অন্ধবধূ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : সমাজ দৃষ্টিহীনদের অবজ্ঞা করে। দৃষ্টিহীনেরা নিজেরাও নিজেদের অসহায় ভাবে। কিন্তু ইন্দ্রিয়সচেতনতা দিয়ে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব। পায়ের নিচে নরম বস্তুর অস্তিত্ব, কোকিলের ডাক শুনে নতুন ঋতুর আগমন অনুমান করা, শ্যাওলায় পা রেখে নতুন সিঁড়ি জেগে ওঠার কথা বোঝা দৃষ্টিহীন হয়েও সম্ভবপর।
তাই দৃষ্টিহীন হলেই নিজেকে অসহায় না ভেবে, শুধুই ঘরের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে আপন অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করা প্রয়োজন। বধূটি চোখে দেখতে পায় না। কিন্তু অনুভবে সে জগতের রূপ-রস-গন্ধ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। কবিতাটিতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা সংবেদনশীল ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।
অন্ধবধূ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. অন্ধবধূর আকাশ-পাতাল মনে হয় কেন?
উত্তর: রাতে ফুলের মোহময় সুগন্ধে অন্ধবধূর আকাশ-পাতাল মনে হয়।
অন্ধবধূ একজন অনুভবঋদ্ধ মানুষ। সে অন্ধ হলেও অনুভবে প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয় উপলব্ধি করতে পারে। সেই উপলব্ধিতে তার মনে নানা প্রশ্ন, নানা শঙ্কা জাগে। আবেগ-অনুভূতি সবই তার অনুভবের জগৎকে ঘিরে। তার এই চিন্তার জগতে নতুন উদ্দীপনা জাগায় ফুলের মধুমদির সুগন্ধ। এই গন্ধেই তার আকাশ-পাতাল মনে হয়।
২. “দেখবি তখন- প্রবাস কেমন লাগে?”—অন্ধবধূ একথা বলেছে কেন?
উত্তর: স্বামীর প্রতি অভিমানে অন্ধবধূ আলোচ্য কথাটি বলেছে।
অন্ধবধূর স্বামী প্রবাসী। অন্ধবধূ তার জন্য দিনের পর দিন প্রতীক্ষায় থাকে। সে কোকিলের ডাক শুনে, দিঘির ঘাটের নতুন সিঁড়ির অনুভবে ঋতু বদল বুঝতে পারে। এভাবে ঋতুর পর ঋতু চলে গেলেও প্রবাসী স্বামী অন্ধবধূর সান্নিধ্যে আসেনি। বধূটি ভাবে সে মারা গেলে স্বামী নিশ্চয়ই দ্রুত ঘরে নতুন বউ আনবে। তখন প্রবাসের জীবন তার আর ভালো লাগবে না।
৩. অন্ধবধূ কীভাবে ঋতুর বিবর্তন জেনে নিতে চায়?
উত্তর: অন্ধবধূ তার ইন্দ্রিয়সচেতনতা দিয়ে ঋতুর বিবর্তন জেনে নিতে চায়।
অন্ধবধূ একজন ইন্দ্রিয়সচেতন মানুষ। সে অনুভবে জগতের রূপ-রস-গন্ধ সম্পর্কে জ্ঞান রাখে। তার সেই জ্ঞানের আলোকে কোকিলের ডাক শুনে সে বসন্তের আগমন বোঝে, দিঘির ঘাটে নতুন সিঁড়ি জাগায় গ্রীষ্মের আগমন বোঝে। এভাবেই গভীর ইন্দ্রিয়সচেতনতা ও জ্ঞান দিয়ে অন্ধবধূ ঋতুর বিবর্তন বুঝে নিতে চায়।
৪. দৃষ্টিহীনদের প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব কীভাবে? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ইন্দ্রিয়সচেতনতা দিয়ে দৃষ্টিহীনদের প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব।
দৃষ্টিহীনেরা নিজেদের অসহায় মনে করে। কিন্তু নিজেদের অসহায় মনে না করে নিজের অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করলে দৃষ্টিহীন হলেও প্রকৃতির বিভিন্ন বিষয় অনুভব করা যায়। প্রকৃতির সান্নিধ্যে থেকে জগতের রূপ-রস-গন্ধ সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়। আর এভাবে দৃষ্টিহীনেরা ইন্দ্রিয়সচেতনতা দিয়ে নিজেদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে পারে।
৫. অন্ধবধূ দিঘির জলে তলিয়ে গেলে মন্দ হতো না বলে কেন?
