আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর : বাংলাদেশ জীবনানন্দের কাছে শুধু এক ভূখণ্ড নয়, প্রাণময়ী মূর্তি। শব্দ-গন্ধ- বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে কবি তাকে অনুভব করেন। আলােচ্য কবিতাটিতে তিনি বাংলার সন্ধ্যাকালীন প্রকৃতির এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। হিজল, কাঠাল, বট প্রভৃতি বৃক্ষ, ধান গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, পুকুর, মাছ, কিশাের- কিশােরী অর্থাৎ মানুষ—এই সব নিয়েই বাংলার পরিপূর্ণ প্রকৃতি৷ এই প্রকৃতির মধ্যেই কবি বাংলার জীবন্ত সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন।
আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
১. বাংলার নীল সন্ধ্যা কেমন ও কবি তাকে কীরূপে কল্পনা করেছেন?
উত্তর : বাংলার নীল সন্ধ্যা শান্ত অনুগত এবং কবি তাকে কেশবতী কন্যারূপে কল্পনা করেছেন।
২. কেশবতী কন্যার চুল কবির কোথায় কোথায় ভাসে?
উত্তর : সন্ধ্যায় ঘনীভূত অন্ধকাররূপী কেশবতী কন্যার চুল কবির মুখ ও চোখের ওপর ভাসে।
৩. অত অজস্র চুলেৱ চুমা কোথায় কোথায় কীভাবে ঝৱে?
উত্তর : সন্ধ্যায় অন্ধকাররূপী কেশবতী কন্যার অত অজস্র চুলের চুমা অবিরাম হিজলে, কাঁঠালে, জামে ঝরে।
৪. রূপসী চুলের বিন্যাস থেকে কী ঝৱে?
উত্তর : রূপসী কেশবতী কন্যার অপূর্ব চুলের বিন্যাস থেকে ঝরে এত স্নিগ্ধ গন্ধ।
৫. ‘আমি পাই টেৱ’-কবি কী টের পান?
উত্তর : প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশ টের পান সন্ধ্যায় যখন আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠে। .
৬. এরই মাঝে বাংলার প্রাণ ;-বাংলার প্রাণ কীসের মধ্যে আছে?
উত্তর : বাংলার প্রাণ আছে নরম ধান, কলমি, হাঁসের পালক, পুকুরের জল, মাছ, কিশােরীর চালধােয়া ভিজে হাত, শীতের কামড়, পায়ে-দলা মুথাঘাস ও বটের ফলের গন্ধে।
৭. কবি কী টের পান?
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশ টের পান সমাগত সন্ধ্যায় তাঁর পল্লি প্রকৃতিতে লুকিয়ে থাকা বাংলার প্রাণশক্তি।
৮. কলমি কী ?
উত্তর : পুকুরের ধারে বা কোনাে জলাশয়ের ধারে জন্মায় এমন এক ধরনের শাক যা বাঙালির খাদ্যতালিকায় স্থান পায় ।
৯. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি কোন মাছ দুটিৱ উল্লেখ করেছেন?
উত্তর ; কবি জীবনানন্দ দাশ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিত চাঁদা ও সরপুঁটি এই দুটি মাছের কথা উল্লেখ করেছেন।
১০. আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় করি । সন্ধ্যাকে কী কী বিশেষণ দিয়েছেন?
উত্তর : বাংলার বুকে নেমে আসা সন্ধ্যাকে শান্ত, অনুগত ও নীল বিশেষণে বিশেষায়িত করেছেন।
১১. ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি বাংলদেশেৱ কী কী ফল, মাছ ও গাছের উল্লেখ কৱেছেন?
উত্তর : ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি কামরাঙা ও বটফল, চাঁদা ও সরপুঁটি মাছ এবং হিজল, কাঁঠাল ও জাম গাছের উল্লেখ করেছেন।
১২. পৃথিবীর কোনাে পথে আৱ কী দেখা যাবে না?
উত্তর : বাংলার সান্ধ্যপ্রকৃতির নিজস্ব বিন্যাস পৃথিবীর আর কোনাে পথে দেখা যাবে না।
১৩. ‘আকাশে সাতটি তাৱা কবিতায় বটফল ব্যথিত কেন?
উত্তর : লাল লাল বটফল গাছের তলায় পড়ে থাকে, নিতান্ত অবহেলায়—এই ফল কেউ আদর করে তুলে নেয় না। তাই সে ব্যথিত।
১৪. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কাদেৱ মৃদু ঘ্রাণের কথা বলা হয়েছে ?
