অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. ‘অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি’ উক্তিটি ব্যাখ্য করো।
উক্তিটি ব্যঙ্গার্থে দেবতা কার্তিকের সঙ্গে অনুপমের তুলনা করা হয়েছে। দেবী দুর্গার দুই পুত্র অগ্রজ গণেশ ও অনুজ কার্তিকেয়। দেবী দুর্গার কোলে দেব সেনাপতি কার্তিকেয় অপূর্ব শোভা পায়। বড় হয়েও অনুপম কার্তিকের মতো মায়ের কাছাকাছি থেকে মাতৃআজ্ঞা পালনে ব্যস্ত থাকে। তাই পরিণত বয়সেও তার স্বাধীন ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে না।
পাঠ্য গল্পের অনুপম পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় ও ব্যক্তিত্বহীন একটি চরিত্র । উচ্চ শিক্ষিত হলেও তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। তাকে দেখলে মনে হয় আজও সে যেন মায়ের কোলে থাকা শিশুমাত্র। এজন্যই ব্যঙ্গ করে অনুপমকে গজাননের ছোট ভাই কার্তিকের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
২. অনুপমের বিবাহযাত্রা বর্ণনা করো।
অনুপম মহাসমারোহের সাথে বিয়ে করতে গিয়েছিল। ধনী ঘরের ছেলে অনুপম। তাই তার বিয়েতে ছিল আভিজাত্যের ছোঁয়া। ব্যান্ড, বাঁশি, কন্সর্ট কোনো কিছুরই কমতি ছিলো না। দামি পোশাক ও বাহারি গয়ণাতে জড়ানো ছিল অনুপমের শরীর। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে ভাবী শ্বশুরের সঙ্গে আভিজাত্যের মোকাবিলা করতে বিয়ের আসরে যাচ্ছে।
৩. অনুপমের মামার মন কীভাবে নরম হল?
‘অপরিচিতা’ গল্পের হরিশ অনুপমের মামার কাছে কল্যাণী ও তার পরিবারের প্রশংসা করার ফলে মামার মন নরম হলো। বিয়ের পাত্রী তথা কল্যাণীর পারিবারিক অবস্থা, বংশমর্যাদার ব্যাপারে অনুপমের মামাকে বিশদ বর্ণনা দেয় হরিশ। সেসব কথা শুনে তিনি আশ্বস্ত হলেও কল্যাণীর বয়স বেশি মনে করে বিয়ে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হন।
কিন্ত হরিশের ছিল নিজের সরস কথা দ্বারা মানুষের মনকে প্রভাবিত করার বিশেষ গুণ। তাই তো পরবর্তীতে তার কাছ থেকে পাত্রীর নির্ভরযোগ্য প্রশংসা বাক্য শুনে মামার মন নরম হয়েছিল ।
৪. অনুপমের মামা সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল কেন?
অনুপমের মামা যৌতুকলোভী ও হীন মানসিকতার মানুষ হওয়ায় বিয়ের গয়না পরীক্ষা করতে সেকরাকে বিয়ে বাড়িতে এনেছিল। কল্যাণীর বিয়েতে তার বাবা শম্ভুনাথ সেন নগদ পণের সঙ্গ গয়না দিতে চান। অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনের কথায় আস্থাশীল ছিলেন না।
কন্যাপক্ষ যে গয়না দেবে তা আসল না নকল সেটি পরীক্ষা করার জন্য অনুপমের মামা বিয়ে বাড়িতে সেকরাকে সঙ্গে এনেছিল। সেকরা সমস্ত গয়নার খাটিত্ব প্রমাণ করেন।
৫. ‘আমার ভাগ্যের প্রজপতির সঙ্গে পঞ্চসরের কোন বিরোধ নাই’ – উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
বাক্যটিতে অনুপমের ভাগ্যের সুপ্রসন্নতার কথা বলা হয়েছে। অনুপমের বিবাহের জন্যে কন্যাকে আশীর্বাদ করতে তার পিসতুতো ভাই বিনুকে পাঠানো হলো। সে ফিরে এসে কন্যার প্রশংসা করে। বিনু খুবই রুচিশীল মানুষ, সে অল্প কথায় অনেক অর্থ প্রকাশ করে।
সে যখন বলে খাটি সোনা, তখন অনুপমের বুঝতে বাকি থাকে না যে তার জন্যে যে পাত্রী পছন্দ করা হয়েছে সে অনন্যা গুণসম্পন্না নারী। তার ভাগ্যে বিবাহের দেবতা প্রজাপতি ও প্রেমের দেবতা মদনের শুভ দৃষ্টি পড়েছে। উভয় দেবতার মধ্যে
৬. ‘কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো, এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি’ – বক্তার এমন অনুভূতির কারণ বুঝিয়ে লেখ।
উক্তিটি দ্বারা অনুপম কল্যাণীর কাছাকাছি থাকা বলতে হৃদয়ে জায়গা পাওয়ার কথা বুঝিয়েছে। কানপুরে পৌছে কল্যাণীর পরিচয় জানতে পেরে অনুপমের হৃদয় আবারো কল্যাণীর চিন্তায় আচ্ছন হয়।
সে কল্যাণীকে বিয়ে করতে চাইলেও কল্যাণী রাজি হয় না। কল্যাণীর কাছাকাছি থাকার জন্য সে কানপুরেই বসবাস করতে শুরু করে। সুযোগ পেলেই সে কল্যাণীর কাজে সাহায্য করে আর মনে করে হয়তো এভাবেই সে কল্যাণীর হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।
৭. ‘ঠাট্টার সম্পর্কটাকে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই’ – উক্তিটি কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে?
