আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর : শঙ্খ ঘোষ (১৯৩২. : জন্ম অধুনা বাংলাদেশের বরিশালে। আধুনিক বাংলাসাহিত্যের একজন প্রধান কবি, প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক। পড়াশুনো প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম কাব্যপন্থা “দিনগুলি রাতগুলি’। “নিহিত পাতাল ছায়া”, “বাবরের প্রার্থনা” “পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ”, “জলই পাষাণ হয়ে আছে”, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে” “মূর্খ বড়ো, সামাজিক নয়” ধুম লেগেছে হৎ কমলে” “গোটা দেশজোড়া জউঘর,, প্রতি প্রশ্নে কেঁপে ওঠে ভিটে”, “হাসিখুশি মুখে সর্বনাশ” ইত্যাদি।
ছোটোদের জন্য লিখেছেন “ছোট্ট একটা স্কুল “অল্পবয়স কল্পবয়স” “সকালবেলার আলো” “সুপুরিবনের সারি, শহর পথের ধুলো” ইত্যাদি কুত্তক” ছন্সনামে লিখেছেন শব্দ নিয়ে খেলা ও “কথা নিয়ে খেলা। প্রবন্ধের বই হিসেবে “কালের মাত্রা ও রবীন্দ্র নাটক”, “ছন্দোময় জীবন”, “ভিন্ন রুচির অধিকার”, “এই শহরের রাখাল, “ঐতিহ্যের বিস্তার” “এ আমির আবরণ” “ছন্দের বারান্দা” ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । কবির প্রাপ্ত নানা পুরস্কারের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, কবীর সম্মান, সরস্বতী সম্মান এবং পদ্মভূষণ।
আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর
বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
১. কবি শঙ্খ ঘোষের ছদ্মনাম কী?
উত্তর: কুন্তক
২. শঙ্খ ঘোষের আসল নাম কী?
উত্তর: চিত্তপ্রিয় ঘোষ
৩. কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের?
উত্তর: জলই পাষাণ হয়ে গেছে
৪. আমাদের ডান পাশে কী?
উত্তর: ধস
৫. গিরিখাদ রয়েছে?
উত্তর: আমাদের বামে
৬. আমাদের মাথায় কী?
উত্তর: বোমারু
৭. বোমারু কথার অর্থ কী?
উত্তর: বোমা নিক্ষেপকারী যুদ্ধবিমান
৮. আমদের পায়ে পায়ে কী?
উত্তর: হিমানীর বাঁধ
৯. আমাদের ঘর কোথায়?
উত্তর: উড়ে গেছে
১০. আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে’ কোথায়?
উত্তর: কাছে দূরে
১১. আমাদের কী নেই?
উত্তর: ইতিহাস
১২. আমাদের কেমন ইতিহাস?
উত্তর: চোখমুখ ঢাকা ইতিহাস
১৩. আমরা ভিখারি———-?
উত্তর: বারোমাস
১৪. পৃথিবী মরে গেছে বলে কবি আশঙ্কা করছেন কেন?
উত্তর: হানাহানি ও মৃত্যুর পৃথিবীতে মানবিকতার অভাব বলে
১৫. হয়তো মরে গেছে’ কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: পৃথিবীর কথা বলা হয়েছে
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
১. আমাদের ডান ও বাঁ পাশে কবি কীসের উল্লেখ করেছেন?
উত্তর: যুদ্ধ, হিংসা, হানাহানির কারণে আজ সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন, তারা চলেছে কোনো এক অনিশ্চিত পথে যার চারপাশ প্রতিকূলতায় আবৃত। ডান পাশে রয়েছে ধস এবং তার বাঁ পাশে ‘গিরিখাদ’ যা অনিবার্য মৃত্যুর প্রতীক।
২. “আমাদের মাথায় বোমারু”—এ কথা বলার কারণ কী?
