অভাগীর স্বর্গ গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : আভাগী ছিল দুলে সম্প্রদায়ের নারী। তাদেরকে সমাজে ছোট জাত মনে করা হয়। সমাজের সৃষ্ট এই কুসংস্কারের কারণে ছোট জাতের লোকেরা কখনো উঁচু জাতের মানুষের কাছে আসতে সাহস করে না। গল্পের অভাগী ছিল নীচু জাতের আর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছিল উঁচু জাতের মানুষের। তাই অভাগী একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল।
অভাগীর স্বর্গ গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. কাঙালীর মায়ের নাম অভাগী রাখা হয়েছিল কেন?
উত্তর: জন্মের সময় মা মরে যাওয়ায় কাঙালীর মায়ের নাম অভাগী রাখা হয়েছিল।
অভাগীর বাবা অভাগীর এই নাম রেখেছিলেন। অভাগীর যখন জন্ম হয় তখন তার মা মারা যায়। ফলে বাবা রাগ করে মা-মরা মেয়ের নাম রাখেন অভাগী। মূলত মা-মরা মেয়ে হওয়ার কারণেই তার নাম অভাগী রাখা হয়েছিল।
২. মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস কেন?
উত্তর: শিশুকাল থেকে মাকে বিশ্বাস করার শিক্ষালাভ করেছে বলে মাকে বিশ্বাস করাই কাঙালীর অভ্যাস। ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রী মারা গেলে যখন তার শবদাহ করা হয়, তা দেখে কাঙালীর মা কাঙালীকে বলে যে, তিনি রথে করে স্বর্গে গেছেন। বস্তুত কথাটি ভিত্তিহীন ও অমূলক। কিন্তু ছোটবেলা থেকে কেবল মা ছাড়া আর কারও সান্নিধ্য লাভ না করায় সে যত আশ্চর্য কথাই বলুক তা কাঙালী বিশ্বাস করতেই শিখেছে। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
৩. “সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল।”—লেখক এ কথা বলেছেন কেন?
উত্তর: ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রীর মৃত্যুতে বাড়িতে স্বজনদের উপস্থিতিতে সৃষ্ট অবস্থা বর্ণনায় লেখক প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
‘অভাগীর স্বর্গ’ গল্পে ঠাকুরদাস মুখুয্যে একজন পয়সাওয়ালা লোক। তার স্ত্রীর মৃত্যুতে বাড়িতে অনেক লোকজন উপস্থিত হয়েছে। ছেলে-মেয়ে, নাতিপুতি এলাকার মানুষ সকলেই বর্ষীবয়সী গিন্নির লাশ দেখতে এসেছে। আর এত মানুষের উপস্থিতিতে বাড়ি গমগম করছিল। তাই লেখক বলেছেন, “সে যেন একটা উৎসব বাধিয়া গেল।”
৪. অভাগী একটু দূরে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল কেন?
উত্তর: অভাগী ছোট জাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় একটু দূরে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল।
আভাগী ছিল দুলে সম্প্রদায়ের নারী। তাদেরকে সমাজে ছোট জাত মনে করা হয়। সমাজের সৃষ্ট এই কুসংস্কারের কারণে ছোট জাতের লোকেরা কখনো উঁচু জাতের মানুষের কাছে আসতে সাহস করে না। গল্পের অভাগী ছিল নীচু জাতের আর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হচ্ছিল উঁচু জাতের মানুষের। তাই অভাগী একটু দূরে দাঁড়িয়ে থেকে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখল।
৫. বামুন ঠাকরুণের শ্মশান সৎকারের শেষটুকু দেখা অভাগীর ভাগ্যে আর ঘটল না কেন?
উত্তর: কাঙালীর সাথে বাড়ি ফিরে আসায় বামুন ঠাকরুণের শ্মশান সৎকারের শেষটুকু দেখা অভাগীর ভাগ্যে আর ঘটল না।
অভাগী ঠাকুরদাস মুখুয্যের স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দূর থেকে দেখছিল। সে ছোট জাতের হওয়ায় নিজেরও অমন করে স্বর্গে যাওয়ার বাসনা নিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া দেখছিল। কিন্তু শেষবেলা কাঙালী এসে তাকে ডাকায় এবং ক্ষুধার কথা বলায় তাকে তখনই বাড়িতে ফিরতে হয়। তাই শ্মশান সৎকারের শেষটুকু তার আর দেখা হয় না।
অভাগীর স্বর্গ গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৬. কাঙালীর ভাত রান্না দেখে অভাগীর চোখ ছলছল করে উঠল কেন?
