আমাদের চার নেতা : এ কে ফজলুল হক ছিলেন উপমহাদেশের একজন সাহসী নেতা। তাই তাকে শেরে বাংলা বলা হয়। শেরে বাংলা অর্থ বাংলার বাঘ। তাঁর পুরো নাম আবুল কাশেম ফজলুল হক।
তিনি ১৮৭৩ সালে এখনকার বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (এসএসসি) এবং কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ (এইচএসসি) পাস করেন।
আমাদের চার নেতা
এরপর তিনি কলকাতা আইন কলেজ থেকে আইন বিষয়ে পড়ে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। যারা আইন পেশায় কাজ করেন তাদের উকিল বলা হয়। তখন আমাদের দেশ স্বাধীন ছিল না। এই দেশ ইংরেজরা শাসন করতো। ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আমরা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করি।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক অনেক আন্দোলন করেন। তিনি কৃষক-প্রজা পার্টি গঠন করেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তখন দেশের বেশির ভাগ জমির মালিক ছিল কিছু জমিদার। আর বাকি সবাই ছিল প্রজা।
শেরে বাংলা জমিদারি ব্যবস্থা বাতিল করে কৃষকদের দুঃখ দূর করার চেষ্টা করেন। মহাজনদের ঋণের অত্যাচার থেকে কৃষকদের বাঁচানোর জন্য ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করেন। শিক্ষার উন্নতির জন্য প্রতিষ্ঠা করেন অনেক স্কুল ও কলেজ। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নেতা ছিলেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মজলুম জননেতা। মজলুম শব্দের অর্থ যার উপর অত্যাচার বা নির্যাতন করা হয়। মওলানা ভাসানী সারাজীবন নির্যাতিত মানুষের জন্য কাজ করেছেন। তিনি ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষ করে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আসামের ভাসানচরে তিনি কৃ ষকদের জন্য অনেক কাজ করেন। এজন্য ওই এলাকার মানুষ তাঁকে ‘ভাসানী’ উপাধি দিয়ে সম্মান জানায়।
ইংরেজদের বিরুদ্ধে তিনি অনেক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেন। তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলও গঠন করেন। তিনি এমন একটি সমাজ চাইতেন যেখানে মানুষের উপর নির্যাতন থাকবে না, সমাজে বৈষম্য থাকবে না।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে মওলানা ভাসানী অনেক অবদান রেখেছেন। তিনি গ্রাম-গঞ্জ, শহর-বন্দর ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন।
সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি অনেকবার কারাবরণ করেন। দেশ এবং দেশের মানুষের উপর করা সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার ছিলেন। তিনি শিক্ষার বিস্তারে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। মওলানা ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের গণমানুষের নেতা।
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী | আমাদের চার নেতা
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী অবিভক্ত বাংলার একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ১৮৯২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এরপর দেশে ফিরে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি কলকাতা কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়র, বাংলা প্রাদেশিক সরকারের শ্রমমন্ত্রী, সরবরাহ মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আজীবন কাজ করেছেন। তিনি মুসলিম লীগেরও গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। তখন আমাদের দেশের নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৫৪ সালে একটি নির্বাচন হয়েছিল।
সেই নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী যুক্তফ্রন্ট গঠনের জন্য প্রধান ভূমিকা পালন করেন। তৎকালীন পাকিস্তানের সকল জাতি ও সকল ধর্মের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য তিনি কাজ করেছেন। তাই তাঁকে গণতন্ত্রের মানসপুত্র বলা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অল্প বয়স থেকেই রাজনীতি বিষয়ে সচেতন ছিলেন। তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়াশোনা করেন।
তিনি ছাত্র অবস্থায় পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ওই সময় তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি শুরু করেন এবং তরুণ নেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি পাকিস্তান সরকারের নানা অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এজন্য তাঁকে অনেকবার কারাবরণ করতে হয়। তিনি ১৯৬৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কল্যাণের জন্য ছয় দফা দাবি পেশ করেন।
এ জন্য পাকিস্তান সরকার তাঁর নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে তাঁকে কারাগারে বন্দি করে রাখে। এরপর ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান হয় এবং গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্তি পান। ছাত্র-জনতা তাঁকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তিনি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
এতে পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার জন্য উজ্জীবিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আটক করে পাকিস্তানে বন্দি করে রাখে। বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট পরিবারের সদস্যবর্গসহ তাঁকে হত্যা করা হয়।
এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজ
ক. সঠিক উত্তরের পাশে টিক (✓) চিহ্ন দিই।
১। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?
ক) সিরাজগঞ্জ
খ) বরিশাল
গ) ফরিদপুর
ঘ) রংপুর
২। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে কী বলে ডাকা হতো?
ক) দেশনেতা
খ) বিপ্লবী নেতা
গ) শ্রমিক নেতা
ঘ) মজলুম জননেতা
৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত সালে ছয় দফা দাবির কথা বলেন?
ক) ১৯৫২
খ) ১৯৪৭
গ) ১৯৬৯
ঘ) ১৯৬৬
৪। যুক্তফ্রন্ট গঠনের জন্য কে প্রধান ভূমিকা পালন করেন?
ক) মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী
খ) হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী
গ) শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক
ঘ) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
খ. সঠিক শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করি।
১। জনগণের _______ প্রতিষ্ঠার জন্য হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কাজ করেন।
২। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র অবস্থায় _______ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করেন।
৩। এ কে ফজলুল হক ছিলেন উপমহাদেশের একজন _______ নেতা।
৪। মওলানা ভাসানী ছিলেন বাংলাদেশের _______ নেতা।
গ. সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।
১। হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী কে ছিলেন?
২। কারা মওলানা আবদুল হামিদ খানকে ‘ভাসানী’ উপাধি দিয়েছিলেন?
৩। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেয়া হয় কেন?
৪। কেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঋণ সালিশি বোর্ড গঠন করেন?
ঘ. বর্ণনামূলক প্রশ্ন।
১। নেতা হিসেবে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর অবদান লিখি।
২। নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান লিখি।
৩। সমাজের বৈষম্য দূর করতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কীভাবে অবদান রেখেছেন?
৪। এ কে ফজলুল হককে ‘বাংলার বাঘ’ বলা হয় কেন?
◉ আরও দেখো: তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় সকল অধ্যায়ের সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় মূল বই থেকে ৩য় অধ্যায় আমাদের চার নেতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায়ের অনুশীলনীমূলক কাজগুলোর সমাধান পেতে উপরের উত্তরমালা অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে।
Discussion about this post