়ে কী করছিল ?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পে নিমগাছের নীচে গায়ের একদল ছেলে জড়ো হয়ে ধুলো ছোড়াছুড়ি খেলছিল।
৪. হাত ধরাধরি করে কারা গ্রামের ছেলেদের কাছে এল ?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পে হাত ধরাধরি করে অমৃত ও ইসাব গ্রামের ছেলেদের কাছে এল।
৫. “সব দিক থেকেই একরকম।”—কী সবদিক থেকে একরকম?
উত্তরঃ ইসাব আর অমৃতের গায়ের জামার রং, মাপ ও কাপড় সবদিক থেকেই একরকম।
৬. অমৃতের বাড়িতে বাবা-মা ও অমৃত ছাড়া আর কে আছে?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পে অমৃতের বাড়িতে বাবা-মা ও অমৃত ছাড়া আর তিন ভাই রয়েছে।
৭. ইসাবের বাড়িতে ইসাব ছাড়া আর কে আছে?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবের বাড়িতে ইসাব ছাড়া আর তার বাবা আছে।
৮. ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে ইসাবের কী হয়েছে?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে গরিব চাষির ছেলে ইসাব ক্ষেতে কাজ করতে যায়, তাই তার জামা ছিড়ে যায়।
৯. অমৃত তার জামাটি কীভাবে ছিঁড়ে ফেলে?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পে অমৃতকে তার মা জামা দেয় না। তাই সে তার জামার একটা ছেড়া জায়গায় আঙুল ঢুকিয়ে আরও ছিড়ে ফেলে।
১০. অমৃত জামা পাওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত কী করতে রাজি ছিল?
উত্তরঃ পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পে দেখা যায়, জামা পাওয়ার জন্য অমৃত শেষ পর্যন্ত মার খেতেও রাজি হয়।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
১. “বলতে গেলে ছেলে দুটোর সবই একইরকম , তফাৎ শুধু এই যে,”— তফাতটা কী?
উত্তরঃ অমৃত ও ইসাবের মধ্যে সমস্ত বিষয়ে সাদৃশ্য সত্বেও তফাত ছিল এই যে, অমৃতের বাড়িতে আছে বাবা-মা আর তিন ভাই আর ইসাবের বাড়িতে শুধু তারা বাবা আছে।
২. “অমৃত ফতোয়া জারি করে দিল।” — অমৃত কী ‘ফতোয়া’ জারি করেছিল?
উত্তরঃ অমৃত ফতোয়া জারি করে জানিয়েছিল, ঠিক ইসাবের মতোই জামা তার চাই; তা নাহলে সে স্কুলে যাবে না।
৩. “অমৃত এতেও পিছপা হতে রাজি নয়।” — ‘এতেও’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তরঃ অমৃত ইসাবের মতো নতুন জামা কেনার জেদ ধরেছিল। তার জেদ দূর করতে অমৃতের মা জানিয়েছিল, ইসব নতুন জামা পাওয়ার আগে তার বাবার কাছে যেমন মার খেয়েছিল, অমৃত সেইরকম মার খেতে রাজি কি না। এ কথা শুনেও অমৃত পিছপা হয়নি।
৪. “এসো, আমরা কুস্তি লড়ি।” —কে, কাকে বলেছিল?
উত্তরঃ “অদল বদল” গদ্যাংশে হোলির দিনের বিকেল বেলায় নিম গাছের নীচে গ্রামের যে সমস্ত ছেলেরা ধুলো ছোড়াছুড়ি করে খেলেছিল, তাদের দল থেকে কালিয়া নামের একটি ছেলে হাত দিয়ে অমৃতের গলা জড়িয়ে উদ্ধৃতি উক্তিটি করেছিল।
৫. কালিয়া অমৃতকে কী করেছিল?
উত্তরঃ অমৃতের অনিচ্ছাসত্বেও কালিয়া তাকে খোলা মাঠে এনে কুস্তি লড়ার নামে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিল।
৬. “ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল।” — তারা কী কারণে ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল?
