অভিজ্ঞতা বর্ণনা লেখার নিয়ম : অভিজ্ঞতা শব্দটি মূলত একটি সংস্কৃত শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সাধনা বা বহুদর্শিতা দ্বারা লব্ধ জ্ঞান। সাধনা বলতে সাধারণত আমরা প্রচেষ্টা অভ্যাস চেষ্টা প্রয়াস ইত্যাদির মাধ্যমে আত্মশক্তি অর্জন বুঝি। আর বহুদর্শিতা হল বিচক্ষণতা ও অনেক কিছু সম্পর্কে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভের পরিচয় লাভ।
অভিজ্ঞতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Experience। একজন মানুষ তার জীবন প্রবাহের বিচিত্র ঘটনাবলী প্রত্যক্ষ করে। এসবের মধ্যে কোন না কোন ঘটনার সুরক্ষিত রূপকে অভিজ্ঞতা বর্ণন বলা যায়। অজানা বিষয়কে জানার জন্য এবং বিচিত্র বিষয়ক উপভোগ করতে এবং প্রকৃতির জ্ঞান সৌন্দর্যকে সৌন্দর্যের অবগাহনের জন্য মানুষ গহীন অরণ্য, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র এবং উষর মরুতে ছুটি বেরিয়ে নানা ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
অভিজ্ঞতা বর্ণনা লেখার নিয়ম
১. যখন অভিজ্ঞতা বর্ণন করতে হবে তখন প্রদত্ত বিষয়টি ভালোভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে।
২. অভিজ্ঞতা বর্ণনের ক্ষেত্রে ঘটনা প্রবাহ থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ নির্বাচন করে নেওয়া উচিত।
৩. প্রাসঙ্গিক ও অপেক্ষাকৃত কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি বর্জন করা উচিত।
৪. অভিজ্ঞতা বর্ণন সম্পূর্ণ ব্যক্তিনির্ভর বিষয় বলে এক্ষেত্রে মেধা-মনন ও অভিরুচির প্রতিফলন ঘটে।
৫. অভিজ্ঞতা বর্ণন সাধারণত গদ্যে লিখিত হয়ে থাকে।
৬. অভিজ্ঞতা বর্ণনে অনুচ্ছেদ বা প্যারার সংখ্যা এক বা একাধিক হতে পারে।
৭. অভিজ্ঞতার ধরন বা প্রকৃতি অনুসারে ভাষা ব্যবহার করা উচিত।
৮. অভিজ্ঞতা বর্ণন মূলত ব্যক্তির একান্ত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার প্রকাশক।
৯. অনেক সময় অভিজ্ঞতা বর্ণনের ভাষার ব্যবহার বর্ণনার সরসতা ও প্রকাশ সুলিখিত সাহিত্যের মর্যাদা পেতে পারে।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা উপযোগি অভিজ্ঞতা বর্ণনা
১. সাইকেল ভ্রমনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
২. একটি রেল স্টেশনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৩. একটি মজার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৪. অমাবস্যা রাতে একাকী পথ চলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৫. নৌকাডুবির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৬. সিডরের রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৭. প্রথম দেখা নৌকাবাইচের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৮ মধুমতি নদীতে হাবুডুবু খাওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
৯. বঙ্গোপসাগরে ভয়ঙ্কর ঢেউয়ের দোলায় তিন ঘন্টার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১০. একজন ভিখারির মহানুভবতার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১১. একটি দুঃখের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১২. ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে তোমার সঞ্চিত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও।
১৩. অসুস্থ বন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১৪. পূর্ণিমা রাতে মেঘনা নদীতে নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১৫. তোমার হোস্টেল জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১৬. সিলেটের চা বাগান ভ্রমণের অর্জিত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১৭. বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বেড়ানোর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১৮. রায়ের বাজার বধ্যভূমি পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
১৯. কালবৈশাখীর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
২০. লালন আখড়া ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
২১. বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২২. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৩. সুন্দরবন ভ্রমণের একদিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৪. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ‘বৈসাবি’ উৎসব পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৫. তোমার কলেজ জীবনের কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৬. নবীনবরণ অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৭. জাতীয় স্মৃতিসৌধ দর্শনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৮. একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা বর্ণনা কর।