অনুপমের সাথে কল্যাণীর বিয়ে ভেঙে দেওয়াটাকে অনুপমের মামা ঠাট্টা মনে করলে শম্তুনাথ সেন একথা বলেছিলেন। অনুপমের মামা বিয়ের আগেই সেকরা দিয়ে কনের গায়ের গয়না যাচাই করে দেখেতে চান তা আসল কিনা। এ কারণে শস্তুনাথ সেন অপমানিত বোধ করেন।
গয়না যাচাইয়ের ব্যাপারে পাত্রের নিরলিপ্ততা দেখে তিনি এমন ব্যক্তিত্বহীন ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তিনি পাত্রপক্ষকে যথাযথ আপ্যায়নের পর গাড়ি ডেকে বিদায় দিতে চাইলে অনুপমের মামা এ বিষয়টি ঠাট্টা মনে করেন। এর জবাবে তিনি বলেন – ‘ঠাট্টার সম্পর্ককে স্থায়ী করিবার ইচ্ছা আমার নাই’।
৮. ‘কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করবেন আমি সৎপাত্র’ – কেন?
ভালো মানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট না থাকায় অনুপম স্বভাবতই একজন ভালো মানুষ। এমএ পাস অনুপম মায়ের আদেশ যথাযথভাবে পালন করে। এমনকি সে তামাক পর্যন্ত খায় না। আমাদের সমাজে বিয়ের প্রসঙ্গে সৎপাত্র সম্পর্কে যে ধারণা পোষণ করা হয়, এ সকল বৈশিষ্ট্য তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাই অনুপমের বিশ্বাস, কন্যার পিতা মাত্রেই স্বীকার করবেন সে সৎপাত্র।
৯. ‘ভালোমানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই’ – ব্যাখ্যা করো।
মামার অভিভাবকত্বে বড় হওয়া অনুপম সমাজ-সংসারের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পর্কে সর্বদাই উদাসীন ছিল। অনুপম এমএ পাস করলেও সংসার বা সমাজের প্রতি তাকে কোনো দায়িত্ব পালন করতে হয় না। তার পিতার মৃত্যুর পর সংসারের অভিভাবকের দায়িত্ব তার মামাই পালন করেন।
এমন দায়িত্ব কর্তব্যহীন ভালো মানুষ হওয়া বেশ সহজ। কেননা যেখানে কোনো দায়িত্ব-কর্তব্য নেই সেখানে ভুল বা ঝঞ্ঝাটের কোনো সম্ভাবনাই নেই। তাই গল্পে বলা হয়েছে, ‘ভালোমানুষ হওয়ার কোনো ঝঞ্ঝাট নাই।’
১০. কল্যাণীর মাতৃ-আজ্ঞার ধরন ব্যাখ্যা করো।
অনুপমের সাথে বিয়ে ভাঙ্গার পর কল্যাণী নারী শিক্ষার ব্রত গ্রহণ করে। কানপুরে অনুপম কল্যাণীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে কল্যাণী তা প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের কারণ তার মাতৃ-আজ্ঞা। বস্তুত এ মাতৃ-আজ্ঞা আর কিছু নয়, দেশমাতৃকার সেবা করা। আর এ সেবার পথ হলো মেয়েদের সুশিক্ষিত করে তোলা।
মেয়েরা শিক্ষিত হলেই একটা সমাজ পরিপূর্ণ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ওঠে। কল্যাণীর মাতৃ-আজ্ঞার ধরন বলতে নারী শিক্ষার এই বিষয়টিকেই বোঝানো হয়েছে।
১১. ‘ঠাট্টা তো আপনিই করিয়া সারিয়াছেন’ – বুঝিয়ে দাও।
কল্যাণীর সাথে অনুপমের বিয়ে ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে অনুপমের মামার প্রতি শম্ভুনাথ সেনের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। বিয়ের পূর্বমুহূর্তে অনুপমের মামা কনের পরিহিত সকল গয়না পরখ করে দেখতে চান। তার এ অসংগত প্রস্তাব দৃঢ়চিত্ত শম্ভুনাথ সেনের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করে।