উত্তরঃ অনেক কষ্ট করে ইসাবের বাবা নতুন জামা দিয়েছিলেন, আর সেই জামা প্রথম দিনেই ইসাব ছিড়ে ফেলেছে, তা দেখামাত্র ইসাবের বাবা তাকে খুব মারবেন — সেই ভয়ে ওরা অর্থাৎ অমৃত ও ইসাব কাঠ হয়ে গিয়েছিল।
৭. “হটাৎ অমৃতের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল,” —বুদ্ধির পরিচয় দাও।
উত্তরঃ কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে গিয়েছিল। ইসাবের বাবা জানতে পারলে প্রহার ছিল অবধারিত। কিন্তু অমৃত আর ইসাবের জামা যেহেতু একরকম তাই অমৃত ইসাবের ছিঁড়ে যাওয়া জামা নিজে পরে ইসাবকে তার ভালো জামা পরিয়ে দেবে —এই ছিল বুদ্ধির পরিচয়।
৮. “আমার সঙ্গে আয়।” — অমৃত ইসাবকে এমন নির্দেশ দিল কেন?
উত্তরঃ কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে ইসাবের জামা ছিড়ে যাওয়ায় ইসাব তার বাবার কাছে মার খাবে এই আশঙ্কা ছিল। তাই অমৃত ইসাবের জামা নিজের জামার সঙ্গে বদল করবে বলেই তাকে নির্দেশ দিয়েছিল।
৯. ইসাব আর অমৃতের জামা অদলবদল -এর কাহিনীটি সবাইকে শুনিয়েছিল কে?
উত্তরঃ ইসাব আর অমৃতের জামা অদলবদল -এর কাহিনীটি সবাইকে শুনিয়েছিল ইসাবের বাবা হাসান।
১০. ‘অদল-বদলের গল্প’ গ্রাম প্রধানের কানে গেলে তিনি কী ঘোষণা করেছিলেন?
উত্তরঃ ‘অদল-বদলের গল্প’ গ্রাম প্রধানের কানে গেলে ঘোষণা করেছিলেন যে সেদিন থেকে তারা সকলে অমৃতকে অদল আর ইসাবকে বদল বলে ডাকবেন।
অদল বদল গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর
১. ‘অদল বদল ’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করাে ।
উত্তর: বিংশ শতাব্দীর লেখক পান্নালাল প্যাটেল গুজরাতি ভাষার অন্যতম সাহিত্য স্রষ্টা । তাঁর ‘ অদল বদল ’ ছােটো গল্পটির নামকরণ কতখানি সার্থকতায় উত্তীর্ণ তা আলােচনার পূর্বে বলে রাখা দরকার , সাহিত্যের নামকরণ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে করা হয়ে থাকে ।
কখনাে চরিত্রকেন্দ্রিক , কখনাে বিষয়কেন্দ্রিক , কখনাে ভাব ব্যঞ্জনাবাহী , কখনাে বা রূপক সাংকেতিকতার দিক থেকে এই নামকরণ করা হয়ে থাকে । আমাদের আলােচ্য ‘ অদল বদল ’ ছােটো গল্পটি কী ধরনের নামকরণ , কতখানি সার্থক তা প্রতিপাদন করার স্বার্থে বিষয়- এর অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যাক ।
আলােচ্য গল্পের ছােট্টো পরিসরে লেখক ইসাব ও অমৃতের বন্ধুপ্রীতি সৌভ্রাতৃত্ববােধকে সমুজ্জ্বল করে তুলেছেন । ইসাব ও অমৃত দুজনে দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের দুই সতীর্থ । দুজনের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্বের প্রগাঢ়তা ।ইসাব মাতৃহারা , বাবাকে নিয়ে তার পরিবার জীবন ।
অপরপক্ষে অমৃতের রয়েছে মা , বাবা ও তিন সহােদর বা ভাই । দুই পরিবার কৃষির উপর নির্ভরশীল । আর্থিক টানাপােড়নে সুদের জালে জড়িয়ে পড়তে হয় । ইসাব ও অমৃতের পােশাকের মধ্যেও রয়েছে মিল । একদিন ইসাবের জামা দেখে অমৃত বাবা মায়ের কাছ থেকে অনুরূপ একটি নতুন জামা বায়না করে বসে । বাবা মায়ের বকাঝকাকে উপেক্ষা করে সে শেষ পর্যন্ত নতুন জামা গায়ে চড়ায় ।