২৯. বিজ্ঞান মেলা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখ।
৩০. মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে লেখ।
অনুশীলনের জন্য নমুনা অভিজ্ঞতা বর্ণনা
১. সাইকেল ভ্রমনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : সাইকেলে তিস্তা ভ্রমণ। গত ১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর থেকে শুরু হয় সাইকেল ভ্রমণ। গন্তব্য তিস্তা ব্রিজ। যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৪৬ কিলোমিটার। দু’ঘন্টা ১৫ মিনিট বিরতি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে আমরা ঠিক ১০টা ১৫মিনিটে তিস্তাপারের পৌঁছে যায়। পথে লাভ করে বিচিত্র সব অভিজ্ঞতা। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকেই আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে। আবার কেউ জানিয়েছে অভ্যর্থনা।
আমরা ১২ বন্ধু যখন সেখানে পৌঁছি, তখন সবার চোখে-মুখে সে দেখিয়ে আনন্দ তা বলে বোঝানো যাবে না। সেখানে পৌঁছে আমরা সবাই যার যার প্রিয় ব্যক্তিকে ফোন করে নিজেদের অনুভূতি জানাই। আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের এই অনুভূতি জানানোর সময় ছিল সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিট। অনুভূতি জানানো শেষ হলে শুরু হয়ে যায় গলা ছেড়ে গান গাওয়া, কবিতা আবৃত্তি ও নৌকা ভ্রমন। ১২টা ৩০মিনিটে আমরা সবাই মিলে আবার রংপুর অভিমুখে যাত্রা শুরু করি।
২. একটি রেল স্টেশনের ভয়ংকর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : ২০১৭ সালের ঘটনা। রাজশাহী বেড়াতে গিয়েছি। নাটোরের উত্তরা গণভবনটা দেখতে যাই। সবকিছু দেখে নাটোর রেল স্টেশনে যখন পৌঁছলাম তখন রাত আটটা। ভেবেছিলাম যে সময় হোক ট্রেন পেয়ে যাব। তাই হোটেলে রাতের খাবার খেয়ে স্টেশনের ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসলাম। রাত প্রায় দশটা নাগাদ একজন মাঝ বয়সের লোক ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করে আমার সামনের বেঞ্চে বসলো।
হিমেশ আন্তরিকতার সঙ্গে আমার সঙ্গে আলাপ জমানোর চেষ্টা করছিল। আমিও এখানে কথা বলার একজন লোক পেয়ে খুশিই হয়েছিলাম। লোকটি একসময় আমার পাশে এসে বসে নানা ধরনের কথা বলেই চলছিল। হঠাৎ আমি অনুভব করলাম আমার প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তারপর আমি কিছুই জানিনা। যখন আমার চেতনা ফিরল, দেখি আমি হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি। জানতে পারলাম স্টেশন মাস্টার আমাকে অচৈতন্য অবস্থায় ওয়েটিং রুমে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় এবং তারাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ক্ষণিক পরিচয়ের বন্ধু গ্যাস দিয়ে আমাকে অচেতন করে আমার টাকা -পয়সা, ব্যাগ, ঘড়ি, চশমা, মোবাইল যাবতীয় কিছু নিয়ে চলে গেছে। তারপরের দিন পুলিশের সাহায্যে আমি আবার দেশের ট্রেনে চেপে বসি। বাড়িফেরার জন্য গাড়ি ভাড়ার টাকা তারাই আমাকে দেয়। এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার ঝুড়ি মাথায় নিয়ে আমি বাড়িফিরে আসি।
৩. একটি মজার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : ‘টাইগার’ আমার সবচেয়ে প্রিয়। আমি যখন গ্রামে যায় তখন ওর আনন্দ হচ্ছে সে চোখে পড়ার মতো। কেমন যেন মাতোয়ারা হয়ে যায় আমাকে পেলে। ওর রংটা গাঢ় কালো, গলার কাছে সাদা ডোরা দাগ, উচ্চতা মাঝারি। হ্যাঁ, সে আমার প্রিয় কুকুর। তাকে নিয়ে একটা ঘটনা বা অভিজ্ঞতার কথাই বলব। যারা কুকুরের আচরণগুলো খুব কাছ থেকে দেখে তারাই জানে পোষা কুকুরের সাথে বেওয়ারিশ কুকুরের একটি অঘোষিত শত্রুতা থাকে। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না। কারো এলাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারে না।
আমাদের বাড়িতে টাইগারের সঙ্গে আর একজন থাকে। সে হলো প্রিন্স। রং দুধের মত সাদা। স্বাস্থ্যবান এবং রাগী। সে আমার আদরের বোন আদরের পুষি বিড়াল। পুষি বাড়িতে থাকলেও টাইগার আর পুষির মধ্যে তেমন ভাব-ভালোবাসা চোখে পড়ে না। একে অন্যকে এড়িয়ে চলে বলা যায়। সেদিন বিকট চিৎকারের শব্দে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি চার-পাঁচটা বেওয়ারিশ কুকুর আমার টাইগার কে ঘিরে ফেলেছে এবং আক্রমণ করে প্রায় কোণঠাসা করে ফেলেছে। আমি বিশাল এক লাটি নিয়ে বের হবো হঠাৎ দেখি প্রিন্সের সে কি অগ্নিমূর্তি!
