আমাদের লোকশিল্প জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর : দৈনন্দিন জীবনে ঘর-গৃহস্থলির কাজে নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রীর অধিকাংশই যে একসময়ে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের কুটিরগুলোতে তৈরি হতো এবং এগুলো যে গুণে ও মানে অনন্য ছিলো সে সম্পর্কে তথ্যমূলক জ্ঞান অর্জন। প্রবন্ধটি পাঠের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই শিল্প সম্পর্কে আগ্রহ বাড়বে এবং তারা এগুলো সংরক্ষণেও আন্তরিক হবে।
আমাদের লোকশিল্প জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর
১. বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা শিল্প কোনটি?
উত্তর: খাদ্যশস্যের পরেই বাংলাদেশের মানুষের জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হলো কুটিরশিল্প, যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
২. ঢাকাই মসলিন তৈরি হতো কোথায়?
উত্তর: ঢাকাই মসলিন মূলত ঢাকা শহরের অদূরে অবস্থিত ডেমরা এলাকার দক্ষ তাঁতিদের হাতে তৈরি হতো, যা একসময় সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত ছিল।
৩. মসলিন কাপড়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী ছিল?
উত্তর: মসলিন কাপড় এতটাই সূক্ষ্ম ও নরম হতো যে, এটি সহজেই একটি ছোট আংটির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো সম্ভব ছিল, যা এর অতি উচ্চমানের তাঁতশিল্পের পরিচায়ক।
৪. বর্তমানে মসলিনের পরিবর্তে কোন ধরনের শাড়ি জনপ্রিয়?
উত্তর: বর্তমানে মসলিনের বিলুপ্তির পরেও এর ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্পের ধারাবাহিকতায় জামদানি শাড়ি দেশ-বিদেশে সমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
৫. নকশিকাঁথা তৈরির প্রচলন কোথায় ছিল?
উত্তর: নকশিকাঁথা তৈরির প্রচলন মূলত বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ছিল, যেখানে মেয়েরা অবসর সময়ে নানা ধরনের সূক্ষ্ম কারুকার্যসহ এই কাঁথা তৈরি করতেন।
৬. নকশিকাঁথা তৈরিতে কত সময় লাগত?
উত্তর: সাধারণত একটি নকশিকাঁথা তৈরি করতে ছয় মাস বা তারও বেশি সময় লেগে যেত, কারণ প্রতিটি কাঁথার নকশা ও সূচিকর্ম অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করা হতো।
৭. নকশিকাঁথার মধ্যে কী প্রকাশ পায়?
উত্তর: প্রতিটি নকশিকাঁথার সূচিফোঁড়ের মধ্যে একটি পরিবারের গল্প, তাদের আবেগ, সংস্কৃতি ও জীবনের নানা দিক অত্যন্ত সুন্দরভাবে ফুটে ওঠে।
৮. জামদানি কারিগররা কোথায় বসবাস করেন?
উত্তর: জামদানি শাড়ির কারিগররা মূলত নারায়ণগঞ্জ জেলার নওয়াপাড়া গ্রামে বসবাস করেন এবং শত শত বছর ধরে তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন।
৯. শীতলক্ষ্যা নদীর পানি জামদানি বুননের জন্য কেন উপযোগী?
উত্তর: গবেষণায় দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পানির বাষ্প থেকে উৎপন্ন আর্দ্রতা জামদানি শাড়ির সুতা তৈরির জন্য অত্যন্ত উপযোগী, যা এই শিল্পের উৎকর্ষে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
১০. খাদি বা খদ্দরের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: খাদি বা খদ্দর সম্পূর্ণ হাতে তৈরি একটি বিশেষ ধরনের কাপড়, যা তুলা থেকে সুতা কেটে হাতে বুনন করা হয় এবং আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
১১. গ্রামের যে নারীরা হাতে সুতা কাটেন, তাঁদের কী বলা হয়?
উত্তর: বাংলাদেশের গ্রামীণ অঞ্চলে যেসব নারী অবসর সময়ে তুলা থেকে হাতে সুতা কাটেন, তাঁদের ‘কাটুনি’ বলা হয়, যারা খাদি তৈরির মূল কারিগর।
১২. স্বদেশি আন্দোলনের সঙ্গে কোন শিল্পটি জড়িত ছিল?