উত্তর: বোমানিক্ষেপকারী যুদ্ধবিমান হল বোমারু। বর্তমান শতা সূচনায় ক্ষমতাধারী রাষ্ট্রগুলি নানা অছিলায় দুর্বল রাষ্ট্রের। বোমাবর্ষণ করে শাস্তিভঙ্গ করেছে বলে এ কথা বলা হয়েছে।
৩. ‘পায়ে পায়ে ‘হিমানীর বাঁধ’ বলতে কবি কী বলেছেন?
উত্তর: হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে নিরীহ সাধারণ মানুষের বেঁচে থা পথ ক্রমশ দুর্গম হয়ে উঠছে। ‘হিমানী’ অর্থাৎ তুষারাবৃত পড়ে। যেমন দুষ্কর, তেমনই বেঁচে থাকার পথ ধরে এগোনোও কষ্টকর।
৪. “ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে” – কী ছড়ানো রয়েছে?
উত্তর: শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটিতে নিষ্পাপ মানবশিশুর শব বা মৃতদেহ ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।
৫. শিশুদের শব যেখানে সেখানে ছড়ানো আছে কেন?
উত্তর: শিশুঘাতী, নারীঘাতী, কুৎসিত, বীভৎস, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির নির্বিচারে বোমাবর্ষণের ফলে যেখানে সেখানে শিশুদের শব ছড়িয়ে আছে।
৬. “আমরাও তবে এইভাবে”—‘এইভাবে’ বলতে বক্তা কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের বোমারু বিমানের নির্বিচার বোমাবর্ষণে কত দুর্বল রাষ্ট্রের নিরীহ শিশুর প্রাণ গিয়েছে। আমরাও’ অর্থাৎ বাকি সাধারণ মানুষও কী এভাবেই প্রাণ দেব না কি সংঘবদ্ধ প্রতিবাদ জানাব, বক্তা তাই জানতে চেয়েছেন।
৭. “এ মুহূর্তে মরে যাব না কি?” – এখানে কবির আশঙ্কা না ভয়কে জয় করার অঙ্গীকার প্রকাশিত হয়েছে?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশে আপাতভাবে মনে হতে পারে কবি মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে বেঁচে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার এই অংশে প্রকাশিত হয়েছে।
৮. “আমাদের পথ নেই আর”– আমাদের পথ নেই কেন?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসন, যুদ্ধবাদের নিয়তিন আশ্রয়হীন, সর্বহারা মানুষের মুক্তির পথ রোধ করেছে। তাদের প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হয়েছে মৃত্যুর সঙ্গে। তাই তাদের বেঁচে থাকার কোনো পথই অবশিষ্ট নেই।
১০. “আমাদের পথ নেই আর”–তাহলে আমাদের করণীয় কী?
উত্তর: আমাদের অর্থাৎ সর্বহারা মানুষদের বাঁচার পথ যখন ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসে, তখন সহমর্মিতার সঙ্গে আরও বেশি সংঘবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।
১০. “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।”—বক্তার কখন এমন মনে হয় ?
উত্তর: হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীতে বোমারু বিমানের হানায় যখন প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুভয় তাড়া করে, সেই বিপন্ন সময়ে বক্তার এমন মনে হয়।
১১. “বেঁধে বেঁধে থাকি”—বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ কী?
উত্তর: বেঁধে বেঁধে থাকার অর্থ মিলেমিশে এক হয়ে থাকা, সংঘবদ্ধ হয়ে সহমর্মিতার সঙ্গে বাঁচা।
১২. “আমাদের ইতিহাস নেই’—এ কথা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: আমরা সাধারণ গরিব মানুষ। আমাদের জীবন-জীবিকা-আশ্রয় অনিশ্চিত। সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধের পরিবেশ ঘনিয়ে তুলে আমাদের শিকড় ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে উন্মুখ। তাই আমাদের ইতিহাস নেই।
১৩. “অথবা এমনই ইতিহাস” – পঙক্তিটির বক্তব্যবিষয় লেখ।
উত্তর: কবি বলেছেন বঞ্ঝিত সর্বহারা মানুষের কোনো গৌরবময় ইতিহাস নেই। চিরকাল তারা নির্যাতিত। চারপাশে প্রতিবন্ধকতায় বেঁচে থাকার পথ অনিশ্চিত্ত, বিপজ্জনক। রাষ্ট্রনায়করা, সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের স্বার্থে তাদের অন্ধকারে বেঁধে রেখেছে।
১৪. “আমাদের চোখমুখ ঢাকা”– “চোখমুখ’ ঢাকার কারণ কী?
