আমাদের নতুন গৌরবগাথা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হবো-বাংলাদেশের দেয়ালে দেয়ালে ছড়ানো অগুনতি গ্রাফিতি। কিন্তু এ কোনো ফাগুনের দিন ছিল না, ছিল না রৌদ্রদহনের কোনো কাল। ছিল বাংলার নিজস্ব ঋতু-বর্ষা। অবিরাম ঝরছিল, মাটি-প্রকৃতি সব শীতল করছিল। কিন্তু আঠারো কোটি মানুষের মনে জ্বলতে থাকা আগুন থামানোর সাধ্য তার ছিল না।
আমাদের নতুন গৌরবগাথা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
সময়টা ২০২২ সালের এপ্রিল মাস। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের কবলে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশচুম্বী দাম, জ্বালানি-ওষুধ ও বিদ্যুৎ সরবরাহে তীব্র ঘাটতি এবং সরকারী দলের দমন-পীড়ন নীতির কারণে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী নেমে আসে রাজপথে। তাদের সাথে যোগ দেয় রাষ্ট্রীয় সেবা, স্বাস্থ্য, বন্দর, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও ডাক থেকে শুরু করে প্রায় এক হাজার ট্রেড ইউনিয়ন। তারা দেশের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পরিবারকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে। কিন্তু সরকার সেনা মোতায়েন করে দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে এবং সরকারপন্থিরা বিক্ষোভকারীদের ওপর ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী আহত হন। ফলে আন্দোলন দাবানলের মতো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষে জনগণের আন্দোলনের চাপে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে ১৩ই জুলাই ভোরে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রথমে মালদ্বীপ, তারপর সিঙ্গাপুরে যান।
ক. কোটা সংস্কার আন্দোলনে বড়ো সাফল্য কত সালে অর্জিত হয়?
খ. ‘অর্ধশত বছর উত্তীর্ণ বাংলাদেশে এ এক নতুন ভাষা’। বাক্যটির দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের যে বিশেষ দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের সামগ্রিকতাকে স্পর্শ করে না।’—মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোটা সংস্কার আন্দোলনে বড়ো সাফল্য ২০২৪ সালে অর্জিত হয়।
খ. বাক্যটির দ্বারা বোঝানো হয়েছে যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান একটি নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাষা সৃষ্টি করেছে, যা আগে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ছিল না। এই ভাষা মূলত সকল শ্রেণী, দল, ধর্ম এবং সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং সহযোগিতা তৈরি করেছে। গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী জনগণ তাদের ভিন্ন মত, বিশ্বাস, বা সংস্কৃতির প্রতি সহিষ্ণুতা এবং সম্মান প্রদর্শন করতে শিখেছে, এবং দেশের উন্নতি ও জনগণের মুক্তির জন্য একযোগভাবে কাজ করার দৃঢ় সংকল্প নিয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত করেছে।
গ. উদ্দীপকটি এবং ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের মধ্যে সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি হলো জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ।
উদ্দীপকে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক সংকটের কারণে সাধারণ জনগণ, রাষ্ট্রীয় সেবা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, শিক্ষা ও অন্যান্য ট্রেড ইউনিয়নগুলো একত্রিত হয়ে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নামে। এই আন্দোলনে সরকারি দলের দমন-পীড়ন এবং সেনা মোতায়েনের মতো ব্যবস্থা নেয়া হলেও, জনগণের বিরোধিতা ও প্রতিরোধে সরকার শেষ পর্যন্ত সরে যায় এবং প্রেসিডেন্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
এভাবে, বাংলাদেশে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা শুরুতে কোটাব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেও ধীরে ধীরে এটি বৃহত্তর জনগণের আন্দোলনে রূপ নেয়। জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের কারণে অবশেষে সরকার পতন হয় এবং স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে। এখানে শ্রীলঙ্কার জনগণের প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থান উভয়ই একটি বিষয়কে সামনে আনে—সেটা হলো, জনগণের অসন্তোষ, সংগ্রাম এবং প্রতিরোধই সরকারের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে।
