অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সাজেশন : পাত্রপক্ষের যৌতুকের স্বর্ণালংকার যাচাই করার মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না। কল্যাণী বধূ সাজে সেজে বিয়ের জন্য প্রস্তুত। অথচ যৌতুক লোভী পাত্রপক্ষ তাদের গহনা যাচাই করতে চাইলে তাকে গহনাগুলো খুলে দিতে হয়। পাত্রপক্ষের এই হীন-মানসিকতার ফলে শম্ভুনাথ বাবু বিয়ে ভেঙে দেন এবং কল্যাণীও পণ করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ সমাজে সে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সাজেশন
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
গৌরী ও সঞ্জয় অনেকদিন ধরে একই অফিসে চাকরি করছে, কিন্তু সহকর্মীরা জানে না দুজনার অন্তরে গভীর ক্ষত। গৌরীকে নিজে পছন্দ তাই করে বিয়ে করতে চেয়েছিল সঞ্জয়। বছর পাঁচেক আগে লোক খাওয়ানো নিয়ে বিয়ে ভেঙেছে তাদের। পিতৃহীন সঞ্জয় কাকার আশ্রয়ে মানুষ, তার দোষ জেনেও প্রতিবাদ করতে পারেনি। একদিন গৌরীর কাছে নিজের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে সঞ্জয়। বলে, তার জন্য সে সারা জীবন অপেক্ষা করবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গৌরী বলে, “কী দরকার, এই তো বেশ আছি।”
ক. কোন কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযোগে বিস্তর হাসিলেন’?
খ. “মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই তাহার কাছে গুরুতর”—উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে? বুঝিয়ে দাও।
ঘ. “এই তো বেশ আছি!” গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে।’’—আলোচনা করো।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গায়েহলুদের বাহকদের বিদায় করতে কনেপক্ষকে যে নাকাল হতে হবে, সে কথা স্মরণ করে অনুপমের মামা ও মা ‘একযোগে বিস্তর হাসিলেন’।
খ. অনুপমের জন্য তার মামার বিস্তর পণসমেত দাসীরূপী কনে পাওয়ার অভিপ্রায় বোঝাতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে।অনুপমের মামা ভাগনের জন্য এমন কনে আনতে চান, যে ধনীর কন্যা নয়, কিন্তু যার বাবা পণ হিসেবে টাকা দিতে কসুর করবে না। এতে করে তাকে শোষণ করা চলবে, কিন্তু কোনো কিছুতেই প্রতিবাদ করবে না। ধনীর কন্যা হলে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমস্যা হতে পারে। তাই মেয়ের চেয়ে মেয়ের বাপের খবরটাই অনুপমের মামার কাছে অধিক গুরুতর।
গ. উদ্দীপকের সঞ্জয় ‘অপরিচিতা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র অনুপমের প্রতিনিধিত্ব করে। উদ্দীপকের সঞ্জয় তার মানসপ্রিয়া গৌরীর সাথে একই অফিসে চাকরি করে। অফিসের কেউ জানে না পাঁচ বছর আগে তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিল। পিতৃহীন সঞ্জয়ের অভিভাবক কাকার দোষে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। মানসিক দৃঢ়তার অভাবে সঞ্জয় সেই সময় কাকার অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারেনি।
বহুদিন পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে গৌরীর কাছে নিজের অসহায় অবস্থার কথা তুলে ধরে। বলে, তার জন্য সে সারা জীবন অপেক্ষা করবে। তবে এমন প্রস্তাবে গৌরী সাড়া দেয়নি। সঞ্জয়ের মতো অনেকটা একই রকম ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে যেতে দেখা যায় ‘অপরিচিতা’ গল্পের অনুপমকে। সঞ্জয়ের মতোই অনুপমেরও বিয়ের পাত্রীর প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা ছিল। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে সে মামার অন্যায় সিদ্ধান্তই মেনে নেয়। অন্যায় জেনেও সে যৌতুকের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ জানাতে পারেনি।
