আলাউদ্দিনের চেরাগ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : নিশানাথবাবু গণিতের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল-শিক্ষক। চোখে কম দেখেন। স্ত্রী-সন্তান বেঁচে না-থাকায় তিনি নিঃসঙ্গ একজন মানুষ। একদিন তাঁর ছেঁড়া চটির পেরেক উঁচু হয়ে যাওয়ায় চটিজোড়া ব্যবহারে অসুবিধা হচ্ছিল। পরে ঘরের জঞ্জাল থেকে একটা ধাতব পুরোনো চেরাগ খুঁজে পেয়ে সেটা দিয়ে জুতোতে বাড়ি দিতেই আলাউদ্দিনের দৈত্য এসে হাজির হয়। নিশানাথবাবু চাইলেই দৈত্যের কাছ থেকে মূল্যবান অনেক কিছু পেতে পারতেন; কিন্তু তিনি কিছু চাননি। সম্পদের লোভ তাঁকে স্পর্শ করেনি।
তাই তিনি দৈত্যের কাছ থেকে কোনো বাড়তি সুবিধা নিতে রাজি নন। তাঁর প্রাক্তন সহকর্মীরা চাঁদা তুলে তাঁকে সাহায্য করে। সে টাকা নিতেও তিনি লজ্জা পান। দৈত্য স্বেচ্ছায় নিশানাথবাবুকে পরশপাথর দিতে চায়। তা গ্রহণেও তিনি অস্বীকৃতি জানান। এ-গল্পে হুমায়ূন আহমেদ আরব্য-রজনীর গল্পের দৈত্য-চরিত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন সাধারণ শিক্ষকের সম্পর্ক দেখান। লেখকের কল্পনাপ্রতিভা ও প্রকাশভঙ্গির নৈপুণ্যে গল্পে উঠে এসেছে একজন নির্লোভ মানুষের ছবি, দারিদ্র্যে যিনি কষ্ট ভোগ করলেও থেকেছেন লোভহীন ও মহৎ। মনুষ্যত্বের প্রবল শক্তি এ-গল্পে দারিদ্র্যকে পরাজিত করেছে। গল্পটি আমাদের আত্মসম্মানবোধ, নির্লোভমানসিকতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয়।
আলাউদ্দিনের চেরাগ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
কিশোর অন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। দেখতে সুন্দর এবং পড়াশোনাতেও ভালো। কিন্তু একদিন তাকে গ্রামের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন সকালে তাকে দেখা গেল বড় তেতুল গাছের মগডালে। তাকে দেখে সবাই তো তাজ্জব। গ্রামের দক্ষ গেছো লাল মিয়ার মাধ্যমে তাকে গাছ থেকে নামানো হয়। তার ভাবভঙ্গি দেখে গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সে সবাইকে জানায়, তাকে পরিরা নিয়ে গিয়েছিল। সে বন্ধুদের পরির দেশের সুন্দর সুন্দর গল্প বলে। এক পরি তাকে অনেক সোনা-দানা, হীরা-মুক্তা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু সে তা গ্রহণ না করে লাটিম ও ক্রিকেট খেলার লোভে আবার গ্রামে চলে এসেছে। তার কাছে পরির দেশের বালাখানার চেয়ে গ্রামের খেলাধুলাই ভালো।
ক. নিশানাথ বাবুর দুটো চোখে কী পড়েছে?