দুজনে মিলে নতুন জামা পরে ছেলেদের দলে গিয়ে হাজির হলে , অনিচ্ছা সত্ত্বেও অপরাপর বন্ধুর সাথে মারামারি ও ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়ে । এহেন পরিস্থিতিতে ইসাবের জামা ছিড়ে যায় । এমতাবস্থায় মাতৃহীন ইসাবকে বাবার শাসন থেকে রক্ষা করতে অমৃত নতুন পরিকল্পনা ফাঁদে । বাড়ির গলিতে বন্ধু ইসাবকে ডেকে নিয়ে যায় । নিজের গায়ের নতুন জামাটি খুলে ইসাবের গায়ে চড়িয়ে দিয়ে ইসাবের হেঁড়া জামাটি নিজের গায়ে চড়িয়ে নেয় এবং শান্তভাবে দুজনেই ঘরে ফিরে যায় ।
অমৃতের এহেন পরিকল্পনায়ই সব বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে
“ তাের কী হবে , তুই কী পরবি ? ”
অমৃত বলল ,
“ শিগগির কর , নয়তাে কেউ দেখে ফেলবে । আমি তােরটা পরব । ” ইসাব জামা খুলতে লাগল , যদিও অমৃত কী করতে চাইছে বুঝতে পারছিল না , বলল , “ জামা অদল বদল ? কিন্তু তাতে সুবিধাটা কী হবে , তােকে তাে তাের বাবা পিটোবে । ”
“ নিশ্চয় ঠ্যাঙ্গাবে , কিন্তু আমাকে বাঁচানাের জন্য তা আমার মা আছে । ” বন্ধুর প্রতি বন্ধুর এই প্রগাঢ় ভালােবাসা মাতৃহারা বন্ধুর মাতৃত্বের অভাববােধকে উপলব্ধি করার ফলশ্রুতিই জামা , অদল বদল ।
এই অদল বদলের ঘটনার মধ্যে রয়েছে গভীর ভাবব্যঞ্জনা । অবক্ষয়িত সমাজে জাতি হিংসার নাগপাশকে কাটিয়ে সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়ে উঠেছে দুই সম্প্রদায়ের দুই পরিবারের মধ্যে । অমৃতকে নিজের ছেলে বলে মনে করা , বাহালি বৌদিকে সজল ।
চোখে অমৃতের ক্রিয়াকাণ্ড বলার মধ্যে রয়েছে আন্তরিক পিতৃত্বের টান । যার মুখ্য বিষয় জামা অদল বদল । তাই বলা যায় নামকরণটি বিষয়কেন্দ্রিক নামকরণ হয়েও ভাবব্যঞ্জনাবাহী ও সার্থক ।
২. অদল বদল ছােটোগল্প হিসেবে কতটা সার্থক লাভ করেছে তা সংক্ষেপে আলােচনা করো ।
উত্তর: গুজরাতি ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক পান্নালাল প্যাটেলের ‘ অদল বদল ’ একটি অনবদ্য গল্প । গল্পটি আধুনিক ছােটোগল্প হিসেবে কতখানি সার্থক তা আলােচনার পূর্বে ছছাটোগল্প সম্পর্কে একটু অবগত হয়ে নেওয়া জরুরি । পাশ্চাত্য ছােটোগল্পের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে – “ A short story is a story that can be single sitting and single informing idea . ”
কিংবা Funk and wagnalls বলেছেন – “ A narrative prose story presenting a central theme or impression usually subordinated to single mood or character is ation . ”
আমাদের আলােচ্য অদল বদল ছােটোগল্পটি পাঠ করলে দেখা যায়- একটি মাত্র কাহিনিকে অবলম্বন করে গল্পের কায়া নির্মিত হয়েছে । তা হল ইসাব ও অমৃতের জামা অদল বদলের ঘটনা এবং অমৃতের আন্তরিক বন্ধুপ্রীতির উদারতা ।
গল্পটির সূচনা আকস্মিক ও নাটকীয় উৎকণ্ঠায় পূর্ণ ।
