হ্যালো, প্রিয় পাঠক। কেমন আছেন সবাই। আশা করি, সকলেই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের দোয়াই অনেক ভালো আছি। আমি আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব ইসলামে আকিকা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে, যে বা যারা এখনো পর্যন্ত আকিকা দেওয়ার নিয়ম জানেন না বা ইসলামিক পরিভাষায় আকিকা করতে পারেন না।
আজকের এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র তাদের জন্য। তবে, বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে ইসলামের পরিভাষায় আকিকা করতে হয় সেই বিষয়ে আলোচনা করা যাক। আশাকরি, এই বিষয়ে জানার জন্য আমাদের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ন পড়বেন।
ইসলামে আকিকা দেওয়ার নিয়ম
আকিকা শব্দের অর্থ কর্তন করা। এটি একটি আরবী শব্দ। আকিকা মূলত মুসলমান ধর্মের একটি ইসলামিক প্রথা, যে প্রথা পালনের জন্য নবজাতক শিশুর জন্মগ্রহণ এর জন্য বা সেই উপলক্ষে একটি প্রাণী কুরবানী করার মাধ্যম দিয়ে এই প্রথা পালন করা হয়। এই প্রথাটি পালন করা ইসলামিক পরিভাষায় সুন্নত। এটি সাধারনত হাদিস অনুযায়ী বলা হয় সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য এই আকিকা করা হয়। আকিকা কথাটি সুন্নতে আল মূ’আক্কাদাহ। যে পরিবারে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে ওই পরিবারের অভিভাবকদের সামর্থ্য অনুযায়ী একটি প্রাণী কুরবানী করার মাধ্যম দিয়ে এই সুন্নাত পালন করা হয়।
ইসলামের পরিভাষায় একটি হাদিস অনুযায়ী জাফর আল সাদিকের বর্ণিত হাদিসে উল্লেখ আছে যে, প্রতিটি শিশু জন্মগ্রহণের পরে তার জন্য আকিকা করা বাধ্যতামূলক। আকিকা না করলে সেই শিশুর জন্য অমঙ্গল হতে পারে, এমনকি সেটা মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনাও হতে পারে।
আরো পড়ুন: মেয়ে বাচ্চাদের ইসলামিক নাম দেখুন!
আমাদের মুসলিম সমাজে ইসলামিক শরীয়ত অনুযায়ী অনেক কিছু প্রথা হাদিস কুরআন অনুযায়ী মেনে চলতে হয়। ঠিক তেমনি তার মধ্যে রয়েছে আকিকা প্রথা যেটারও অনেকগুলো নিয়ম কানুন এর মধ্য দিয়ে পালন করতে হয়। তাই, আমরা আজকের এই পোস্টে সঠিক নিয়ম কানুন জানানোর চেষ্টা করব কিভাবে আকিকা করতে হয়।
সন্তান জন্মের কতদিন পর আকিকা দিতে হয়
আমাদের মুসলিম সমাজে হাদিস কোরআন অনুযায়ী ইসলামিক পরিভাষায় সাধারণত সন্তান জন্মগ্রহণের পর থেকে সাত দিনের ভিতরে আকিকা করার নিয়ম রয়েছে। সেখানে যদি সন্তানের অভিভাবকরা কোন কারণবশত সাত দিনের ভিতরে যদি আকিকা করতে সক্ষম না হয় তো কোন অসুবিধা নাই। পরবর্তীতে যেকোনো সময়ে সেটি পালন করবে। ইসলামের দিন গণনা করা হয় চাঁদের হিসাব করে।
সন্তান জন্মগ্রহণের পরে সাত দিনের ভিতরে আকিকা করা উত্তম। সন্তানের অভিভাবক কোন কারণবশত যদি সেটা সাত দিনের ভিতরে পালন না করতে পারে। তবে সেটা পরবর্তী ১৪ দিনের ভিতরে করবে। অভিভাবক যদি, এই সময়ের মধ্যেও না করতে পারে। তবে পরবর্তী ২১ দিনের ভিতরে সেটি পালন করবে। এই সময় সীমার ভেতরে যদি, কোনভাবে পালন না করতে পারেন। তাহলে সেই সন্তানের যৌবনের আগে যেকোনো সময় আকিকা করতে হবে। আর এই! আকিকা করা ইসলাম শরীয়ত অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। আর! এটার দায়ভার সম্পূর্ণ অভিভাবকের উপর। তাই, এক কথায় বলা যায়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে তার যৌবনকালের ভিতরে তার পিতা এই দায়িত্ব পালন করবেন।