উত্তর : পুকুরের জল থেকে ভেসে আসছে চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের মৃদু ঘ্রাণ।
১৫. কিশােৱীৱ হাত শীত কেন?
উত্তর : কিশােরী জলে চাল ধুয়েছে বলে তার হাত ভিজে ও শীত।
১৬. ‘আকাশে সাতটি তাৱা’ কবিতাটি ভারত দিক দিয়ে কী জাতীয় কবিতা?
উত্তর : ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি জীবনানন্দ দাশে প্রকৃতি চেতনামূলক কবিতা।
১৭. ‘আকাশে সাতটি তাৱা’ কবিতাটির আঙ্গিকগত বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর : অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লেখা এই কবিতাটি সনেটজাতীয় ধীর লয়ের কবিতা।
১৮. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় ক্রিয়াপদ প্রয়ােগেৱ কী বৈশিষ্ট্য ধৱা পড়ে?
উত্তর : ক্রিয়াপদ প্রয়ােগের ক্ষেত্রে কবিতাটিতে সাধু ও চলিতের মিশ্রণ ঘটেছে। যেমন—চলিত ক্রিয়া—উঠেছে, বসে থাকি, গেছে, এসেছে। সাধু ক্রিয়াপদ—আসিয়াছে।
১৯. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি ঘ্রাণেন্দ্রিয় দ্বারা কী কী অনুভব করেছেন?
উত্তর: কবি ঘ্রাণেন্দ্রিয় দ্বারা নরম ধানের গন্ধ, কলমিশাকের গন্ধ, চাঁদা ও সরপুঁটি মাছের গন্ধ, বটফলের ব্যথিত গন্ধ এবং কেশবতী কন্যার চুলের গন্ধ অনুভব করেছেন।
২০. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবি জীবনানন্দ দাশেৱ কোন্ কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা?
উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের ষষ্ঠ সংখ্যক কবিতা।
২১. কবি ঘাসে বসে থেকে আকাশে কী দেখেন?
উত্তর: কবি ঘাসে বসে থেকে আসন্ন সন্ধ্যার দৃশ্যপটে আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠতে দেখেন।
২২. কবি কামরাঙা-লাল মেঘকে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর : লাল মেঘকে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনাকে কবি মৃত মুনিয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন।
২৩. আকাশে সাতটি তারা ওঠার সময় কবি কোথায় বসে?
উত্তর: কবি জীবনানন্দ দাশ আকাশে সাতটি তারা উঠলে ঘাসের উপর সন্ধ্যার রূপ দেখেন।
২৪. আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে কী বিশেষ ব্যবহার করেছেন?
উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যা সম্পর্কে ‘শান্ত’, ‘অনুগত’ ও ‘নীল’—এই তিনটি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন।
২৫. বাংলার সন্ধ্যাকে কবি ‘শান্ত অনুগত’ বলেছেন কেন?
উত্তর: প্রকৃতির মিঃধ বিস্তারে বাংলার সন্ধ্যার প্রকাশ ঘটে বলে তাকে কব ‘শান্ত অনুগত বলেছেন।
২৬. ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় সন্ধ্যার আকাশে কে এসেছে বলে কবির মনে হয়েছে?
উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় বাংলার সন্ধ্যার আকাশে এক কেশবতী কন্যা এসেছে বলে কবি জীবনানন্দ দাশের মনে হয়েছে৷
আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর
২৭. পৃথিবীর কোনাে পথ কানে দেখেনি বলে দাবির মনে হয়?
উত্তৰ: বাংলার সন্ধ্যার আকারে নেবতী কন্যাকে পৃথিবীর কোনো পথ দেখেনি বলে কবির মনে হয়|
২৮. “অজস্র চুলের মা…” কবি কী অর্থে ব্যবহার করেছেন?
উত্তর: প্রকৃতির বুকে অন্ধকারের নিবিড়তাকে বোঝাতে কৰি ‘অজস্র চুলের চুমা কথাটি ব্যবহার করেছেন।
২৯. কেশবতী কন্যার চুলের চুমা কোথায় ঝরে?