এটি প্রদর্শন করে যে, সরকারের দুর্নীতি, অগণতান্ত্রিক শাসন এবং জনগণের প্রতি অবিচারের ফলে জনতা একত্রিত হয়ে সংগ্রামে নেমে আসে। উভয় ক্ষেত্রে সরকার যখন জনগণের আন্দোলনের বিপরীতে দমন-পীড়ন চালায়, তখন আন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং অবশেষে জনগণ তাদের অধিকার অর্জন করে। তাই, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের আন্দোলনগুলোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাদৃশ্য হলো—জনগণের অভ্যুত্থান শাসকের পতন এবং নতুন একটি সমাজব্যবস্থা নির্মাণের একটি বড় সুযোগ সৃষ্টি করে।
ঘ. ‘সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের সামগ্রিকতাকে স্পর্শ করে না।’—মন্তব্যটির যথার্থ।
‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে বাংলাদেশের জনগণের একটি বৃহত্তর সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রথমে কোটাব্যবস্থার পুনর্বিন্যাসের দাবি তুলে আন্দোলন শুরু করেছিল, তবে পরবর্তীতে এটি একটি গণআন্দোলনে পরিণত হয়। এই আন্দোলনে শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা নয়, বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম, ও বর্ণের মানুষ একত্রিত হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের জন্য লড়াই করেছিল। এখানে আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল, শুধু একটিমাত্র রাজনৈতিক দাবি নয়, বরং একটি নতুন গণতান্ত্রিক ও জনবান্ধব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। প্রবন্ধটির শেষে, ‘নতুন গৌরবগাথা’ একটি নতুন বাংলাদেশের প্রতীক হিসেবে উদ্ভাসিত হয়, যা স্বাধীনতার পরে এক নতুন যাত্রার সূচনা করতে চায়।
অন্যদিকে, উদ্দীপকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি বর্ণিত হয়েছে, যেখানে জনগণ অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সংকট, এবং সরকারের দমন-পীড়ন নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিল। এখানে মূল আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ এবং শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পুনরুদ্ধার করা। শ্রীলঙ্কায় আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সরাসরি শাসক শ্রেণির পতন এবং প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া, কিন্তু সেখানে নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের বা বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের কথা বলা হয়নি।
সুতরাং, মন্তব্যটি সঠিক, কারণ শ্রীলঙ্কার উদ্দীপকটি ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধের সামগ্রিক উদ্দেশ্য বা দৃষ্টিকোণকে স্পর্শ করে না। ‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে যে বৃহত্তর জাতীয় ও সামাজিক পরিবর্তনের স্বপ্ন এবং দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী চিত্র আঁকা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার আন্দোলনে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। শ্রীলঙ্কায় আন্দোলন মূলত একটি অস্থায়ী শাসক পরিবর্তনের লক্ষ্যেই ছিল, যেখানে বৃহত্তর সমাজতান্ত্রিক বা গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের দিকে তেমন দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। ফলে, সাদৃশ্য থাকলেও, উদ্দীপকটি প্রবন্ধের সামগ্রিক ধারণার সাথে পুরোপুরি মিলে না।
সৃজনশীল প্রশ্ন—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
জেনারেল আইয়ুব খান পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিলেন ১৯৫৮ সালে। আইয়ুব খানের সরকার শিল্প-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরিসহ সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করত। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে আইয়ুব খানের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ ছাত্ররা এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ছাত্ররা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এগারো দফা দাবি উত্থাপন করে। আন্দোলনে ছাত্রসমাজ ছাড়াও বাংলাদেশের সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলি চালায়। ছাত্রনেতা আসাদ, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মতিয়ুর, সার্জেন্ট জহুরুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাসহ অসংখ্য মানুষ শহিদ হন। সেনাবাহিনী নামিয়ে এবং কারফিউ জারি করেও মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। ছাত্র-শিক্ষক আর মেহনতি মানুষের ব্যাপক আত্মত্যাগ ও অংশগ্রহণের ফলে ১৯৬৯—এর গণঅভ্যুত্থান সফল হয়। আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন।
ক. শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণ কী ছিল?
খ. স্বৈরশাসক আন্দোলন দমন করার জন্য কী কী করেছিল?
