অর্থনীতি ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর : অপ্রকাশ্য ব্যয় বলতে উদ্যোক্তার নিজের শ্রমের মূল্য ও অন্যান্য ব্যয়, স্বনিয়োজিত সম্পদের খরচ যেমন, নিজের বাড়িতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা স্থাপন, অফিস বানানো ইত্যাদি প্রকাশ করে। এ ধরনের ব্যয় ফার্মের হিসাব বইয়ে থাকে না।
যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন ফার্মের ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের বেতন পৃথকভাবে হিসাব না করে মুনাফাকে তার সেবার পারিশ্রমিক হিসেবে গণনা করে। এক্ষেত্রে মালিকের যেকোনো রকমের ভাতাদি অপ্রকাশ্য ব্যয় হিসেবে গণ্য হয়।
অর্থনীতি ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
১. উৎপাদন ও উপকরণ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: উৎপাদন বলতে মূলত উপযোগ সৃষ্টি করাকে বোঝায়। উপকরণ বা প্রাথমিক দ্রব্য ব্যবহার করে নতুন কোনো দ্রব্য বা উপযোগ সৃষ্টি করাকে উৎপাদন বলে। কোনো দ্রব্য উৎপাদন করতে যেসব জিনিস দরকার হয় সেগুলোকে উপকরণ বলে। যেমন—শরবত হলো একটি উৎপাদিত দ্রব্য। এটি তৈরি করতে পানি, চিনি ও লবণের প্রয়োজন হয়। সুতরাং পানি, চিনি ও লবণই হলো শরবতের উপকরণ।
২. কৃষি উৎপাদনে কয়েকটি উপকরণের নাম লিখ।
উত্তর: কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে প্রচুর ধান চাষ হয়। কৃষকের ধান উৎপাদনের উপকরণ হলো:
১. জমি, ২. বীজ, ৩. সার, ৪. পানি, ৫. সেচ ও ৬. শ্রমিক।
৩. সংগঠক-এর ধারণা দাও।
উত্তর: যিনি উৎপাদনের উপকরণ ভূমি, শ্রম, মূলধন প্রভৃতি উপাদানগুলো একত্রিত করে তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন তাকে সংগঠক বলে। একজন সংগঠক কোনো নির্দিষ্ট এক বা একাধিক উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করে থাকেন।
৪. প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান হয় কেন?
উত্তর: মনে করি, আমাদের ভূমি ও শ্রম দুটি উপকরণ আছে। ভূমির পরিমাণ স্থির। প্রথমে শ্রমের পরিমাণ কম থাকায় প্রান্তিক শ্রম বৃদ্ধি পেলে প্রান্তিক শ্রমের জন্য পর্যাপ্ত ভূমি থাকে। এ কারণে প্রান্তিক শ্রমের বৃদ্ধির চেয়ে প্রান্তিক উৎপাদন বেশি হয়। অর্থাৎ উৎপাদন ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ক্রমাগত বেশি পরিমাণ উপকরণ নিয়োগ করতে থাকলে প্রান্তিক উৎপাদন ক্রমশ কমে। এর কারণ হলো অতিরিক্ত শ্রম নিয়োগ করায় প্রতি একক শ্রমের জন্য ভূমি কম থাকে। ফলে উৎপাদন ক্রমহ্রাসমান হারে বাড়ে।
৫. ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধির মূল কথাটি কী?
