বই পরিবর্তন হওয়ায় ৮ম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে বইগুলো দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে। তোমরা যাতে বইগুলো সহজে বুঝতে পার তার জন্য কোর্সটিকায় ৮ম শ্রেণির প্রতিটি বইয়ের সমাধান দেওয়া শুরু হয়েছে। আজকে আমরা অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা করবো। আজকে বাংলা বইয়ের গল্প পরিচ্ছেদের উপর বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আজকের আলোচনা শেষে তোমরা এই অনুচ্ছেদের উপর একটি সমস্যা সমাধান ক্লাস পেয়ে যাবে। এই ক্লাসে গল্প অনুচ্ছেদে দেওয়া বাড়ির কাজগুলো ও এই অনুচ্ছেদে দেওয়া কঠিন বিষয়গুলোকে সহজভাবে বোঝানো হবে। ৮ম শ্রেণির বাংলা বইয়ের প্রতিটি পরিচ্ছেদের সমাধান এভাবে পড়লে বাংলা বইটি তোমাদের কাছে অতিসহজ মনে হবে।
অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান
পূর্ববর্তী শ্রেণিগুলোতে তোমরা গল্প নিয়ে কিছু ধারণা পেয়েছ। গল্পের কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছ। এখন তোমার জীবনে ঘটে-যাওয়া কোনো ঘটনা কিংবা সাম্প্রতিক কোনো বিষয় কিংবা সমাজের কোনো পরিস্থিতি নিয়ে ভাবো, যা তোমার মনকে বিশেষভাবে নাড়া দিয়েছে। এরপর এ নিয়ে একটি গল্প রচনা করো। গল্প রচনার সময়ে কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখো। গল্প রচনা হয়ে গেলে শিক্ষক ও সহপাঠীদের সামনে উপস্থাপন করো।
তোমার লেখা গল্প থেকে নিচের বৈশিষ্ট্যগুলো খুঁজে দেখো–
- গল্পে কোনো কাহিনি আছে কি না?
- কাহিনিকে ফুটিয়ে তোলার জন্য এক বা একাধিক ঘটনা আছে কি না?
- গল্পে এক বা একাধিক চরিত্র আছে কি না?
- চরিত্রের মুখে কোনো সংলাপ আছে কি না?
গল্প কী
গল্প গদ্য ভাষায় রচিত হয়। এর বিষয়বস্তু সাধারণ বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে থাকে। তবে, অবাস্তব ও কাল্পনিক কাহিনি নিয়েও গল্প রচিত হতে পারে। যদিও গল্পের কাহিনি সাধারণত একটু ব্যতিক্রমী হয়। গল্পের আয়তন হয় ছোটো। পরস্পর সম্পর্কিত কিছু ঘটনা নিয়ে গল্পের কাহিনি গড়ে ওঠে। কাহিনিতে কিছু চরিত্রের সমাবেশ থাকে। গল্পের ভাষা হয় বর্ণনামূলক, এতে অনেক সময়ে সংলাপের ব্যবহার হয়।
গল্প পড়ি ১
আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩) বাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের জীবন ও সংগ্রাম তাঁর গল্প-উপন্যাসের বিষয়। আবু ইসহাকের বইয়ের নাম ‘“সূর্যদীঘল বাড়ি”, “পদ্মার পলিদ্বীপ”, “মহাপতঙ্গ’ ইত্যাদি। নিচের গল্পটি নেওয়া হয়েছে লেখকের ‘জোঁক’ নামের গল্পগ্রন্থ থেকে।
গল্পটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে পড়ো।
জোক
আবু ইসহাক
সেদ্ধ মিষ্টি আলুর কয়েক টুকরো পেটে জামিন দেয় ওসমান। ভাতের অভাবে অন্য কিছু দিয়ে উদরপূর্তির নাম চাষি-মজুরের ভাষায় পেটে জামিন দেওয়া। চাল যখন দুর্মূল্য তখন এছাড়া উপায় কী?
