আমাদের নতুন গৌরবগাথা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : আন্দোলন শুরু হয়েছিল ছোটো দাবি নিয়ে, কিন্তু তা দ্রুত জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষের ভীড় জমায় এ আন্দোলনে। আন্দোলনকারীরা সরকারের বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একমুখী হয়ে উঠেছিল এবং সরকারের সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তারা সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। সরকার যখন আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়, তখন জনগণের শক্তি এবং একাত্মতায় তারা সরকারের পতন নিশ্চিত করে।
নবম শ্রেণির বাংলা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘অর্ধশত বছর উত্তীর্ণ বাংলাদেশে এ এক নতুন ভাষা’। বাক্যটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাষা সৃষ্টি করেছে, যা আগে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ছিল না। এই ভাষা মূলত সকল শ্রেণী, দল, ধর্ম এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা তৈরি করেছে। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী জনগণ তাদের ভিন্ন মত, বিশ্বাস, বা সংস্কৃতির প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সম্মান প্রদর্শন করতে শিখেছে, এবং দেশের উন্নতি ও জনগণের মুক্তির জন্য একযোগভাবে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২. স্বৈরশাসক আন্দোলন দমন করার জন্য কী কী করেছিল?
উত্তর: স্বৈরশাসক আন্দোলন দমন করতে সরকারি দলের দুর্বৃত্তবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করেছিল।
সরকারি দলের দুর্বৃক্তবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার চালিয়েছিল, বিশেষ করে নারীদের। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে, তবে তাতে জনগণের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। সরকার এর গারও কোনো সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়নি, বরং আন্দোলনকারীদের দমন করতে নির্যাতন চালানো হয়, যার ফলে আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয় এবং সরকারের পতনের দিকে ঠেলে দেয়।
৩. ২০২৪ এর স্বৈরশাসকের শাসনব্যবস্থার নেতিবাচক দিক কী কী ছিল?
উত্তর: ২০২৪ এর স্বৈরশাসকের শাসন ব্যবস্থার নেতিবাচক দিক ছিল দুর্নীতি, অসামাজিকতা, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা এবং দেশব্যাপী বৈষম্য প্রতিষ্ঠা করা।
সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণের পাশাপাশি, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ব্যবহার করা হয়। নির্বাচন ছিল একতরফা এবং ভোটাধিকার পদ্ধতি ছিল অকার্যকর। এই ধরনের শাসন ব্যবস্থায় জনগণের ওপর অত্যাচার, দুর্নীতি এবং জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের সম্পদ লুট করা হচ্ছিল, যা জনগণের মধ্যে বিশাল ক্ষোভ তৈরি করেছিল।
৪. ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছিল কেন?
উত্তর: ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। কারণ জনগণ একত্রিত হয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
আন্দোলন শুরু হয়েছিল ছোটো দাবি নিয়ে, কিন্তু তা দ্রুত জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের চরম ক্ষোভ এবং অসন্তোষের ভীড় জমায় এ আন্দোলনে। আন্দোলনকারীরা সরকারের বৈষম্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একমুখী হয়ে উঠেছিল এবং সরকারের সকল অপতৎপরতার বিরুদ্ধে তারা সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। সরকার যখন আন্দোলন দমন করতে ব্যর্থ হয়, তখন জনগণের শক্তি এবং একাত্মতায় তারা সরকারের পতন নিশ্চিত করে।
৫. ‘আঠারো কোটি মানুষের মনে জ্বলতে থাকা আগুন থামানোর সাধ্য তার ছিল না।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘আঠারো কোটি মানুষের মনে জ্বলতে থাকা আগুন থামানোর সাধ্য তার ছিল না।’—বাক্যটি মানুষের মধ্যে সৃষ্ট বিদ্রোহী চেতনা ও তাদের। শক্তি তুলে ধরে।
দেশের মানুষ বৈষম্য ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ ও আন্দোলনের চেতনা ধারণ করেছিল, তা এত প্রবল ছিল যে প্রকৃতির বিরূপ পরিস্থিতি বা কোনো প্রতিকূলতাই তা দমন করতে পারেনি। এটি বোঝায় যে, জনগণের চেতনা ও সংগ্রামের শক্তি অপ্রতিরোধ্য এবং তা কোনো বাহ্যিক শক্তি দিয়ে দমন করা সম্ভব নয়।
৬. ‘অভাবনীয় এক গণঅভ্যুত্থান দেখে সারা দুনিয়ার মানুষ।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘অভাবনীয় এক গণঅভ্যুত্থান দেখে সারা দুনিয়ার মানুষ।’—উক্তিটি ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের বিস্ময়কর সফলতা এবং তার বৈশ্বিক প্রভাবকে বোঝায়।
আন্দোলনের ব্যাপকতা, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং স্বৈরাচারী সরকারের পতন আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। এটি প্রমাণ করে যে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ এবং সংগ্রাম শুধু দেশের ভেতর নয়, সারা বিশ্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়। এই অভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে।
৭. স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জনগণ আন্দোলন করেছে কেন?
উত্তর: স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে জনগণ আন্দোলন করেছে সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক দুর্নীতি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছিল বলে।
মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পোষ্যদের জন্য চাকরি বরাদ্দ হয়ে যাওয়ার ফলে দেশের বৃহৎ মেধাবী তরুণসমাজ সরকারি চাকরি পাচ্ছিল না। তারা কোটাব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের দাবি জানালে সরকার সেটি বাতিল করে দেয় ২০১৮ সালে। ২০২৪ সালে সরকার আবার সেই কোটা ব্যবস্থা পুর্নবহাল করতে চাইলে শিক্ষার্থীরা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলন শুরু করে, যার মাধ্যমে সরকারের অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়।
৮. ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল কী ছিল?
উত্তর: গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল ছিল স্বৈরাচারী সরকারের পতন এবং জনগণের মধ্যে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাক্সক্ষা জন্ম নেওয়া।
আন্দোলনকারীরা সরকারকে বাধ্য করে দেশ ছাড়তে, যা একটি বৃহৎ গণবিক্ষোভের ফলস্বরূপ ঘটে। আন্দোলন ছিল শুধু সরকারের পতনের জন্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক এবং জনবান্ধব রাষ্ট্র গড়ার জন্য। জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করে, তারা তাদের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম এবং এই অভ্যুত্থান দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি আনবে।
৯. ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল কেন?
উত্তর: ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিল। কারণ সকলের মধ্যে ছিল দীর্ঘদিনের দুঃশাসন এবং বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার আকাক্সক্ষা।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ-শিক্ষার্থী, কর্মী, ধনী-গরিব, শহর-বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চল থেকে-সকলেই একমত হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয়। দেশের জন্য এবং দেশের মানুষের। মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন ছিল একযোগিতার প্রতীক। একতাবদ্ধ হয়ে জনগণ সরকারের অপশাসন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করে।
১০. ‘বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইয়ে থেমে গেছে।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘বাংলাদেশের ক্যালেন্ডার জুলাইয়ে থেমে গেছে।’—বাক্যটি রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি বোঝায় যে, জুলাই মাসটি আন্দোলন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঐতিহাসিকভাবে স্মরণীয় হয়ে উঠেছে।
এই সময় দেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে যায় এবং পুরো জাতি আন্দোলন ও উত্তেজনার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সময় যেন এক অনন্য মুহূর্তে আটকে গিয়েছিল, যা জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা এবং জাতির ইতিহাসে এক মাইলফলক স্থাপন করেছিল। এটি আন্দোলনের গুরুত্ব ও গভীরতা বোঝায়।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে আমাদের নতুন গৌরবগাথা অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post