কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের কাছে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হবে। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদের নাম হচ্ছে– বিশ্লেষণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য। কোর্সটিকায় আজকে বাংলা বইয়ের বিশ্লেষণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিশ্লেষণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছেদটি এখানে আলোচনা করার পরেও এই টপিকগুলো নিয়ে তোমাদের সমস্যা থাকতে পারে। সেই সকল সমস্যা সমাধান ও বইয়ে দেওয়া কাজগুলোর সমাধানও তোমরা উক্ত ক্লাসে পেয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটির কঠিন বিষয়গুলো তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান
যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো লেখাকে বিশ্লেষণমূলক লেখা বলা যায়, সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে তিনটি বৈশিষ্ট্য নিচে লেখো। লেখার পরে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
এখানে হুমায়ুন আজাদের লেখা একটি বিশ্লেষণমূলক রচনা দেওয়া হলো।
হুমায়ুন আজাদ (১৯৪৭-২০০৪) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ও ভাষাবিজ্ঞানী। তিনি কবিতা ও উপন্যাসও লিখেছেন। তাঁর লেখা ভাষা-বিষয়ক বই “কতো নদী সরোবর” এবং বাংলা সাহিত্যের পরিচিতিমূলক বই “লাল নীল দীপাবলি”। তাঁর লেখা ভাষাবিজ্ঞানের বই “বাক্যতত্ত্ব”, “তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান”।
শব্দ থেকে কবিতা
হুমায়ুন আজাদ
কবিতা কাকে বলে, বলা খুব মুশকিল। কিন্তু আমরা যারা পড়তে পারি, তারা কম-বেশি কবিতা চিনি। কবিতারও চেহারা আছে। যে লেখাগুলো পড়লে মন নেচে ওঠে; গান গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে, চোখে বুকে রং-বেরঙের স্বপ্ন এসে জমা হয়, তা-ই কবিতা। যা পড়লে, দু-তিনবার পড়লে আর ভোলা যায় না, মনের ভেতর যা নাচতে থাকে, তা-ই কবিতা।
কবিতা কারা লেখেন? কবিরা লেখেন কবিতা। তাঁরা একটি শব্দের পাশে আরেকটি শব্দ বসিয়ে, একটি শব্দের সাথে আরেকটি শব্দ মিলিয়ে কবিতা লেখেন। আমরা যদি কিছু বানাতে চাই, তাহলে কিছু-না-কিছু জিনিস লাগে। উপমা একটি ঘুড়ি বানাতে চায়। ঘুড়ি বানানোর জন্যে উপমার দরকার লাল-নীল কাগজ, সুতো, বাঁশের টুকরো।
মৌলি একটি পুতুল বানাতে চায়। তার দরকার হলদে টুকরো কাপড়, সুতো, তিনটা লাল বোতাম, দুটো সবুজ কাঁটা, একটু তুলো। তেমনি কবিতা বানাতে হলেও জিনিস চাই। কবিতার জন্যে দরকার শব্দ__রংবেরঙের শব্দ। ‘পাখি’ একটা শব্দ, “নদী” একটা শব্দ, “ফুল” একটা শব্দ, “মা” একটা শব্দ; এমন হাজারো শব্দের দরকার হয় কবিতা লেখার জন্যে। কবি হতে পারে কে?