সন্তান বড় হওয়ার আগে যদি, তার পিতা এই দায়িত্ব পালন করতে না পারেন। তাহলে, সে নিজেও এটা করতে পারবেন। কারণ, এখানে হযরত আনাস (রা.) বর্ণিত, নবী (সা.) নবুয়াত পাওয়ার পর তার নিজের আকিকা তিনি নিজে করেছিলেন। (বায়হাকি)। এটা জানার পর ধরে নেওয়া যায় যে, কোন কারণবশত পিতা মাতা এই দায়িত্ব পালন না করতে পারলেও নিজেও এটা করা যাবে।
আকিকা দেওয়ার দায়িত্ব কে পালন করবেন
সন্তান জন্মগ্রহণের পর থেকে সে যৌবন কালে পর্যন্ত পদার্পণ না করা পর্যন্ত তার যাবতীয় দায়-দায়িত্ব থাকে, তার পিতা মাতার। সেক্ষেত্রে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আকিকার দায়িত্বটাও অর পিতা মাতার উপরেই পড়ে। তাই এখানে বলা যাই সন্তানের আকিকা করানোর দায়িত্ব তার পিতার। এখানে পিতার অবর্তমানে তার মাতা ও করতে পারেন। তাছাড়া, পিতা মাতার পক্ষ থেকেও দাদা-দাদি, নানা-নানি ও এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
কিন্তু! আমাদের সমাজে কিছু বানোয়াট কুসংস্কার তৈরীর ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন যে, সন্তানের আকিকা করার পশু তার নানা বাড়ি থেকে দেওয়া উচিত। কিন্তু! এখানে ইসলাম অনুযায়ী হাদিস কুরআন অনুযায়ী এটা সম্পূর্ণ ভুল।
আকিকার জন্য পশুর বিবরণ
আমাদের মুসলমান সমাজের হাদিস কোরআন অনুযায়ী ছেলে সন্তানের জন্য একই রকমের দুটি বকরি কুরবানী করতে হবে। এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি বকরি কুরবানী করতে হবে। এটি করা সুন্নাত। ( ফাতাওয়ামে শামি: ৬/৩৩৬)
হযরত আলী (রা.) বলেন,” রাসূল (সা.) একটি ছাগল দিয়ে হাসানের আকিকা করেছিলেন। ( জামে তিরমিজি, হাদিস: ১৬০২)। তাই এটা থেকে সমর্থন করা যায় যে যদি কারো সামর্থ্য না থাকে সেক্ষেত্রে একটা ছাগল দিয়েও আকিকা করা জায়েজ আছে। তবে সেটা নির্ভর করবে পিতা-মাতার সমর্থ্য অনুযায়ী।
এখানে হাদিস অনুযায়ী উল্লেখ করা রয়েছে যে পশুর ধরন হিসাবে আকিকার পশু আর কুরবানী করার পশু একই নির্বাচনের হবে। যে যে পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় সেই একই রকম একই রকম পশু দিয়েও আকিকা করা জায়েজ আছে।
কখন পশুর জবাই করতে হয়
আমাদের মুসলমান সমাজে কিছু কিছু অঞ্চলে অঞ্চল ভেদে নিজেরাই নিয়ম কানুন তৈরি করে থাকে। ঠিক তেমনি কিছু কিছু অঞ্চলে শোনা যায় যে কুসংস্কার হিসেবে সেখানে বলে বাড়িতে রয়েছে শিশুর মাথার চুল ফালানোর সময় পশু জবাই করতে হবে। কিন্তু হাদিস কোরআন অনুযায়ী এই ধারণাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ববা ভুল। ইসলামের হাদিস কোরআন অনুযায়ী বলা হয়েছে যে যেকোনো সময় আকিকা করার জন্য পশু কুরবানী করা যাবে। সেটা সন্তানের মাথার চুল ফালানোর আগে বা পরে। সন্তানের মাথা মুন্ডানোর সাথে পশু কোরবানির কোন সম্পর্ক নেই।
কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করার নিয়ম
ইসলামিক পরিভাষায় হাদিস কোরআন অনুযায়ী কোরবানির পশুর সাথে আকিকা করার নিয়ম বৈধ ও সেটা জায়েজ আছে। এখানে কোরবানির নিয়ম অনুযায়ী একটি পশুতে যদি সাত ভাগে থাকে কোরবানির জন্য ঠিক সেই নিয়মে একটি পশুতে তিন শরিক যখন কোরবানির ভাগই থাকবে তারপর এক শরিক সে আকিকার জন্য থাকতে পারবে। এবং ওই এক শরীক ভাগ আকিকার নিয়মে পালন করে থাকবেন। এভাবে কোরবানির জন্য নির্ধারিত একটি পশুতে আকিকার শরিক ও হওয়া জায়েজ আছে। ( দুরারুল আহকাম ১/২৬৬)।
আকিকার জন্য যে দোয়া পাঠ করতে হয়