উত্তর: ব্রিটিশ শাসনামলে স্বদেশি আন্দোলনের সময় বিদেশি কাপড় বর্জন করে দেশীয় তাঁতিদের হাতে তৈরি খাদি বা খদ্দরের ব্যবহার উৎসাহিত করা হয়েছিল, যা স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠে।
আমাদের লোকশিল্প প্রবন্ধের জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তর
১৩. পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা ও মুরং মেয়েরা কী বোনে?
উত্তর: পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, কুকি ও মুরং সম্প্রদায়ের মেয়েরা তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী নিজেদের ও পরিবারের পুরুষ সদস্যদের পরিধেয় বস্ত্র হাতে বুনে থাকেন, যা টেকসই ও নান্দনিক হয়ে থাকে।
১৪. কাঁসা ও পিতলের বাসন তৈরির প্রধান উপকরণ কী?
উত্তর: কাঁসা ও পিতলের বাসন তৈরির জন্য প্রথমে মাটির ছাঁচ তৈরি করা হয়, এরপর তাতে গলিত কাঁসা ঢেলে তা ঠান্ডা করার মাধ্যমে বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরি করা হয়।
১৫. মাটির তৈরি শিল্পের মধ্যে কোন কোন বস্তু পাওয়া যায়?
উত্তর: মাটির তৈরি শিল্পের মধ্যে কলস, হাঁড়ি, পাতিল, দইয়ের ভাঁড়, টেপা পুতুল, দুর্গা ও লক্ষ্মীর মূর্তি, পিঠার ছাঁচসহ নানা ধরনের দৈনন্দিন ও শৌখিন সামগ্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১৬. বাংলাদেশে পোড়ামাটির কাজ কোন সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি দেখা যায়?
উত্তর: বাংলাদেশে পোড়ামাটির কাজ মূলত পাল ও কুমোর সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি প্রচলিত, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্পের চর্চা করে আসছেন।
১৭. বাংলাদেশের পুরাতন কাঠের কারুকাজকে কী বলা হয়?
উত্তর: অতীতে বাংলাদেশের বাড়িঘরের দরজা, খুঁটি ও পালঙ্কের কাঠের কারুকাজকে ‘হাসিয়া’ বলা হতো, যা ঐতিহ্যবাহী কাঠশিল্পের নিদর্শন বহন করে।
১৮. বরিশালের কোন কাঠের কাজের জন্য প্রসিদ্ধ?
উত্তর: বরিশাল অঞ্চলে তৈরি কাঠের নৌকাগুলো তাদের নিখুঁত কারুকাজ ও টেকসই গঠনের জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।
১৯. খুলনার কোন শিল্পটি পরিচিত?
উত্তর: খুলনা অঞ্চলের মাদুর তৈরির শিল্প গ্রামবাংলার একটি গুরুত্বপূর্ণ কুটিরশিল্প, যা দক্ষ কারিগরদের হাতে নিখুঁতভাবে তৈরি করা হয়।
২০. সিলেটের কোন বিখ্যাত লোকশিল্প আছে?
উত্তর: সিলেটের বিখ্যাত লোকশিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো শীতলপাটি, যা সুন্দর নকশা ও আরামদায়ক গঠনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
২১. ঢাকার নবাব পরিবার কোন বিশেষ ধরনের শীতলপাটি তৈরি করিয়েছিল?
উত্তর: ঢাকার নবাব পরিবার একসময় বিশেষভাবে হাতির দাঁতের সুতো দিয়ে তৈরি শীতলপাটি প্রস্তুত করিয়েছিল, যা আজও জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
২২. শিকা সাধারণত কী কাজে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: শিকা সাধারণত গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস ঝুলিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এটি শুধু উপকারী নয়, বরং এর কারুকার্য এটিকে শৈল্পিক সৌন্দর্যের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।
২৩. বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাঁশ দিয়ে কী ধরনের জিনিস তৈরি হয়?
উত্তর: বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাঁশ দিয়ে হস্তশিল্পজাত বিভিন্ন বাসনপত্র, আসবাবপত্র, গৃহসজ্জার সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরি করা হয়।
২৪. কাপড়ের পুতুল সাধারণত কেমন হয়ে থাকে?
উত্তর: কাপড়ের তৈরি পুতুল সাধারণত প্রতীকধর্মী হয়ে থাকে, যা গ্রামীণ জীবনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটায়।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের চারুপাঠ বাংলা বই থেকে আমাদের লোকশিল্প জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য প্রায় ৩০টি জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post