সে-ই হতে পারে কবি, যে লিখতে পারে কবিতা, যার ভালোবাসা আছে শব্দের জন্যে। যে শব্দকে ভালোবাসে খুব, শব্দকে আদর করে করে যে সুখ পায়, সে-ই হতে পারে কবি। কবিরা গোলাপের মতো সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, চাঁদের মতো স্বপ্ন দেখেন। তুমিও গোলাপের মতো সুন্দর কথা বলতে চাও? চাদের মতো স্বপ্ন দেখতে চাও? তোমার যদি শব্দের জন্যে আদর-ভালোবাসা না থাকে, তাহলে পারবে না তুমি গোলাপের মতো লাল গন্ধভরা কথা বলতে, চাঁদের মতো জ্যোৎস্না ভরা স্বপ্ন দেখতে।
তুমি কি লিখতে চাও ফুলের মতো কবিতা? বানাতে চাও নূপুরের মতো ছড়া? যদি চাও তবে তোমাকে সারাদিন ভাবতে হবে শব্দের কথা। খেলতে হবে শব্দের খেলা। নানা রকমের শব্দ আছে আমাদের ভাষায়। তোমাকে জানতে হবে সেসব শব্দকে। কিছু কিছু শব্দ আছে, যেগুলোর গায়ে হলুদ-সবুজ-লাল-নীল-বাদামি- খয়েরি রং আছে। তোমাকে চিনতে হবে শব্দের রং।
অনেক শব্দ আছে, যেগুলোর শরীর থেকে সুর বেরোয়; কোনো কোনো শব্দে বাঁশির সুর শোনা যায়, কোনো কোনো শব্দে শোনা যায় হাসির সুর। কোনো শব্দে বাজে শুকনো পাতার খসখসে আওয়াজ, কোনোটিতে বেহালার সুর। কোনো কোনো শব্দ তোমার পায়ের নূপুরের মতো বাজে। তোমাকে শুনতে হবে শব্দের সুর ও স্বর। অনেক শব্দ আছে বাংলা ভাষায় যেগুলোর শরীর থেকে সুগন্ধ বেরোয়।
কোনোটির শরীর থেকে ভেসে আসে লাল গোলাপের গন্ধ, কোনোটির গা থেকে আসে কাঁঠালচাপার ঘ্রাণ, কোনোটি থেকে আসে বাতাবিলেবুর সুবাস। তুমি যদি দেখতে পাও শব্দের শরীরের রং, শুনতে পাও শব্দের সুর, টের পাও শব্দের সুগন্ধ, তাহলেই পারবে তুমি কবি হতে।
কবিরা শব্দ দিয়ে লেখেন নানা রকমের কবিতা। কখনো তাঁরা খুব হাসির কথা বলেন, কখনো বলেন কান্নার কথা। কখনো তাঁরা বলেন স্বপ্নের কথা, কখনো তাঁরা চারপাশে যা দেখেন, তার কথা বলেন। কিন্তু সব সময়ই তাঁরা কথা বলেন শব্দে। শব্দ বসিয়ে বসিয়ে তাঁরা বানান কবিতা। কবিতা লিখতে হলে প্রথমেই জানতে হবে নানা রকমের শব্দ। তারপর আসে শব্দ দিয়ে যা বলতে চাই, তার কথা।
কিন্তু কীভাবে বলা যায় সেই কথা? কবিতায় আমরা অনেক কিছু বলতে পারি। কখনো বলতে পারি ঘর-ফাটানো হাসির কথা। বলতে পারি টগবগে রাগের কথা। বলতে পারি খুব চমৎকার ভালো কথা। কখনো বাজাতে পারি নাচের শব্দ। আবার কখনো আঁকতে পারি রঙিন ছবি। কিন্তু সবসময়ই মনে রাখতে হবে, ওই কথা নতুন হতে হবে। যা একবার কেউ বলে গেছে, যে ছবি একবার কেউ এঁকে গেছে, তা বলা যাবে না, সে ছবি আঁকা যাবে না।
আর কথা বলতে হবে, নাচতে হবে, ছবি আঁকতে হবে ছন্দে। তাই কবিতা লিখতে হলে শব্দকে জানতে হবে, জানতে হবে ছন্দ, আর থাকতে হবে স্বপ্ন। যার চোখে স্বপ্ন নেই, সে কবি হতে পারে না। স্বপ্ন থাকলে মনে আসে নতুন ভাবনা, নেচে নেচে আসে ছন্দ, আর শব্দ।
যে কোনো বিষয় নিয়েই তুমি লিখতে পারো কবিতা। বাড়ির পাশের গলিটা, দূরের ধানক্ষেতটা, পোষা বেড়ালটা বা পুতুলটাকে নিয়ে কবিতা লেখা যায়, যদি মনে স্বপ্ন থাকে। রাস্তার দোকানিকে নিয়ে কবিতা লেখা যায়, যদি স্বপ্ন থাকে। আর যা নেই, তা নিয়েও কবিতা লেখা যায়, যদি স্বপ্ন থাকে। এবার একটা কবিতা লেখা যাক। কবিতাটির নাম দিচ্ছি “দোকানি” রাস্তার মোড়ের দোকানদারকে তুমি-আমি চিনি। সে বিক্রি করে সাদা দুধ, খয়েরি চকোলেট, লাল পুতুল, সবুজ পান।
