কোর্সটিকায় ইতোমধ্যে ৮ম শ্রেণির নতুন কারিকুলামের প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে তোমাদের কাছে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হবে। বাংলা বইয়ের এই পরিচ্ছেদের নাম হচ্ছে– সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয়। কোর্সটিকায় আজকে বাংলা বইয়ের সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয় পরিচ্ছেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয় পরিচ্ছেদটি এখানে আলোচনা করার পরেও এই টপিকগুলো নিয়ে তোমাদের সমস্যা থাকতে পারে। সেই সকল সমস্যা সমাধান ও বইয়ে দেওয়া কাজগুলোর সমাধানও তোমরা উক্ত ক্লাসে পেয়ে যাবে। ৮ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটির কঠিন বিষয়গুলো তোমাদের কাছে সহজ হয়ে উঠবে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান
নিচের গদ্যাংশটি এস. ওয়াজেদ আলির (১৮৯০-১৯৫১) লেখা একটি প্রবন্ধের অংশ। এটি লেখকের “ভবিষ্যতের বাঙালি’ বই থেকে নেওয়া। এস. ওয়াজেদ আলি উনিশ শতকের একজন সাহিত্যিক। তাঁর লেখা অন্যান্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘গুলদাস্তা’ ‘মোটরযোগে রাঁচি সফর’ ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সামাজিক স্বার্থ
এস. ওয়াজেদ আলি
মানুষ কেবল নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ নিয়ে থাকতে পারে না; সামাজিক স্বার্থের আকর্ষণও সে অনুভব করে। নিজের স্বার্থের এবং সামাজিক স্বার্থের কথা ভাবা তার পক্ষে স্বাভাবিক। স্বার্থপরতা আর পরার্থপরতা–দুটি মানুষের প্রকৃতিগত। আর একে ভিত্তি করেই তার সমাজজীবন গঠিত হয়েছে, তার নীতিবাদ রচিত হয়েছে।
তবে এ কথা সত্য যে, কোনো কোনো মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ বড়ো আকারে, কারো মধ্যে সামাজিক স্বার্থ বড়ো আকারে দেখা দেয়। যাদের কাছে ব্যক্তিগত স্বার্থের মূল্য বেশি, তারা ধনী হয়, বিষয়-সম্পত্তি করে, নিজেদের সুখ-দুঃখ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। যাদের কাছে সামাজিক স্বার্থের মূল্য বেশি, তারা দেশপ্রেমিক হয়, দশের মঙ্গলের জন্য সাধনা করে, বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সেবায়, বিভিন্ন সামাজিক আদর্শের সাধনায় আত্মনিয়োগ করে।
বলাবাহুল্য, এই শেষোক্ত শ্রেণির মানুষের উপরেই সমাজের মঙ্গল এবং উন্নতি নির্ভর করে। তাদের উৎসাহ এবং কর্মতৎপরতাই সমাজকে জীবনের উচ্চতর স্তরে নিয়ে যায়, আর তাদের অবসাদ ও নিরুৎসাহ সমাজের পতন এবং মৃত্যুর কারণ হয়।
মানুষে আর পশুতে তফাত এই যে, মানুষের জীবন চিন্তার দ্বারা এবং পশুর জীবন দৈহিক প্রয়োজনের তাড়নায় পরিচালিত হয়। মানুষ যত উচ্চে উঠতে থাকে– চিন্তার, ভাবের প্রভাব তার জীবনে ততই বাড়তে থাকে। সভ্যতার বিকাশ এবং বিস্তারের মানেই হচ্ছে চিন্তার বিকাশ, ভাবের সম্প্রসারণ।
প্রত্যেক যুগেই মানুষ সামাজিক জীবনের একটা না একটা আদর্শ, একটা না একটা পরিকল্পনা নিয়ে তার বেষ্টনীর সম্মুখীন হয়েছে। মানুষের প্রকৃত ইতিহাস হলো তার মনের ইতিহাস; তার বিভিন্ন আদর্শের, তার বিভিন্ন পরিকল্পনার উৎপত্তি, বিকাশ এবং লয়ের ইতিহাস; এবং তার বিভিন্ন আদর্শ এবং পরিকল্পনার, দ্বন্দ্বের, মিলনের ও সংমিশ্রণের ইতিহাস।
এই যে দ্বন্দ্ব, সংমিশ্রণ আর মিলন- এ অবিরামভাবে চলেছে আর চিরকালই চলবে। এই দ্বন্দ্ব, এই সংগ্রামে সেই ভাব, সেই পরিকল্পনাই জয়ী হয়–যা দেশ, কাল এবং পাত্রের উপযোগী। যে ধারণা বা পরিকল্পনায় এ উপযোগিতার অভাব ঘটে, সেটি শেষে পরাভূত হয়; এবং সমাজদেহ থেকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্কাশিত হয়; না হয়, সমাজদেহে অপেক্ষাকৃত নিম্নতর স্থান অধিকার করে পড়ে থাকে।