কোরবানি যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও সন্তানের কামনার দিকে লক্ষ্য রেখেই আকিকা প্রথাটি করা হয়। আকিকা প্রথাটি সাধারণত সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য করা হয়ে থাকে। সেই সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য করা হয় এতে অনেক সওয়াব পাওয়া যায়। আকিকার মাধ্যমে আল্লাহ সন্তুষ্টি হন। আকিকা করা সুন্নত। পরিভাষায় আকিকার মাধ্যমে সন্তান অনেক বিপদ আপদ থেকে দূরে থাকেন। তাই কোরবানির যেমন নিয়ম কানুন আছে আমি কি কারো তেমন নিয়মকানুন আছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমরা এই নিয়ম কানুন গুলো মেনেই আকিকা করব।
আকিকার দোয়া বাংলা উচ্চারণে: আল্লাহুম্মা হাযিহী আকিকাতু ইবনী ফুলানিন দামুহাবিদামিহী ওয়া লাহমুহা বিলাহমিহী ওয়া আজমুহা বিআযমিহী ওয়া জিলদুহা বিজিলদিহী ওয়া শা’রুহা বিশার’রিহী আল্লাহুম্মাজ আলহা ফিদা আল্লি ইবনী মিনান্নার।
এর পরে পড়তে হবে
ইন্নিওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজি ফাতারাস সামাওয়তি অল আরদা মিল্লাতা ইবরাহিমা হানীফাও অমা আনা মিনাল মুশরিকীন। ইন্না সলাতি ওয়া নুসুকি অমাহ ইয়াইয়া ওয়া সামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন। লাশারিকালাহু ওয়াবিজালিকা ওমিরতু অ আনা আওয়ালুল মুসলিমীন। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা বিছমিল্লাহি আল্লহু আকবর বলে পশু জবাই করতে হবে।
এখানে যবেহকারী যদি সন্তানের বা না হয় তাহলে কিডনি ইবনি এর বদলে সন্তান ও তার বাবার নাম বলবে মেয়ে হলে বিনতি বলবে এবং দামুহু ‘ লাহমুহু ‘ আজমুহু ‘ জিলদুহু ‘ শারুহু পড়তে হবে।
আকিকার মাংস বন্টনের নিয়ম
আকিকা কোরবানির ন্যায় সম্পূর্ণ নিয়মকানুন একই রকম। সেই জন্য কোরবানির গোশত যে নিয়মে বন্টন করা হয়। আকিকার গোস্ত ও একই নিয়মে বন্টন করতে হয়। একটি বকরা বা ছাগলের বা যে কোন পশুর তার উদ্দেশ্যে যে ভাগটি সেই ভাগের তিন ভাগের একবার গোশত নিজেদের জন্য রাখতে হবে। আরেক ভাগ গরীব দুঃখী মানুষদের ভিতরে সদকা হিসাবে করে দিতে হবে। আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজন স্বজনদের মাঝে দিতে হবে। ইসলামী পরিভাষায় আকিকার গোস্ত এভাবে ভাগ করে দেওয়া সুন্নত। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী আকিকার এই গোস্ত কাঁচা বা রান্না করে উভয় ভাবে বন্টন করা যাবে। (ফাতাওয়ামে শামি: ৬/৩৩৬)
কিভাবে কোরবানির চামড়া যে নিয়মে হয় সেই নিয়মে আকিকার চামড়াও একই নিয়মে বিলি করতে হবে। যেমন: কোরবানির চামড়া গরীব মুসলিমদের ভিতরে বিলিয়ে দেওয়া হয় ঠিক তেমন। আপনি চাইলে আকিকার চামড়া নিজেও ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু সেই পরিমাণের বাজারদর অনুযায়ী সেই চামড়ার মূল্য হিসেবে যে টাকা থাকবে সেই টাকা মিসকিনদের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে।
আমাদের শেষবাণী
আশাকরি, আপনারা খুব সহজেই কিভাবে ইসলামের পরিভাষায় আকিকা দেওয়ার নিয়ম সম্পূর্কে বিস্তারিত ভাবেই সুন্দর একটি ধারনা পেয়েছেন। এই নিয়ম অনুসারে আকিকা করতে হয়। ইসলামিক শরীয়াত অনুযায়ী আমাদের নবী করিমগণ এভাবেই করে এসেছেন। সেই সুবাদে আমার এই আর্টিকেলটি থেকে উপকৃত হন। তাহলে, পোস্টটি অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না। আর! কোন কিছু বুঝতে অসুবিধে হলে, নিচের কমেন্ট বক্যে কমেন্ট করুন এবং নতুন নতুন টিপস এন্ড ট্রিক পেতে কোর্সটিকার সাথে থাকুন।
Discussion about this post