আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : জন্মভূমির একান্ত সান্নিধ্যে কবি বেড়ে উঠেছেন বলে জন্মভূমির সবকিছু কবির কাছে চেনাজানা মনে হয়।জন্মভূমির সাথে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। জন্মভূমির মধ্যে শেকড় গেড়ে থেকেই মানুষ সমগ্র দেশকে আপন করে পায়। জন্মভূমির প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠায় কবি প্রকৃতির সবকিছুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই কবির কাছে জন্মভূমির সবকিছু চেনাজানা মনে হয়।
আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’—কবি একথা বলেছেন কেন?
উত্তর: কবি বলেছেন ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’, কারণ তিনি এই মাটি, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। আকাশ, ফুল, বাঁশবাগান, নদী, মাছরাঙা—সবাই তাকে চেনে, যা প্রমাণ করে যে তিনি এই ভূমিরই সন্তান। গ্রামের মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যেমন ‘জমিলার মা’র শূন্য খাঁ খাঁ রান্নাঘর’, তিনি সবকিছু জানেন ও অনুভব করেন। তার শরীরে মাটির সুবাস লেগে আছে, তার অস্তিত্ব ধানের খেত, নদী ও বাতাসের সঙ্গে একীভূত। তাই তিনি নিজেকে কোনো বহিরাগত নয়, বরং এই জনপদের একান্ত আপনজন বলে মনে করেন।
২. ‘আমি এই উধাও নদীর মুগ্ধ এক অবোধ বালক।’ কবি কেন একথা বলেছেন?
উত্তর: বাংলার প্রকৃতি, মাঠ-ঘাট, প্রান্তরের সৌন্দর্যে কবি মুগ্ধ। তিনি অবোধ বালকের মতো বাংলার প্রকৃতির এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে চেয়েছেন।
কবি আহসান হাবীব কৈশোরে বাংলাদেশের গ্রামীণ আবহে বেড়ে উঠেছেন। গ্রামীণ প্রকৃতির মাঠ-ঘাট, পথ-প্রান্তরের মতো খেতের সরু পথ, তার পাশে ধানের সমারোহ এবং একটু এগিয়ে গেলে বিশাল নদীর কিনার কবির মনের ভেতর, অস্থি-মজ্জায় মিশে আছে। বাংলার প্রকৃতি কবিকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে, তিনি এখানকার মানুষ ও প্রকৃতিকে যেমন ভালোভাবে চেনেন, তেমনি তিনিও তাদের চিরচেনা স্বজন। তাই কবি বলেছেন, আমি এই উধাও নদীর মুগ্ধ এক অবোধ বালক।
৩. ক্লান্ত বিকেলের পাখিরা কবিকে চেনে কেন?
উত্তর: কবি প্রকৃতি সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠায় ক্লান্ত বিকেলের পাখিদের সাথে প্রতিনিয়ত তাঁর দেখা হয় বলে তারা কবিকে চেনে।
কবি জন্মভূমিকে নিজের অস্তিত্বে ধারণ করেছেন। জন্মভূমির প্রকৃতির মাঠ-ঘাট, খেত-খামার, পশুপাখি সবকিছুকেই কবি কাছে থেকে দেখেছেন। তিনি বিকেলে ক্লান্ত পাখিদের নীড়ে ফেরা প্রত্যক্ষ করেছেন। তারাও কবিকে দেখেছে। এজন্য এই পাখিরা কবিকে চেনে।
৪. ‘আমি কোনো অভ্যাগত নই’—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: ‘আমি কোনো অভ্যাগত নই’- বাক্যটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে কবি এদেশের কোনো আমন্ত্রিত অতিথি নন।
জন্মভূমি মায়ের মতো। জন্মভূমির সাথে মানুষের তাই গভীর সম্পর্ক। কবিরও রয়েছে মাতৃভূমির প্রতি প্রবল অনুরাগ। নিজভূমির সবকিছুই তিন চেনেন। তিনিও সবার পরিচিত, অতি আপনজন। তাই তিনি বলেছেন “আমি কোনো অভ্যাগত নই।” অর্থাৎ জন্মস্থানের সথে তাঁর সম্পর্ক বহু পুরনো।
৫. কবি আহসান হাবীবের কবিতা পাঠক হৃদয়ে মধুর আবেশ সৃষ্টি করে কেন?
