রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, বেহেশতের চাবি হলো নামাজ, আর নামাজের চাবি হলো অজু (মুসনাদে আহমাদ ৩: ৩৪০ পৃ.)। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে নামাজ। নামাজকে জান্নাতের চাবি বলা হয়েছে, আর অজুকে বলা হয়েছে নামাজের চাবি। নামাজ পড়ার পূর্ব অজু করা বাধ্যতামূলক। অযু করার পরে অযু যেন না ভাঙে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাই অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম।
অযু একটি ছোট আমল মনে হলেও তার দ্বারা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের পথে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব যদি তা রাসুলের দেখানো নিয়ম অনুযায়ী হয়। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক (সহীহ মুসলিম: ২২৩)। আর পবিত্র থাকার উত্তম উপায় হচ্ছে অযু অবস্থায় থাকা। এবং অযু ভেঙে গেলে আবার অযু করে নেওয়া।
অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি
রাসুলুল্লাহ সা: বলেন, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ (সহীহ মুসলিম, হাদিস-২২৩)। আর পাক ও পবিত্র থাকার উত্তম উপায় হচ্ছে গোসল ও অযু। তাই অযু ও গোসল যখনই নষ্ট হয়ে যাবে তখনই তা করে নেওয়া উত্তম। অযু করার পরে কীভাবে বুঝবেন অযু নষ্ট হয়ে গেছে তা নিয়ে আজকে আলোচনা করবো।
অযু নষ্ট হওয়ার বিভিন্ন কারণ আছে। তবে, মৌলিক কারণ হচ্ছে ৭ টি। আমরা আজকে সেই ৭ টি কারণ ও সেগুলোর হাদিসের রেফারেন্স সহ আপনাদের জানাবো।
প্রস্রাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হওয়া
প্রসাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে কিছু বের হলে অযু ভেঙে যায়। সেগুলো হতে পারে প্রসাব, পায়খানা, মযি, মনি, বায়ু, কৃমি কিংবা মেয়েদের হায়েয/নিফাসের রক্ত। উক্ত বিষয়ের উপর হাদিস গুলো হচ্ছে-
প্রসাব বা পায়খানার রাস্তা দিলে কিছু বের হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। (আবু দাউদ: ২০৬)
এছাড়া আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, শরীর থেকে কোন কিছু বের হলে, তার কারণে অজু ভেঙে যায়। (সুনানে কুবরা লিলবায়হাকি, হাদিস: ৫৬৮)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, নামাজ পড়ার পূর্বে প্রসাব পায়খানা সেরে পবিত্রতা অর্জন করে নাও। (সুরা মায়িদা, আয়াত: ০৬ )
রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া
অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি এর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে রক্ত, পুঁজ, বা পানি বের হয়ে গড়িয়ে পড়া। শরীরের কোন ক্ষতস্থান থেকে রক্ত, পুঁজ বা কোন ধরনের পানি যেমন- বমি বের হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। উক্ত সমস্যা হলে তাড়াতাড়ি অযু করে নিতে হবে।
আবদুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) এর যখন নাক দিয়ে যখন রক্ত ঝড়তো, তখন তিনি ফিরে গিয়ে আবার অজু করে নিতেন। (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস: ১১০)
আব্দুল্লাহ বিন উমর রাযি. হতে বর্ণিত যখন কারোর নামাজরত বমি হতো বা রক্ত বের হতো তখন তিনি অযু করার ফাতওয়া দিতেন। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৩৬১০)
অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি এর মধ্যে তৃতীয় কারণ মুখ ভরে বমি করা