উত্তর: আমরা অর্থাৎ শান্তিপ্রিয় সর্বহারা মানুষ সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের শিকার। স্বার্থসিদ্ধির কারণে এরা প্রতিনিয়ত সাধারণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। এই বঞ্চনার ইতিহাসই বয়ে চলেছে যুগান্তরে, যেখানে অবক্ষয়ের অন্ধকারে ঢাকা পড়েছে মানুষের মানবিক সত্তা। একেই কবি ‘চোখমুখ ঢাকা’ বলেছেন।
১৫. “আমরা ভিখারি বারোমাস” – এ কথা বলার কারণ কী ?
উত্তর: সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রশক্তি পারস্পরিক যুদ্ধে অথবা দুর্বল রাষ্ট্রে অধিকার কায়েমের জন্য সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে। সাধারণ মানুষ আশ্রয় ও জীবিকা হারিয়ে ভিখারিতে তাই পরিণত হয়।
সংক্ষিপ্ত প্ৰশ্ন উত্তর
১. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা অনুসারে বর্তমান পরিপার্শ্ব প্রসঙ্গে নিজের মতামত ব্যখ্যা করো।
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি গৃহীত হয়েছে। কবিতায় আমাদের চারপাশের যে উল্লেখ রয়েছে, তাতে কবিও একজন সহযাত্রী। প্রাণের বিপন্নতা আধুনিক মানুষের নিত্যসঙ্গী। যুদ্ধ-দাঙ্গা-সন্ত্রাস ও হানাহানিতে মানুষ বিপর্যস্ত।
ধস, খাদ, বোমারু এই সবকিছুর প্রতীক হিসেবে আসলে তার জীবনের অস্থির দোদুল্যমানতাকেই প্রকাশ করে। আবার বিচ্ছিন্নতা ও ব্যক্তিসর্বস্বতার কারণে আমরা আজ পথহারা, নিরুপায়। বর্তমান এই অবস্থার কথাই কবি পাঠ্য-কবিতায় ফুটিয়ে তুলেছেন।
২. আমাদের ঘর উড়ে যাওয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে? অথবা, ‘আমাদের ঘর গেছে উড়ে’— উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায়, উক্ত প্রসঙ্গের উল্লেখ মেলে। এখানে কবির চোখে, আধুনিক মানুষের বিপন্নতা এবং যুগযন্ত্রণার ছবিটি ধরা পড়েছে। আসলে এই ঘর মানুষের আশ্রয় এবং অস্তিত্বের কথা বলছে। কিন্তু সেই আশ্রয় থেকে ক্রমে আমরা বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। তাই কেউ যুদ্ধে বা দাঙ্গায় ঘরহারা হয়েছে, আবার কেউ ঘরে থেকেও ছিন্নমূল বা গৃহহীন। এখানে কবির এই ভাবনারই প্রকাশ ঘটেছে।
৩. ‘আমাদের পথ নেই’ বলার কারণ কী?
