আম আঁটির ভেঁপু অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : অপুর বাবা হরিহরকে দশ ঘরার সদগোপ সম্প্রদায়ের এক লোক তাদের গাঁয়ে চলে এসে বামুন হিসেবে সপরিবারে বসবাসের প্রস্তাব দেয়। আর্থিক চরম দুরবস্থা সত্ত্বেও হরির প্রস্তাবটিতে সরাসরি সম্মতি দেয়নি। কারণ এতে সদগোপ সম্প্রদায়ের লোকেরা হরিহরের দারির্দ্যের বিষয়টি জেনে যাবে। তাছাড়া হরিহরের অনেক ধার-দেনা ছিল । আবাস পরিবর্তনের সংবাদ শুনে পাওনাদাররা এসে তার কাছে টাকা চাইবে। তাই আত্মসম্মানবোধ ও ধার-দেনার টানাপড়েনে অপুর বাবা সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না।
আম আঁটির ভেঁপু অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. হরিহরের বাড়িটি দেখতে কেমন?
উত্তর: হরিহরের বাড়িটি তার দরিদ্রতার দিকটি স্পষ্টভাবেই তুলে ধরে। টাকা-পয়সার অভাবে তার বাড়িটা দীর্ঘদিন ধরে মেরামত করা হয়নি। বাড়ির সামনের দিকের রোয়াক ভাঙা, ফাটলে বন-বিছুটি ও কালমেঘ গাছের বন গজিয়েছে। ঘরের দরজা-জানালার কপাট সব ভাঙা, নারিকেলের দড়ি দিয়ে গরাদের সঙ্গে বাঁধা আছে। এক কথায়, হরিহরের বাড়িটি বেশ জীর্ণ ও ভাঙাচোরা ছিল।
২. দুর্গা কেমন করে তার দিন কাটায়?
উত্তর: দুর্গা ব্যাপক চঞ্চলতা ও দুরন্তপনার মধ্য দিয়ে তার দিন কাটায়। দুর্গা সারাদিনই গ্রামের এদিক সেদিক দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কখনো এর বাড়ি, কখনো ওর বাড়ির ফলগাছ থেকে ফল আনতে ব্যস্ত থাকে। রোদ-বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই সে গাঁয়ের এ পাড়া, ও পাড়া মাতিয়ে বেড়ায়। কখনো ছোট ভাইয়ের সাথে খেলে, কখনো ঝগড়া করে হেসে খেলে তার দিন কাটায়।
৩. ‘অত বড় মেয়ে, বলে বোঝাবো কত? কথা শোনে, না কানে নেয়?’—কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: হরিহর দুর্গাকে বাড়িতে না দেখে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করায় সর্বজয়া উল্লিখিত উক্তিটি করে। দুর্গা দুরন্ত। বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়ায় সব সময়। খিদে পেলেই বাড়িতে আসে। কোথায় কার বাগানে কার আমতলায়, জামতলায় ঘুরে বেড়ায় কেউ জানে না। তাই তো হরিহর দুর্গাকে দেখতে না পেয়ে তার কথা জিজ্ঞেস করায় সর্বজয়া আলোচ্য উক্তিটি করে।
৪. অপুর বাবা কেন সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না?
উত্তর: আত্মসম্মানবোধে ও ধার-দেনা শোধের অপারগতায় অপুর বাবা সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না। অপুর বাবা হরিহরকে দশ ঘরার সদগোপ সম্প্রদায়ের এক লোক তাদের গাঁয়ে চলে এসে বামুন হিসেবে সপরিবারে বসবাসের প্রস্তাব দেয়। আর্থিক চরম দুরবস্থা সত্ত্বেও হরির প্রস্তাবটিতে সরাসরি সম্মতি দেয়নি। কারণ এতে সদগোপ সম্প্রদায়ের লোকেরা হরিহরের দারির্দ্যের বিষয়টি জেনে যাবে। তাছাড়া হরিহরের অনেক ধার-দেনা ছিল । আবাস পরিবর্তনের সংবাদ শুনে পাওনাদাররা এসে তার কাছে টাকা চাইবে। তাই আত্মসম্মানবোধ ও ধার-দেনার টানাপড়েনে অপুর বাবা সহজে গ্রাম ছেড়ে যেতে চাইল না।
৫. দুর্গা পা টিপে টিপে বাড়িতে প্রবেশ করল কেন?
উত্তর: মাকে ভয় পাওয়ায় তার কাছে ধরা না পড়ার জন্য দুর্গা পা টিপে টিপে বাড়ি প্রবেশ করে। দুর্গা সারাদিন বাইরে থাকে। বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ায়। এসব কারণে সর্বজয়া তার ওপর ভারী ক্ষিপ্ত। তাই তার মা চোখের আড়াল হতে দেয় না। তবুও দুর্গা মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বাইরে গিয়ে পুনরায় বাড়িতে প্রবেশের সময় টিপে টিপে পা ফেলে, যাতে তার মা বাইরে যাওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে।
আম আঁটির ভেঁপু সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৬. ‘আগ্রহে সর্বজয়ার কথা বন্ধ হইবার উপক্রম হইল।’—কেন?