উত্তর: অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য অন্ধবধূ দিঘির জলে তলিয়ে গেলে মন্দ হতো না বলে।
অন্ধবধূ অন্ধত্বের কষ্ট গভীরভাবে অনুধাবন করে। সবাই অবজ্ঞা করে বলে নিজেকে সে বড় অসহায় মনে করে। তাই অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি খুঁজে পেতে চায়। পা পিছলিয়ে দিঘির জলে তলিয়ে গেলে মন্দ হতো না বলে সে মনে করে।
৬. “বাঁচবি তোরা-দাদা তো তোর আগে?”—অন্ধবধূ এ কথা বলেছে কেন?
উত্তর: অন্ধবধূ নিজেকে অসহায় এবং পরিবারের বোঝা মনে করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছে।
অন্ধবধূ তার পরিবারে নিগৃহীত। স্বামীর কাছ থেকে পায় অবজ্ঞা। অন্ধবধূ তাই অন্ধত্বকে নিজের অভিশাপ মনে করে। মনে করে অন্ধত্বের কারণে সে পরিবারের বোঝা। এই কারণে মরে গিয়ে অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে পরিবারকে মুক্তি দিতে চায়। আর এজন্যই সে ঠাকুরঝিকে বলে, “বাঁচবি তোরাÑ দাদা তো তোর আগে?”
৭. ‘কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে’—পঙ্ক্তিটি দ্বারা প্রকৃতির কোন রূপের ইঙ্গিত পাওয়া যায়?
উত্তর: ‘কোকিল ডাকা শুনেছি সেই কবে’ পঙ্ক্তিটি থেকে বোঝা যায় যে বসন্ত ঋতু বিদায় নিয়েছে।
‘অন্ধবধূ’ কবিতায় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষের অনন্য অনুভূতির জগৎ তুলে ধরা হয়েছে। অন্ধবধূ তার স্পর্শ ও অনুভূতির মাধ্যমে প্রকৃতির সৌন্দর্য বুঝতে সক্ষম। কোকিলের ডাক শুনে সে ঋতুর পরিবর্তন উপলব্ধি করতে পারে। যেহেতু কোকিল সাধারণত বসন্তকালে ডাকতে শুরু করে, তাই এই উক্তির মাধ্যমে অন্ধবধূ ইঙ্গিত দিয়েছে যে বসন্ত অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে।
৮. ‘বাঁচবি তোরা দাদা তো তার আগে?’—অন্ধবধূ একথা বলেছে কেন?
উত্তর: অন্ধবধূ মনে করে অন্ধ বলে সে সকলের নিকট বোঝা। তাই মনের দুঃখে সে আলোচ্য উক্তিটি করেছে। সমাজে ও সংসারে দৃষ্টিহীন বলে অন্ধবধূ নিজেকে খুব অসহায় মনে করে। তার ধারণা যে নিজের সংসারেও সে উপেক্ষিত। সে নিজেকে সংসারে একটি বোঝা বলে মনে করে। তার ধারণা সে মরে গেলে তার স্বামী, ঠাকুরঝি সবাই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। এসব কথা মনে করে সে ঠাকুরঝির উদ্দেশ্যে উক্তিটি করেছে।
৯. অন্ধবধূ অন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব চুকে যাওয়ার কথা বলেছে কেন?
উত্তর: অন্ধবধূ অসহায়ভাবে জীবনযাপন করার চেয়ে মরে গেলে অন্ধত্বের অভিশাপ ঘুচবে মনে করে অন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব চুকে যাক বলেছে।
অন্ধত্বের কারণে অন্ধবধূ সবার কাছে অবহেলিত। তাই সে নিজেকে পরিবারের জন্য বোঝা ভাবতে থাকে। তাই মরে গেলে এই অন্ধত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি মিলত বলে মনে করে। এজন্য অন্ধবধূ অন্ধ চোখের দ্বন্দ্ব চুকে যাওয়ার কথা বলেছে।
১০. ‘দিঘীর ঘাটে নতুন সিঁড়ি জাগে’—কথাটি বুঝিয়ে বলো।
উত্তর: অন্ধবধূ তার প্রখর অনুভূতিশক্তি দ্বারা দিঘির ঘাটে নতুন সিঁড়ি জাগার কথা বুঝেছে।
অন্ধবধূ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হলেও সে একজন ইন্দ্রিয়সচেতন মানুষ। এই ইন্দ্রিয়সচেতনতা দিয়ে সে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করেছে। দিঘির ঘাটের শ্যাওলা পড়া সিঁড়ির অস্তিত্ব টের পেয়েছে। দিঘির পানি কমে গেছে। অনুভবে সে নতুন সিঁড়ি জাগার কথা বুঝেছে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে অন্ধবধূ কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post