কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের কাছে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হবে। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদের নাম হচ্ছে– বিবরণমূলক লেখা। কোর্সটিকায় আজকে বাংলা বইয়ের বিবরণমূলক লেখা পরিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
বিবরণমূলক লেখা পরিচ্ছেদটি এখানে আলোচনা করার পরেও এই টপিকগুলো নিয়ে তোমাদের সমস্যা থাকতে পারে। সেই সকল সমস্যা সমাধান ও বইয়ে দেওয়া কাজগুলোর সমাধানও তোমরা উক্ত ক্লাসে পেয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটির কঠিন বিষয়গুলো তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান
যেসব বৈশিষ্ট্য থাকলে কোনো লেখাকে বিবরণমূলক লেখা বলা যায়, সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে তিনটি বৈশিষ্ট্য লেখ। লেখার পরে সহপাঠীর সঙ্গে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো।
হায়াৎ মামুদ (১৯৩৯) একজন খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক ও গল্পকার। শিশু-কিশোরদের জন্যও তিনি লিখেছেন। “প্রতিভার খেলা”, “নজরুল”, “রবীন্দ্রনাথ”, “বাংলা লেখার নিয়ম কানুন” ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইয়ের নাম। নিচের বিবরণমূলক রচনাটি লেখকের “রবীন্দ্রনাথ: কিশোর জীবনী” বই থেকে নেওয়া হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ
হায়াৎ মামুদ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মেছিলেন উনিশ শতকের শেষ দিকে। সেদিন ছিল বাংলা ১২৬৮ সালের ২৫শে বৈশাখ, ৭ই মে ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দ। নিজেই তিনি বলেছেন, ‘আমি জন্ম নিয়েছিলুম সেকেলে কলকাতায়।” তখন ট্রাম ছিল না, বাস ছিল না, মোটরগাড়িও ছিল না। ছ্যাকড়া গাড়ি ছিল। ঘোড়ায় টানত, আর ধুলো উড়ত রাস্তায়। কলকাতা পথঘাট তখনও অনেক কাঁচা ছিল। বড়ো বড়ো দালানকোঠার ফাঁকে ফাঁকে দেখা যেত একটা দুটো পাটে বসত সূর্য; হাওয়ায় দুলত নারকেল গাছের সরু সরু পাতা, পাতার শব্দ হতো ঝিরঝির। মাঝে মাঝে কোনো গলি থেকে অকস্মাৎ আওয়াজ বা বড়ো রাস্তা থেকে সহিসের হেঁইও হাঁক।
সাবেক কালের পুরনো বিরাট প্রাসাদ, প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের। লোকে বলত, জোড়াসাকোর ঠাকুরবাড়ি। দ্বারকানাথ ঠাকুর লেনের ৫ নম্বর আর ৬ নম্বর– মোট দুটো বাড়ি মিলিয়ে এই পারিবারের বাসস্থান। ৫ নম্বর বাড়িটি ছিল বৈঠকখানা।
এ জায়গায় বাড়ির পত্তন কিন্তু প্রিন্স দ্বারকানাথের আমলে হয়নি, হয়েছিল তাঁর পিতামহ নীলমণি ঠাকুরের আমলে রবীন্দ্রনাথের জন্মেরও প্রায় পঁচাত্তর বছর পূর্বে। সেটাই হলো গোড়াপত্তন। তারপর ক্রমে ক্রমে পুরনো বসতবাড়ি প্রয়োজনের তাগিদে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে নানা মহল। ঘর অসংখ্য। বহু তলায় বা বহু ছাদে ওঠানামার জন্যে নানা রকম সিঁড়ি এখানে-ওখানে। যেন এক গোলকধাঁধা সারাটা বাড়ি।
প্রিন্সের ঐশ্বর্য তখন আর কিছুই নেই তাঁর পুত্রের আমলে; ছেলে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তো প্রিন্স নন, ঋষি। কিন্তু তখন সেই বিরাট প্রাসাদের বড়ো বড়ো দেউড়িতে প্রাচীনকালের স্মৃতি — ভাঙা ঢাল, বর্শা, মরচে-পড়া তলোয়ার ঝুলছে। উঠোনই তো তিন-চারটে; বাগান বড়ো বড়ো–সদর-অন্দরের আলাদা আলাদা। বাড়িভরা লোক, আগুনতি দাসদাসী, সব সময়ে হে হৈ গমগম করছে। তখন গ্যাসবাতি ছিল না, বিজলি বাতি আসেনি, কেরোসিনের তেলের আলোও তখন জানত না কেউ।