এসব জিনিস আমরা কিনে খাই, দোকানিকে চকচকে টাকা দিই। তার জিনিসপত্র বিক্রি দেখে মাথায় আমার একটা ভাব এলো। ভাবটা হলো: আমি একটা দোকান খুলেছি দুদিন ধরে, কিন্তু সে দোকানে দুধ, চকোলেট, পান বিক্রি হয় না। বিক্রি হয় এমন সব জিনিস, যা কেউ বেচে না, যা কেউ কেনে না। শুধু স্বপ্নেই সেসব জিনিস বেচাকেনা চলে। ভাবটা মাথায় এলো, সঙ্গে শব্দ এলো, আর ছন্দ এলো। প্রথমে লিখলাম:
দুদিন ধরে বিক্রি করছি
চকচকে খুব চাঁদের আলো
টুকটুকে লাল পাখির গান।
কথাটাই চমক দেয় সবার আগে: চকচকে চাঁদের আলো, টুকটুকে লাল পাখির গান বিক্রির ব্যাপারটা বেশ নতুন। সারা পৃথিবীতে খুঁজে এমন দোকান পাওয়া যাবে না। ছন্দটাও বেশ, দুলে দুলে আসছে। এ তিনটি পঙ্ক্তি পড়ার সাথে সাথে শব্দ, ছন্দ, কথা মিলে এক রকম স্বপ্ন তৈরি হয় চোখে আর মনে। এরপর আরো এগিয়ে গিয়ে লিখলাম:
বিক্রি করছি চাঁপার গন্ধ
স্বপ্নে দেখা নাচের ছন্দ
গোলাপ ফুলের মুখের রূপ।
এখানে ছন্দ-মিল আরও মধুর। বিক্রির জিনিসগুলো আগের মতোই চমকপ্রদ। তবে এখানে স্বপ্ন আরও বেড়েছে, ছবিও আরও রঙিন। চাঁপার গন্ধ পাওয়া গেল এবং বেজে উঠল স্বপ্নে দেখা নাচের ছন্দের নূপুর। এ নাচ স্বপ্ন ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় না, এমন নাচ নাচতে পারে না কেউ। “গোলাপ ফুলের মুখের রূপ” বলার সাথে সাথে
ফুল একটি মুখের মতো ফুটে উঠল, মুখ হয়ে উঠল গোলাপ, আর গোলাপ হয়ে উঠল মুখ। স্বপ্ন জড়ো হলো চোখে।
শব্দের অর্থ
কাঁঠালচাপা: একটি ফুলের নাম।
চমকপ্রদ: যা অবাক করে দেয়।
ভাব: অনুভূতি।
ছন্দ: কবিতার তাল।
পড়ে কী বুঝলাম
“শব্দ থেকে কবিতা” রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।
ক. কবিতার বিষয় সম্পর্কে লেখকের ভাবনা কী? তোমার চারপাশে এমন কী কী বিষয় আছে যেগুলো নিয়ে কবিতা লেখা যেতে পারে?
খ. “কবিতা লিখতে হলেই নতুন কথা ভাবতে হবে, আর সে কথাকে পরিয়ে দিতে হবে শব্দ ও ছন্দের রঙিন সাজপোশাক।’–লেখক এ কথা দিয়ে কী বুঝিয়েছেন?
গ. কবিতা পড়তে ভালো লাগে কেন?
লেখা নিয়ে মতামত
“শব্দ থেকে কবিতা” রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা নিচের ছকে লেখো। কাজ শেষে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা দেওয়া হলো।
“শব্দ থেকে কবিতা” রচনায় যা আছে: যে লেখাগুলো পড়লে মন নেচে ওঠে; উঠতে ইচ্ছে করে, চোখে বুকে রং-বেরঙের স্বপ্ন এসে জমা হয়, তা-ই কবিতা।
আমার জিজ্ঞাসা ও মতামত: গান গেয়ে গল্প পড়লেও আমার মন খুশিতে নেচে ওঠে। কিন্তু সেটা কবিতা নয়।
বিশ্লেষণমূলক লেখা
বিবরণমূলক লেখায় কোনো বস্তু, বিষয় বা ঘটনার বিবরণ থাকে। আর তথ্যমূলক লেখায় কোনো বিষয়ের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে বিবরণ ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে মত প্রকাশ করা হয় যেসব রচনায়, তাকে বিশ্লেষণমূলক লেখা বলে। ”শব্দ থেকে কবিতা” রচনায় লেখক কবিতা লেখার পর্যায়গুলো বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কেমন করে কবিতা রচনা করতে হয়।
শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হলো। বিশ্লেষণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছেদটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, প্রতিটি টপিক ভালোভাবে বুঝতে ও বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো সমাধানের জন্য উপরে ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটি করলে বিশ্লেষণমূলক লেখার বৈশিষ্ট্য পরিচ্ছেদে থাকা বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post