সে এক লাফে টাইগারের পাশে গিয়ে আক্রমনকারী কুকুরগুলোকে আছড়ে, কামড়ে বিব্রত করে তুলছে। এবং সেটা বেওয়ারিশ কুকুর গুলো সহ্য করতে না পেরে রণেভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করেছে। ওদের কর্মকা- দেখে আমি তো বিস্ময়ে হতবাক। আমার এই নতুন মজার অভিজ্ঞতার সাক্ষী কেউ ছিল না বটে, তবে আমি যে সত্যের পরিচয় সেদিন পেলাম তা আমার হৃদয়ে আজও অম্লান। একসঙ্গে থাকলে, বিপদে সাহায্যের হাত বাড়ালে শত্রুও বন্ধু হয়।
৪. অমাবস্যা রাতে একাকী পথ চলার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : মানুষের জীবনে কত রকম ঘটনাই ঘটে। কোন কোন ঘটনার অভিজ্ঞতা প্রায় সারা জীবনে তাকে নাড়া দেয় এবং শিক্ষা দেয়। আমি তখন ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি মফস্বলের একটি কলেজে। বাড়িথেকেই যাতায়াত করি। বাবা চাকরির সুবাদে বাইরে থাকেন এবং ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান। আমাদের বাড়িথেকে উপজেলা সদর প্রায় ১৬ কিলোমিটার। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ের ঘটনা। আমি টাকা তোলার জন্য উপজেলা সদরে গেছি।
ইচ্ছা আছে আসার পথে কিছু কেনাকাটাও করবো। টাকা তুলে কেনাকাটা শেষ করতে প্রায় সন্ধ্যা। দুপুর থেকে বেশ ভারী বর্ষণ হয়ে গেছে। পথঘাট কাদা হওয়াতে কোনো রিকশা-ভ্যান আসতে পারছেনা। আমি দেরি না করে সাহস করে হাঁটা শুরু করলাম। রাত যখন এগারোটা তখনও অর্ধেক পথ আমার সামনে পড়ে আছে। বিলের মাঝখান দিয়ে ফাঁকা রাস্তা। বৃষ্টি হয়ে যাওয়াতে লোকজন নেই। তার উপর ঘুটঘুটে অন্ধকার। নিজের হাতটি পর্যন্ত দেখা যায় না। এ অবস্থায় খুব ভয় করছে। মানুষ কোন কোন সময় এমন অবস্থার মুখোমুখি হয় যখন তার সমস্ত সংস্কার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়।
ভুত-প্রেত আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এসব পরিস্থিতিতে পড়লে মনটা দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন মনের এমন অবস্থা হয় ক্ষীণ, একটা শব্দ হলেও মনটা কেঁপে ওঠে। মোটামুটি দ্রুত হাঁটছি। হঠাৎ অনুভব করছি আমাকে কেউ অনুসরণ করছে। মনে হচ্ছে পায়ের শব্দ। সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভাবলাম দৌঁড় দেই। কিন্তু কতক্ষণ দৌঁড়াবো? লোকালয় তো এখনো অনেক দূরে। এমন সময় হঠাৎ পা পিছলে কাত হয়ে পড়লাম। এই নিশ্চয়ই ভূতের কান্ড। যাইহোক কোনোক্রমে উঠে দাঁড়ালাম। আবার অনুভব করলাম কেউ একজন পিছনে আসছে।