নিজের বিয়ের বিষয়েও কোনো দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে সেই বিয়ে ভেঙে যায়। বহুদিন পরে সেই পাত্রী কল্যাণীকে কাছে পেয়ে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে অনুপম। কিন্তু তত দিনে কল্যাণী দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত, বিয়েতে অনাগ্রহী। তাই কল্যাণীর সাহচর্য পেয়েও অনুপমের সে মানসপ্রিয়া চির অপরিচিতই থেকে যায়। সুতরাং বলা যায়, যথাসময়ে সঠিক অবস্থান নিতে না পারায় একই ধরনের পরিণতি ভোগ করার দিক থেকে উদ্দীপকের সঞ্জয় ও গল্পের অনুপম সমার্থক চরিত্রের অধিকারী।
ঘ. “এই তো বেশ আছি।’ গৌরীর এই উক্তিতে ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিণতি প্রতিফলিত হয়েছে”—উক্তিটি যুক্তিসঙ্গত। জীবনে প্রাপ্তিই শেষ কথা নয়। অনেক সময় প্রাপ্তির আকাক্সক্ষাও পরম তৃপ্তি দিতে পারে। না পাওয়ার যে বেদনা তা-ও ম্লান হয়ে যায় এই স্বর্গীয় অনুভূতির কাছে। উদ্দীপকের গৌরীর উক্তি ‘এই তো বেশ আছি।’ আর গল্পের অনুপমের অনুভব ‘এই তো জায়গা পাইয়াছি।’ তাই সমার্থক হয়ে ওঠে।
উদ্দীপকের গৌরীকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চেয়েছিল সঞ্জয়। কিন্তু তার কাকার অনাকাক্সিক্ষত এক ভুলের মাশুল দিতে গিয়ে ভালোবাসার মানুষটির সাথে স্বর্গীয় বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেনি সে। সঞ্জয়ের এই ব্যর্থতায় গৌরী নিজেও বুকে ক্ষত চাপা দিয়ে বেঁচে আছে। পাঁচ বছর পর সঞ্জয় সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে চাইলে গৌরী বাধা দেয়। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘কী দরকার, এই তো বেশ আছি।’ নিরুপায় সঞ্জয় গৌরীকে বিয়ে করতে না পারলেও সারাজীবন তার পাশে থাকার অঙ্গীকার করে। উদ্দীপকের সঞ্জয়ের অনুরূপ পরিণতি গল্পের অনুপম আর কল্যাণীও বরণ করেছে। অনুপম চোখে না দেখেও ভালোবেসেছে কল্যাণীকে। স্বপ্ন দেখেছ তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার। কিন্তু বিয়ের আসরে মামার এক ভুলের খেসারত দিয়ে হাতছাড়া করেছে কল্যাণীকে।
অনুপম অপরিপক্বতার পরিচয় দিলেও কল্যাণী আর নিজেকে সংসারে জড়াতে চায়নি। ‘নারীশিক্ষার ব্রতকে নিজের জীবনের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। বহুদিন পর কল্যাণীকে আবার খুঁজে পায় অনুপম। নিজের জীবনে সে আর কোনো নারীকে কামনা করেনি। কল্যাণীও আর কাউকে কল্পনা করেনি কোনো দিন। পরিবারের শত বাধা উপেক্ষা করে অনুপম ছুটে গেছে কানপুরে কল্যাণীর কর্মক্ষেত্রে। বিয়ের আশা না করলেও সব সময় কল্যাণীর পাশে থাকবে এটাই তার চাওয়া।
অজানা কন্ঠের মধুর সুর বছরের পর বছর তাকে বিস্ময়াভিভূত করে রেখেছে। তাদের দেখা হয়। কণ্ঠ শোনে। যখন সুবিধা পায় কল্যাণীর কাজ করে দেয়ে অনুপম। যা করে কল্যাণীর মনে একটু জায়গা চায় সে। প্রেমিকার মন-মন্দিরে একটুখানি জায়গা পেয়েই সে স্বর্গীয় অনুভূতি লাভ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের সঞ্জয় ও গৌরী এবং গল্পের অনুপম ও কল্যাণীর জীবনধারা অনেকটা একই পথে ধাবমান।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জুয়েল আহমেদ বড় চাকরি করেন। মধ্যবিত্ত বাবার একমাত্র মেয়ে ফাতেমার সাথে তার বিয়ের দিন ধার্য হলো। পাত্র পক্ষ ৫০ হাজার টাকা ও ২ ভরি স্বর্ণালংকার যৌতুক হিসেবে চাইল। এমন পাত্র হাতছাড়া করা ঠিক হবে না ভেবে অসহায় পিতা রাজি হলেন।
ক. অনুপম হাতজোড় করার পর কার হৃদয় গলেছে?
খ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না কেন?
