আমরা তোমাদের ভুলব না : এই পাঠের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাঁদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের শহিদদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, সালাম, বরকত, রফিক, আসাদ, মতিয়ুর, শামসুজ্জোহা, সেলিম, নুর হোসেন, মিলন, জেহাদ এবং ২০২৪ সালের আন্দোলনের শহিদদের স্মরণ করা হয়েছে। পাঠে বলা হয়েছে, এই শহিদরা শুধু স্বাধীনতার জন্যই নয়, বরং মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র এবং বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যও নিজেদের জীবন দিয়েছেন।
আমরা তোমাদের ভুলব না
যাঁরা ন্যায়ের পথে যুদ্ধ করতে গিয়ে মারা যান, তাঁদের আমরা শহিদ বলি। এ দেশের জন্য এবং এ দেশের মানুষের জন্য বহু কাল ধরে বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, শহিদ হয়েছেন।
আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগে ইংরেজদের নির্যাতন থেকে এ দেশের কৃষককে বাঁচাতে গিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন তিতুমীর। ইংরেজদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য তিনি বাঁশের কেল্লা বানিয়েছিলেন। সেই কেল্লায় তিনি তাঁর কৃষক সৈন্যদের সাথে নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে শহিদ হয়েছিলেন। আমরা তাঁকে কখনো ভুলব না।
প্রায় শত বছর আগে ইংরেজ শাসন থেকে এ দেশকে মুক্ত করতে যুদ্ধ করেছিলেন সূর্যসেন। যুদ্ধ করেছিলেন প্রীতিলতাসহ আরো অনেকে। সূর্যসেনকে আটক করার পর তাঁকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। প্রীতিলতা আত্মাহুতি দেন। অনেক আন্দোলন শেষে ১৯৪৭ সালে ভারত আর পাকিস্তান স্বাধীন হয়। আমাদের পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমরা তাঁদের স্মরণ করব।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের শহিদদের কথা আমরা সবাই জানি সালাম, বরকত, রফিক, -জব্বারসহ আরো অনেক নাম। বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁরা প্রাণ দিয়েছিলেন। তাঁদের স্মরণ করেই আমাদের শহিদ মিনার তৈরি করা হয়েছে। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে আমরা তাঁদের স্মরণ করি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের শাসক ছিলেন আইয়ুব খান। তার অত্যাচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। সেই অভ্যুত্থানের একজন ছাত্রনেতা ছিলেন আসাদ। পুলিশ খুব কাছ থেকে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেছিল।
তাঁর নামকে স্মরণে রাখতে ঢাকায় রয়েছে আসাদ গেট। মতিয়ুর নামের নবম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীকেও রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়। আনোয়ারা বেগম নামের একজন মা-ও নিহত হন। তিনি তখন ঘরের মধ্যে বসে তাঁর সন্তানকে খাবার খাওয়াচ্ছিলেন।
ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে আটক রেখে হত্যা করা হয় সার্জেন্ট জহুরুল হককে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বাঁচাতে গিয়ে নিহত হন অধ্যাপক শামসুজ্জোহা। নিহত হন কৃষক-শ্রমিক আর খেটে-খাওয়া অনেক মানুষ। তাঁরা সবাই শহিদ। তাঁরা আমাদের স্মৃতিতে চিরদিন অমলিন থাকবেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহিদ হয়েছেন। তাঁদের কথা আমরা বইয়ে, কবিতায়, সিনেমায়, গানে ও ছবিতে নানাভাবে পাই। তাঁদের আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এদেশে অন্যায়-অত্যাচার থামে না। তাই মানুষ প্রতিবাদ করে। শিক্ষার অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৮৩ সালে শহিদ হন ছাত্রনেতা সেলিম-দেলোয়ারসহ আরো অনেকে। গণতন্ত্রের জন্য বুকে-পিঠে শ্লোগান লিখে ১৯৮৭ সালে শহিদ হন নুর হোসেন। ১৯৯০ সালে নিহত হন ডাক্তার মিলন ও জেহাদ। তারপর গণঅভ্যুত্থান ঘটে। সারাদেশে অনেক মানুষ মারা যায়। তাঁরা সবাই শহিদ। আমরা তাঁদের কখনো ভুলব না।
