অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর : অনুপম একমাত্র সন্তান হওয়ায় শিশুকাল থেকেই তাকে কোলে কোলে রেখে বড়ো করা হয়েছে। অনুপম তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় সে খুব আদরযত্নে মানুষ হয়েছিল। আর মামার কারণে তার সংসারের কোনো কিছুই নিয়ে ভাবতে হতো না। সবকিছু মিলিয়ে মানসিক দিক থেকে সে অপরিপক্ষ রয়ে যায়। আর এ কারণেই শেষ পর্য্যন্ত অনুপমের বয়স পুরোপুরি হলো না বলা হয়েছে।
অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. অনুপমকে পণ্ডিত মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন কেন?
উত্তর: অনুপমের সুন্দর চেহারা নিয়ে তাকে শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সঙ্গে তুলনা করে পণ্ডিত মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন।
‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমকে মাকাল ফল হিসেবে অভিহিত করতেন পণ্ডিত মশায়েরা। কেননা, তার ছিল সুন্দর চেহারা কিন্তু সেই অনুপাতে তেমন কোনো গুণ ছিল না। সে কারণে পণ্ডিত মশায়েরা ছেলেবেলায় তাকে মাকাল ফলের সঙ্গে তুলনা করে বিদ্রুপ করতেন।
২. শেষ পর্য্যন্ত অনুপমের বয়স পুরোপুরি হলো না কেন?
উত্তর: অনুপম একমাত্র সন্তান হওয়ায় শিশুকাল থেকেই তাকে কোলে কোলে রেখে বড়ো করা হয়েছে।
অনুপম তার মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় সে খুব আদরযতেœ মানুষ হয়েছিল। আর মামার কারণে তার সংসারের কোনো কিছুই নিয়ে ভাবতে হতো না। সবকিছু মিলিয়ে মানসিক দিক থেকে সে অপরিপক্ষ রয়ে যায়। আর এ কারণেই শেষ পর্য্যন্ত অনুপমের বয়স পুরোপুরি হলো না বলা হয়েছে।
৩. ‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোটো ভাইটি।’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে ব্যঙ্গার্থে দেবতা কার্তিকের সঙ্গে অনুপমের তুলনা করা হয়েছে।
দেবী দুর্গার দুই পুত্র। অগ্রজ গণেশ ও অনুজ কার্তিক। দেবী দুর্গার কোলে দেব সেনাপতি কার্তিক অপূর্ব শোভায় ভাস্কর। বড়ো হয়েও অনুপম কার্তিকের মতো মায়ের কাছাকাছি থেকে মাতৃআজ্ঞা পালনে ব্যস্ত থাকে। তাই পরিণত বয়সেও তার স্বাধীন ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না। ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপম পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায়। ব্যক্তিত্বহীন একটি চরিত্র। উচ্চশিক্ষিত হলেও তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। তাকে দেখলে মনে হয় আজও সে যেন মায়ের কোলে থাকা শিশুমাত্র। এজন্যই ব্যঙ্গ করে অনুপমকে গজাননের ছোট ভাই কার্তিকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
৪. ‘কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করিবেন আমি সৎপাত্র।’—কেন?
উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমকে মাতৃআজ্ঞাবহ, নিরীহ এক চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে—এখানে সে বিষয়টিই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট না থাকায় অনুপম স্বভাবতই একজন ভালো মানুষ। এমএ পাশ অনুপম মায়ের আদেশ যথাযথভাবে পালন করে। এমনকি সে তামাক পর্যন্ত খায় না। আমাদের সমাজে বিয়ের প্রসঙ্গে সৎপাত্র সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করা হয়, এ সকল বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই অনুপমের বিশ্বাস—কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করবেন সে. সৎপাত্র।
৫. হরিশ কীভাবে অনুপমের মন উতলা করে দিলো?
উত্তর: অনুপমের বিয়ে প্রসঙ্গে হরিশ তাকে কল্যাণীর সন্ধান দেয়।
হরিশ কানপুরে কাজ করে। ছুটিতে সে কলকাতা এসেছে। এদিকে অনুপমেরও পড়ালেখা শেষ হওয়ায় তার তেমন কোনো কাজ নেই। এমন অবকাশের সময় হরিশ একটি মেয়ের সন্ধান দিয়ে অনুপমের মন উতলা করে দিলো।
৬. অনুপমের মামা কেন হরিশকে পেলে ছাড়তে চান না?