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বর্তমান প্রসঙ্গের উল্লেখ মেলে। এখানে সময়ের নিদারুণ অভিঘাতে বিপর্যস্ত ও বিভ্রান্ত সাধারণ মানুষের নিরুপায় রূপটি ফুটে উঠেছে। যুদ্ধ-দাঙ্গা-বিপর্যয় ও বিচ্ছিন্নতায় আধুনিক মানুষের মুক্তির সব পথ বন্ধ। ধস, গিরিখাত ও মাথায় বোমারুর নিয়ত আয়োজনে সে সন্ত্রস্ত। কোনোক্রমে বেঁচে থাকছে সাধারণ আপামর মানুষ। তাদের অসহায়তার জন্যই কবি বলেছেন, ‘আমাদের পথ নেই’।
৪. ‘আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে। উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে উদ্ধৃত পংক্তি দুটি গৃহীত হয়েছে। হিংসাশ্রয়ী সময়ের বিপন্নতায় আমাদের চারপাশ আজ বিপদসংকুল। এই নারকীয় হানাহানি থেকে শিশুরাও বাদ যায় না। তাই ‘কাছে-দূরে’, যত্রতত্র প্রাণঘাতী হিংসার বলি হিসেবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে শিশুদের মৃতদেহ। যে সমাজ, যে রাষ্ট্র শিশুদের রক্ষা করতে পারে না, যারা নিজেদের অস্ত্র হিসেবে শিশুদের ব্যবহার করে, তারা তো অমানুষ ও কাপুরুষ ভিন্ন আর কিছুই নয়। তাই আমাদেরই অক্ষমতা, আমাদেরই কলঙ্কের প্রতীক চিহ্ন।
৫. ‘আমরাও তবে এইভাবে/এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি?– এ শঙ্কার হেতু কী?
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের লেখা ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটি গৃহীত। এখানে কবির এমন শঙ্কার কারণটি অত্যন্ত মর্মগ্রাহী। আমরা আমাদের শিশুদের অস্তিত্ব রক্ষায় অপারগ, যেখানে প্রাণঘাতী হানাহানির অনায়াস শিকার হচ্ছে আমাদের শিশুরা; সেখানে নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নটিও অবান্তর ও অর্থহীন হয়ে ওঠে।
কারণ কবি কেবল বেঁচে থাকার দোষে বেঁচে থাকাকে ঘৃণা করেন। তাই এহেন নারকীয় প্রবলের কাছে নতিস্বীকার এক সংবেদনশীল মানুষের কাছে অত্যন্ত যন্ত্রণা ও অনুপাতের বিষয়। পাঠ্য উদ্ধৃতাংশে সেই হতাশা ও অনুশোচনারই প্রকাশ ঘটেছে।
৬. ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি –এ আমন্ত্রণ কেন?
উত্তর: উদ্ধৃত পক্তিটি কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে গৃহীত। কবির ভাষায় বিপন্ন আধুনিক মানুষের অসহায়তা এবং যুগযন্ত্রণার অভিব্যক্তিটি প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্র ও সমাজের এক নগ্নরূপ এ কবিতায় দৃশ্যমান৷ ধস-গিরিখাত -বোমারু-শিশুদের শব আসলে আধুনিক সভ্যতার মনুষ্যত্বহীন নরঘাতী বিপর্যয় ও হানাহানির প্রতিভূ।
এই বিপদসংকুল পরিপার্শ্বের মধ্যে বাস করে ব্যক্তিমানুষও নিরাশ্রয়, স্বস্থানচ্যুত এবং অস্তিত্বের সংকটে একলা ও অসহায়। আর এখানেই একজন কবির দায়বদ্ধতা। এই অসহায়তা থেকে মুক্তির লক্ষে তিনি = পরস্পর জোট বেঁধে, সংঘবদ্ধ হয়ে একত্রে এগিয়ে চলার আহ্বান মন্ত্র ঘোষণা করেছেন।
৭. “অথবা এমনই ইতিহাস’—উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষের ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে প্রশ্নোধৃত অংশটি গৃহীত। এখানে কবি “ইতিহাস’ বিস্মৃত হওয়া এক জাতির কথা বলেছেন যেন। যারা নিজেদের অতীত ঐতিহ্য ও মূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাই কবি বলেছেন ‘আমাদের ইতিহাস নেই’। সনাতন ভারত শান্তির দেশ, মানবতার ধারক।