এত ত্যাগের পরও এ দেশের মানুষ অধিকার পায় না, বৈষম্য কমে না। অধিকারের দাবি ও বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে এদেশের শিক্ষার্থীরা তাই ২০২৪ সালে আবার রাস্তায় নামে। সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়।
পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাঁকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।
এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারা দেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন। নিহত হন নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অগণিত প্রাণ।
মায়ের কোলের শিশু, বাবার সাথে খেলতে থাকা শিশু, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, চাকুরিজীবী, মা, পথচারী কেউ বাদ যায় না। সারা দেশে হত্যা করা হয় হাজারো মানুষকে। আহত হন অসংখ্য মানুষ। তাঁরা সবাই একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশের জন্য রক্ত দিয়েছেন।
সবার অধিকার থাকবে এবং সবাই মিলেমিশে বাস করতে পারবে এমন একটা দেশের জন্যই তাঁরা শহিদ হয়েছেন। আমরা তাঁদের কখনো ভুলব না।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
১. শব্দগুলো পাঠ থেকে খুঁজে বের করি। অর্থ বলি।
আক্রমণ, কেল্লা, অভ্যুত্থান, ক্যান্টনমেন্ট, আন্দোলন, বৈষম্য
২. ঘরের ভিতরের শব্দগুলো খালি জায়গায় বসিয়ে বাক্য তৈরি করি।
ফাঁসিতে, কৃষককে, প্রসারিত, ১৯৪৭, শহিদ মিনার
ক. তিতুমীর যুদ্ধ করেছিলেন এ দেশের ______ বাঁচাতে।
খ. সূর্যসেনকে ______ ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
গ. ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয় ______ সালে।
ঘ. ভাষা শহিদদের স্মরণে তৈরি হয়েছে ______ ।
ঙ. পুলিশের গুলির মুখে আবু সাঈদ দুই হাত ______ করে দাঁড়ান।
৩. প্রশ্নগুলোর উত্তর বলি ও লিখি।
ক. কাদের আমরা শহিদ বলি?
খ. ইংরেজদের বিরুদ্ধে দেশ বাঁচাতে কারা যুদ্ধ করেছিলেন?
গ. বায়ান্নোর ভাষা শহিদদের নাম লিখি।
ঘ. ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে যা জানি তা লিখি।
ঙ. ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে সহস্র মানুষ জীবন দিয়েছেন কেন?
৪. বিপরীত শব্দ লিখি এবং তা দিয়ে একটি করে বাক্য তৈরি করি।
ন্যায় —
যুদ্ধ —
নির্মম —
গণতন্ত্র —
বৈষম্য —
৫. ঠিক উত্তরটিতে টিক (খ) চিহ্ন দিই।
ক. ১৯৪৭ সালে পূর্ব বাংলা কার অন্তর্ভুক্ত হয়?
১. ভারতের
২. পাকিস্তানের
৩. শ্রীলংকার
৪. ভুটানের
খ. বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পাকিস্তানের শাসক ছিলেন-
১. ইয়াহিয়া খান
২. বেনজীর ভুট্টো
৩. আইয়ুব খান
৪. খাজা নাজিমুদ্দিন
গ. ৬৯-এর অভ্যুত্থানে কোন ছাত্রনেতা শহিদ হন?
১. আসাদ
২. জব্বার
৩. নুর হোসেন
৪. মতিয়ুর
ঘ. বুকে পিঠে শ্লোগান লিখে নুর হোসেন শহিদ হন-
১. ১৯৯০ সালে
২. ১৯৮৩ সালে
৩. ১৯৮৭ সালে
৪. ২০০২ সালে
ঙ. আন্দোলনে পানি বিতরণ করতে করতে মীর মুগ্ধ শহিদ হন-
১. ঢাকার আজিমপুরে
২. নরসিংদীর বেলাবোতে
৩. ঢাকার উত্তরায়
৪. রংপুরের পার্কে
৬. পাঠে উল্লিখিত বীর শহিদদের একটি ধারাবাহিক তালিকা প্রস্তুত করি। শিক্ষককে দেখাই।
◉ আরও দেখুন: পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ের সকল গল্প-কবিতার সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে আমরা তোমাদের ভুলব না প্রবন্ধটি আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post