সার্চ ইঞ্জিন র্যাঙ্কিং-এর ক্ষেত্রে অন পেজ এসইও নিঃসন্দেহে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো ওয়েবপেজ বা ব্লগ পোস্টকে নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড-এর জন্য SERP-এ র্যাঙ্কিং করাতে, ওই ওয়েবপেজে ও কন্টেন্টে যে কাজগুলো করা হয়, সেগুলিকে অন পেজ এসইও (on page SEO) বলা যেতে পারে।
অন-পেজ এসইওর ভালো ও মন্দ সম্পূর্ণ আমাদের হাতে, কারণ ওয়েবপেজ পাবলিশ করার সময় আমরা এই কাজগুলো করতে পারি। এই কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- টাইটেল ট্যাগ, মূল কন্টেন্ট, ইনবাউন্ড ও আউটবাউন্ড লিংক, ইমেজ, ভিডিওর ব্যবহার এবং URL-এর অপটিমাইজেশন।
তবে, বর্তমান সময়ে অন পেজ অপটিমাইজেশনকে সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই। এখন ইউজার বা ব্যবহারকারীর চাহিদার উপরে আলাদাভাবে নজর দিতে হয়।
অন পেজ এসইও কী?
যদি আপনি নতুনভাবে এসইও শিখছেন বা ২০২৩ সালের গুগলের উরাধুরা অ্যালগরিদম আপডেটের কারণে খেই হারিয়ে ফেলা একজন হন, তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আসুন জেনে নিই, কেন ও কীভাবে অন পেজ এসইও করবেন।
অন পেজ এসইও-র গুরুত্ব
আমরা জানি, অন-পেজ অপটিমাইজেশনের উদ্দেশ্য হলো সার্চ ইঞ্জিনকে কন্টেন্ট বুঝতে সাহায্য করা। আর, এটাও জানি, সার্চ ইঞ্জিন কোনো কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করার পরে, সার্চারের (যিনি সার্চ করেন) কোনো প্রশ্নের (ক্যোয়ারির) জন্য ওই পেজটি প্রাসঙ্গিক, সেটা শনাক্ত করতে পারে।
সার্চ ইঞ্জিনগুলো সবসময়, সার্চারদের সার্চ করার উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করে, যাতে আরো ভালো রেজাল্ট দেখাতে পারে। তারা, আমাদের (সার্চার) সার্চ করা প্রশ্নের বা জিজ্ঞাসার সাথে প্রাসঙ্গিক পেজগুলো SERP-এ দেখাতে চায়।
আর, এই জন্য তারা তাদের র্যাঙ্কিং অ্যালগরিদমগুলো নিয়মিত আপডেট করে চলছে। যেমন, কিছুদিন আগে গুগলের “হেল্পফুল কন্টেন্ট আপডেট” নামে নতুন অ্যালগরিদম এসেছে। এর নাম থেকে আমরা বুঝতে পারি- এটি রিডারদের জন্য কোনো কন্টেন্ট হেল্পফুল কিনা, সেটা যাচাই করে।
আবার, Google-এর RankBrain অ্যালগরিদম মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে, যা প্রতিটি সার্চ রেজাল্ট দেখাতে ব্যবহৃত হয় । এই অ্যালগরিদমটি লেখক ও ওয়েবসাইটের E.A.T দক্ষতা, কর্তৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতা এই তিনটি বিষয়ে নজর দেয়।
এছাড়াও, Panda, Penguin, Hummingbird, Bert ইত্যাদির মতো আরও কিছু অ্যালগরিদম কন্টেন্ট এর মান যাচাইের কাজে ব্যবহার হয়।
এখন কোনো একটি কী-ওয়ার্ড- এ SERP এর প্রথম পৃষ্ঠায় র্যাঙ্কিং পেতে হলে, আমাদের প্রথমত যে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে- ১) কন্টেন্টের সাথে সার্চারের প্রশ্নের প্রাসঙ্গিকতা, ২) কন্টেন্টটির বিষয়বস্তু সার্চ ইঞ্জিন যেন ভালোভাবে বুঝতে পারে।
অন পেজ হলো – SEO এর এমন একটি অংশ, যা এই দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করে। এটি সার্চ র্যাঙ্কিং ও ট্রাফিক বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। আবার মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য মানসম্পন্ন কন্টেন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সার্চ ইঞ্জিনগুলোও এই মানুষের জন্য কন্টেন্ট লিখতে উৎসাহিত করে।
আমরা যদি আমাদের ওয়েবসাইটের অন-পেজ এসইও সঠিকভাবে না করি, তাহলে আপনার কন্টেন্ট যতই ভালো হোক না কেন বা অফ-পেজ এসইও ভালো হোক না কেন, ওই পেজ থেকে ভালো কিছু আশা করা বোকামি।
অন-পেজ এসইও কীভাবে করবেন?
