কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের কাছে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হবে। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদের নাম হচ্ছে– শব্দের উচ্চারণ। কোর্সটিকায় আজকে বাংলা বইয়ের শব্দের উচ্চারণ পরিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
শব্দের উচ্চারণ পরিচ্ছেদটি এখানে আলোচনা করার পরেও এই টপিকগুলো নিয়ে তোমাদের সমস্যা থাকতে পারে। সেই সকল সমস্যা সমাধান ও বইয়ে দেওয়া কাজগুলোর সমাধানও তোমরা উক্ত ক্লাসে পেয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটির কঠিন বিষয়গুলো তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান
শওকত আলী (১৯৩৬-২০১৮) বাংলাদেশের একজন কথাসাহিত্যিক তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন”, “দক্ষিণায়নের দিন”, ‘কুলায় কালস্রোত’, ‘পূর্বরাত্রি পূর্বদিন’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। নিচের গল্পাঃশটুকু তাঁর ‘যাত্রা’ উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে।
যাত্রা
শওকত আলী
হুড়োহুড়ি পাড়াপাড়ি করে নৌকায় উঠছে। –আস্তে আস্তে, ভিড় কইরো না, আর উইঠেন না–নাও ডুববো কইলাম। কিন্তু কেউ কারো কথা শোনে না।
এই মাঝি, এদিকে আনো–ধমকে উঠল কেউ। ওদিকে আরেকটা নৌকা আসছে, ওদিকে যান না ভাই– ধীরে সুস্থে কাজ করুন।
নৌকাটা ডুবো ডুবো অবস্থায় ছাড়ল। প্রফেসরের স্ত্রী চশমা চোখে, দু চোখে কালি পড়েছে নির্ঘুম রাতের। বাচ্চা দুটি কখনো নৌকায় চাপেনি__নৌকার দুলুনিতে ডাক ছেড়ে কেঁদে উঠল। এক বুড়ি চিৎকার করতে শুরু করল–রাখাইল্যা রইয়া গেলো, নাও ঘুরাও, বাবারা নাওডারে ঘুরাইতে কও, আমার রাখাইল্যা রইয়া গেলো। বুড়ির কথা শোনে না কেউ।
প্রফেসরের বাচ্চা দুটি কাঁদছে ভয় পেয়ে, তাদের কথাও শোনে না কেউ। পায়ের ব্যথাটা ভয়ানক টনটন করছে এখন। এতক্ষণ টের পায়নি। এবার পায়ের ওপর হাত বোলাল। হাতের ব্যথার জন্যে চিন্তা নেই। হাতটা তো কোনো কাজে লাগছে না। পা-টা টেনে নিয়ে চলতে হবে এটাই সমস্যা।
পেছনে তাকায় না কেউ। অথচ পেছনে পিলপিল করে মানুষ নেমে আসছে নদীর ঘাটে। কাকুতি মিনতি করছে নৌকার জন্যে। কিন্তু মাত্র ক খানি তো নৌকা_মাঝিদের পয়সা চাইতে হয় না, সওয়ারিরাই দাম হাঁকছে দশ টাকা দেবো, এদিকে এসো। তবে এ হাঁকডাকই সার। কারো কথা শোনার জন্যে কেউ বসে নেই। স্বেচ্ছাসেবক কয়েকজন ছয়তারা মার্কা টুপি মাথায় হাঁকছে– কেউ বেশি পয়সা নেবে না। যা রেট তার এক পয়সাও বেশি নয়।
কিন্তু সম্মিলিত শব্দ আর কোলাহল শুধু। পেছনে তাকায় না কেউ। শুধু অধীর আগ্রহ, নৌকা এখন তীর ছৌবে। প্রফেসর গিন্নি কী ভাবছেন যেন। তাঁর হাতে ঘড়ি বালা চুড়ি সব একসাথে শোভা পাচ্ছে। বোধহয় অনিশ্চিত পথের কথা ভেবে ঐ রকম জিনিসপত্র হাতে একসঙ্গে ঢুকিয়ে নিয়েছেন। প্রফেসরও সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন, এবার ডাইনে-বাঁয়ে তাকিয়ে নিলেন একবার। দেখছেন সামনে, তীরে অসংখ্য লোক দাঁড়িয়ে।
পরিচিত মুখ দেখে কেউ কেউ উদ্বিগ্ন স্বরে স্বজনের খোঁজ করছে। আমার ভাই আনসারকে দেখেননি? ও তো ইসলামপুর ফাঁড়ির পেছনের বাড়িটাতে থাকত। আহা নয়াবাজারের কাঠগোলায় মনোহর থাকে, তারে দেহো নাই? কী-ই, সব জ্বালাইয়া দিছে, আহারে। হালারা জানোয়ার নাকি! ঢাহা থুইবো না। আল্লায় বিচার করবো- আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর, দেইখ্যেন। শ্যাক সায়েবের খবর জানেন কিছু? ছাত্রগো সবাইরে নাকি মাইরা ফালাইছে?