উত্তর: কবি আহসান হাবীবের কবিতায় গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ বিশিষ্ট ব্যঞ্জনায় ফুটে ওঠায় তা পাঠক হৃদয়ে মধুর আবেশ সৃষ্টি করে।
আহসান হাবীব কবিতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে এবং আর্তমানবতার পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। গভীর জীবনবোধ ও আশাবাদ স্নিগ্ধ রূপে ফুটে উঠেছে তাঁর কবিতায়। তাঁর কবিতার এই স্নিগ্ধতাই পাঠক মনে মধুর আবেশ সৃষ্টি করে।
৬. ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় মাছরাঙা কবিকে চেনে কেন?
উত্তর: ‘আমি কোনো আগন্তুক নই’ কবিতায় কবির প্রতিনিয়ত পুকুরপাড়ে মাছরাঙার সাথে সাক্ষাৎ হতো বলে মাছরাঙা তাঁকে চেনে।
মানুষ জন্মভূমির মধ্যে শিকড় গেড়ে সমগ্র দেশকে আপন করে নেয়। কবি জন্মভূমিতে চারপাশের প্রকৃতিকে আপন সত্তায় অনুভব করেছেন। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানের সান্নিধ্যে থেকেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। তেমনি মাছরাঙার সান্নিধ্যও তিনি পেয়েছেন। তাই মাছরাঙা কবিকে চেনে।
৭. জমিলার মায়ের রান্নাঘরের থালাগুলো সব শুকনো কেন?
উত্তর: ঠিকমতো রান্না-খাওয়া হয় না বলে জমিলার মায়ের রান্নাঘরের থালাগুলো সব শুকনো।
জমিলার মা গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র, অভাবী একজন মানুষ। অভাবের কারণে তার রান্নাঘর সাধারণত শূন্যই থাকে। কেননা রান্না করার খাদ্য উপাদান তাদের নেই। যেহেতু রান্না করা হয় না, সেহেতু খাবারও যাওয়া হয় না। ফলে রান্নাঘরের থালাগুলো শুকনোই থাকে।
৮. কবি জমিনের ফুল, জারুল, জামরুলকে সাক্ষী করেছেন কেন?
উত্তর: কবি জমিনের ফুল, জারুল, জামরুলকে সাক্ষী করেছেন প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠার কারণে।
প্রকৃতির সাথে কবির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তিনি প্রকৃতির গাছপালা পাখপাখালি প্রভৃতির মাঝে বেড়ে উঠেছেন। ফলে এদেরকে তিনি ভালো করে চেনেন। এরাও কবিকে চেনে। জমিনের ফুল, জারুল, জামরুলও প্রকৃতির উপাদান। কবি এদের সাথে কবির আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি করেছেন। তাই তিনি এদেরকে সাক্ষী করেছেন।
৯. জন্মভূমির সবকিছু কবির কাছে চেনাজানা মনে হয় কেন?
উত্তর: জন্মভূমির একান্ত সান্নিধ্যে কবি বেড়ে উঠেছেন বলে জন্মভূমির সবকিছু কবির কাছে চেনাজানা মনে হয়।
জন্মভূমির সাথে মানুষের আজীবনের সম্পর্ক। জন্মভূমির মধ্যে শেকড় গেড়ে থেকেই মানুষ সমগ্র দেশকে আপন করে পায়। জন্মভূমির প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠায় কবি প্রকৃতির সবকিছুকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই কবির কাছে জন্মভূমির সবকিছু চেনাজানা মনে হয়।
১০. জন্মভূমির সাথে মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত কেন?
উত্তর: মানুষ জন্মভূমিতে জন্ম নিয়ে তার সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে বিধায় জন্মভূমির সাথে মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত।
মানুষ জন্মলাভের পর তার দেশের প্রকৃতি ও মানুষের সান্নিধ্যে বেড়ে ওঠে। প্রকৃতির নানা উপাদানের সাথে তার পরিচয় ঘটে। এই পরিচয়ের সূত্র ধরে মানুষের সাথে জন্মভূমির এক গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক আজীবন স্থায়ী হয়। আর এভাবেই জন্মভূমির সাথে মানুষ গভীরভাবে সম্পর্কিত।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে আমি কোনো আগন্তুক নই কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post