“ হােলির দিনের পড়ন্ত বিকেল । নিম গাছের নীচে গাঁয়ের একদল ছেলে জড়াে হয়ে ধুলাে ছােড়াছুড়ি করে খেলছিল । হাত ধরাধরি করে অমৃত ও ইসাব ওদের কাছে এল । ” আবার গল্পের সমাপ্তিতে রয়েছে অতৃপ্তির আকাঙ্খ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন । গল্পের আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত অমৃত ও ইসাবের বন্ধুত্ব , জামা অদল বদলের ব্যঞ্ছনাগর্ভ , উদারতা , ছােটোগল্পের একমুখীনতাকে নির্দেশ করে ।
এই গল্পের আয়তন ভাব ও ভাষা ছােটোগল্পের অনুকূল । দুই বন্ধু ইসাব ও অমৃত দুজনেই সতীর্থ , দুজনের পােশাক পরিচ্ছদেও রয়েছে সাদৃশ্য । অথছ দুজন দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের সন্তান । সাম্প্রদায়িক বিভেদ তাদের বন্ধুত্বের রজুপথ টানকে ছিন্ন করতে পারে না ।
দুই বন্ধু একই রকম পােশাক পরে খেলার মাঠে চিত্ত বিনােদনের জন্য হাজির হয় । অনিচ্ছাসত্ত্বেও মাঠের অন্যান্য ছেলের সঙ্গে তারা কুস্তিতে জড়িয়ে পড়ে । বন্ধু অমৃতের প্রতি কালিয়ার অভব্য আচরণ । ইসাবকে উত্তেজিত করলে ইসাব নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে কালিয়ার সঙ্গে সংগ্রামে কুস্তিতে জড়িয়ে পড়ে ।
শেষে ইসাবের ছেড়া জামা দেখে বন্ধু অমৃত বহুকষ্টে বাবা মায়ের কাছ থেকে আদায় করা নতুন জামাটি বন্ধুর গায়ে জড়িয়ে দেয় । ইসাব ইতস্তত বােধ করলে বন্ধু অমৃত যে উক্তি করেছে তাতে শাশ্বত বন্ধুত্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদার্থ মহিমা বিঘােষিত হয়ে পড়ে । “ অমৃত বলল , নিশ্চয় ঠ্যাঙ্গাবে , কিন্তু আমাকে বাঁচানাের জন্য তাে আমার মা আছে । ”
আবার ইসাবের বাবা পাঠানের অমৃতকে জড়িয়ে ধরার মধ্যে এবং তার আন্তরিক বাক্যালাপে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অমলিন ভাষ্যটি পাঠককে মুগ্ধ করে । “ চেঁচিয়ে বললেন , বাহালি বৌদি , আজ থেকে আপনার ছেলে আমার । ” বাহালি বৌদি ঘর থেকে বেরিয়ে স্নিগ্ধ হাসিতে যে কথাটি বলেছেন , তাতেও সম্প্রীতির বাতাবরণ অবক্ষয়িত সমাজের বিবেক
“ হাসান ভাই , আপনি এক ছেলেকেই দেখে উঠতে পারেন না , তা দুজনকে কী করে সামলাবেন ? ”
আবার আবেগভরা গলায় হাসানের উক্তি পাঠকের চোখেও জল এনে দেয় । বাহালি বৌদি , অমৃতের মতাে ছেলে পেলে । আমি একশ জনকেও পালন করতে রাজি আছি । ভাষার দিক থেকে গল্পটিকে সার্থক ছােটোগল্পের মর্যাদা দিতে কুণ্ঠা জাগে না । পরিশেষে বলা যায় , এই গল্পে কোনাে নীতিকথা উপদেশ নেই ।
চরিত্র বা ঘটনা খুবই সংক্ষিপ্ত । তবে ছােটোগল্পকার তার তৈরি ক্যানভাসে চরিত্রগুলিকে জীবন্ত করে তুলেছেন । ‘ ছোটো প্রাণ , ছােটো ব্যথা , ছােটো ছােটো দুঃখ কথা এই গল্পের মধ্যে সঞ্জীবিত রয়েছে ।
বর্ণনার অবকাশ থাকলেও লেখক সংযত পরিসরে মূল লক্ষ্যে উপনীত হয়েছেন । তাই বলা যায় ‘ অদল বদল একটি সার্থক ছােটোগল্প ।
৩. “ অদল বদল ’ গল্পে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে পরিচয় ফুটে উঠেছে তা আলােচনা করাে ।
উত্তর: বিংশ শতাব্দীর গুজরাতি ভাষার প্রসিদ্ধ লেখক পান্নালাল প্যাটেলের ‘ অদল বদল ‘ একটি অনবদ্য গল্প । এই গল্পের অভ্যন্তরে যেমন রয়েছে বন্ধুত্বের অমলিন আদর্শ , ঠিক তেমনিভাবে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাতাবরণ ।অবক্ষয়িত সমাজে মানবিকতার বড়ােই অভাব । সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ , জাতিগত বিদ্বেষ সমাজের কণ্ঠকে যখন রােধ করে চলেছে , তখন এহেন দৃষ্টান্ত পাঠককে আত্মদর্শনে উদ্বুদ্ধ করবে এটাই স্বাভাবিক ।