ভারত তার শাস্তিমন্ত্রকে বারবার বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে। এটাই ভারতের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ স্বরূপ। একে ভুলে যাওয়াই ইতিহাস বিস্মৃতি। এ ছাড়াও ইতিহাস বলতে বোঝানো হয়েছে, ইতিহাস বিকৃতি অর্থাৎ আত্মবৈশিষ্ট্য বিস্মৃত হয়ে পরের অনুকরণে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টা। এখানে কবির এই ভাবনাই প্রকাশ পেয়েছে।
৮ ‘আমরা ভিখারি বারোমাস’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: কবি শঙ্খ ঘোষ রচিত ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় বর্তমান প্রসঙ্গের উল্লেখ পাই। এখানে কবির চোখে মানুষের বিপন্নতা ও যুগযন্ত্রণার ছবিটি ধরা পড়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের নরঘাতী স্বরূপটিকে বুঝেও আজ আমরা নির্বিকার। বেঁচে থাকার মুদ্রাদোষে এবং ভয়ে আজ আমাদের চোখমুখ ঢাকা। অর্থাৎ চোখে ঠুলি ও মুখে মুখোশ। আমরা যেন সহ্য করে আর অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে কোনোক্রমে জীবনধারণের ভিক্ষুকদশা গ্রহণ করেছি। আত্মকেন্দ্রিক ও গৃহমুখী মানসিকতাকেই কবি ভিখারির মতো দিন অতিবাহিত করা বলতে চেয়েছেন।
৯ ‘পৃথিবী হয়তো গেছে মরে’—এমন সংশয়ের কারণ কী?
উত্তর: প্রশ্নোদ্ভূত প্রসঙ্গটি ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতা থেকে গৃহীত৷ কবির ভাবনায় মানবতার পক্ষে চলমানতাই জীবন আর তার বিপরীতে নির্বিকার নিষ্ক্রিয়তা, মৃত্যুরই নামান্তর। মনুষ্যত্বের প্রয়োজনে ও মানুষের কল্যাণের জন্য, সভ্যতা হাজার হাজার বছর ধরে চলমান। আজ যেন ক্রমে অকল্যাণের ভিতে থমকে ও আটকে যাচ্ছে সবকিছু।
তাই মানুষের ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা জীবনের চলিষ্ণুতা থেকে যেন নিজেদের ক্রমে বিচ্ছিন্ন করে নিচ্ছে। কবি ভাগ্যের হাতে নিজেদের সঁপে দিয়ে, এহেন আপাত শাস্তিকল্যাণে মানবতার কোনো অভিমুখ খুঁজে পান না। এই সামাজিক পরিস্থিতিতে, ব্যক্তিমনের সংশয়াপন্ন ভাবনা থেকেই, কবির উপরোক্ত উচ্চারণ।
১০ ‘কিছুই কোথাও যদি নেই’—কবির এমন মনে হচ্ছে কেন?
উত্তর: ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় কবি, উপরে উদ্ধৃত বর্তমান প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন। কবি একজন সমাজমনস্ক ব্যক্তি। তবে বিপন্ন মানুষের অসহায়তা, আত্মকেন্দ্রিকতা ও নিরুপায় একাকিত্ব তাকে সংশয়াপন্ন করে তোলে। “কিছুই কোথাও যদি নেই’ অর্থাৎ এই বর্বর ও আমানবিক পরিবেশে, আশান্বিত হওয়ার মতো কোনো কিছুর সন্ধান মেলে না, যা অবলম্বন করে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। তবুও তিনি হাল ছাড়েন না। যে কয়জন অবশিষ্ট আছে, তাদেরকে একসূত্রে গ্রথিত করে মানবতার জয়গান গাইতে হবে।
রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর
১. ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতায় কবির সমাজচেতনার পরিচয় দাও।