শিরোনাম ট্যাগ বা পেজের শিরোনাম
আপনার ওয়েবসাইটের প্রতিটি ওয়েবপেজে একটি ইউনিক শিরোনাম বা টাইটেল থাকা জরুরি। টাইটেল ট্যাগ ৬০ অক্ষর বা ৫৮০ পিক্সেল দৈর্ঘ্যের মধ্যে হতে হবে।
পেজ টাইটেল টেকনিক্যাল এসইও-এর অংশ, যা একটি HTML ট্যাগ। তবে, ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব সাইটে আমরা যে এসইও প্লাগ-ইন ব্যবহার করে পেজ টাইটলে দিতে পারি।
এটি একটি পেজ কী বিষয়ে, সে সম্পর্কে একটি ধারনা প্রদান করে৷ তাই শিরোনামে আমরা কীওয়ার্ড ব্যবহার করি, কারণ এতে পাঠক ও সার্চ ইঞ্জিন বুঝতে পারবে লেখাটি কোন টপিকের উপর।
SEO ফ্রেন্ডলি URL
পোস্ট করার সময় আমরা URL তৈরি করি, তখন কী-ওয়ার্ড মাথায় রাখা জরুরি। URL-টি SEO ফ্রেন্ডলি করতে প্রাইমারী কী-ওয়ার্ডটিকে URL- এ ব্যবহার করা ও ৭৫ অক্ষরের মধ্যে রাখা ভালো।
আকর্ষণীয় মেটা ডিসক্রিপশন লিখুন
গুগল সার্চ ইঞ্জিন অনুযায়ী Meta description র্যাঙ্কিং-এর ক্ষেত্রে কোনো গুরুত্ব রাখে না। তবুও আমাদের আকর্ষণীয় মেটা ডিসক্রিপশন লেখা উচিত। কেননা, কোনোকিছু লিখে গুগল করার পরে, আমরা চোখ দিয়ে শার্পের রেজাল্টগুলো স্ক্যান করি- প্রথমে শিরোনাম ও তারপর ডিসক্রিপশন পড়ি ও এরপর কোন লিংক-এ ক্লিক করবেন, সেই সিদ্ধান্ত নিই। তাই, সুন্দর করে গুছিয়ে মেটা ডিসক্রিপশন লেখা ও কী-ওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত এবং এর লেস্থ ১৫৫-১৬০ অক্ষর বা ৯২০ পিক্সেলের মধ্যে রাখা ভালো।
কী-ওয়ার্ড ফ্রিকোয়েন্সি ও স্টাফিং
কী-ওয়ার্ড ও কী-ওয়ার্ড রিলেটেড টার্মসের ব্যবহারের স্থান ও কতবার ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এগজেক্ট কী-ওয়ার্ড বারবার ব্যবহার বা কী-ওয়ার্ড স্টাফিং করা উচিত না। কী-ওয়ার্ড স্টাফিং’ হলো গুগল সার্চ র্যাঙ্কিং ম্যানিপুলেট করার জন্য কী-ওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করার প্র্যাকটিস। স্বাভাবিকভাবে লিখুন, কী-ওয়ার্ডটি প্রয়োজন ছাড়া লিখবেন না।
ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করুন
Internal link হলো আপনার ওয়েবসাইটের একটি পৃষ্ঠা থেকে আপনার ওয়েবসাইটেই অন্য পৃষ্ঠার লিংক। ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করা জরুরি, কারণ ইউজার এবং সার্চ ইঞ্জিন আপনার ওয়েবসাইটের অন্য কন্টেন্ট খুঁজে পেতে লিংক ব্যবহার করে।
আউটবাউন্ড লিংক
