অর্থনীতি ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আইনের শাসন হলো রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিবিশেষ, যেখানে সরকারের সব কার্যক্রম আইনের মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং যেখানে আইনের স্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। ব্যবহারিক ভাষায় আইনের শাসনের অর্থ হলো, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকার সর্বদা আইন অনুযায়ী কাজ করবে এবং রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকের অধিকার লজ্জিত হলে আদালতের মাধ্যমে সে তার প্রতিকার পাবে। আইনের চোখে সবাই সমান এবং কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যে কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হবে- এটাই আইনের শাসনের বিধান।
অর্থনীতি ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: জিনাত একজন কৃষক।তিনি ২ বিঘা জমি চাষ করেন।২০১০ সালে তিনি ১০০০ টাকার শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করে ৩০ মণ ধান উৎপাদন করেছিলেন।২০১১,২০১২ ও ২০১৩ সালে যথাক্রমে ২০০০,৩০০০ ও ৪০০০ টাকার শ্রম ও মূলধন ব্যবহার করে জিনাতের ধানের উৎপাদন হচ্ছে ৫০, ৬৫ ও ৭৫ মণ।
ক. উৎপাদন কী?
খ. স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষকের সকল উপাদান কি স্থির?
গ. উদ্দীপকের ভিক্তিতে মোট উৎপাদন রেখা অঙ্কন করো।
ঘ. উদ্দীপকের প্রান্তিক উৎপাদন কি ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধির সাথে সংগতিপূর্ণÑআলোচনা করো।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. বিভিন্ন উপকরণের সংমিশ্রণে কোনো দ্রব্যে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে যার বিনিময় মূল্য আছে তাকে উৎপাদন বলে।
খ. স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষকের সকল উপাদান স্থির থাকে না; ন্যূনতম একটি উপাদানের পরিবর্তন হয়।
যে উৎপাদন অপেক্ষকে কিছু উপাদান স্থির থেকে এক বা একাধিক উপাদান পরিবর্তন করা যায় তাকে স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক বলে। যেমন- – Q= f(L,K)=4L+3 একটি স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষক।এখানে মূলধন স্থির থেকে শ্রমের পরিবর্তন দেখানো হয়েছে।তাই বলা যায়,স্বল্পকালীন উৎপাদন অপেক্ষকে সকল উপাদান স্থির থাকে না।
গ. উদ্দীপকের তথ্যের আলোকে পাশে জিতানের ধানের মোট উৎপাদন রেখা অঙ্কন করা হলো:
প্রদত্ত চিত্রে ভূমি অক্ষে (OX) শ্রম ও মূলধন ব্যয় এবং লম্ব অক্ষে (OY) মোট উৎপাদনের পরিমাণ পরিমাপ করা হয়েছে।উদ্দীপকে দেখা যায়,জমিতে শ্রম ও মূলধন বাবদ ১০০০ টাকা,২০০০ টাকা,৩০০০ টাকা ও ৪০০০ টাকা ব্যয় করলে মোট ধান উৎপাদন হয় যথাক্রমে ৩০,৫০,৬৫ ও ৭৫ মণ। চিত্রে এ অবস্থাসমূহ যথাক্রমে a,b, c এবং d বিন্দুগুলো দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে।এখন শ্রম ও মূলধন ব্যয় এবং ধানের মোট উৎপাদনের পরিমাণসূচক a,b, c, এবং d বিন্দুগুলো যুক্ত করে রেখাটি TP টানি।এটিই হলো প্রদত্ত তথ্যনুসারে মোট উৎপাদন রেখা।
ঘ. উদ্দীপকের প্রান্তকি উৎপাদনের ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধির সাথে সংগতিপূর্ণ।