ওসমান হুঁক্কা নিয়ে বসে। মাজু বিবি নিয়ে আসে রয়নার তেলের বোতল। হাতের তেলোয় ঢেলে সে স্বামীর পিঠে মালিশ করতে শুরু করে।
ছ বছরের মেয়ে টুনি জিজ্ঞেস করে, এই তেল মালিশ করলে কী অয় মা?
— পানিতে কামড়াতে পারে না। উত্তর দেয় মাজু বিবি।
— পানিতে কামড়ায়! পানির কি দাঁত আছেনি?
–আছে না আবার! ওসমান হাসে।__দাঁত না থাকলে কামড়ায় ক্যামনে?
টুনি হয়তো বিশ্বাস করত। কিন্তু মাজু বিবি বুঝিয়ে দেয় মেয়েকে-__ঘাস-লতা-পাতা, কচু-ঘেঁচু পইচ্যা বিলের পানি খারাপ অইয়া যায়। অই পানি গতরে লাগলে কুটকুট করে। ওরেই কয় পানিতে কামড়ায়।
ওসমান হুঁক্কা রেখে হাঁক দেয়, কই গেলি তোতা? তামুকের ডিব্বা আর আগুনের মালশা লইয়া নায় যা। আমি আইতে আছি।
তেল নিয়ে এবার ওসমান নিজেই শুরু করে। পা থেকে গলা পর্যন্ত ভালো করে মালিশ করে। মাথায় আর মুখে মাখে সরষের তেল। তারপর কাস্তে ও হুঁক্কা নিয়ে সে নৌকায় ওঠে।
তেরো হাতি ডিঙিটাকে বেয়ে চলে দশ বছরের ছেলে তোতা। ওসমান পায়ের চটচটে তেল মালিশ করতে করতে চারদিকে চোখ বুলায়।
শ্রাবণ মাসের শেষ। বর্ষার ভরা যৌবন এখন। খামখেয়ালি বর্ষণ বৃষ্টির। আউশ ধান উঠে যাওয়ায় আমন ধানের গাছগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের সতেজ ডগা চিকচিক করছে ভোরের রোদে।
দেখতে দেখতে পাটখেতে এসে যায় নৌকা। পাট গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে ওসমানের চোখ তৃপ্তিতে ভরে ওঠে। যেমন মোটা হয়েছে, লম্বাও হয়েছে প্রায় দুই-মানুষ সমান। তার খাটুনি সার্থক হয়েছে। সে কি যেমন-তেমন খাটুনি! রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে খেত চষো রে_ঢেলা ভাঙো রে__উড়া বাছো রে__তারপর বৃষ্টি হলে আর এক চাষ দিয়ে বীজ বোনো। পাটের চারা বড়ো হয়ে উঠলে আবার ঘাস বাছো, “বাছট’ করো। বাছট করে খাটো চিকন গাছগুলোকে তুলে না ফেললে সবগুলোই টিঙটিঙে থেকে যায়। কোষ্টায় আয় পাওয়া যায় না মোটেই।
এত পরিশ্রমের ফসল কিন্তু তার একার নয়। সে তো শুধু ভাগচাষি। জমির মালিক ওয়াজেদ চৌধুরী ঢাকায় বড়ো চাকরি করেন। দেশে গোমস্তা রেখেছেন। সে কড়ায় গন্ডায় অর্ধেক ভাগ আদায় করে নেয়। মরশুমের সময়ে তাঁর ছেলে ইউসুফ ঢাকা থেকে আসে। ধান-পাট বিক্রি করে টাকা নিয়ে আবার ঢাকা চলে যায়। গত বছর বাইনের সময়ে ও একবার এসেছিল। এসে কাগজে কাগজে টিপসই নিয়ে গেছে ভাগচাষিদের। এর আগে জমির বিলি- ব্যবস্থা মুখে মুখেই চলত।
শব্দের অর্থ
অজম: হজম।
আউশ ধান: বর্ষাকালে পাকে এমন ধান।
উড়া: আগাছা বিশেষ।
উদরপূর্তি করা: পেট ভরে খাওয়া।
এমবায়: এভাবে।
কড়ায় গন্ডায়: নিখুঁত হিসাবে।
কবরেজ: কবিরাজ।
কয়াল: ওজন করা যার পেশা।
কাছা: কাপড়ের যে অংশ পায়ের ফাঁক দিয়ে কোমরের পেছনে গোঁজা হয়।
কাস্তে: বাঁকা দাঁতালো অস্ত্র।
কোনসুম: কোন সময়ে।
কোষ্টা: পাটের আঁশ।
গল্পের গঠন বুঝি
“জোঁক” গল্পটি ভালো করে পড়ো। তারপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। কাজটি প্রথমে নিজে করো এবং পরে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধন করো।
- কাহিনি কী নিয়ে?