উত্তর: কেশবতী কন্যার চুলের চুমা হিজলে-কাঠালে-জামে অবিরত ঝরে পড়ে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
১. কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিরার মতো | গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে’—চরণটির মধ্য দিয়ে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি নেওয়া হয়েছে। কবিতাটিতে জীবনানন্দ বাংলার বুকে দিন শেষ হয়ে ধীরে ধীরে সন্ধ্যার নেমে আসার এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর তার শেষ আভাটুকু রাঙিয়ে দেয় আকাশের মেঘকে| লাল টুকটুকে মেঘকে দেখে কবির পাকা কামরাঙা ফলের কথা মনে হয়। সেই মেঘও যখন সাগরজলে বিলীন হয়, কবির মনে হয় যেন এক মৃত মনিয়া পাখি জলে তার রক্তের রেশটুকু ছড়িয়ে দিয়ে ডুবে গেল |
২. “আসিয়াছে শান্ত অনুগত| বাংলার নীল সন্ধ্যা”—কবি বাংলার সন্ধ্যাকে শান্ত’, ‘অনুগত’, ‘নীল’ কেন বলেছেন?
উত্তর: জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণ নেওয়া হয়েছে। বাংলার গ্রামে শহরের মতাে কোলাহল নেই—জীবনযাত্রা সেখানে শান্ত তাই গ্রামবাংলার বুকে সন্ধ্যা নামে শান্তভাবে| পন্নিবাংলার সন্ধ্যা গ্রামের পরিবেশের সঙ্গে মানানসই—তার চাকচিক্য নেই, আছে মিধতা। তাই সন্ধ্যা অনুগত’ | সন্ধ্যায় অন্ধকার আর দিনের আলাে মিশে যে অাবছায়া তৈরি করে তার সঙ্গে গাছপালার সবুজ আভা মিলে সন্ধ্যাকে ‘নীল’ করে।
৩. “কেশবতী কন্যা যেন এসেছে আকাশে;”—পঙক্তিটি ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: উধৃত পঙক্তিটি ‘রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা।‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় জীবনানন্দ তার একান্ত নিজস্ব ভঙিতে পল্লিবাংলার সন্ধ্যাকে বর্ণনা করেছেন। সূর্য ডুবে গেলে যখন দিনের আলাে ফিকে হয়ে আসে, কবির মনে হয় যেন এক কেশবতী কন্যা এসেছে সন্ধ্যার আকাশে। তার ছড়িয়ে পড়া কালাে চুলে ঘনিয়ে আসে রাতের অন্ধকার। কবির চোখে এভাবেই কাব্যিকরূপে ধরা দেয় পন্নিবাংলার সন্ধ্যা।
৪. “শ্রামার চোখের পরে আমার মুখের ‘পরে চুল তার ভাসে—পঙক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: উধৃত পত্তিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে | সবে যখন সূর্য অস্ত গেছে, আকাশে তারার বিন্দু ফুটে উঠছে সেইসময় কবি ঘাসের উপর বসে গধ-বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে পন্নিবাংলার সন্ধ্যাকে অনুভব করেন। তার মনে হয় যেন এক এলােকেশী মেয়ে দেখা দিয়েছে সন্ধ্যার আকাশে | তার ছড়িয়ে পড়া কালাে চুলের মতাে ধীরে ধীরে অন্ধকার নামে। কবি তার চোখে-মুখে সেই চুল অর্থাৎ অন্ধকারের স্পর্শ অনুভব করেন।
৫. “পৃথিবীর কোনাে পথ এ কন্যারে দেখে নি কো”—কবির বক্তব্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: উধৃত পঙক্তিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে|
কবি ঘাসের উপর বসে পন্নিবাংলার দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণে সন্ধ্যাকে নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করেছেন। তার মনে হয় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে যেন এক এলােকেশী কন্যার আবির্ভাব হয় বাংলার আকাশে | তার ছড়িয়ে পড়া চুল ছুঁয়েই নেমে আসে অন্ধকার। কবির কল্পনার এই কন্যা আসলে সন্ধ্যাকালীন বাংলার প্রকৃতি। রূপসি বাংলার মতাে সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই, তাই আর কেউ এই কন্যাকে দেখেনি।
৬. “অজস্র চুলের চুমা হিজলে কাঠালে জামে ঝরে অবিরত, চরণের মধ্য দিয়ে কবি কী বােঝাতে চেয়েছেন?