কত কথা, কত জিজ্ঞাসা, কেউ উত্তর দিতে পারে না। হাসানকে জিজ্ঞেস করে প্রফেসর রায়হান বলেন, কী ভাই, পারবে তুমি?
জি, পারব। হাসান জবাব দেয়। পায়ের জখম বেশি নয়। হাতটা জখম হয়েছে বেশি__তা হাতের তো কোনো কাজ নেই এখন।
নৌকা ভিড়তেই লাফ দিয়ে নামতে শুরু করল সবাই। কারো তর সয় না। রায়হান স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, পারবে নামতে?
স্ত্রী কিছু বললেন না, পা নামিয়ে দিলেন পানিতে, প্রায় হাঁটু পর্যন্ত উঠে গেল কাপড়। নিচের দিকে বুঝি বা কিছুটা ভিজল। একটি বাচ্চাকে কোলে নিলেন, তারপর উঠে গেলেন তীরে। পেছনে আরেকটি বাচ্চাকে নিয়ে প্রফেসর রায়হান, হাঁটু পর্যন্ত প্যান্ট ভেজা। হাসান পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, পরের নৌকায় তিনটি মেয়ে। ওর মধ্যে
একজনকে চিনল, ইউনিভার্সিটির মেয়ে, সহপাঠী–আর বাকি দুজন, কে জানে, হয়তো ইউনিভার্সিটিরই। সবার চোখে শূন্য দৃষ্টি। রাখালের মা কখন নৌকা থেকে নেমে গেছে, কারো চোখে পড়েনি।
কোথ্থেকে আসছেন ভাই? রাজারবাগ? কী খবর ঢাকার? আচ্ছা, শান্তিনগর এলাকা কি এফেক্টেড?
কোন জায়গা এফেক্টেড নয়! কত লোক মেরেছে? যাকে প্রশ্ন করা হয় সে উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। অন্য লোক দাঁতমুখ খিচিয়ে ওঠে যান মিয়া, দেইখ্যা আহেন__মস্করা করতে আইছেন, হঃ! কেউ বলে, বলা যায় না–পাঁচ হাজার হতে পারে, দশ হাজার, পনেরো হাজার–সব রকমের হতে পারে।
স্যার আপনি?
ছাত্র দেখতে পেয়ে রায়হানের মুখে প্রথম হাসি ফোটে।
এদিকে কোথায় যাবেন? কোনো আত্মীয় আছে এদিকে? বড়ো বাচ্চাটিকে কোলে তুলেই বলে ওঠে, একি স্যার, এর গায়ে যে জ্বর! বিনু মৃদু গলায় জানান, হ্যাঁ ভাই, দুজনেরই জ্বর তবু ওদের যে বাঁচিয়ে নিয়ে আসতে পেরেছি, তাই ভাগ্যি।
ভাববেন না ভাবি, ছেলেটি আশ্বাস দিতে চায়। বলে, এখানে আর কোনো ভয় নেই। এপারে ওরা আসতে সাহস পাবে না- আমরা প্রিপেয়ার্ড। হাত তুলে দেখায় ছেলেটি চারদিকে। রায়হান দেখেন, বিনু দেখেন। দেখেন শুধু, কিছু বলেন না। ম্লান হাসি ফোটে দুজনের মুখে।
হাসানেরও হাসি পায়। শটগান কয়েকটা, আর গোটা তিনেক ৩০৩ রাইফেল নিয়ে কয়েকটি ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমগাছ তলায়। কয়েকজনের হাতে শুধুই বাঁশের লাঠি। হাসি পায় শুধু, কোনো মন্তব্য করে না।
ইতিমধ্যে পরের নৌকা দুটিও এসে পৌঁছেছে। নেমে আসছে মানুষ। ঐ দেখো ওপারে একটা নৌকা কাত হয়ে উলটে গেল একেবারে। বুড়িগঙ্গায় এখন ধীর স্রোত। মরা খালে সবুজ রঙের পানি। গালাগাল দিচ্ছে একজন। হুড়মুড় করে দুটি তরুণ নৌকা থেকে নেমে ভিড় ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে। মুখে বলছে–চিন্তা নাই, খালি ঢাকা শহর অগো হাতে, ইদিক চিটাগাং খুলনা সব জেলা স্বাধীন হইয়া গেছে। আমাগো যাইতে দেন, রাস্তা ছাড়েন।
ছেলে দুটির পরনে লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি, একজনের গলায় লাল রুমাল বাঁধা- কোমরে গুলির বেল্ট। সেখানে কমলা রঙের এলি কোম্পানির কার্টিজ ভর্তি, হাতে একনলা বন্দুক- বন্দুকের বেল্ট নেই, একটা সরু দড়ি দিয়ে বাঁধা। পান চিবোচ্ছে দুজনে। আসগার ওদের দিকে তাকিয়ে রায়হানকে বলে, দেখছেন তো স্যার–চারদিক থেকে আসছে এরা–সব জমা হচ্ছে এপারে।