আমরা যখন আমাদের পোস্টে রেফারেন্সের জন্য কোনো অন্য সাইটের লিংকিং করি, সেটা আউটবাউন্ড লিংক। আউটবাউন্ড লিংকগুলো ভেবে-চিন্তে দেওয়া উচিত। কন্টেন্টটি পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে এক বা একাধিক আউটবাউন্ড লিংক দিতে পারেন।
আউটবাউন্ড লিংক দিতেই হবে, এমনটাও না। তবে আপনি যদি কোনো তথ্য দেন, সেক্ষেত্রে ওই তথ্যের রেফারেন্স লিংক দেওয়া এসইওতে গুড প্র্যাকটিস হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা E.A.T-তে প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউনিক ছবি বা মিডিয়া ব্যবহার করুন
লেখা যেন সহজে বোঝা যায়, সেজন্য ছবি, ভিডিও বা গ্র্যাফিক্স ব্যবহার করতে হয়। তবে, আপনি যে ছবি বা ভিডিও দেবেন তা আকর্ষণীয় এবং বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক হওয়া জরুরী।
অন-পেইজ এসইও-তে ভালো করার জন্য কমপক্ষে ২-৩টি ছবি ব্যবহার করা ভালো। তবে, ইমেজের ব্যবহার হলে, পেজ লোড টাইম বেড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ইমেজ কম্প্রেস করে ফাইল সাইজ কমিয়ে ওয়েবসাইটে আপলোড দেওয়া ভালো। ইমেজ ক্রপ বা রিসাইজ (Width & height ঠিকঠাক) করে তারপরেই আপলোড দিবেন।
যে ছবিগুলো আপনি আপলোড দেবেন, নাম এবং কী-ওয়ার্ড অনুযায়ী দিতে পারেন। বেশিরভাগ স্টক ইমেজ ও ক্যামেরা তোলা ছবির জেনেরিক নাম দেওয়া থাকে (যেমন IMG_2020_126.jpg)৷ তবে আপনি যদি কেকের ছবি আপলোড দেন, ওইটার নাম cake.jpg দেওয়া যেতে পারে৷
আপনার ওয়েবসাইট বা ব্লগে ঠিক কী ইমেজ ব্যবহার হয়েছে, সেটি বোঝার জন্য গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের বটগুলো ইমেজ অল্ট টেক্সট ব্যবহার করে। তাই, ইমেজ আপলোড করার সময় ALT টেক্সট ব্যবহার করুন, যাতে Google ইমেজটি বুঝতে পারে।
পাঠকদের জন্য ভালো মানের কন্টেন্ট লিখুন
হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। কোয়ালিটি কন্টেন্ট-এর সংজ্ঞা বেশ জটিল, তবে সহজ করে বললে, ওইসব কন্টেন্ট যা সার্চারের জন্য হেল্পফুল, সঠিক, তথ্যবহুল ও সার্চ করার উদ্দেশ্য পূরণ করে।
কন্টেন্ট ইজ কিং, ভালো কন্টেন্ট = ভালো রেঙ্কিং।
তাই, কন্টেন্ট ব্যাকরণগত এবং বানান ত্রুটি থেকে মুক্ত রাখা জরুরি। আবার, কন্টেন্ট-এর মধ্যে কী-ওয়ার্ড, কী-ওয়ার্ড-এর সমার্থক শব্দ, এর সাথে সম্পর্কিত অন্য ওয়ার্ডসমূহ ব্যবহার করতে হবে। এতে করে সার্চ ইঞ্জিন বটগুলো কন্টেন্টটির টপিক সম্পর্কে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবে।
ওয়েবসাইটের লোড স্পিড