- কী কী ঘটনা আছে?
জীবনের সাথে গল্পের সম্পর্ক খুঁজি
“জোক” গল্পের আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। ১০০-১৫০ শব্দের মধ্যে প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। কৃষক ওসমানের জীবনের আনন্দ ও বেদনার কয়েকটি দিক তুলে ধরো।
২। দশ বছর বয়সী তোতা তার পিতা ওসমানের সঙ্গে কাজ করে__এ ব্যাপারে তোমার মতামত কী?
৩। “রক্ত চুইষ্যা খাইছে। অজম করতে দিমু না, যা থাকে কপালে।”–কে কেন বলেছে ব্যাখ্যা করো।
৪। ”জোক’” গল্পে লেখক সমাজের কোন বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করেছেন? এই কাহিনির সঙ্গে বাস্তব জীবনের কোনো সাদৃশ্য তোমার চোখে পড়ে কি না?
গল্প পড়ি ২
আনোয়ারা সৈয়দ হক (১৯৪০) একজন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক। শিশুসাহিত্যিক হিসেবে তিনি সুপরিচিত। শিশু- কিশোরদের জন্য রচিত তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের নাম “ছানার নানাবাড়ি”, “বাবার সঙ্গে ছানা”, “ছানা ও মুক্তিযুদ্ধ’ ইত্যাদি। নিচের গল্পটি তাঁর “কত রকমের গল্প’ বই থেকে নেওয়া হয়েছে। গল্পটি প্রথমে নীরবে পড়ো। পড়ার সময়ে বোঝার চেষ্টা করো। এরপর সরবে পড়ো।
একদিন ভোরবেলা
আনোয়ারা সৈয়দ হক
ফাল্গুন মাস। বেশ ফুরফুরে বাতাস বইছে। ঘুম থেকে উঠে শিউলি ভাবল, এই যাঃ, আজ না আমার ফুল কুড়োতে যাবার কথা! যেমনি ভাবা, তেমনি কাজ। মুখ না ধুয়েই শিউলি একেবারে এক দৌড়ে তাদের বাড়ির বাগানে গিয়ে হাজির। কত রকমের যে ফুল গাছ আছে তাদের বাগানে। আছে কদম, শেফালি, স্বর্ণচাঁপা; আছে রক্তকরবী, টগর, বেলফুল, গন্ধরাজ। শিউলির খুবই ভালো লাগে এই সব ফুলগাছের নিচে গিয়ে ফুল কুড়োতে।
শিউলির কোনো ভাইবোন নেই, তাই বেচারি একা একাই ফুল কুড়িয়ে বেড়ায়, একা একাই ফুল দিয়ে মালা গাঁথে, খেলা করে। সে সবেমাত্র নতুন ক্লাসে উঠেছে। পড়াশোনার বেশি চাপ নেই। আর চাপ থাকলেও শিউলির পড়া শিখে ফেলতে বেশি দেরি লাগে না। ওর মাথায় খুব বুদ্ধি তো। যা পড়ে তাই মনে রাখতে পারে।
এই ভোরবেলাটা শিউলির খুব ভালো লাগে। তখন সবাই ঘুমিয়ে থাকে, এমনকি শিউলির পুষি বেড়ালটা পর্যন্ত। আর চারদিকে কোনো হইচই নেই। শুধুমাত্র পাখিদের হইচই ছাড়া। শিউলি আজ হেঁটে হেঁটে একেবারে বাগানের পশ্চিম দিকে চলে গেল। এদিকে বুনো গাছগাছালির ঝোপ আর তার ভিতরে একটা ফুলে-ভরা গন্ধরাজ গাছ। অনেক ফুল সেই গাছে। শিউলি ভাবল, যাই আজ গন্ধরাজের মালা গাঁথি।
এই কথা ভাবতে ভাবতে শিউলি ঝোপের ভেতরে হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকে পড়ল; তারপর গন্ধরাজ গাছটার দিকে উঠে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। এমন সময়ে সে চমকে গিয়ে শুনতে পেল, কে যেন সরু গলায় চিৎকার করে বলছে, “ওরে বাবা রে, মরে গেলাম রে! আমাকে বাঁচাও রে!