অথবা, অজস্র চুলের চুমা’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর: উধৃত পঙক্তিটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটিতে জীবনানন্দের কল্পনাপ্রবণ চোখে ধরা পড়েছে পন্নিবাংলার সন্ধ্যার অপরূপ সৌন্দর্য।তার মনে হয় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে যেন এক রূপসিএলােকেশী মেয়ে দেখা দেয় বাংলার আকাশে। আকাশ থেকে তার ছড়িয়ে পড়া কালাে চুল ধীরে ধীরে অন্ধকারের স্পর্শ নিয়ে আসে প্রকৃতির বুকে। হিজলকাঠাল-জামের পাতায় সেই সােহাগভরা অন্ধকারের স্পর্শ যেন। আসলে সেই রূপসির চুলের চুম্বন।
৭. এরই মাঝে বাংলার প্রাণ; —পঙক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: উধৃত পঙক্তিটি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাথেকে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ জীবনানন্দের কাছে শুধু এক ভূখণ্ড নয়, প্রাণময়ী মূর্তি। শব্দ-গন্ধ- বর্ণ-স্পর্শ দিয়ে কবি তাকে অনুভব করেন। আলােচ্য কবিতাটিতে তিনি বাংলার সন্ধ্যাকালীন প্রকৃতির এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। হিজল, কাঠাল, বট প্রভৃতি বৃক্ষ, ধান গাছ, কলমি শাক, মুথা ঘাস, পুকুর, মাছ, কিশাের- কিশােরী অর্থাৎ মানুষ—এই সব নিয়েই বাংলার পরিপূর্ণ প্রকৃতি৷ এই প্রকৃতির মধ্যেই কবি বাংলার জীবন্ত সত্তাকে উপলব্ধি করেছেন।
৮. “লাল লাল বর্টের ফলের/ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা”—তাৎপর্য- ব্যাখ্যা করাে।
উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি পল্লিপ্রকৃতির মধ্যে বাংলার প্রাণ’-কে খুঁজে পেয়েছিলেন। গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে এক নীরব ক্লান্তি | বাংলার শান্ত নিস্তরঙ্গ প্রকৃতির মধ্যে থাকা বিষাদময়তাকেই যেন কবি এখানে প্রত্যক্ষ করেন৷ গাছ থেকে খসে পড়া বট ফলের মধ্যে রয়েছে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বেদনা।
৯. ‘আকাশে সাতটি তাৱা’ কবিতাৱ মুখবন্ধটি কী? কবিতাৱ শেষে কবি কী অনুভবে পৌছেছেন?
উত্তর : সন্ধ্যা আসার ঠিক আগে কবি জীবনানন্দ গ্রামবাংলায় ঘাসের ওপর বসে আছেন। অস্তে যাওয়া সূর্যের শেষ আলােয় রাঙা কামরাঙা-লাল মেঘ ফ্যাকাসে বিবর্ণ হয়েছে। আকাশে এক এক করে সাতটি তারা ফুটে উঠেছে। সন্ধ্যা আসার এই মুখবন্ধ দিয়ে আকাশে সাতটি তারা কবিতা শুরু।
‘আকাশে সাতটি তারা কবিতার শেষে কবি এই অনুভবে পৌছেছেন যে, সন্ধ্যার আকাশে সাতটি তারা ফুটে ওঠার মধ্য দিয়ে গ্রামবাংলায় সমাগত সন্ধ্যার উপস্থিতি তিনি জানতে পেরেছেন। পল্লিবাংলায় সন্ধ্যা আসে যেন কেশবতী কন্যা হয়ে। তার এলাে চুলের ছোঁয়া-ঘ্রাণের মধ্যে পল্লিপ্রকৃতির যে অপরূপ দৃশ্য, তার মাঝে বাংলা-প্রাণের আবহমানকালের অবস্থিতিকে বাংলার প্রকৃতিপ্রেমিক কবি জীবনানন্দ মনেপ্রাণে অনুভব করেছেন।
১০. আকাশে সাতটি তারা কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত? বাংলাৱ সমাগত সন্ধ্যার পটভূমি আলােচনা করাে।
উত্তর : কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতাটি ‘রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
অস্তগামী সূর্যের অস্তরাগে আকাশের মেঘখণ্ডটি ছিল রক্তাভ। পাকা কামরাঙা ফলের মতাে লাল। তা দ্রুত রং হারিয়ে নির্জীব মুনিয়ার মতাে ডুবে গেছে গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ের মাঝে। কবি সমাগত সন্ধ্যায় ঘাসের ওপরে বসে আছেন। তাঁর দৃষ্টি আকাশের দিকে। আকাশে একটি একটি করে সাতটি তারা ফুটে উঠল। এই হলাে সমাগত সন্ধ্যার পটভূমি।
১১. বাংলাৱ সন্ধ্যা প্রকৃতিগত দিক থেকে কেমন? বাংলাৱ সন্ধ্যাকে কবি কীরূপে কল্পনা করেছেন ও কেন?