আপনার সাইট যত দ্রুত লোড হবে, তত বেশি ইউজার ফ্রেন্ডলি হবে। কারণ দ্রুত সাইট লোড না হলে আমরা সকলেই কম-বেশি বিরক্ত হই।
আবার, সার্চ ইঞ্জিন বট সাইট ক্রল করার সময় স্লো স্পিডের কারণে ঝামেলায় পড়ে, ফলে পেজ ইনডেক্স হতে দেরি হতে পারে। কোনো ওয়েব সাইটের স্পিড সম্পর্কে ধারণা নিতে আমরা অনলাইন টুলস ব্যবহার করি। আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড পরীক্ষা করার জন্য গুগলে পেজ স্পিড ইনসাইট এবং জিটিমেট্রিক্স ব্যবহার করুন।
প্লাগ-ইন/টুল ব্যবহার
ওয়ার্ডপ্রেস সাইটের অন-পেজ এসইও করা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যায়, কারণ ওয়ার্ডপ্রেসে প্রচুর পরিমান প্লাগ-ইন আছে। তাই ওয়ার্ডপ্রেস সাইটে এসইও করতে কিছু প্লাগ-ইন ব্যবহার করি। এতে সময় বাঁচবে এবং টেকনিক্যাল অনেক ঝামেলা এড়িয়ে কাজগুলো সহজে সুন্দরভাবে করা যায়।
আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে Yoast SEO, All in One SEO, Rank Math, SEOPress বা অন্যান্য অনেক প্লাগ-ইন ব্যবহার করতে পারি। তবে আমার মতে Yoast এবং Rank Math এই দুইটির মধ্যে একটি ব্যবহার করা ভালো।
কোর্সটিকা এসইও: বাংলায় এসইও সম্পর্কে আরো জানুন
শেষ কথা
পাঠকদের জন্য লেখা জরুরী, এবং সেটা যতটা সম্ভব পাঠযোগ্য ও সহজ করে। সার্চার যে বিষয়ে জানতে চায়, সেই বিষয়ে বিস্তারিত লিখলে গুগল র্যাঙ্কিং- এ ভালো করা যাবে।
আমরা আসলে কন্টেন্ট রিসাইকেলিং করি, একই জিনিস ঘুরিয়ে লিখি। যেমন- আপনি অন-পেজ এসইও সম্পর্কে অন্য আর্টিকেল পড়লে এই আর্টিকেলের মতই একই রকম তথ্য পাবেন। কিন্তু এখানে আমার কর্মসূত্রে প্রাপ্ত জ্ঞান, শিক্ষা, লেখা ও চিন্তার ধরন কন্টেন্টটিকে ইউনিক করবে।
লেখা শুরুর আগে খেয়াল করুন
- অন পেজ এসইও করার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
- সার্চারের ইন্টেন্ট পূরণ করতে পর্যাপ্ত রিসার্চ করে লিখুন।
- টাইটেল, মেটা ডেসক্রিপশন, ইমেজ এসইও, ও লিংক-এর ব্যবহার ঠিক করে করতে হবে।
- আর্টিকেলটি হেডিং, সাব-হেডিং দিয়ে ভাগ করে লিখতে হবে।
- নাম্বার লিস্ট, বুলেট পয়েন্ট, ইমেজ ও ভিডিও ব্যবহার করুন।
- প্রতিযোগী (competitor) ওয়েব সাইটের কন্টেন্ট-এর দিকে খেয়াল করতে হবে। তাদের থেকে ভালো কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে।
- সঠিক ডাটা প্রদান করতে হবে ও তথ্যসূত্র বা রেফারেন্স দিতে হবে।
- সর্বোপরি, মানুষের জন্য লিখুন।
Discussion about this post