কথা শুনে তো ভয়ে শিউলির মাথার চুল দাঁড়িয়ে গেল। এসব আবার কী কাণ্ড! ঝোপের মধ্যে কে আবার কোথায় সাহায্য চাইছে। দরকার কি বাবা আমার এখানে থাকার, এই ভেবে শিউলি ঝোপ ছেড়ে পালিয়ে আসতে যাবে যেই, ওমনি আবার শুনতে পেল, “ওগো মেয়ে, তুমি চলে যেও না, দয়া করে আমাকে বাঁচাও!”
শব্দের অর্থ
ইমারত: দালান।
উপক্রম: প্রস্তুতি।
উমড়ো-দুমড়ো: দুমড়ানো মোচড়ানো।
নরুন: নখ কাটার হাতিয়ার।
নাছোড়বান্দা: সহজে ছাড়তে চায় না এমন।
প্রপিতামহ: পিতামহের পিতা।
বিমর্ষ: মন-মরা।
গল্পের গঠন বুঝি
“একদিন ভোরবেলা” গল্পটি ভালো করে পড়ো। তারপর নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। কাজটি প্রথমে নিজে করো এবং পরে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে সংশোধন করো।
- কাহিনি কী নিয়ে?
- কী কী ঘটনা আছে?
- কোন কোন চরিত্র আছে?
- লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি কী?
জীবনের সাথে গল্পের সম্পর্ক খুঁজি
“একদিন ভোরবেলা” গল্পের আলোকে নিচে কয়েকটি প্রশ্ন দেওয়া হলো। প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করো এবং পরে সহপাঠীদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনে নিজের উত্তর সংশোধন করো।
১। চারাগাছের সঙ্গে শিউলি অনেক কথা বলেছে। এসব কথার ভিত্তিতে গাছের প্রতি শিউলির কী মনোভাব প্রকাশ পায় তা লেখো।
২। প্রকৃতিকে ধ্বংস করার যেসব ক্ষতিকর কারণ এই গল্পে রয়েছে, সেগুলো উল্লেখ করো। এছাড়া আর কী কী ভাবে প্রকৃতি ধ্বংস হয়, তার একটি তালিকা তৈরি করো।
৩। তোমার বাড়ি বা এলাকায় গাছপালা বৃদ্ধি করা ও রক্ষা করার জন্য তুমি এবং তোমার সহপাঠীরা কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারো?
তোমাদের জন্য আজকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ২য় পরিচ্ছেদ সমাধান নিয়ে আলোচনা কর হলো। এখানে, গল্প অনুচ্ছেদে দেওয়া প্রতিটি বিষয় সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ আলোচনা শেষে তোমাদের একটি ক্লাস দেওয়া হয়েছে। ক্লাসে তোমরা গল্প অনুচ্ছেদে দেওয়া বাড়ির কাজ ও এই অনুচ্ছেদের কঠিন বিষয়গুলোকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post