উত্তর: আসর জমাতে অদ্বিতীয় রসিক হরিশকে অনুপমের মামা পছন্দ করত।
হরিশকে সবাই খুব খাতির করে। কেননা তার সরস রসনার গুণ ও বাড়িণ সবাইকে মুগ্ধ করে। অনুপমের মামাও এজন্য তাকে খুব খাতির করেন। মূলত তার আসর জমানোর এই গুণের কারণেই মামা তাকে পেলে ছাড়তে চান না।
৭. ‘তাহারই পশ্চাতে লক্ষ্মীপুর ঘটটি একেবারে উপুড় করিয়া দিতে দ্বিধা হইবে না।’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বিয়েতে বেশি পরিমাণে পণ পাওয়া যাবে বলেই অনুপমের মামা বিয়েতে রাজি হয়েছিলেন তা বুঝতে পেরেই অনুপমের মনে এমন ভাবোদয়ের সৃষ্টি হয়েছিল। অনুপম ও তার মামার কাছে কল্যাণীর পরিবারের বৈষয়িক অবস্থার বিবরণ দিয়েছিল হরিশ। হরিশের বর্ণনা অনুযায়ী, একসময় কল্যাণীর বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল, অর্থাৎ ধনসম্পদে পরিপূর্ণ ছিল তারা। বর্তমানে তাদের অবস্থা কিছুটা খারাপ হলেও তা যৎসামান্য। তাই কল্যাণীর পেছনেই লক্ষ্মীর ঘট, অর্থাৎ সমস্ত অর্থ উজাড় করে দিতে দ্বিধা করবেন না তার পিতা শম্ভুনাথ সেন।
অপরিচিতা গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর
৮. মামা কীভাবে অনুপমদের সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রীতে পরিণত হলেন?
উত্তর: কোনো অবস্থাতেই ঠকতে না চাওয়ার মাধ্যমে মামা অনুপমদের সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রীতে পরিণত হলেন।
অনুপমদের সংসারের যাবতীয় ভার ছিল মামার উপর। তিনি তাদের সমস্ত সংসারটাকে আগলে রেখেছিলেন। অনুপমের বিয়ের পণ নির্ধারণেও তিনি চাতুরে্যর পরিচয় দিয়েছেন। মামা তাঁর দক্ষতার জন্যই অনুপমদের সমস্ত সংসারের প্রধান গর্বের সামগ্রীতে পরিণত হলেন।
৯. ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামা বিয়েবাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না কেন?
উত্তর: বিয়েবাড়ির উঠানে বরযাত্রীদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এবং সমস্ত আয়োজন নিতান্ত মধ্যম রকমের হওয়ায় মামা সেখানে ঢুকে খুশি হলেন না। শম্ভুনাথ সেনের এককালে প্রচুর ধন-সম্পদ থাকলেও বর্তমানে তেমন কিছুই নেই। তাই শম্ভুনাথ সেনের আয়োজনে তেমন বাড়াবাড়ি ছিল না। আর বিয়েবাড়ির উঠানে বরযাত্রীদের জায়গারও সংকুলান হচ্ছিল না। এসব কারণে মামা বিয়েবাড়িতে ঢুকে খুশি হলেন না।
১০. মামা কেন শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যান?