উত্তর: বাংলার সন্ধ্যা প্রকৃতিগত দিক থেকে ধীর-স্থির, শান্ত ও অনুগত। বাংলার নীল সন্ধ্যাকে কবি জীবনানন্দ কেশবতী কন্যারূপে অর্থাৎ, সপ্রাণ মানবীরূপে কল্পনা করেছেন। তার এলাে চুল আকাশে ভাসমান। আকাশ যেন চুলে ছেয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর বুকেও ভাসছে চুলের রাশি। কবির চোখের ওপর, মুখের ওপর ভাসছে অজস্র ল। কেশসম্ভারে বাংলার নীল সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা। সেজন্যই তো বাংলার সন্ধ্যা কবির চোখে যেন কেশবতী কন্যা।
১২. পৃথিবীর কোনাে পথ কাকে দেখেনি? চুলের চুমা ও চুলের স্নিগ্ধ গন্ধ কোথায় কোথায় কীভাবে ঝরে লেখো।
অথবা, পৃথিবীর কোনাে পথ এ কন্যাৱে দেখে নি কো——কবি জীবনানন্দ গ্রামবাংলায় সমাগত নীল সন্ধ্যারূপী কন্যাকে যেভাবে উপলব্ধি করেছেন তা লেখো।
উত্তর : পৃথিবীর কোনাে পথ বাংলার নীল সন্ধ্যারূপী কেশবতী কন্যাকে দেখেনি। কেশবতী কন্যার অজস্র চুল। তা থেকে চুমা অবিরত ঝরে হিজল, কাঁঠাল ও জাম গাছের ওপর। রূপসী কেশবতীর চুলের বিন্যাস থেকে ঝরে স্নিগ্ধ গন্ধ। যা এই বাংলা ছাড়া পৃথিবীর আর কোনাে পথে মেলে না।
আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর
১৩. বাংলার কী কী থেকে কীৱকম গন্ধ মেলে ‘আকাশে সাতটি তাৱা’ কবিতা অবলম্বনে লেখাে।
উত্তর : বাংলার মাঠে নরম ধানের গন্ধ ও কলমির ঘ্রাণ মেলে। বাড়ির কাছাকাছি মেলে হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদাসরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণ। কিশােরীর চালধােয়া ভেজা ঠান্ডা হাতের গন্ধ, নরম শীতের কামড় ও কিশােরের পায়ে-দলা মুথাঘাসের গন্ধ মেলে। প্রান্তরে দাঁড়ানাে বটগাছের লাল লাল ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা মেলে।
১৪. কেশবর্তী কন্যা যেন এসেছে আকাশে ;উদ্ধৃতিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।
উত্তর : আলােচ্য উদ্ধৃতি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে। সাতটি তারা কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। বাংলার শান্ত অনুগত। নীল সন্ধ্যাকে কবি জীবনানন্দ কেশবতী কন্যারূপে অর্থাৎ, সপ্রাণ মানবীরূপে কল্পনা করেছেন। তাঁর এলােচুল আকাশে ভাসমান। আকাশ তার কেশরাশিতে আচ্ছন্ন। পৃথিবীর বুকেও ভাসছে তার। কেশরাশি। কবির চোখের ওপর, মুখের ওপর ভাসছে অজস্র চুল! কেশসম্ভারে বাংলার নীল সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা
আকাশে সাতটি তারা কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আমি পাই টেৱ’–‘আমি’ কে? বক্তার অনুভবটি বিশ্লেষণ করাে।
উত্তর: ‘আমি’ হলেন ‘রূপসী বাংলা’-র স্রষ্টা ও বাংলার প্রকৃতিপ্রেমিক কবি জীবনানন্দ দাশ।
অনুভব বিশ্লেষণ : কবি জীবনানন্দ গ্রামবাংলার প্রকৃতি জগতে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার অপরূপ দৃশ্য দেখে মােহিত। সন্ধ্যা আসছে শান্ত অনুগত কেশবতী কন্যার মতাে। ধীরে ধীরে সন্ধ্যার অন্ধকার কেশবতী কন্যার এলাে চুলের মতাে দৃশ্যমান সবকিছু ঢেকে ফেলছে। তার চুলের স্পর্শ চুমার মতাে অবিরত ঝরছে গাছ-গাছালির ওপর। তার চুলের বিন্যাস থেকে স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ছে। সে গন্ধ নরম ধানে ও কলমি লতার ঘ্রাণে।
হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল আর চাঁদা-সরপুঁটির মৃদু গন্ধে। সে ঘ্রাণ কিশােরীর চালধােয়া ভিজে হাতে ও কিশােরের পায়ে-দলা মুথাঘাসে, বটের লাল লাল ফলের ব্যথিত গন্ধে। সান্ধ্য শােভার দৃশ্যে, ঘনায়মান অন্ধকারের স্পর্শ ও গন্ধের মাঝে নিহিত বাংলার সজীব প্রাণের অস্তিত্ব কবি অনুভব করেছেন। তিনি টের পেয়েছেন বাংলার প্রকৃতি জগতের রূপ, রস ও গন্ধের সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকা বাংলার মানুষের সজীবতা। এটাই বাঙালি প্রাণের চিরন্তন বৈশিষ্ট্য।
২. ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় প্রকাশিত কবি জীবনানন্দের বঙ্গপ্রকৃতি-প্রীতির পরিচয় দাও।
উত্তর : বঙ্গপ্রকৃতি-প্রীতির পরিচয় : কবি জীবনানন্দ দাশের বঙ্গপ্রকৃতি-প্রীতির শ্রেষ্ঠ পরিচয় হলাে রূপময়ী বাংলার প্রকৃতি জগতের অপার সৌন্দর্য নিয়ে লেখা কাব্যগ্রন্থ ‘রূপসী বাংলা’। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতার মধ্যে বঙ্গপ্রকৃতির নানা শােভা, নানা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য যেন হাজারাে ছবি হয়ে ফুটে আছে। আকাশে সাতটি তারা কবিতা সেগুলির মধ্যে একটি। বাংলার বুকে নেমে আসা সন্ধ্যার দৃশ্য কবি কেবল দু-চোখ ভরে দেখেননি। তাঁর দৃষ্টিতে ঘনায়মান সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা।
সে রূপসীর এলাে চুল কেবল কবির চোখ ও মুখের ওপর ভাসমান নয়, তার চুলের চুমা অবিরত ঝরে হিজলে, কাঁঠালে, জামে। সন্ধ্যার এই দৃশ্য বাংলা ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না বলে কবি মনে করেন। পৃথিবীর কোনাে পথ এ কন্যারে দেখে নি কো—’। হিজল কাঁঠাল জাম নিয়ে বাংলা প্রকৃতির যে গাছ-গাছালি তা বাংলার নিজস্ব প্রকৃতি জগৎ। ওই বঙ্গপ্রকৃতির আরও নিজস্ব অনুষঙ্গ হলাে নরম ধান, কলমি লতা, হাঁস, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটি, বটের লাল লাল ফল। ওইসব অনুষঙ্গের নিজস্ব ঘ্রাণ যেন রূপসী বঙ্গসন্ধ্যা কেশবতী কন্যার = চুলের বিন্যাস থেকে ঝরে পড়া স্নিগ্ধ গন্ধ।
কবি জীবনানন্দ তাঁর গভীর ভালােবাসা ও মমত্ব দিয়ে বাংলার সনাগত সন্ধ্যার সৌন্দর্য বর্ণনার অবকাশে তাঁর বঙ্গপ্রকৃতিগ্রাতির পরিচয়কে সার্থক করে রেখেছেন।
৩. ‘এৱই মাঝে বাংলার প্রাণ ;-কাৱ লেখা কোন্ কবিতা থেকে গৃহীত? প্রসঙ্গ নির্দেশ করাে। উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: আলােচ্য উদ্ধৃতিটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতা থেকে গৃহীত।
