কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের কাছে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হবে। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদের নাম হচ্ছে– কল্পনানির্ভর লেখা। কোর্সটিকায় আজকে বাংলা বইয়ের কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদটি এখানে আলোচনা করার পরেও এই টপিকগুলো নিয়ে তোমাদের সমস্যা থাকতে পারে। সেই সকল সমস্যা সমাধান ও বইয়ে দেওয়া কাজগুলোর সমাধানও তোমরা উক্ত ক্লাসে পেয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটির কঠিন বিষয়গুলো তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান
যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো লেখাকে কল্পনানির্ভর লেখা বলা যায়, সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখো। লেখার পরে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
নিচে একটি কল্পনানির্ভর লেখা দেওয়া হলো। এটি লিখেছেন ডেনমার্কের লেখক হ্যান্স অ্যান্ডারসন (১৮০৫- ১৮৭৫)। তিনি অনেক রূপকথার গল্প সংগ্রহ করেন। অ্যান্ডারসনের রূপকথা বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তাঁর “মৎস্যকন্যা”, “কুৎসিত হাঁসের ছানা” ইত্যাদি পৃথিবীজোড়া পরিচিত গল্প।
হ্যান্স অ্যান্ডারসনের এই গল্পটি অনুবাদ করেছেন বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪)। বুদ্ধদেব বসু বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত কবি। প্রাবন্ধিক, নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, অনুবাদক, পত্রিকা-সম্পাদক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে “বন্দীর বন্দনা”, “তিথিডোর”, “কালের পুতুল”, “কালিদাসের মেঘদূত’ ইত্যাদি
কোকিল
হ্যান্স অ্যান্ডারসন
অনুবাদ: বুদ্ধদেব বসু
শোনো তবে।
চীনদেশের রাজা একজন চীনেম্যান, তাঁর আগে-পিছে ডাইনে-বাঁয়ে যত লোক, তারাও সব চীনে। রাজার ছিল এক প্রাসাদ, অমন আর পৃথিবীতে হয় না। বাগানে ফোটে কত আশ্চর্য ফুল; সবচেয়ে যেগুলো দামি তাদের গলায় রুপোর ঘণ্টা বাঁধা, কাছ দিয়ে যদি হেঁটে যাও, ঘণ্টার শব্দে ফিরে তাকাতেই হবে। বুঝলে, রাজার বাগানে সব ব্যবস্থাই চমৎকার। এত বড়ো বাগান, মালি নিজেই জানে না তার শেষ কোথায়।
যদি কেবলই হেঁটে চলো, আসবে এক বনের ধারে। কী সুন্দর বন, তাতে মস্ত উঁচু গাছ আর গভীর হ্রদ। বন সোজা সমুদ্রে চলে গেছে, নীলজলের অতল সমুদ্র আর বুঁকে-পড়া ডালপালার আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক কোকিল। কী মধুর তার গান, এত ২ মধুর যে জেলে মাছ ধরতে এসে হাতের কাজ ফেলে চুপ করে শোনে, যখন শেষ রাতে জাল ফেলতে আসে সে শোনে কোকিলের স্বর।
নানা দেশ থেকে নানা লোক আসে সেই রাজধানীতে, দেখে বাহবা দেয়। রাজার প্রাসাদ আর বাগান দেখে তাদের চোখের পলক আর পড়ে না; কিন্তু কোকিলের গান যেই তারা শোনে, অমনি বলে ওঠে, “আহা, এমন আর হয় না!”
দেশে ফিরে এসে তারা কোকিলের গল্প করে; পন্ডিতেরা বড়ো বড়ো পুথি লেখেন চীন রাজার প্রাসাদ নিয়ে, বাগান নিয়ে; কিন্তু কোকিলকে কি তাঁরা ভুলতে পারেন? সেই পাখির প্রশংসা হাজার পাতা জুড়ে, আর কবিরা হ্রদে-ঘেরা বনের বুকের সেই আশ্চর্য পাখিকে নিয়ে আশ্চর্য সব কবিতা লেখেন।
পুথিগুলো পৃথিবীতে কে না পড়ল! আর চীন রাজার হাতেও কয়েকখানা এসে পড়ল বইকি। তাঁর সোনার সিংহাসনে বসে বসে তিনি পড়লেন, আরও পড়লেন, পড়তে পড়তে কেবলি খুশি হয়ে মাথা নাড়তে লাগলেন– কেবল তাঁর রাজধানীর, তাঁর প্রাসাদের, তাঁর বাগানের এত সব উচ্ছ্বসিত বর্ণনা পড়ে বড়ো ভালো লাগল তাঁর। “কিন্তু সবচেয়ে ভালো হচ্ছে কোকিল পাখি”, সেখানে স্পষ্ট করে লেখা।
রাজা চমকে উঠলেন। “কোকিল! সে কী জিনিস? ও রকম কোনো পাখি আছে নাকি আমার রাজত্বে? আমার বাগানেও নাকি আছে! আমি তো কখনো শুনিনি! কী কাণ্ড, তার কথা আমি প্রথম জানলাম এসব বই পড়ে। রাজা তাঁর প্রধান অমাত্যকে ডেকে পাঠালেন। তিনি এতই প্রধান যে তাঁর নিম্নস্থ কেউ যদি কখনো সাহস করে তাঁর সঙ্গে কথা বলত তিনি শুধু জবাব দিতেন: “পি!” আর তার অবশ্য কোনো মানে হয় না।
“কোকিল বলে এক আশ্চর্য পাখি নাকি এখানে আছে”, রাজা বললেন। “এঁরা বলছেন আমার এত বড়ো রাজত্বে সেটাই শ্রেষ্ঠ জিনিস। কই, আমি তো তার কথা কখনো শুনিনি!”