উত্তর: কাঙালীর ভাত রান্নার অপটুতা দেখে ছেলের প্রতি মমতায় অভাগীর চোখ ছলছল করে উঠল।
অভাগী অসুস্থ হওয়ায় সে বিছানা থেকে উঠতে পারছিল না। তাই ছেলে কাঙালীকে ভাত রান্না করে নিতে বলে। কাঙালী অদক্ষ হাতে রাঁধতে গিয়ে নানা অসুবিধার সম্মুখীন হয়। ফেন ঝাড়তে পারে না, ভাত বাড়তে পারে না। এমন অপটুতা দেখে অভাগীর মায়া হয়। তাই তার চোখ ছলছল করে ওঠে।
৭. ঈশ্বর নাপিত অভাগীর নাড়ি দেখে মুখ গম্ভীর করল কেন?
উত্তর: অভাগীর অবস্থা ভালো না হওয়ায় ঈশ্বর নাপিত অভাগীর নাড়ি দেখে সে মুখ গম্ভীর করল।
অভাগী বেশ কয়েক দিনের জ্বরে শয্যাশায়ী। তার অবস্থার ক্রমেই অবনতি হয়। নাড়ি পরীক্ষা করে গ্রামের ঈশ্বর নাপিত বুঝতে পারল অভাগীর অবস্থা ভালো নয়। তার বাঁচার আশা ক্ষীণ। অভাগীর নাড়ি দেখে তাই সে মূুখ গম্ভীর করল।
৮. ‘মা মরেছে ত যা নিচে নেবে দাঁড়া’—অধর রায়ের এরূপ উক্তির কারণ কী?
উত্তর: নিচু জাতের মানুষের প্রতি ঘৃণার কারণে অধর রায় কাঙালীকে নিচে নেমে দাঁড়াতে বলে।
মৃত মায়ের সৎকারের জন্য কাঠ সংগ্রহের আশায় কাঙালী অধর রায়ের কাছারি বাড়িতে একেবারে উপরে এসে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু মৃতের বাড়ি থেকে আসায় সম্ভাব্য অশৌচের ভয়ে এবং জাতি বৈষম্যের কারণে অধর রায় তাকে নিচে নেমে দাঁড়াতে বলে এবং তার দাঁড়ানোর জায়গায় গোবরজল ছিটিয়ে দিতে বলে।
৯. রসিক দুলে তার পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলল কেন?
উত্তর: অভাগীর মত পতিভক্ত স্ত্রীর প্রতি করা বৈষম্যের কথা ভেবে মৃত্যুশয্যায় তাকে পায়ের ধুলো দিতে গিয়ে রসিক কেঁদে ফেলল। অভাগীকে বিয়ের পর পরই রসিক অন্য গ্রামে উঠে যায়। এরপর সে আর অভাগীর খোঁজ খবর নেয়নি। অথচ সেই অভাগী নিজের মৃত্যুকালে রসিকের পায়ের ধুলো চাইলে নিজের কৃতকর্মের কথা ভেবে সে অনুশোচনায় কেঁদে ফেলল।
১০. অভাগীর জীবন-নাট্যের শেষ অঙ্ক বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: জলের অভাগীর জীবন-নাট্যের শেষ অঙ্ক বলতে মূলত তার মৃত্যুকালের কথা বলা হয়েছে।
অভাগীর জীবনকাল খুব বেশি বিস্তৃত ছিল না। বড়জোর বছর ত্রিশের ছিল। এরই মাঝে সে জীবনের বহু চড়াই-উতরাই পার করে এসে জীবনের অন্তিম মুহূর্তে উপস্থিত হয়েছে। বাবা-মায়ের মৃত্যু, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ, একা একা সন্তান লালন-পালন অভাগীর জীবনে এসবের অভিজ্ঞতা একটি নাটকের থেকে কম রোমাঞ্চকর ছিল না। তার মৃত্যুর সময়টাকে তাই এই নাটকেরই অন্তিম পর্ব বলা হয়েছে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে অভাগীর স্বর্গ গল্পের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post