মানব ইতিহাসের রঙ্গমঞ্চে এইরূপে বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন ভাব, বিভিন্ন পরিকল্পনা এসেছে, দুদিনের জন্য নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছে, তারপর হয় মঞ্চ থেকে অদৃশ্য হয়েছে, না হয় নায়কের ভূমিকা ছেড়ে কোনো ক্ষুদ্রতর ভূমিকা নিয়ে তাকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে।
শব্দগঠন
বাংলা ভাষায় শব্দগঠনের প্রধান উপায় তিনটি: সমাস, উপসর্গ এবং প্রত্যয়। চলো এগুলো সম্পর্কে জেনে আসি।
ক. সমাস
সমাস শব্দগঠনের একটি প্রক্রিয়া। দুটি শব্দ মিলে যখন একটি শব্দে পরিণত হয়, তখন তাকে সমাস বলে। সমাসের মাধ্যমে গঠিত শব্দের নমুনা: মা+বাবা= মা-বাবা; সিংহ+আসন = সিংহাসন; ঘি+ভাজা = ঘিয়েভাজা; নীল+পদ্ম = নীলপদ্ম; অরুণ+রাঙা= অরুণরাঙা; রাজা+পথ=রাজপথ।
সমাসের মাধ্যমে গঠিত শব্দকে বলা হয় সমস্তপদ। উপরের উদাহরণগুলোতে মা-বাবা, সিংহাসন, ঘিয়েভাজা, নীলপদ্ম, অরুণরাঙা ও রাজপথ এগুলো সমস্তপদ। সমস্তপদের দুটি অংশ পূর্বপদ ও পরপদ। এখানে মা, সিংহ, ঘি, নীল, অরুণ, রাজা হলো পূর্বপদ এবং বাবা, আসন, ভাজা, পদ্ম, রাঙা, পথ হলো পরপদ।
সমাস-সাধিত শব্দকে ব্যাখ্যা করা হয় যে শব্দগুচ্ছ দিয়ে তাকে বলা হয় ব্যাসবাক্য। যেমন: ‘মা-বাবা’র ব্যাসবাক্য__মা ও বাবা, ”সিংহাসন” শব্দের ব্যাসবাক্য- সিংহ চিহ্নিত আসন, ‘ঘিয়েভাজা” শব্দের ব্যাসবাক্য–ঘিয়ে ভাজা, ‘নীলপদ্ম’ শব্দের ব্যাসবাক্য__নীল যে পদ্ম, ‘অরুণরাঙা” শব্দের ব্যাসবাক্য__অরুণের মতো রাঙা, ”রাজপথ’ শব্দের ব্যাসবাক্য__পথের রাজা।
খ. উপসর্গ
যেসব শব্দের প্রথম অংশ সাধারণত কোনো অর্থ প্রকাশ করে না, কিন্তু দ্বিতীয় অংশের অর্থ থাকে, সেসব শব্দকে বলা হয় উপসর্গ-সাধিত শব্দ। উপসর্গের মাধ্যমে গঠিত শব্দের নমুনা: পরা+জয় = পরাজয়; পরি+তাপ = পরিতাপ; বি+ফল = বিফল; আ+কাল = আকাল; উপ+গ্রহ = উপগ্রহ।
উপসর্গের নিজস্ব কোনো অর্থ নেই। উপসর্গ স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে না। কিন্তু অন্য শব্দের আগে ব্যবহৃত হয়ে অর্থ দ্যোতনা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন: ”দান” শব্দটির পূর্বে বিভিন্ন উপসর্গযোগে অনেকগুলো অর্থদ্যোতক শব্দ গঠিত হতে পারে। যেমন: অব+দান = অবদান, প্রতি+দান + প্রতিদান, প্র+দান = প্রদান ইত্যাদি।
প্রত্যয়
যেসব শব্দের প্রথম অংশ অর্থযুক্ত এবং দ্বিতীয় অংশ অর্থহীন, সেসব শব্দকে বলা হয় প্রত্যয়-সাধিত শব্দ যেমন: দিন+ই = দৈনিক। এখানে “দিন” শব্দের পরে ”ইক” প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ “দৈনিক” তৈরি হয়েছে।এভাবে প্রত্যয়ের মাধ্যমে গঠিত শব্দের উদাহরণ: পড়ু+উয়া = পড়ুয়া; চল্+অন্ত-চলন্ত; ফুল+দানি-ফুলদানি; ঢাকা+আই = ঢাকাই ইত্যাদি।
খেয়াল করো, উপরের প্রথম দুটি শব্দের প্রথম অংশ “পড়ু’ এবং “চল্” হলো ক্রিয়ামূল। ক্রিয়ামূলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রত্যয়কে বলে কৃৎপ্রত্যয়। এখানে “উয়া” ও ‘অন্ত’ হলো কৃৎপ্রত্যয়।
আবার পরের দুটি শব্দের প্রথম অংশ “ফুল” ও “ঢাকা” হলো নামশব্দ। নামশব্দের সঙ্গে যুক্ত হওয়া প্রত্যয়কে বলে তদ্ধিত প্রত্যয়। এখানে “দানি’ ও “আই” হলো তদ্ধিত প্রত্যয়।
শিক্ষার্থীরা, তোমাদের জন্য অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৪র্থ অধ্যায় ১ম পরিচ্ছেদ সমাধান শেয়ার করা হলো। সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয় পরিচ্ছেদটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে, প্রতিটি টপিক ভালোভাবে বুঝতে ও বইয়ে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো সমাধানের জন্য উপরে ক্লাসের লিংক দেওয়া হয়েছে। ক্লাসটি করলে সমাস, উপসর্গ, প্রত্যয় পরিচ্ছেদে থাকা বিষয়গুলো সহজে বুঝতে পারবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post