লোক মুখে শুনেছিলাম ভয় পেলে দৌঁড়াতে বা পেছনে তাকাতে নেই, তাতে বিপদ বাড়ে। আমি সাহস করে পিছনে তাকিয়ে দেখি একজোড়া চোখ জ্বলজ্বল করছে। মধ্যরাতের তারার আলোয় অন্ধকার তখন সহনীয় হয়ে এসেছে। দেখলাম একটি কুকুর। কিছুটা সাহস হলো। অবশেষে রাত দুটোর দিকে বাড়িপৌঁছালাম। মা আমাকে দেখেই কেঁদে বুকে জড়িয়ে ধরল। মার কাছে শুনলাম তখন ছিল অমাবস্যা। সে বার আমি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে জরে ভুগেছিলাম। ডাক্তার বলেছিল ঠান্ডা লেগে ও ভয় থেকে জটিল হয়েছে।
৫. নৌকাডুবির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : মানুষ কত বিষয়ে তো অভিজ্ঞতা লাভ করে। তার কোনোটা হাসি-আনন্দের, কোনোটা ব্যথার, কোনোটা ভয়ের। আমার এই অভিজ্ঞতাটাই বড়ই কষ্টের এবং ভয়ের। তখন আমি বেশ ছোট। মামা বাড়িযেতে বেশ খানিকটা, প্রায় তিন ঘন্টার পথ আমাদের নৌকায় করে যেতে হয়। অন্য কোন উপায়ে যাতায়াত করা যেত না। উপরের গোল ছাউনি দেয়া মাঝারি আকারের নৌকা। একজন কী দুজন মাত্র মাঝে থাকতো।
নৌকার ভিতর ঘুমিয়ে বা শুয়ে বসে থাকা যেত। আমার কাছে নৌকা ভ্রমনের এই সময় টুকুছিল দারুণ ভাললাগার এবং লোভনীয়। আষাঢ়ের মাঝামাঝি সময়ের কথা। মামাবাড়িযাচ্ছি অনেকদিন পর মা’র সঙ্গে। ছোটমামা আমাদের নিতে এসেছেন। বাগেরহাট জেলায় থেকে বেবিটেক্সি করে নৌকা ঘাটে যখন পৌছালাম তখন দুপুর গড়িয়ে গেছে। টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছিল সকাল থেকেই, সাথে বেশ জোরালো হাওয়া। মামা একটি নৌকা ভাড়া করলেন। স্থানীয় ভাষায় এসব ছাউনি দেওয়া নৌকাকে বলে ‘টাবুরে’। বদর বদর বলে মাঝি নৌকা ছাড়লো।
আমার বয়সী একটি ছেলে দাঁড় টানছিলো। নদীর বুকে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ, একই সঙ্গে নৌকার দুলুনি, দাঁড় টানার শব্দ এবং মাঝির দরাজ গলায় ভাটিয়ালি গানের সুর – সবমিলিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এক মায়াময় পরিবেশ, যার দোলায় আমি দোলায়িত হচ্ছিলাম। বর্ষার মরা নদীতে তখন প্রবল স্রোতের অনুকূলে আমাদের নৌকাটা তরতর করে চলছিল। ঘুষিখালি নামক স্থানে দাড়টানা এবং পশুর নদীর সঙ্গমস্থল। জায়গাটি ছিল বিপদজনক। কারণ ওখানে ছিল ঘূর্ণিস্রোত। আমাদের যেতে হবে তার উপর দিয়েই। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের নৌকাটি ঘূর্ণিস্রোতে পতিত হলো।
শত চেষ্টা করেও মাঝি নৌকাটি বাঁচাতে পারলেন না। নৌকাটি তখন ডুবে যায় যায় অবস্থায় চক্রাকারে ঘুরছে। ছাউনির ভিতর বাতাস ঢোকার জন্য কোনোরকমে নৌকাটি ভেসে আছে। মা, মামা, মাঝি চিৎকার চেঁচামেচি করছে সাহায্যের জন্য। আমাকে নৌকার ছইয়ের উপর তুলে দিয়ে আর সবাই নৌকাটি ধরে ভেসে আছে। জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে সবাই সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করছিলাম। এমন সময় অন্য আরেকটি বড় নৌকা এসে আমাদের উদ্ধার করে। কিন্তু নৌকাটি বাঁচানো গেল না। জীবনের সে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা আমি কখনো ভুলব না।