প্রধান অমাত্য একটু ভেবে বললেন, “’রাজসভায় সে তো কখনো উপস্থিত হয়নি, তার তো নামই শুনিনি, মহারাজ।”
রাজা বললেন, ‘আজ সন্ধ্যায় সে আমার সভায় এসে গান করবে, এই আমার আদেশ। যদি সে না আসে তাহলে আজ সান্ধ্যভোজের পর আমার সমস্ত সভাসদ হাতির নিচে পড়ে মরবে।”
‘চুং-পি!” প্রধান অমাত্য বলে উঠলেন। তারপর আবার তিনি ওঠানামা করলেন দুশো সিঁড়ি দিয়ে, খুঁজলেন সব ঘর, সব বারান্দা, আর সভাসদরা ছুটল তাঁর সঙ্গে সঙ্গে। হাতির নিচে পড়ে মরতে কারুরই পছন্দ নয়।
শেষটায় রান্নাঘরে ছোটো একটা মেয়ের সঙ্গে তাদের দেখা, রাজার পাঁচশো রাঁধুনির জন্য পাঁচশো ঝি, সেই বিদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো সে। সে বলল, “কোকিল? আমি তো রোজই শুনি তার গান__আহা, সত্যি বড়ো ভালো গায়।”
প্রধান অমাত্য গম্ভীরমুখে বললেন, ‘আজ সন্ধ্যায় কোকিলের রাজসভায় আসবার কথা। তুমি পারবে আমাদের তার কাছে নিয়ে যেতে? যদি পারো, এক্ষুনি তোমাকে রাঁধুনি করে দেব, তাছাড়া মহারাজ যখন ভোজে বসবেন তুমি দরজার ধারে দাঁড়িয়ে দেখবার অনুমতি পাবে।”
তখন তারা সবাই মিলে গেল সেই বনে, কোকিল যেখানে গান গায়; গেল মন্ত্রী, সেনাপতি, উজির, নাজির,
“ওই তো!” মেয়েটি বলল। “শুনুন আপনারা, শুনুন– ওই তো সে বসে আছে।” মেয়েটি একটা গাছের ঘন ডালের দিকে আঙুল তুলে দেখাল।
অনেকক্ষণ উঁকিঝুঁকি লাফঝাঁপ মেরে অনেক চেষ্টায় সবাই সেই কালো পাখিকে দেখতে পেল। প্রধান অমাত্য বলে উঠলেন, ‘আরে এ আবার একটা পাখি নাকি! মরি মরি, কী রূপ!”
সমস্ত দল এই রসিকতায় হেসে উঠল।
মেয়েটি গলা চড়িয়ে বলল, “কোকিল, শুনছ? আমাদের সম্রাট তোমার গান শোনবার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।” “নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই।” কোকিল তক্ষুনি মহা উৎসাহে গান গাইতে আরম্ভ করল।
কোকিল ভেবেছিল সম্রাট বুঝি সেখানে উপস্থিত। প্রধান অমাত্য গম্ভীরস্বরে বললেন, “বেশ গান তোমার, কোকিল। আজ রাজপ্রাসাদের সান্ধ্য-উৎসবে তোমাকে আমি নিমন্ত্রণ করছি, সেখানে তুমি গান শুনিয়ে আমাদের সম্রাটকে মুগ্ধ করবে।”
রাজসভায় আজ উৎসব-সজ্জা।
সভার ঠিক মাঝখানে সোনার একটা ডালে হীরের পাতা বসানো, কোকিল সেখানে বসবে।
সভাসদরা বসেছেন সাজের আর অলংকারের ঝিলিক তুলে, আর সেই ছোটটো মেয়েটি দরজার আড়ালে– সে এখন রাজ-রাঁধুনির পদ পেয়েছে। সবাই কোকিলের দিকে তাকিয়ে; স্বয়ং সম্রাট চোখের ইশারায় তাকে উৎসাহ দিচ্ছেন।
আর কোকিল এমন আশ্চর্য গান করল যে সম্রাটের দুচোখ জলে ভরে উঠল, চোখ ছাপিয়ে বেয়ে পড়ল গাল দিয়ে; তখন কোকিল গাইল আরও মধুর, আরও তীব্র মধুর স্বরে, তা সোজা বুকের মধ্যে এসে লাগল। সম্রাট এত খুশি হলেন যে তিনি তাকে তাঁর একপাটি সোনার চটি গলায় পরবার জন্যে দিতে চাইলেন। কিন্তু কোকিল বলল, “মহারাজ, আমাকে ক্ষমা করুন, আমি আর কিছু নিতে পারব না, যথেষ্ট পুরস্কার আমি পেয়েছি। আমি সম্রাটের চোখে অশ্রু দেখেছি__সেই তো আমার পরম ঐশ্বর্য। সম্রাটের অশ্রুর অদ্ভুত ক্ষমতা এত বড়ো পুরস্কার আর কী আছে?”