সন্ধেবেলায় ঘরে ঘরে ফরাস এসে রেড়ির তেলের আলো জ্বালিয়ে দিয়ে যেত। তখন পানির কল বসেনি–আজকাল শহরে যেমন ট্যাপ-ওয়াটার, তেমন সেদিন ছিল না; টিউবওয়েলও লোকে জানত না তখন। দুজন বেহারা বাঁকে করে কলসি ভরে মাঘ-ফাগুনের গঙ্গা থেকে পানি তুলে আনত। একতলার অন্ধকার ঘরে সারি সারি ভরা থাকত বড়ো বড়ো জালায় সারা বছরের খাবার জল। দেউড়িতে ঘণ্টা বাজত ঢং ঢং ঢং।
সে এক অন্য যুগ। ঐ রকম আলো-আঁধার-ঘেরা বিরাট প্রাসাদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন, বড়ো হচ্ছিলেন। কিন্তু আশ্চর্য কী জানো? প্রিন্স দ্বারকানাথের পৌত্র হয়েও রাজার হালে মানুষ হননি তিনি। শৈশবে ও বাল্যে যেভাবে তাঁর দিন কেটেছে, তার তুলনায় এখন রাজপুত্রের মতো আছ তোমরা।
বহু পরে দুঃখ করে লিখেছিলেন, “আমি ছিলুম সংসার-পদ্মার বালুচরের দিকে, অনাদরের কূলে ।” আসলেই তো তাই। ছেলেবেলায় বাবা-মা ভাই-বোনদের স্নেহ, আদর-যত্নরই আমাদের একমাত্র সম্বল, সবচেয়ে কাম্য; অথচ এই বালক তার কিছুই পাননি। রুগ্ন মা ছেলের কোনো খোঁজ-খবরই রাখতে পারেন না। আর বাবা সর্বদাই বাইরে ঘুরে বেড়ান স্থান থেকে স্থানান্তরে, বাড়িতে আসেন যেন দুদিনের মুসাফির।
বয়োজ্যেষ্ঠ ভাই-বোনেরাও যে যার খেয়ালে, অথচ চোদ্দ জন ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই তো কনিষ্ঠ। তাহলে কে আছে এই শিশুর? আছে বাড়ির পুরাতন দাসদাসী। আছে তিনকড়ি দাই, কিংবা শঙ্করী, কিংবা প্যারী। তাদের পায়ে পায়ে ঘুরে, ম্নেহ- তিরস্কারে দিন চলে যায়। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, ফিকে জ্যোৎস্নার আলো এসে পড়ে বিরাট টানা বারান্দায়। সেই স্বল্লালোকে বারান্দায় পা মেলে দিয়ে বসে উরুর উপর প্রদীপের সলতে পাকাচ্ছে তারা আর নিজেদের মধ্যে গুনগুন করে যে যার দেশের কথা বলাবলি করছে।
তাদেরই পাশে এক কোণে চুপচাপ সুবোধ ছেলে রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন হয়তো। রাত্রে মশারির ভিতরে শুয়ে ঘুম আসে না। তিনকড়ি দাসী গল্প বলে, রূপকথা: “তেপান্তরের মাঠ–জোছনায় যেন ফুল ফুটে রয়েছে। প্রকাণ্ড মাঠ ধু ধু, এপার-ওপার দেখা যায় না, ধবধবে রুপোলি চাঁদনি, রাজপুত্রের ঘোড়া ছুটছে — খটাখট খটখট খটাখট।
কিন্তু এই রূপকথা শোনার সুখও ভাগ্যে সইল না শেষাবধি। বয়স একটু বাড়তেই, পাঁচ-ছ বৎসরের বালককে অন্তঃপুর ছেড়ে চলে আসতে হলো বারবাড়িতে। এখন মানুষ হতে লাগলেন চাকরবাকরদের তত্ত্বাবধানে। কী কঠোর সে জীবনযাত্রা! বড়োলোকি বিলাসিতার ধারে-কাছে ঘেঁষতে দেওয়া হতো না তাঁকে। একান্ত গরিবি হালে বাল্যকাল কেটেছে।
গায়ে খুব অল্প কাপড় থাকত সুতির একটি জামা, আর একটি পায়জামা। প্রচণ্ড শীতে হয়তো আরেকটি সুতির জামা যোগ হয়েছে, তবে বেশি আর কিছু নয়। বুড়ো নেয়ামত দরজি, চোখে গোল গোল চশমা, জামা গড়িয়ে দিত, কিন্তু সে জামায় পকেট থাকত না কখনো। দশ বছর বয়সের আগে মোজা পরতে পাননি তিনি। উঠতে হতো ভোরে। বেশি শীত লাগলে পায়ে পায়ে এগুতেন তোশাখানার দিকে– চাকরেরা যেখানে থাকে সেদিকে।
উদ্দেশ্য, যদি একটু আগুন মেলে, সেঁকে নেওয়া যায় হাত পা গুলো। আধো অন্ধকারে হয়তো তখন জ্যোতিদার জন্য চিন্তে রুটি টোস্ট করছে। বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথের খাস চাকর চিন্তা, ‘চিত্তে’ বলেই ডাকে সকলে। লোহার আংটায় কাঠের কয়লা জ্বালিয়ে তার ওপরে ঝাঁঝরি রেখে রুটি টোস্ট করছে সে।স আর গান গাইছে গুনগুন, মধুকানের গান। পাউরুটির ওপর মাখন গলার গন্ধে সারা ঘর ভরা। জিভে জল এসে গেল, লোভাতুর দৃষ্টিতে করুণ চোখে তাকিয়ে রইলেন সেদিকে।