গ. উদ্দীপকের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সাথে ২০২৪ এর স্বৈরশাসকের সাদৃশ্য আলোচনা করো।
ঘ. ‘১৯৬৯ এর স্বৈরশাসকের চেয়ে ২০২৪ এর স্বৈরশাসক ছিল বেশি ভয়ংকর’—তুমি কি এই মন্তব্যকে সমর্থন করো? তোমার মতামত উপস্থাপন করো।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণ ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা।
খ. স্বৈরশাসক আন্দোলন দমন করতে সরকারি দলের দুর্বৃত্তবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহার করেছিল।
সরকারি দলের দুর্বৃক্তবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার চালিয়েছিল, বিশেষ করে নারীদের। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী পাঠিয়ে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে, তবে তাতে জনগণের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পায়। সরকার এর গারও কোনো সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়নি, বরং আন্দোলনকারীদের দমন করতে নির্যাতন চালানো হয়, যার ফলে আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয় এবং সরকারের পতনের দিকে ঠেলে দেয়।
গ. উদ্দীপকের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের সাথে ২০২৪ সালের স্বৈরশাসকের কার্যকলাপগত মিল রয়েছে।
‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ভুলে ধরা হয়েছে। কোটাব্যবস্থার অপব্যবহার, বৈষম্য ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন স্বৈরশাসনের পতন ঘটায়। নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এ আন্দোলনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এই অভ্যুত্থান সমতাভিত্তিক, সহিষ্ণু এবং নতুন বাংলাদেশ গঠনের সুযোগ এনে দেয়।
উদ্দীপকে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে। আইয়ুব খানের সরকার শিল্প-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরিসহ সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করত। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে আইয়ুব খানের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলি চালায়, এর ফলে অসংখ্য মানুষ শহিদ হন। সেনাবাহিনী নামিয়ে এবং কারফিউ জারি করেও মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। এই একই রকম আচরণ করেছিল ২০২৪ এর স্বৈরশাসক হাসিনা।
কোটাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন যখন গণআন্দোলনের রূপ নেয় তখন স্বৈরাচারী হাসিনা এই আন্দোলনকে প্রতিহত করার জন্য দলীয় বাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অপব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। ছাত্র সংগঠন এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করে এবং নারী শিক্ষার্থীদের উপর বিশেষভাবে নিপীড়ন চালায়। এর ফলে অনেকেই শহিদ হয়। কারফিউ জারি, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। তাছাড়া গণমাধ্যমে প্রপাগান্ডা চালিয়ে আন্দোলনকারীদের বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। তবে এই পদক্ষেপগুলো জনসাধারণের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হয় এবং আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠে, যা শেষ পর্যন্ত স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়।
ঘ. আমার মতে, আইয়ুব খানের চেয়েও ২০২৪ এর স্বৈরশাসক ছিল আরও বেশি নিষ্ঠুর এবং ভয়ংকর।
‘আমাদের নতুন গৌরবগাথা’ প্রবন্ধে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পটভূমি, গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তর এবং স্বৈরশাসনের পতনের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। কোটাব্যবস্থার অপব্যবহার, দুঃশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক বিশাল বিপ্লব ঘটায়। নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের দৃঢ় নেতৃত্ব আন্দোলনকে সফল করে তোলে।
উদ্দীপকে স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন আমল সম্পর্কে বলা হয়েছে। আইয়ুব খানের সরকার শিল্প-বাণিজ্য, চাকরি-বাকরিসহ সকল ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম বৈষম্যের নীতি অনুসরণ করত। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে আইয়ুব খানের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ গুলি চালায়, এর ফলে অসংখ্য মানুষ শহিদ হন। সেনাবাহিনী নামিয়ে এবং কারফিউ জারি করেও মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। আইয়ুব খানের এরূপ হীন কর্মকাণ্ডের থেকে আরও জঘন্যতম কর্মকা- চালায় ২০২৪ এর স্বৈরশাসক।
২০২৪ এর স্বৈরাচারী শাসক তার ক্ষমতা রক্ষার জন্য একাধিক অমানবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছিল, যার মধ্যে ছিল দলীয় বাহিনী এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অপব্যবহার, নির্যাতন, গুম ও হত্যাকান্ডের ঘটনা। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার চেষ্টা এবং আর্থিক দুর্নীতি ও লুটপাট ছিল তার শাসনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পে ছিল অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যয়, যেখানে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হয়ে উন্নয়নের নামে অস্বাভাবিক ব্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁস ও নিয়োগ দুর্নীতি, কোটা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ তার শাসনের অঙ্গ ছিল। ব্যবসা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠদের স্বার্থ রক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অপব্যবহারও হয়েছিল। স্বৈরশাসকের এসব কর্মকান্ডের ফলে শাসক জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যা আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দিতে সহায়ক হয় এবং এর পতন ঘটায়।
তাই এটা প্রমাণিত হয় যে ১৯৬৯ এর স্বৈরশাসকের তুলনায় ২০২৪ এর স্বৈরশাসক ছিল বেশি ভয়ংকর। কারণ আইয়ুব খানের চেয়েও ২০২৪ এর স্বৈরশাসক আরও বেশি হীন কর্মকান্ড করেছে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে আমাদের নতুন গৌরবগাথা সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post