উত্তর: এ কালের বিবেক কবি শঙ্খ ঘােষ একজন মননশীল ও অনুভূতিপ্রবণ মানুষ। তাই স্বাধীনতার পরবর্তী কালের রাষ্ট্রীয় , দেশের মানুষের অভাব-অনটন, তাদের বিপন্নতার ছবি এঁকেছেন তাঁর ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায়। সমাজসচেতন শিল্পী বলেই সমকালের ছবিকে বাঙ্য় রূপ দিয়েছেন কবি। কবি প্রত্যক্ষ করেছেন, বিংশ শতাব্দী অতিক্রম করেও একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বব্যাপী ক্ষমতা লােলুপতা জনজীবনে প্রভাব বিস্তার করেছে।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিধর দেশগুলি নিজেদের আধিপত্য কায়েম করার লক্ষ্যে চালাচ্ছে যুদ্ধ। ফলে সাধারণ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে। ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফলে মানুষের মধ্যে বাড়ছে সাম্প্রদায়িক হিংসা, গােষ্ঠী সংঘর্ষ। এর কুফল ভােগ করতে হচ্ছে দেশের নিরীহ, অতি সহজ সরল, শান্তিপ্রিয় মানুষজনকে। মানুষ হয়ে পড়ছে নিরাশ্রয়, তাদের চলার পথ হয়ে পড়ছে অবরুদ্ধ। কবি সখেদে, চরম দুঃখে উচ্চারণ করেন-“আমাদের পথ নেই কোনাে/ আমাদের ঘর গেছে উড়ে।
সাম্রাজ্যবাদীর মদমত্ততায় খুন হতে হয় সুকুমারমতি নিস্পাপ শিশুদের। অনুভূতিপ্রবণ কবির শিহরিত চিত্ত উচ্চারণ করে—‘আমাদের শিশুদের শব/ছড়ানাে রয়েছে কাছে। দূরে। কবি এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে শঙ্কার সঙ্গে বলে ওঠেন, ‘এ-মুহূর্তে মরে যাব না কি? আসলে দেশের ক্ষমতাসীন শক্তি ক্ষমতার দম্ভে দিশাহীন আচরণ করে। এতে ভুক্তভােগী সাধারণ মানুষ। তারা ক্রমে ভিখারি দশাপ্রাপ্ত হয়ে যায়। ইতিহাসে লেখা হয় না তাদের কথা।
তর করি সমাজেসচেতন মানুষ হিসেবে আশা, স্বপ্নকে জাগিয়ে দিতে চান মানুষের মনে। তিনি বলে ওঠেন, তবু তাে কজন আছি বাকি। অর্থাৎ বিবেকবান মানুষ এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। তারা একদিন সংঘবদ্ধ হবেন। প্রতিরােধ-প্রতিবাদে গর্জে উঠবেন। আর কবির তাদের প্রতি আহ্বান ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি। এই উচ্চারণ কবির সমাজসচেতন মননেরই পরিচায়ক।
২. ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় ‘আমাদের ইতিহাস বিষয়ে কবির ধারণাটি ব্যক্ত করাে। অথবা, আমাদের ইতিহাস নেই/অথবা এমনই ইতিহাস’-কবি ‘আমাদের ইতিহাস নেই’ বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন কেন?
উত্তর: প্রত্যেক দেশ, প্রত্যেক জাতির নিজস্ব একটা ইতিহাস আছে। তার সুখ-দুঃখের, উত্থান-পতনের, গৌরব-অগৌরবের সে ইতিহাস লেখা হয়। কিন্তু কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে সে ইতিহাসও লেখা হয় না। বাংলার যথার্থ ইতিহাসের অভাবের কথা অনেক বাঙালি। মনীষাই খেদের সঙ্গে ব্যক্ত করেছেন। এ কালের বিবেক, আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অসামান্য স্রষ্টা শঙ্খ ঘােষ তার ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় গভীর দুঃখের সঙ্গে উচ্চারণ করেছেন ‘আমাদের ইতিহাস নেই।
আলােচ্য কবিতায় কবি ‘আমাদের’ বলতে অখণ্ড এক মানবসত্তাকেই বুঝিয়েছেন।
যুগে যুগে কালে কালে যে মানুষেরা নির্যাতিত সর্বস্ব হারানাে, মর্যাদা-বতি, শােষিত তাদের কথাই বলেছেন কবি। আসলে মানুষের যন্ত্রণার অংশীদার তিনি। যে সাধারণ মানুষ দেশের চালিকাশক্তি, যাদের প্রচেষ্টায় পৃথিবী-রথ সচল, তাদের কোনাে ইতিহাস রচিত হয় না। রাজা আসে, রাজা যায়। ওরা চিরকাল একইভাবে রয়ে যায়। কবি রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘ওরা চিরকাল দাঁড় টানে, ধরে থাকে হাল।