৬. সিডরের রাতের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর : সেদিন ছিল ১৫ নভেম্বর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মুহুমুর্হু জনমনে ভীতি ও উৎকণ্ঠার মাত্রা চলছিল। সন্ধ্যা থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছিল দমকা বাতাসের সঙ্গে। আমার মনেও উৎকণ্ঠা ও চাপা উত্তেজনা। রাত ৯ টার দিকে বাতাসের বেগ ক্রমশ বাড়ছিল। আমাদের গ্রামটির পশ্চিমদিকে চিত্রা নদী প্রবাহিত। পশুর নদীর শাখা নদী এটা, জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কাও রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের মহিলা শিশু ও বৃদ্ধদের স্থানীয় সাইক্লোন সেন্টারের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আমাদের ঘরটি অপেক্ষাকৃত মজবুত তাই বেশ কয়েকটি পরিবার আমাদের ঘরে অবস্থান করছে। রাত এগারোটার দিকে শুরু হল ঝড়ের তান্ডব। চারদিকে একটানা শস্য আওয়াজ এবং বিদ্যুতের চমক মনে হচ্ছিল প্রকৃতির বীভৎস অট্টহাসি। জানালা দরজা বন্ধ করে সবাই ঘরে বসে সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরণ করছে। চারদিকে গাছের ডাল ভাঙ্গার বিকট শব্দ ভীতির মাত্রা আরো বাড়িয়ে তুলছিল। হঠাৎ শুনি কয়েকটি কন্ঠের তীব্র চিৎকার। তখন দু’জন প্রতিবেশী ভাইকে সাথে নিয়ে হাতে দা, কুড়াল, দড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম প্রবল ঝড়ের মধ্যেই ওই চিৎকারকে উদ্দেশ্য করে।
সেখানে পৌঁছে দেখি আমাদের সেই প্রতিবেশী ঘরের উপর বিশাল আকারের আম গাছ ভেঙে পড়েছে এবং ঘরের ভেতর কয়েকজন আটকা পড়েছে। মাটির সাথে মিশে যাওয়া ঘরটির টিনের চাল কেটে দুজনকেই উদ্ধার করলাম। ঘরের ভিতরে খাটের তলায় আশ্রয় নেওয়ার জন্য তারা অক্ষত ছিল। হঠাৎ দেখি বাড়ির উঠানে পানির স্রোত, তাড়াতাড়ি ওদেরকে আমাদের ঘরে তুলে দিয়ে অন্যদের উদ্ধারের জন্য বের হলাম।
কিন্তু পানি তীব্রভাবে ঘরে প্রবেশ করছে, তাই বাধ্য হয়ে ফিরতে হল। রাত প্রায় তিনটার দিকে বাতাসের বেগ কমে এলো। পানিও ধীরে ধীরে কমতে শুরু করল। সারা রাতটা কাটিয়ে ভোর হতেই বেরিয়ে পরলাম। সে কি বীভৎস দৃশ্য! চারদিকে ধ্বংসস্তূপ, পশুপাখির মৃতদেহ। সব মিলিয়ে এক ভয়াল অভিজ্ঞতা যা আমার চোখের পাতায় আটকে আছে।
আরো দেখো: ২২টি দিনলিপি (PDF)
শিক্ষার্থীরা, আমরা খুব সহজভাবে তোমাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা লেখার নিয়ম hsc বোঝানোর চেষ্টা করেছি। এখানে আমরা নমুনা হিসেবে ৬টি খুদে গল্প তুলে ধরেছি। তবে তোমরা পিডিএফ উত্তরমালায় মোট ৩০টি পরীক্ষা উপযোগি অভিজ্ঞতা বর্ণনা সংগ্রহ করতে পারো। এর জন্য উপরে দেওয়া বাটনটিতে ক্লিক করো।
ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post