প্রসঙ্গ : প্রকৃতিভক্ত কবি জীবনানন্দ দাশ ঘাসের ওপর বসে বাংলার ঘনায়মান সন্ধ্যার শােভা দেখছেন। আকাশে এক-এক করে সাতটি তারা ফুটে উঠছে। সন্ধ্যা এসেছে ঘনায়মান অন্ধকার নিয়ে। সন্ধ্যার পরিব্যাপ্ত অন্ধকারকে কবি কেশবতী কন্যারূপে কল্পনা করেছেন। তাতে নির্জীব প্রকৃতি সচেতন ও সপ্রাণ মানবীরূপে কল্পিত হয়েছে। সন্ধ্যার অজস্র চুলের স্পর্শ ও ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার প্রকৃতিলােকে। ওই আলােচনা প্রসঙ্গে কবি এসে গেছেন বাংলার প্রকৃতি জগতের নিজস্ব ঘ্রাণের কথায় এবং বাংলার প্রাণের সজীবতার কথায়।
তাৎপর্য : বঙ্গপ্রকৃতির প্রতিটি জিনিসের নিজ নিজ ঘ্রাণ আছে। মাঠের নরম ধান, কলমিলতা, হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটি মাছ, কিশােরীর চালধােয়া ভিজে হাত, শীতের নরম কামড়, কিশােরের পায়ে-দলা মুথাঘাস, বটের লাল লাল ফল—প্রত্যেক বস্তুর আছে নিজ নিজ গন্ধের বৈশিষ্ট্য। কোনােটির ঘ্রাণ কোমল, কোনােটির মৃদু, কোনােটির তীব্র, কোনােটির আবার কেমন যেন ব্যথিত। বাংলার প্রকৃতি জগতের এই যে বৈচিত্র্য, এরই মাঝে আছে বাংলার প্রাণের অস্তিত্ব। তার সজীবতা। এইসব কিছু নিয়েই বাংলার প্রাণময় অস্তিত্বের জগৎ।
৪. প্রকৃতির বর্ণনায় কবি জীবনানন্দ দাশ চিত্রকল্প অঙ্কনে অপূর্ব দক্ষতার পরিচয় ৱেখেছেন-আলােচনা করো।
উত্তর : চিত্রকল্প : চিত্রকল্প হলাে কল্পনায় আঁকা ছবি বা কথা দিয়ে তৈরি অবয়ব বা চেহারা। যাকে বলা যায় বাকপ্রতিমা। চিত্রকল্প আধুনিক কবিতার একটি বিশেষ কাব্যধর্ম। কবি জীবনানন্দ বাংলা আধুনিক কবিতা-পর্বের সেরা কবি।
চিত্রকল্পের সার্থক প্রয়ােগ : ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি বাংলার সন্ধ্যা প্রকৃতির সুন্দর ছবি এঁকেছেন। তাঁর কল্পনায় দিনের আলাে নিভে রাতের অন্ধকার আসার যে সন্ধিক্ষণ, সেই সন্ধ্যাকে নানা অবয়ব বা চেহারার মাধ্যমে ছবি করে এঁকেছেন কাব্যভাষায়।
দিনের আলাে নিভে আসার ছবি উঠে এসেছে ‘কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতাে/ গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে তার পরেই এসেছে রাত আসার আগের সন্ধিক্ষণ বা সন্ধ্যা। আসিয়াছে শান্ত অনুগত/ বাংলার নীল সন্ধ্যা। সন্ধ্যা কবির কল্পনায় শান্ত অনুগত চেহারায় উপস্থিত। পরক্ষণে তিনি সন্ধ্যাকে কেশবতী কন্যারূপে কল্পনা করে মানুষের সত্তায় যেন মানবী করেছেন। সন্ধ্যার । অনুষঙ্গ ধীরে ধীরে ঘনিয়ে ওঠা অন্ধকার। ওই সর্বব্যাপী অন্ধকারকে কেশবতী কন্যার এলােকেশপে চিত্রিত করা হয়েছে। যার স্পর্শ বা চুমা ‘হিজলে কাঁঠালে জামে ঝরে অবিরত।
যার চুলের বিন্যাস থেকে ‘স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে। কাজেই কল্পনায় ও কথায় সন্ধ্যাকে কেশবতী কন্যার চেহারা দিয়ে তার চুলের বিন্যাস আঁকা হয়েছে। তার চুলের স্পর্শ বা চুমা, স্নিগ্ধ গন্ধ ঝরে পড়ার যে বিশেষ ধর্মের কথা তা বলা হয়েছে। এইভাবে সুন্দর চিত্রকল্পে সন্ধ্যার প্রকৃতি ও ধর্মকে কাব্যগুণে ভরিয়ে অপূর্ব দক্ষতার পরিচয় রেখেছেন কবি ।
৫. গ্রামবাংলার বুকে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার ছবি আঁকতে গিয়ে কবি সন্ধ্যা ও বাংলার গ্রাম্য প্রকৃতির কী কী অনুষঙ্গেৱ উল্লেখ করেছেন? ঘনায়মান সান্ধ্য প্রকৃতির দৃশ্যময়তায় অনুষঙ্গগুলিৱ ব্যবহার কীভাবে সার্থক হয়েছে আলােচনা করাে।