তাই কৌশলে বরযাত্রীদের খাইয়ে দিয়ে তাদের তিনি বিদায় জানান। এরূপ আচরণে অনুপমের মামা আশ্চর্য হয়ে মন্তব্য করলে তার প্রতুত্তরে শম্ভুনাথ সেন উপরোক্ত মন্তব্যটি করেন। মূলত বিয়ের আগে গহনা নিয়ে মামার অনাকাঙ্খিত আচরণের কারণেই শম্ভুনাথ বিয়ে ভাঙার কথা
বলেছেন।
১২. ‘আমি তো চমকিয়া উঠিলাম’ কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
আলোচ্য কথাটির মাধ্যমে কল্যাণীর সুমধুর কণ্ঠ শুনে অনুপমের চমকে ওঠা ভাবকে বোঝানো হয়েছে। কানপুর স্টেশনে অনুপম একটি নারীকণ্ঠ শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে অনুপমের হৃদয়পটে সেই কণ্ঠস্বরটি বাজতে থাকে। পরে যখন অনুপম গাড়িতে জায়গা পাচ্ছিল না, এমন সময় সেই মেয়েটি অনুপমের মাকে লক্ষ করে বলে, তাদের গাড়িতে জায়গা আছে এবং সেখানে গিয়ে বসতে।
আর এভাবেই সেই কণ্ঠটি আবার শুনে অনুপম চমকে ওঠে। এখানে মূলত কল্যাণীর আশ্চর্যসুন্দর কণ্ঠস্বর শুনে বিরহী অনুপমের একটি মানসিক অবস্থাকে বোঝানো হয়েছে।
১৩. ‘প্রমাণ হইয়া গেছে আমি কেহই নই’ ব্যাখ্যা করো।
আলোচ্য উক্তিটির মধ্যে অনুপমের ব্যক্তিত্বহীনতার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে। অনুপম শিক্ষিত যুবক হয়েও ব্যক্তিত্ববিবর্জিত পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুল। শম্ভুনাথ বাবুর কাছে একথা প্রমাণিত হওয়ায় বিয়ে ভেঙে দেওয়ার সময় অনুপমের সাথে তিনি একটি কথা বলারও প্রয়োজন মনে করেননি। তাই অনুপম নিজের অবস্থানটি বোঝাতে গিয়ে এই অভিমতটি ব্যক্ত করে যে, ‘প্রমাণ হইয়া গেছে আমি কেহই নই।’
১৪. ‘বাবাজি একবার এইদিক আসতে হচ্ছে’ কেন বলা হয়েছে?
বিয়ের আগেই কনের স্বর্ণ যাচাই করে দেখা প্রসঙ্গে শম্ভুনাথ অনুপমকে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছিলেন। অনুপমের বিয়ের অনুষ্ঠানে কনেকে যৌতুক হিসেবে দেওয়া স্বর্ণালংকারগুলো খাটি কি না তা যাচাই করতে চায় অনুপমের মামা।
কনের পিতা শম্ভুনাথকে তিনি স্বর্ণগুলো নিয়ে আসতে বললে হবু বর অনুপমের ব্যক্তিত্ব ও মানসিকতা অনুধাবন করার মানসে শম্ভুনাথ অনুপমকে বলেছিলেন, ‘বাবাজি একবার এইদিক আসতে হচ্ছে।’ কিন্তু অনুপম মামার অনুমতি ছাড়া এক পাও নড়তে চায়নি তার ব্যক্তিত্বহীনতার কারণে।
১৫. শম্ভুনাথ বাবু অনুপমের সাথে মেয়ের বিয়ে দিলেন না কেন?
বিয়ের দিনে অনুপমের মামা যৌতুক নিয়ে হীন মানসিকতা দেখালেও অনুপম তার কোনো প্রতিবাদ করেনি বলে শম্ভুনাথ সেন অনুপমের সঙ্গ মেয়ে বিয়ে দিলেন না। অনুপমের যৌতুকলোভী মামা মেয়ের বিয়েতে শম্ভুনাথ সেনের দেয়া স্বর্ণালংকার সেকরা দিয়ে যাচাই করে। তার এ হীন মানসিকতা শম্ভুনাথের ব্যক্তিমর্যাদা ভুলুণ্ঠিত করে।
অন্যদিকে, মামার এ আচরণে অনুপমের নির্বিকার থাকা তার পৌরুষহীন ব্যক্তিত্বরহিত চরিত্রকেই সুস্পষ্ট করে তোলে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন শম্ভুনাথ সেন স্বাভাবিকভাবেই এমন নীচ পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান।
শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে অপরিচিতা গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর গুলো ডাউনলোড করে নাও। অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post