কবিতায় কবি আরও বলেছেন যে, ‘অথবা এমনই ইতিহাস’ ওইসব মানুষের জন্য লেখা হয়, তা মােটেই সুখপাঠ্য নয়। কারণ রচিত সেই কিৎি ইতিহাস ‘চোখ-মুখ ঢাকা। অর্থাৎ সে ইতিহাসে মানব-মহিমা নেই। এই সাধারণ সুবিধা-বঞ্চিত, শােষিত মানুষ ‘ভিখারি বারােমাস। নিঃস্ব, রিক্ত এইসব মানুষ। কবির সহমর্মিতা দেশের ওই ভাগ্যহত মানুষগুলির প্রতি।
৩. কবিশঙ্খ ঘােষের আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতায় সমকালীন মানুষের অস্তিত্ব সংকটের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা নিজের ভাষায় লেখাে।
উওর : মানবতাবাদী কবি শঙ্খ ঘােষ তার ‘আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতায় সমকালীন মানুষের অস্তিত্ব সংকটের চিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। কবি দেখেছেন বড়াে সংকটাপন্ন অবস্থায় বেঁচে আছে মানুষ। তাদের ডানদিকে ধস, বাঁয়ে গিরিখাদ, মাথার ওপর বােমারু বিমান, পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ। এককথায় তারা অবরুদ্ধ। তাদের সাধারণ চলাচলের পথটিও মুক্ত নয়।
নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের বাসস্থান। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, ধর্মান্ধতা, বর্বর জঙ্গি হানা, রাজনৈতিক চক্রান্ত, শােষণ-শাসনের ষড়যন্ত্র সাধারণ মানুষকে একেবারে কোণঠাসা করে ফেলেছে। বিবেচনাহীন স্বার্থান্ধ রাষ্ট্রনায়কের মবিমৃষ্যকারীতায়, নিষ্ঠুরতায় প্রাণহানি ঘটছে যত্রতত্র। ভবিষ্যতের ধারক, নিস্পাপ শিশুরাও খুন হয়ে যাচ্ছে নির্বিচারে। যত্রতত্র পড়ে থাকছে তাদের শব। আতঙ্কিত সর্বজন। পায়ে পায়ে মৃত্যু এগিয়ে আসছে সকলের দিকেই।
এক মৃত্যুময় অবস্থানে বেঁচে আছে সবাই। ইতিহাসে এদের ঠাই নেই। এদের ইতিহাস বলে যদি কিছু থেকেও থাকে সেটা বিকৃত ইতিহাস। সভ্যতার আলাে থেকে এদের দূরে রাখা হয়েছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে, আত্মশক্তি, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে এরা চির ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। পৃথিবী এদের ব্যাপারে নিস্পৃহ। এদের কথা কেউ জানে না। জানান দেওয়ার ক্ষমতাটুকুও নেই। নিঃস্ব হয়ে দোরে দোরে ছুটছে এরা। এদের জন্য কোথাও কিছু নেই।
দেশের নাগরিকদের মধ্যে এরা একটা সংখ্যা মাত্র। এরা কাউকে ভাবিত করতে পারে না। কেউ ভাবেও না এদের নিয়ে। এই দুঃসময়েও কবি আশাবাদী। তিনি মনে করেন এই অবস্থাতেও কিছু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ আছেন। বেঁচে থাকতে হলে হাতে হাত রেখে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এখন।
আরো দেখো: মাধ্যমিক বাংলা সম্পূর্ণ সাজেশন উত্তরসহ
মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা, উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। এছাড়াও মাধ্যমিক অন্যান্য বিষয়ের পূর্ণাঙ্গ সাজেশন রয়েছে কোর্সটিকায়। যা তোমরা বিনামূল্যে পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করতে পারবে। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post