এই গল্পের মূল কায়া নির্মিত হয়েছে ইসাব ও তার বন্ধু অমৃতকে নিয়ে । দুজনেই সতীর্থ , দুজনেরই পরিবার পেশায় চাষি , দুজনের বাড়ি রাস্তার এপিঠ ওপিঠ , দুজনেরই পােশাক পরিচ্ছদ প্রায়ই একই ; আলাদার মধ্যে দুজন দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের সন্তান ।
দুজনের মধ্যে রয়েছে বন্ধুত্বের প্রগাঢ় টান , দুজনেই একসঙ্গে খেলাধুলা ও পড়াশােনা করে । অমৃত ইসাবের মতাে একটি একই জামা বাবা মায়ের কাছ থেকে বহু কষ্টে আদায় করে এবং সেই জামা পরে ইসাবকে সঙ্গে নিয়ে হােলি উৎসবের দিনে পড়ন্ত বিকেলে গাঁয়ের একটি খেলার মাঠের পাশে হাজির হয় । দুজনে মিলেই শান বাঁধানাে ফুটপাতে বসে থাকে ।
একটি ছেলে তাদেরকে কুস্তি করতে অনুপ্রাণিত করে । উভয়ে রাজি না হওয়ায় ছেলের দল থেকে একজন এসে তাদেরকে জোর করে মাঠে ধরে নিয়ে যায় । অমৃতের বাধা তােয়াক্কা না করে তাকে মাটিতে ছুঁড়ে দেয় ।
“ দেখ কালিয়া , আমি কুস্তি লড়তে চাই না , আমাকে ছেড়ে দে । ”
এমতাবস্থায় ইসাব নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তিতে লিপ্ত হয়ে পড়ে । কুস্তির শেষে যখন ইসাব ও অমৃত বাড়ির দিকে রওনা দেয় , এহেন মুহুর্তে অমৃতের চোখ পড়ে ইসাবের হেঁড়া জামার উপর । মাতৃহীন ইসাব ছিড়ে যাওয়া জামার জন্য পিতার হাতের প্রহার খেতে পারে । এই আশঙ্কায় নিজের গায়ের নতুন জামা ইসাবের গায়ে চড়িয়ে দিয়ে ইসাবের হেঁড়া জামা নিজের গায়ে চড়িয়ে নেয় । ইসাব হতচকিত হয়ে গেলে অমৃত স্পষ্টভাবে তাকে জানিয়ে দেয়
“ নিশ্চয় ঠ্যাঙ্গাবে , কিন্তু আমাকে বাঁচানাের জন্য তাে আমার মা আছে । ”
দুজনেই বাড়ি ফিরল , অমৃতের মা হেঁড়া রিপু করে দিল । হােলি উৎসবের দিনে এমনটি ঘটতে পারে তা ভেবে অমৃতকে রেহাই দিল ।অমৃত ও ইসাবের এহেন বন্ধুপ্রীতি ইসাবের বাবা হাসানের আত্মদর্শন ঘটায় ।
ইসাবের বাবা হাসান অমৃতকে জড়িয়ে ধরে এবং অমৃতের মাকে ডেকে বলেন – বাহালি বৌদি , আজ থেকে আপনার ছেলে আমার । ” হাসানের এহেন কথা শুনে হাসতে হাসতে বলেন – “ হাসান ভাই , আপনি এক ছেলেকেই দেখে উঠতে পারেন না , তা দুজনকে কী করে সামলাবেন ? ” হাসান আবেগ ভরা কণ্ঠে বলেন “ বাহালি বৌদি , অমৃতের মতাে ছেলে পেলে আমি একুশজনকেও পালন করতে রাজি আছি । ”
তারপর হাসান সজল চোখে সমস্ত ঘটনা সকলের সম্মুখে তুলে ধরেন । অমৃত ও ইসাবের এহেন ভালােবাসার কথা শুনে সকলের বুক ভরে যায় । পরিশেষে বলা যায় , ইসাব ও অমৃতের এহেন বন্ধুত্ব আজকের সমাজের অতি বিরল দৃষ্টান্ত । হাসানের সজল । চোখ বাহালি বৌদির স্নেহভরা মন্তব্য সাম্প্রদায়িকতার প্রাচীরকে ভেঙে আত্মিক সংযােগকে সুদৃঢ় করে ।
আরো দেখো: মাধ্যমিক বাংলা সম্পূর্ণ সাজেশন উত্তরসহ
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে অদল বদল গল্পের প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post