উত্তর: যদি কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে ক্রমাগতভাবে অধিক শ্রম ও মূলধন নিয়োগ করা হয় তাহলে শ্রম ও মূলধন যে হারে নিয়োগ করা হয় উৎপাদন তা অপেক্ষা কম হারে বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধির এ প্রবণতাই অর্থনীতিতে ক্রমহ্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদন বিধি নামে পরিচিত। “বর্ধিত পরিমাণ মূলধন ও শ্রম কৃষিক্ষেত্রে নিয়োগ করলে উৎপাদন সাধারণত আনুপাতিক হার অপেক্ষা কম হারে বৃদ্ধি পায়। এটিই ক্রমহ্র্রাসমান প্রান্তিক উৎপাদনের মূলকথা।”
৬. আর্থিক ও প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের ধারণা দাও।
উত্তর: আর্থিক উৎপাদন ব্যয়: কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো একটি দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন করতে উৎপাদককে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। এ উপকরণগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয়, কাঁচামালের জন্য ব্যয়, শ্রমিকের মজুরি, যন্ত্রপাতি, স্থির জমি, ঘর, আসবাবপত্র ইত্যাদি। এসব ব্যয়কে আর্থিক উৎপাদন ব্যয় বলে।
প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়: এ ধরনের ব্যয় একটি মানবিক ধারণা, যা টাকার অঙ্কে পরিমাপ করা যায় না। যেমন, নুরু মিয়া ও তাঁর ছেলের ঘুম ও আরাম ত্যাগ, লেখকের বই লেখার সময়ে আরাম, আনন্দ, বিশ্রাম, ঘুম ত্যাগ। আবার শ্রমিকের শ্রম জোগান দিতে বিশ্রাম ও আরাম ত্যাগ। এ ধরনের ব্যয়কে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রকৃত উৎপাদন ব্যয় বলে।
৭. প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ব্যয় কী? উদাহরণসহ ধারণা দাও।
উত্তর: কোনো উৎপাদনী প্রতিষ্ঠান ভাড়া বা উপকরণ ক্রয়ের জন্য দৃশ্যমান যে ব্যয় করেন এদের সমষ্টিকে প্রকাশ্য ব্যয় বলে। যেমন উৎপাদনী প্রতিষ্ঠান বা ফার্মে কর্মরত মানুষের বেতন ও ভাতাদি, কাঁচামাল, মাধ্যমিক দ্রব্য ক্রয়ের জন্য ব্যয়, বিভিন্ন ধরনের স্থির ব্যয় যেমন, বাড়ি ভাড়া, মূলধনের সুদ ইত্যাদি।
অপ্রকাশ্য ব্যয় বলতে উদ্যোক্তার নিজের শ্রমের মূল্য ও অন্যান্য ব্যয়, স্বনিয়োজিত সম্পদের খরচ যেমন, নিজের বাড়িতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা স্থাপন, অফিস বানানো ইত্যাদি প্রকাশ করে। এ ধরনের ব্যয় ফার্মের হিসাব বইয়ে থাকে না। যেমন ব্যক্তিমালিকানাধীন ফার্মের ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের বেতন পৃথকভাবে হিসাব না করে মুনাফাকে তার সেবার পারিশ্রমিক হিসেবে গণনা করে। এক্ষেত্রে মালিকের যেকোনো রকমের ভাতাদি অপ্রকাশ্য ব্যয় হিসেবে গণ্য হয়।
৮. মূলধন কীভাবে গঠিত হয়?
উত্তর: মানুষের উৎপাদিত উপকরণ থেকে মূলধন সৃষ্টি হয়। মূলধন হলো মানুষ কর্তৃক উৎপাদিত একমাত্র উৎপাদনের উপকরণ। এই উপকরণ মানুষ ভোগ না করে সঞ্চয় করে এবং ভবিষ্যৎ উৎপাদনে ব্যয় করে। অর্থাৎ মানুষের উৎপাদিত উপকরণের যে অংশ মানুষ ভোগ না করে নতুন দ্রব্য উৎপাদনের জন্য রেখে দেয় তাই হলো মূলধন।
৯. সময়মতো উৎপাদন বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: সময়মতো উৎপাদন বলতে সময়ের ব্যবধানে কোনো জিনিসের উৎপাদন ও উপযোগ বৃদ্ধিকে বোঝায়।
একটি দ্রব্যের উৎপাদন সময়ের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন পৌষ মাঘ মাসে ধানের মৌসুমে ফলন বেশি হয় বলে এ সময়ে ধানের দাম কম থাকে। তবে এ সময়ে ধান মজুদ করে ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বিক্রি করলে বেশি দাম পাওয়া যায়। এ ধরনের উৎপাদনই হলো সময়মতো উৎপাদন।
১০. মালিকানা উৎপাদন কীভাবে সৃষ্টি করা হয়?
উত্তর: অব্যবহৃত বা ব্যবহৃত জমি কিনে চাষাবাদ করে ফসল ফলানোর মাধ্যমে মালিকানা উৎপাদন সৃষ্টি করা যায়। কোনো কোনো অর্থনৈতিক দ্রব্য ও সেবার মালিকানা পরিবর্তন করে অতিরিক্ত উৎপাদন সৃষ্টি করা যায়। একে মালিকানা উৎপাদন বলে।
আরও দেখো—অর্থনীতি অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের অর্থনীতি ৪র্থ অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য এই অধ্যায় থেকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর দেওয়া হলো—প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের জন্য উপরের লিংকটি ভিজিট করো।
Discussion about this post