কিন্তু হায়! চিন্তের কী কঠোর প্রাণ! টোস্ট-করা রুটি নিয়ে চলে গেল যথানিয়মে। তাঁর বরাতে কিছুই জুটল না। রুটিন মাফিক যে খাবার বরাদ্দ ছিল তাই খেতে হয়েছে মুখ গুঁজে। আবদার করার কেউ নেই, কান্নাকাটি করলেও হৃদয় গলবে না কারো।
রুদ্ধ জীবনের ফাঁকে বৈচিত্র্যও আসত কখনো সখনো। হয়তো শখের যাত্রা হবে বাড়িতে। যাত্রার পার্টি গেছে। “বারান্দা জুড়ে বসে গেছে দলবল, চারিদিকে উঠছে তামাকের ধৌঁয়া। ছেলেগুলো লম্বা-চুল-ওয়ালা, চোখে- কালি-পড়া; অল্প বয়সে তাদের মুখ গিয়েছে পেকে, পান খেয়ে খেয়ে ঠোঁট গিয়েছে কালো হয়ে। সাজগোজের আসবাব আছে রং-করা টিনের বাক্সোয়।” তবু শেষ রক্ষা হতো না। যাত্রা দেখার পূর্বেই ঘুমোতে যেতে হতো, জোর করে ধরে নিয়ে যেত কোনো চাকর।
শব্দের অর্থ
ধুনুরি: যারা তুলা দিয়ে লেপ-তোশক তৈরি করে।
বাখারি: বাঁশের মোটা চটা।
খোনা: বিশেষ যন্ত্র দিয়ে তুলাকে আলগা করা।
বৈঠকখানা: বাড়ির বাইরের দিকে বসার ঘর।
নবাবি ছাদ: নবাবি ধরন।
মুগুর: মাথা মোটা এক ধরনের হাতিয়ার।
পত্তন: শুরু।
মুসাফির: অতিথি।
পাথরের চাঙ্গড়: পাথরের খণ্ড।
রুদ্ধ: বন্ধ।
প্রশ্রয়: আশকারা।
পড়ে কী বুঝলাম
“রবীন্দ্রনাথ” রচনার ভিত্তিতে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া আছে। তোমার একজন সহপাঠীর সাথে এগুলো নিয়ে আলোচনা করো এবং সংক্ষেপে উত্তর তৈরি করো।
ক. “প্রিন্স দ্বারকানাথের পৌত্র হয়েও রাজার হালে মানুষ হননি তিনি।”-_লেখক কী কী কারণে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন?
খ. রবীন্দ্রনাথের কোন কাজগুলো করতে ভালো লাগত এবং কেন ভালো লাগত?
গ. “রবীন্দ্রনাথ” রচনায় বেশ কিছু বিষয়ের বিবরণ আছে। এর মধ্য থেকে যে কোনো দুটি বিষয়ের বিবরণ সংক্ষেপে তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
লেখা নিয়ে মতামত
“রবীন্দ্রনাথ” রচনাটির যেসব বক্তব্য নিয়ে তোমার মতামত রয়েছে, বা মনে প্রশ্ন জেগেছে, তা লেখো। কাজ শেষে কয়েকজন সহপাঠীর সঙ্গে উত্তর নিয়ে আলোচনা করো এবং প্রয়োজনে সংশোধন করো। একটি নমুনা দেওয়া হলো।
“রবীন্দ্রনাথ” রচনায় যা আছে: আমি জন্ম নিয়েছিলুম সেকেলে কলকাতায়।
আমার জিজ্ঞাসা ও মতামত: ‘সেকেলে’ বলতে কোন কাল বুঝিয়েছে, সেটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরে বুঝলাম রবীন্দ্রনাথের ছোটোবেলার কাল।
বিবরণমূলক লেখা
স্থান, বস্তু, ব্যক্তি, প্রাণী, অনুভূতি, ঘটনা বা কোনো বিষয়ের বিবরণ দেওয়া হয় যে রচনায়, তাকে বিবরণমূলক লেখা বলে। যে কোনো বিষয়ের উপরই বিবরণমূলক লেখা প্রস্তুত করা যায়। বিবরণমূলক লেখায় লেখকের চিন্তা ও অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। সাধারণত কয়েকটি অনুচ্ছেদে বিবরণটি তুলে ধরা হয়। “রবীন্দ্রনাথ” শিরোনামের লেখাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলেবেলার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। এই বিবরণের মধ্য দিয়ে একজন মানুষের বেড়ে ওঠা উপলব্ধি করা যায়। একইসঙ্গে এই লেখায় উনিশ শতকের কলকাতার পরিচয়ও পাওয়া যায়।
শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৩য় অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হলো। বিবরণমূলক লেখা পরিচ্ছেদটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, প্রতিটি টপিক ভালোভাবে বুঝতে ও বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো সমাধানের জন্য উপরে ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটি করলে বিবরণমূলক লেখা পরিচ্ছেদে থাকা বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post