উত্তর: অনুপমের মামা ভাগিনার বিয়ের আগে কন্যার গহনা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন বলে শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যান।
অনুপমের মামার জীবনের লক্ষ্য হলো কারো কাছে ঠকবেন না। শম্ভুনাথ সেন গহনা কম দিয়ে বা খাদযুক্ত গহনা দিয়ে তাঁকে ঠকাতে পারেন। এরূপ ভাবনা থেকে তিনি বিয়ের আগেই গহনাগুলো যাচাই করে দেখতে চান। আর এ জন্যই শম্ভুনাথ বাবুকে পাশের ঘরে ডেকে নিয়ে যান তিনি।
১১. ‘এসব কথায় আমার সম্পূর্ণ অনধিকার।’—কোন প্রসঙ্গে কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: অনুপমের মামা যৌতুকলোভী ও হীন মানসিকতার মানুষ হওয়ায় বিয়ের গহনা পরীক্ষা করতে সেকরাকে বিয়েবাড়িতে এনেছিলেন।অনুপমের বিয়ের লগ্ন উপস্থিত হলে তাঁর লোভী মামা কল্যাণীর সমস্ত গহনা পরখ করার জন্য সেকরাকে ডেকে নিয়ে আসেন। তখন কনের বাবা শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মতামত জানতে চান। কিন্তু অনুপমের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তার অভাবের কারণে তিনি তাঁর মামার বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারেন না। তাই মামার অন্যায় আবদারেও চুপ করে থাকেন এবং বলেন এসব ব্যাপারে কথা বলার অধিকার তাঁর নেই।
১২. অনুপমের মামা কেন বাড়িতে সেকরা নিয়ে এসেছিল?
উত্তর: কল্যাণীর বিয়েতে তার বাবা শম্ভুনাথ সেন নগদ পণের সঙ্গে অনেক গহনা দেন। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের কথায় আস্থাশীল ছিলেন না। কন্যাপক্ষ যে গহনা দেবে তা আসল না নকল সেটি পরীক্ষা করার জন্য তিনি বিয়েবাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে এনেছিলেন।
১৩. শম্ভুনাথ বাবু কেন মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে আনলেন?
উত্তর: ‘অপরিচিতা’ গল্পে অনুপমের মামার বিয়ের দিনে সেকরা দিয়ে’ কল্যাণীর গায়ের গহনা পরীক্ষা করতে চাওয়ায় তিনি মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে আনেন।
অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের মুখের কথায় নির্ভর করতে পারেননি বলে সেকরাকে সঙ্গে করে এনেছিলেন। মামা শম্ভুনাথ সেনকে জানালেন যে, তিনি সমস্ত গহনা যাচাই করে দেখতে চান। শম্ভুনাথ এ ব্যাপারে বরের মতামত জানতে চাইলে অনুপম নিশ্চুপ থাকে। এরপর শম্ভুনাথ বাবু মেয়ের গা থেকে সমস্ত গহনা খুলে নিয়ে আসেন।
১৪. ‘বলিলেন, সে কী কথা। লগ্ন।’—কে, কেন বলেছিল? প্রসঙ্গতা উল্লেখ করে বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: কল্যাণীর বিয়ের গহনা পরীক্ষা করানোর পর শম্ভুনাথ বরপক্ষকে খাবার কথা বললে অনুপমের মামা অবাক হয়ে লগ্নের কথা উল্লেখ করে। অনুপমের মামা কল্যাণীর গয়না যাচাই করে দেখতে চাইলে শম্ভুনাথ সেনের আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। অনুপম এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করলে শম্ভুনাথ স্থির করেন তিনি এমন ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবেন না। তাই নিয়ম না থাকলেও শম্ভুনাথ বরকে বিয়ের পূর্বেই খাওয়ার কথা বলেন। আর এতে বিস্মিত হয়ে অনুপমের মামা শম্ভুনাথকে লগ্নের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
১৫. অনুপমের মামা কেন অবাক হয়ে গেলেন?
উত্তর: শম্ভুনাথ সেন সেকরা দিয়ে গহনা পরীক্ষা করিয়ে তাঁকে অপমান করার জন্য মেয়েকে পাত্রস্থ করতে চাইলেন না বলে অনুপমের মামা অবাক হয়ে গেলেন।
মামা কনের গহনা যাচাই করে দেখতে চাওয়ায় শম্ভুনাথ সেন খুব কষ্ট পান এবং তাঁর আত্মসম্মানে আঘাত লাগে। আর বরও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন মেয়েকে এ বাড়িতে বিয়ে দেবেন না। তাই তিনি মামাকে গহনা যাচাই করে দেখান ঠিকই, বিয়ের খাবারও খাওয়ান কিন্তু তারপর বলেন যে, সম্পর্কটা স্থায়ী করার ইচ্ছা তাঁর নেই। আর এ কথা শুনে মামা অবাক হয়ে যান।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা বই থেকে অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো অনুধাবন প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post