উত্তর: অভাব-অনটনহীন জীবনের সম্ভাবনার কথা শুনে আগ্রহে সর্বজয়ার কথা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো।
সর্বজয়ার পরিবার হতদরিদ্র। দু-বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাড় করতেই তাদের প্রাণপণ কষ্ট করতে হয়। এর ওপর রয়েছে পাওনাদারদের তাগাদা। এমন সঙ্গীন অবস্থায় ভিন গাঁয়ে জায়গা-জমি পাওয়ার সম্ভাবনার কথা সর্বজয়াকে শোনায় তার স্বামী। সর্বজয়া স্বপ্ন দেখে তার দুঃখের দিন এর মাধ্যমে শেষ হবে। তাই আনন্দে, উত্তেজনায় ভাষা হারিয়ে ফেলে সে।
৭. হরিহরের বসতভিটার আশপাশটা প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে কেন?
উত্তর: হরিহরের বসতভিটার আশপাশটা প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সেখানে কেউ বসবাস না করার কারণে।
‘আম-আঁটির ভেঁপু’ গল্পে হরিহরের বাড়ির চারদিকে জঙ্গল। হরিহর রায়ের জ্ঞাতিভাই নীলমণি রায় মারা যাওয়ায় সেই বাড়িতে কেউ থাকে না। নীলমণি রায়ের স্ত্রী সেই বাড়ি ফেলে রেখে পুত্রকন্যা নিয়ে তার পিতার বাড়িতে থাকেন। তাদের বাড়ি ছাড়া হরিহরের বাড়ির আশপাশটায় আর কোনো বাড়ি নেই। সেই বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এবং সেখানে নানা রকম গাছপালা জন্মে আবৃত হয়ে রয়েছে। তাই হরিহরের বসতভিটার আশপাশকে প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র বলা হয়েছে।
৮. ‘আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা।’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘আজকাল চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা’—কারণ চাষারা নিয়মিত জমিতে ফসল ফলায়, ফলে তাদের অন্নাভাব হয় না। চাষা মানেই চাষ করার সঙ্গে যার নিবিড় সম্পর্ক। আর চাষ করা মানেই ফসলের উৎপাদন। যারা ফসল উৎপাদন করে, তাদের থাকে গোলাভর্তি ধান, সে ধান তারা সারাবছর খায়। তাদের ঘরে খাবারের বিশেষ অভাব হয় না। অন্নের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীকে গণ্য করা হয়। প্রশ্নোক্ত লাইনে চাষাদের ঘরে লক্ষ্মী বাঁধা বলতে খাবারের মজুদকেই বোঝানো হয়েছে।
৯. হরিহর দশঘরা গ্রামের মাতব্বর লোকটির পরিচয় গোপন রাখতে বলেছিল কেন?
উত্তর: লোকে জানলে নিন্দা করতে পারে বলে হরিহর দশঘরা গ্রামের মাতব্বর লোকটির পরিচয় গোপন রাখতে বলেছিল। দশঘরা গ্রামে কোনো বামুন নেই। তাই সে গ্রামের মানুষের খুব ইচ্ছে, গ্রামে তারা এক ঘর ব্রাহ্মণ বাস করাবে। তাই দশঘর গ্রামের মাতব্বর হরিহরকে প্রস্তাব দিল সেই গ্রামে গিয়ে বাস করতে। হরিহর তার স্ত্রীকে এই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলে সে যাতে এ কথা কাউকে না বলে। কারণ ব্যাপারটি তার আত্মমর্যাদায় আঘাত হানতে পারে।
১০. ‘একটুখানি কুটোগাছটা দু খানা করা নেই।’—সর্বজয়া একথা বলেছেন কেন?
উত্তর: মায়ের কোনো কাজে সাহায্য না করায় মা দুর্গাকে উদ্দেশ করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।
অপু আর দুর্গা দুই ভাই-বোন। তারা দুজনই দুরন্ত শিশু। তারা সবসময় প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে হাসি-আনন্দে মেতে থাকে। সারা দিন গ্রামের ঝোপঝাড়ে ছোটাছুটি করে। অভাবের সংসারে ফলমূল সংগ্রহ করে খায়। মায়ের বারণ সত্ত্বেও পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কোনো কাজে তারা সাহায্য করে না। তাই তাদের মা সর্বজয়া দুর্গার ওপর বিরক্ত হয়ে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে আম আঁটির ভেঁপু অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post