খাড়া পাড়, উঠতে কষ্ট হয়। হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগটা এখনই ভারী লাগছে। বিনুর কষ্ট হচ্ছে শুধু স্যান্ডেলজোড়া হাতে, কিন্তু তবু কষ্ট হচ্ছে। রায়হানের ইচ্ছে হয় গিয়ে হাতটা ধরেন। কিন্তু পারেন না। ওদিকে তর তর করে অন্যান্য মেয়ে-পুরুষ পাড় বেয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। একটি তরুণী মেয়ে ওড়না গলায় ঝোলানো–নিচ থেকে টেনে তোলার জন্যে হাত বাড়িয়ে হাসিমুখ একটি তরুণকে ডাকছে।
শব্দের অর্থ
আশ্বাস: ভরসা।
প্রিপেয়ার্ড: প্রস্তুত
ইন্টিরিয়র: ভিতরের দিক।
ফাঁকফোকর: ছোটোবড়ো ছিদ্র।
এফেক্টেড: আক্রান্ত।
বিভ্রান্ত: দিশেহারা।
কম্বায়োটিক: এক ধরনের ওষুধ।
মনস্থির করা: সিদ্ধান্ত নেওয়া
কাকুতি মিনতি: অনুনয়-বিনয়।
মস্করা: ঠাটা।
জলসীমা: জলভাগের সীমানা।
সওয়ারি: আরোহী।
টনটন: ব্যথার ভাব
স্বেচ্ছাসেবক: স্বেচ্ছায় সেবাদানকারী।
দিশেহারা: কী করতে হবে বুঝতে না পারা।
ভাষারূপের পরিবর্তন
“যাত্রা” গল্পের কথোপকথনের কয়েকটি জায়গায় আঞ্চলিক ভাষারীতির প্রয়োগ করা হয়েছে। গল্প থেকে এ রকম কয়েকটি বাক্য নিচের ছকের বাম কলামে লেখো এবং ডান কলামে বাক্যগুলোর প্রমিত রূপ নির্দেশ করো। কাজ শেষে সহপাঠীদের সঙ্গে উত্তর নিয়ে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি করে দেখানো হলো।
আঞ্চলিক বাক্য: আস্তে আস্তে, ভিড় কইরো না, আর উইঠেন না–নাও ডুববো কইলাম।
প্রমিত রূপ: আস্তে আস্তে, ভিড় কোরো না, আর উঠবেন না– নৌকা ডুবে যাবে বলছি।
ভাষার প্রমিত ও অপ্রমিত রূপ
অঞ্চলভেদে ভাষার ভিন্ন ভিন্ন রূপ থাকে। ভাষার এই রূপ-বৈচিত্র্যকে বলে আঞ্চলিক ভাষা। বাংলাদেশে বাংলা ভাষার অনেকগুলো আঞ্চলিক রূপ আছে। যেমন: খুলনার আঞ্চলিক ভাষা, নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষা, ভাষা, রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা ইত্যাদি। কোনো শব্দ অঞ্চলভেদে আলাদাভাবে উচ্চারিত হতে পারে, কিংবা একই অর্থে আলাদা শব্দের প্রয়োগ হতে পারে।
বাক্যের গঠনও অনেক সময়ে আলাদা হয়। আঞ্চলিক ভাষা সাধারণত মানুষের প্রথম ভাষা- এই ভাষাতেই মানুষ কথা বলা শুরু করে এবং ক্রমে সে প্রমিত ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়। গল্প-উপন্যাস-নাটকে বিভিন্ন চরিত্রের মুখে আঞ্চলিক ভাষার প্রয়োগ দেখা যায়। তাতে এসব চরিত্র অধিক বিশ্বস্ত ও বাস্তব হয়ে ওঠে।
ভাষার এই আঞ্চলিক রূপ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগে কিছু সমস্যা তৈরি করে। সেই সমস্যা দূর করার জন্য ভাষার একটি রূপকে প্রমিত হিসেবে গ্রহণ করা হয়, যাতে সব অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারে। একই কারণে দেশের যাবতীয় আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে, শিক্ষা কার্যক্রমে, দাপ্তরিক কাজে,
গণমাধ্যমে, সাহিত্যকর্মে ভাষার প্রমিত রূপ ব্যবহৃত হয়। ভাষার এই সর্বজনগ্রাহ্য রূপের নাম প্রমিত ভাষা।
প্রমিত ভাষার দুটি রূপ আছে: কথ্য প্রমিত ও লেখ্য প্রমিত। কথ্য প্রমিত ব্যবহৃত হয় আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার সময়ে, অন্যদিকে লেখ্য প্রমিত ব্যবহৃত হয় লিখিত যোগাযোগের কাজে।
শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য অষ্টম শ্রেণির বাংলা ২য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হলো। শব্দের উচ্চারণ পরিচ্ছেদটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, প্রতিটি টপিক ভালোভাবে বুঝতে ও বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো সমাধানের জন্য উপরে ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটি করলে শব্দের উচ্চারণ পরিচ্ছেদে থাকা বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post