গ. ‘উদ্দীপকটি ‘অপরিচিতা’ গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।’—ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পের পুরোপুরি ভাব উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে, তুমি কি একমত? পক্ষে যুক্তি দাও।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অনুপম হাতজোড় করার পর শম্ভুনাথ বাবুর হৃদয় গলেছে।
খ. পাত্রপক্ষের যৌতুকের স্বর্ণালংকার যাচাই করার মানসিকতার কারণে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে কল্যাণী আর বিয়ে করবে না।
কল্যাণী বধূ সাজে সেজে বিয়ের জন্য প্রস্তুত। অথচ যৌতুক লোভী পাত্রপক্ষ তাদের গহনা যাচাই করতে চাইলে তাকে গহনাগুলো খুলে দিতে হয়। পাত্রপক্ষের এই হীন-মানসিকতার ফলে শম্ভুনাথ বাবু বিয়ে ভেঙে দেন এবং কল্যাণীও পণ করে কুসংস্কারাচ্ছন্ন এ সমাজে সে আর বিয়ের পিঁড়িতে বসবে না।
গ. উদ্দীপকে যৌতুকের বিষয়টি যেভাবে ফুটে উঠেছে তা রবীন্দ্রনাথের ‘অপরিচিতা’ গল্পের মূলভাবের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
যৌতুকের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’ গল্পে যথার্থরূপে তুলে ধরা হয়েছে। এ গল্পে বিয়ে হবে কী হবে না সেটা মুখ্য বিষয় নয়; বরং যৌতুকের গহনা খাঁটি ও পরিমাণে সঠিক কিনা সেটাই বেশি বিবেচ্য। এর ফলে বিয়ে ভেঙে গেলেও বরের যৌতুকলোভী মামার কিছু আসে যায় না।
উদ্দীপকেও যৌতুকের বিষয়টিকে মুখ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তবে এখানে বিয়ে ভেঙে যায়নি; বরং ভালো ছেলে পেয়ে কনের পিতার যৌতুক প্রদানে নিরুপায় সম্মতি লক্ষ করা যায়। সুতরাং দেখা যায় যে, উদ্দীপকটি গল্পের বিষয়বস্তুর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. ‘অপরিচিতা’ গল্পে পুরোপুরি নয়; বরং কেবলমাত্র যৌতুকের বিষয়টি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
‘অপরিচিতা’ গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন। যেমন—তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা, ঘটকের চাটুকারিতা, যৌতুক, নায়কের কল্পনাবিলাসী চেতনা, নারীর অগ্রগতি, বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে ভেঙে যাওয়া, নায়িকার বিয়ে না করে নারী জাতিকে শিক্ষিত করার ব্রত গ্রহণ এবং নায়কের ভুল বুঝে তা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি।
উদ্দীপকে ‘অপরিচিতা’ গল্পের কেবলমাত্র যৌতুকলোভী সমাজ ও শিক্ষিত যুবকের যৌতুক নিয়ে বিয়ে করার
হীন-মানসিকতা ফুটে উঠেছে। এখানে ‘অপরিচিতা’ গল্পের অন্যান্য বিষয় বা পরিমাণ অনুপস্থিত। উদ্দীপকের কনের পিতা যৌতুক প্রদানে রাজি এবং বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কোনো উল্লেখ নেই।
‘অপরিচিতা’ গল্পের অনেকগুলো বিষয় থেকে উদ্দীপকে শুধু যৌতুকের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অথচ ‘অপরিচিতা’ গল্পের পরিধি আরো বিস্তর। এখানে কনের পিতা যৌতুক যাচাই করে দেখা পাত্রপক্ষের সাথে কোন সম্পর্ক করবে না বলে অসম্মতি জ্ঞাপন করে ও বিয়ে ভেঙে দেয় যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“দেখিলাম, এই সতের বছরের মেয়েটির উপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পড়িয়াছে। কিন্তু এখনও শৈশবের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই।”
ক. কন্যাকে আশীর্বাদ করার জন্য কাকে পাঠানো হয়েছিল?
খ. স্যাকরাকে বিয়ে বাড়িতে কেন আনা হয়েছিল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বয়সের বিষয়টি ‘অপরিচিতা’র কল্যাণীর ক্ষেত্রে কতটুকু প্রযোজ্য? বর্ণনা দাও।
ঘ. ‘এখনও কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই’—‘অপরিচিতার’র কল্যাণীর আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
তুচ্ছ কারণে বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় রেহানা আক্তার আর বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি। এখন তিনি সমাজসেবামূলক একটি সংস্থায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের লেখাপড়া শেখানোর কাজ করেন।
ক. অনুপম হাত জোড় করে মাথা হেঁট করার পর কার হৃদয় গলেছে?
খ. কল্যাণী বিয়ে না করার পণ করেছে কেন?
গ. রেহানা আক্তারের সমাজসেবামূলক কাজ ‘অপরিচিতা’ গল্পের কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “রেহানা আক্তারের মানসিক দৃঢ়তা ‘অপরিচিতা’ গল্পের কল্যাণীর ছায়ারূপ।”—কথাটির যৌক্তিকতা বিচার কর।
আরও দেখো: ১০০% কমন বাংলা সৃজনশীল এবং MCQ প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সাজেশন হিসেবে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল সাজেশন আলোচনা করা হয়েছে। এখানে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর রয়েছে। আমি আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো প্রশ্নের উত্তর সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post