দৃশ্যকল্পে কৃষক জিতানের ২ বিঘা জমিতে প্রত্যেক বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ শ্রম ও মূলধন ব্যয়ের দরুন ধানের মোট উৎপাদনের তথ্যাদি দেওয়া আছে।তাতে উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণ স্থির ধরে ধানের মোট উৎপাদনের উপর বর্ধিত শ্রম ও মূলধন ব্যয়ের প্রভাব দেখানো হয়েছে।
প্রদত্ত তথ্যের প্রেক্ষিতে বলা যায়,শ্রম ও মূলধন ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সাথে ধানের মোট উৎপাদন বাড়লেও তা উপকরণ নিয়োগের তুলনায় কম হারে বেড়েছে।যেমন-ধানের প্রান্তিক উৎপাদন নির্ণয় করলে দেখা যায় ১০০০ টাকা,২০০০ টাকা,৩০০০ টাকা ও ৪০০০ টাকা শ্রম ও মূলধন বাবদ বিনিয়োগের দরুন ধানের প্রান্তিক উৎপাদন পাওয়া যায় যথাক্রমে ৩০,২০,১৫ ও ১০ মণ।ধানের প্রান্তিক উৎপাদনের পরিমাণ পর্যালোচনা করে বলা যায়,১০০০ টাকার শ্রম ও মূলধন বিনিয়োগের ফলে ধানের প্রান্তিক উৎপাদন প্রথমে ৩০ মণ হলেও পরবর্তীতে ২০০০ টাকা,৩০০০ টাকা ও ৪০০০ টাকার কম শ্রম ও মূলধন বাবদ বিনিয়োগের ফলে ধানের প্রান্তিক উৎপাদন কমে হয় যথাক্রমে ২০,১৫ ও ১০ মণ।এক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় ধানের মোট উৎপাদন বাড়লেও প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। সুতরাং শ্রম ও মূলধনের বিনিয়োগের ফলে মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।তাই বলা যায়,উক্ত উৎপাদনক্ষেত্রে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধিটি কার্যকর।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: শরীফ সাহেব একটি চিনিকলে কাজ করেন।সব সময় চিনিকলে কাঁচামাল পাওয়া যায় না।তাই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় কারখানাটিতে চিনি উৎপাদন বন্ধ থাকে।আবার কিছু খরচ আছে যা চিনির উৎপাদন বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়।
ক. উৎপাদনের উপকরণগুলো কী কী?
খ. উৎপাদনে স্বল্পকালের ধারণা ব্যাখ্যা করো।
গ. কারখানা বন্ধ থাকলে কি ধরনের ব্যয় বহন করতে হয়?ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উৎপাদন বন্ধ ব্যয় বন্ধ’-কথাটি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. উৎপাদনের উপকরণগুলো হলো-ভূমি,শ্রম,মূলধন ও সংগঠন।
খ. স্বল্পকাল বলতে এমন মেয়াদকে বোঝায় যে সময়ে র্ফাম তার স্থির উপকরণগুলোর পরিবর্তন ছাড়াই কেবল পরিবর্তনীয় উপকরণগুলোর পরিবর্তন দ্বারা উৎপাদনের পরিমাণ পরিবর্তন করতে পারে।
স্বল্পকালে যন্ত্রপাতি,স্থায়ী কর্মচারী,কারখানার আয়তন ইত্যাদির মতো স্থির উপকরণগুলোর কোনো পরিবর্তন ঘটানো যায় না।তাই এগুলোর জন্য যে ব্যয় হয় তা স্থির থাকে।তবে এ সময়ে মজুরি,কাচাঁমাল,পরিবহন,বিদ্যুৎ ইত্যাদিও মতো উপকরণগুলোর পরিমাণের পরিবর্তন ঘটানো যায়।এগুলোর জন্য যে ব্যয় হয় তা হয় পরিবর্তনীয় ব্যয়।উৎপাদন ক্ষেত্রে যত সময় পর্যন্ত এ দু’ধরনের ব্যয়ের অস্তিস্থ থাকে তত সময় পর্যন্ত মেয়াদকে স্বল্পকাল বলা হয়।