উত্তর: গ্রাম্য প্রকৃতির অনুষঙ্গ : ‘আকাশে সাতটি তারা কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ গ্রামবাংলার বুকে ঘনিয়ে আসা সন্ধ্যার ছবি আঁকতে গিয়ে ঘনায়মান সন্ধ্যা ও বাংলার গ্রাম্য প্রকৃতির বেশ কিছু অনুষঙ্গের উল্লেখ করেছেন। সন্ধ্যার অনুষঙ্গ হলাে অস্তে-যাওয়া সূর্যের অস্তরাগ বা শেষ আলাে, ঘনিয়ে আসা অন্ধকার। প্রকৃতির অনুষঙ্গ হলাে গাছ-গাছালি হিজল, কাঁঠাল, জাম, বট ; কলমীলতা, হাঁস, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটি, , মুথাঘাস, বটের ফল।
অনুষঙ্গগুলিৱ ব্যবহার : সন্ধ্যা ও গ্রাম্য প্রকৃতির অনুষঙ্গগুলি কবি দৃশ্যচিত্রণে চমৎকার ব্যবহার করেছেন। সূর্যের
বিদায়ী আলােয় মেঘ হয়েছে ‘কামরাঙা-লাল। সন্ধ্যায় ঘনিয়ে আসা অন্ধকার যেন কেশবতী কন্যার এলাে চুল। হিজল, কাঁঠাল ও জামে অন্ধকার নেমে আসা যেন অবিরত ঝরে পড়া চুলের চুমা। রূপসী কেশবতী কন্যার চুলের বিন্যাস থেকে যে গন্ধ ঝরে তা যেন নরম ধানের গন্ধ’, ‘কলমীর ঘ্রাণ। হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণ। কিশােরীর চালধােয়া ভিজে হাত কিংবা ‘কিশােরের পায়ে-দলা মুথাঘাস’-এর ঘ্রাণ। বট ও বটের লাল ফলকে ব্যবহার করেছেন—“লাল লাল বটের ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতা |
৬. এরই মাঝে বাংলার প্রাণ”—এই পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কবির যে গভীর অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করাে।
অথবা, কবি কোথায় কীভাবে বাংলার প্রাণকে অনুভব করেছেন, আলােচনা করো।
উত্তর: ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতাটিতে সন্ধ্যাবেলায় পরিবাংলার যে রূপ ফুটে ওঠে তাই কবি জীবনানন্দ দাশ অপূর্ব ভাষায় বর্ণনা করেছেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর গােধূলির লাল আভায় আকাশের মেঘ পাকা কামরাঙা ফলের মতাে লাল হয়ে ওঠে। সেই লাল মেঘও যখন দিগন্তরেখায় মিশে যায় তখন দিনরাত্রির সন্ধিক্ষণে শান্ত, নীল সন্ধ্যা নেমে আসে। আকাশে তখন সপ্তর্ষিমণ্ডলের সাতটি তারা সদ্য ফুটে উঠেছে। ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে কবির মনে হয় যেন এক এলােকেশী কন্যার আবির্ভাব হয়েছে।
মাটির বুকে ধীরে ধীরে নেমে আসা অন্ধকার যেন সেই ল্যার ছড়িয়ে পড়া কালাে চুলের রাশি। জীবন্ত মানবীর চুলের মতাে সেই অন্ধকারের স্পর্শ কবি অনুভব করেন। তার মনে হয়, হিজল কাঠাল- জামের পাতায় সেই চুলের আদরমাখা স্পর্শ অন্ধকার রূপে ঝরে পড়ছে। গাছপালা, লতাগুল্ম, মাটি, জল, মানুষ, মনুষ্যেতর প্রাণী—সবার গন্ধ মিশে তৈরি হয় সেই কন্যার চুলের গন্ধ। এইভাবেই কবি প্রকৃতি এবং জীবজগৎকে মিলিয়ে প্রাণময়ী বাংলাকে অনুভব করেছেন। প্রকৃতি তার চেতনায় হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত সত্তা।
আরো দেখো: নবম শ্রেণির বাংলা প্রশ্ন উত্তর ও সাজেশন
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আকাশে সাতটি তারা কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post