মুখ ভরে বমি বের হলে বা অর্থাৎ বেশী পরিমাণে বমি হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়। এমন হলে পাক-পবিত্র হওয়ার জন্য আবার অযু করে নিতে হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেন, যদি কোন ব্যক্তির বমি হয়, নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ে অথবা মজি বের হয় তাহলে সে অজু করে নেবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ১২২১)
ইবরাহীম নাখয়ী রহ. কে বমির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যদি তা বেশী পরিমাণে হয় তাহলে অযু করে নিতে হবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৪৩৩)
থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া
অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি মৌলিক কারণের মধ্যে একটি হচ্ছে থুথুর সঙ্গে রক্তের ভাগ সমান বা বেশি হওয়া। থুথুর সঙ্গে থুথু ও রক্ত একসাথে বের হলে এবং রক্ত ও থুথু সমান পরিমাণ হলে বা রক্ত বেশী পরিমাণে হলে অযু ভঙ্গ হয়ে যায়।
হাসান বসরি রহ. বলেন, কোন ব্যক্তি যদি দেখে তার থুথুতে রক্তের পরিমাণ কম এবং থুথুর পরিমাণ বেশী তাহলে তার অযু করা আবশ্যক না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ১৩৩০)
ইবনে সীরীন রহ. বলেন, যদি থুথুতে রক্তের পরিমাণ বেশী থাকে তাহলে অযু করা আবশ্যক। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ৫৬০)
চিৎ বা কাত হয়ে হেলান দিয়ে ঘুম যাওয়া
চিৎ বা কাঁধ হয়ে ঘুমালে বাতকর্ম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের জ্ঞান থাকে না। যার জন্য ঘুমালে ব্যক্তিকে অযু করতে হবে।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেন সিজদারত অবস্থায় ঘুমিয়ে গেলে অযু ভাঙবে না, তবে চিৎ বা কাত হয়ে ঘুমালে শরীর ঢিলে হয়ে যায় [ফলে বায়ু বের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে] । (মুসনাদে আহমাদ ২৩১৫ ও আবু দাউদ ২০২)
ব্যক্তি পাগল, মাতাল বা অচেতন হলে
কোন ব্যক্তি পাগল, মাতাল বা অচেতন হয়ে গেলে ব্যক্তি অযুরত অবস্থায় থাকলে তার অযু নষ্ট হয়ে যাবে। যখন ব্যক্তির জ্ঞান ফিরবে তখন আবার অযু করে নিতে হবে।
পাগল, বেহুঁশ বা কোন ঔষধের কারণে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও অযু ভেঙে যায়। (তিরমিযী: ৯৬)।
হাম্মাদ (রহ.) বলেন,যখন পাগল ব্যক্তি সুস্থ হয়, তখন নামাজের জন্য তার অযু করে নিতে হবে। (মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৪৯৩)
অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি এর শেষ কারণ নামাজে উচ্চস্বরে হাসি দিলে
নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসি দিলে সেই ব্যক্তিকে আবার অযু আদায় করে নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন রাসুল (সাঃ)। তাই অবশ্যই নামাজের মধ্যে উচ্চস্বরে হাসলে আবার অযু করে নামাজ আদায় করতে হবে।
আনাস রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নামাজের সময় কিছু ব্যক্তিদের হাসার কারণে তাদেরকে অযু করার নির্দেশ দিলেন। (দারাকুতনী ৫৮০)
অযু করার সময় অবশ্যই অযুর ফরজগুলো মেনে অযু করতে হবে। যে কোন কাজে ফরজকে অধিক গুরুত্বের সহিত করতে হবে। তাই বলে সুন্নতকে অবহেলা করবেন এমনটা কখনোই নয়।
শেষ কথা
অযু ভঙ্গের কারণ অনেকগুলো রয়েছে। তবে, অযু ভঙ্গের কারণ ৭টি হচ্ছে মৌলিক ও প্রধান কারণ। অযু ভঙ্গের জন্য অন্যান্য যত রকমের কারণ রয়েছে প্রায়ই সবগুলো কারণই এই কারণগুলোর সাথে কোন না কোনভাবে সম্পর্কযুক্ত। তাই উক্ত অযু ভাঙার উক্ত কারণগুলো মেনে চললে অন্যান্য কারণগুলোও মানা হয়ে যাবে।
Discussion about this post