গ. কারখানা বন্ধ থাকলেও স্থির ব্যয় বহন করতে হয়।স্বল্পকালে কোনো কারখানার উৎপাদন ব্যয় দু’রকম হয়;যথা-স্থির ব্যয় এবং পরবির্তনীয় ব্যয়।স্থির ব্যয় হলো ঐ ব্যয় যার পরিমাণ উৎপাদনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে না।অর্থাৎ কারখানা খোলা বা বন্ধ যেকোনো অবস্থতায় এ ব্যয় বহন করতে হয়।উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লে বা কমলেও এ ব্যয় একই থাকে।অন্যদিকে উৎপাদনের পরিমাণ বাড়লে যে ব্যয় বাড়ে আবার উৎপাদনের পরিমাণ কমলে যে ব্যয় কমে তাকে পরিবর্তনীয় ব্যয় বলে।উৎপাদনের পরিমাণ পরিবর্তনের সাথে সাথে এ ব্যয়েরও পরিবর্তন ঘটে।
স্বল্পকালের কোনো কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলে তাকে পরিবর্তনীয় ব্যয় নির্বাহ করতে হয় না,তবে তার স্থির ব্যয় অবশ্যই বহন করতে হয়।যেমন-যে কারখানার ভবন বা জমিতে উৎপাদন কাজ চলে সেটি যদি ভাড়া নেওয়া হয় জমির বা ভবনের জন্য যে খাজনা দিতে হবে সেটি স্থির ব্যয়।উৎপাদনের পরিমাণ কমলে বা বাড়লে বা সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও খাজনা দিতে হবে।তেমনি কারখানা পরিচালনা করত গিয়ে যে নেওয়া হয় তার সুদ বাবদ যে ব্যয় হয় তা স্থির ব্যয়ের অন্তগর্ত।উৎপাদনের পরিমাণের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই;নিদিষ্ট সময় অন্তর তা পরিশোধ করতেই হবে। সুতরাং বলা যায়,যদি কারখানা বন্ধও থাকে তারপরও স্থির ব্যয় বহন করতে হয়।
ঘ. ‘উৎপাদন বন্ধ ব্যয় বন্ধ’ কথাটি উদ্দীপকের আলোকে নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
শরিফ সাহেব যে চিনিকলে কাজ করেন তার কাঁচামাল বিষেশ করে আখ কেবল একটি নির্দিষ্ট মেীসুমে পাওয়া যায়,সব সময় পাওয়া যায় না।তাই বছরের যে সময়ে আখ পাওয়া যায় না,সে সময়ে কারখানাটিতে চিনি উৎপাদন বন্ধ থাকে।কারখানার উৎপাদনের এমন অবস্থাতেও কারখানা টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু কিছু খরচ করতে হয়।যেমন-চিনিকলে আধুনিক ও ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে;তার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত কিছু খরচ করতেই হয়।
কারখানাটিতে দু’ধরনের কর্মচারি কাজ করে;স্থায়ী ও অস্থায়ী।কারখানা বন্ধ থাকলে অস্থায়ী কর্মচারিদের বেতন-ভাতা না দিলেও স্থায়ী কর্মচারিদের দিতে হয়।তাছাড়া চিনিকলে বীমা করা আছে;নিয়মিত তার কিস্তি প্রদান আবশ্যিক।আবার কারখানাটিতে যখন উৎপাদন চলে তখন তার যন্ত্রপাতির ক্ষয় হয়,কিছু যন্ত্রপাতি অকেজোও হয়ে পড়ে।সেগুলো নিয়মিতই পুণ:স্থাপন করা প্রয়োজন।
এজন্য কর্তৃপক্ষকে অবচয় ব্যয় বাবদ কিছু অর্থ খরচ করতে হয়।এছাড়া কারখানাটি স্থাপন করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋন নিতে হয়েছে;নিয়মিত তার সুদ পরিশোধ করতেই হয়।এভাবে দেখা যায়,কারখানাটি কিছু সময়ের জন্য বন্ধ থাকলেও তার জন্য একটি মোটা অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার পেক্ষিতে বলা যায়,‘উৎপাদন বন্ধ ব্যয় বন্ধ’কথাটি সঠিক নয়।কারণ,কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলেও ব্যয় বন্ধ থাকে না।
◉ আরও দেখো: অর্থনীতি ১ম ও ২য় পত্র সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির অর্থনীতি ১ম পত্র ৩য় অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে মোট ৫টি প্রশ্ন উত্তর আমরা তোমাদের জন্য তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post