তখন থেকে রাজসভাতেই তার বাসা হলো, নিজের সোনার খাঁচায়। দিনের মধ্যে দুবার সে বেরোতে পারে, আর রাত্রে একবার। আর তার বেরোবার সময় সঙ্গে থাকে বারো জন চাকর, তাদের প্রত্যেকের হাতে পাখির পায়ের সঙ্গে বীধা রেশমি সুতো শক্ত করে ধরা। এ রকম বেড়ানোয় কোনো সুখ নেই, সত্যি বলতে।
একদিন রাজার নামে এল মস্ত একটা পার্সেল, তার গায়ে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা, ‘কোকিল।”
“এই বিখ্যাত পাখি সম্বন্ধে নতুন একটা বই এল”, রাজা বললেন।
কিন্তু বই তো নয়, বাক্সের মধ্যে ছোটো একটা জিনিস। চমৎকার কাজ করা একটা কলের কোকিল, মণি মুক্তো হীরে জহরতে ঝলোমলো, সত্যিকারের পাখির মতো তার গান। কলের পাখিটায় দম দিয়েছ কি সে অবিকল ছোট্ট ফিতে বাঁধা, তাতে লেখা: ‘জাপানের মহামহিমান্বিত সম্রাটের কোকিলের তুলনায় চীন সম্রাটের কোকিল কিছুই নয়।”
“এখন এরা দুজন একসঙ্গে গান করুক”, রাজা বললেন। ‘সে কী চমৎকারই হবে!”
দুজনে একসঙ্গে গাইল, কিন্তু বেশি জমল না। কারণ কলের কোকিল গাইল বাঁধা গৎ, আর সত্যিকারের কোকিল গাইল নিজের খেয়ালে।
কোকিল-বাহক বলল, “আমাদের কোকিলের কিছু দোষ নয়; ও বীধা সুরে গায়_ একেবারে নিখুঁত।”
তারপর কলের কোকিল একা গাইল। আসল কোকিলেরই মতো সে মুগ্ধ করল-_তার ওপর সে দেখতে অনেক ভালো, বাজুবন্ধ-হারের মতো ঝলমল করছে।
শব্দের অর্থ
অতল: যার তল নেই।
অমাত্য: মন্ত্রণাদাতা।
উজির: মন্ত্রী।
উপটোকন: উপহার।
ঐশ্বর্য: সম্পদ।
কলকব্জা: যন্ত্রপাতি।
গৎ: গানের নির্ধারিত সুর।
চীনেম্যান: চীন দেশের লোক।
নাজির: রাজকর্মচারী।
নিঃসাড়: অচেতন।
নির্বাসিত: বহিষ্কৃত।
পড়ে কী বুঝলাম
“কোকিল” রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।
ক. আসল কোকিল আর কলের কোকিলের মধ্যে মিল-অমিল উল্লেখ করো।
খ. প্রধান অমাত্যকে কেমন মানুষ বলে তোমার মনে হয়?
গ. প্রাকৃতিক আর ‘কৃত্রিম’ বলতে কী বোঝায়? প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জিনিসের ভালো-মন্দ দিকগুলো তুলে ধরো।
কল্পনানির্ভর লেখা
চারপাশের যে জগৎ আমরা দেখতে পাই, তাকে বলে বাস্তব জগৎ। তথ্যমূলক বা বিশ্লেষণমূলক রচনায় বাস্তব জগতের প্রতিফলন থাকে। কিন্তু কল্পনানির্ভর রচনায় থাকে কাল্পনিক ও অবাস্তব ঘটনা কিংবা চরিত্র। ”কোকিল” গল্পটিতে অবাস্তব কিছু ব্যাপার আছে। তাই এটি কল্পনানির্ভর রচনা।
শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ৫ম পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হলো। কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, প্রতিটি টপিক ভালোভাবে বুঝতে ও বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো সমাধানের জন্য উপরে ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটি করলে কল্পনানির্ভর লেখা পরিচ্ছেদে থাকা বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post