খ. ‘তারপর তার মনে হলো—এটা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই নয়’—কে কোন প্রসঙ্গে বলেছে? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের কিশোর অন্তুর মধ্যে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ গল্পের নিশানাথ বাবুর কোন বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে আলোচনা কর।
ঘ. “সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটিতে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ গল্পের মৌলভাব অনুপস্থিত”—মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. নিশানাথ বাবুর দুটো চোখে ছানি পড়েছে।
খ. আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্যের কথা শুনে নিশানাথ বাবুর মনে হয়েছে—এটা স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু না। গল্পে দেখা যায়, নিশানাথ বাবু তার চটি জুতার পেরেক ঠিক করার জন্য লম্বা একটা জিনিস দিয়ে বাড়ি মারে। জুতায় আঘাত করার সাথে সাথে মেঘের মতো গর্জন করে এক দৈত্যের আগমন ঘটে। তাকে দেখে স্কুলশিক্ষক ভয় পায় এবং তার পরিচয়।
জানতে চায়। দৈত্য জানায়, সে আলাউদ্দিনের চেরাগ, তাকে যা হুকুম করা হয় তাই সে নিয়ে আসতে বাধ্য। দৈত্যের হাবভাব, বড় দুটো শিং এবং কথা শুনে নিশানাথ বাবুর কাছে অলীক কল্পনা মনে হয়। আবার দৈত্য যখন চেরাগের মধ্যে ঢোকে, তখন নিশানাথ বাবুর মনে হয়েছে এটা স্বপ্ন ছাড়া কিছুই না।
গ. উদ্দীপকের কিশোর অন্তুর মধ্যে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ গল্পের নিশানাথ বাবুর নির্লোভ ও সরলতার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
মানব চরিত্রের অন্যতম ভূষণ হলো নির্লোভ মানসিকতা ও সরলতা। সমাজে যেমন কুটিল এবং লোভী মানুষ আছে; তেমনি লোভহীন সরল মানুষও আছে। শত প্রলোভন এবং পরের অর্থসম্পদ তাদেরকে আকৃষ্ট করে না। নিজের যা আছে, তাই নিয়ে তারা সন্তুষ্ট থাকে। জীবনের দুঃখ-কষ্ট সাবকিছুকে তারা সহজভাবে গ্রহণ করে।
উদ্দীপকের কিশোর অন্তু একবার ঘটনাক্রমে পরির দেশে যায়। পরিরা তাকে অনেক সুযোগ-সুবিধা এবং সোনাদানা দিতে চায়। কিন্তু সরল অন্তু তাদের সোনাদানা-বালাখানা না নিয়ে নিজের গ্রামের খেলাধুলায় সন্তুষ্ট থেকেছে। ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ গল্পে অঙ্ক শিক্ষক নিশানাথ বাবুর নির্লোভ চেতনা, সরলতা এবং মনুষ্যত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। চেরাগের দৈত্য মাস্টার বাবুর দারিদ্রতা, চিকিৎসার জন্য টাকা-পয়সা এমনকি প্রচুর অর্থ-সম্পদ দিতে চেয়েছে। কিন্তু নিশানাথ বাবু অর্থসম্পদের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে তার নষ্ট জুতা সেরে দিতে বলেছেন। আবার পরশ পাথরের স্পর্শে লোহার বালতি সোনার বালতি হলেও তা তিনি নিজের স্কুলে দিয়ে দেন। মূলত নিশানাথ বাবুর এই নির্লোভমানসিকতা এবং সরলতা উদ্দীপকের অন্তুর মধ্যেও লক্ষণীয়।
ঘ. ‘সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটিতে ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ গল্পের মৌলভাব অনুপস্থিত’—মন্তব্যটি যথার্থ।
সমাজে ভালো-মন্দ, লোভী-নির্লোভ, স্বার্থপর-পরার্থপর বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ বসবাস করে। সমাজের অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা দারিদ্র, ক্ষুধা এবং রোগ-শোককে জীবনেরই অংশ মনে করেন।
নানা প্রলোভনও ওই সকল ব্যক্তির পদস্খলন ঘটাতে পারে না। শত দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও তারা নির্লোভ চেতনা ধারণ করে এবং মানবসেবায় নিয়োজিত থাকে।
উদ্দীপকের অন্তুকে একবার ভিনদেশি পরিরা তাদের দেশে নিয়ে যায়। সেখানে অন্তুকে সুন্দর খাবার, সোনাদানা ইত্যাদি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্লোভ ও সরল অন্তু তার শৈশবের লাটিম এবং ক্রিকেট খেলাকে বেশি পছন্দ করে। আর এ জন্য সে পরির দেশ থেকে নিজের গ্রামে চলে আসে। গল্পে নিশানাথ বাবুর মনুষ্যত্ব, নির্লোভ চেতনা এবং সহজ-সরল জীবনভাবনা ফুটে উঠেছে। আলাউদ্দিনের চেরাগের দৈত্য মাস্টার বাবুকে অনেক সোনাদানা দিতে চাইলেও দরিদ্র নিশানাথ তার ন্যায়পথ থেকে সরে যাননি।
তার কর্মে এবং লোভহীন মানসিকতায় খুশি হয়ে দৈত্য তাকে একটি পরশপাথর দেয়। পরশপাথরের সাহায্যে লোহার বালতি সোনার বালতি হলে তা তিনি নিজের স্কুলের উন্নয়নে দান করেন।
উপযুক্ত বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, ‘আলাউদ্দিনের চেরাগ’ গল্পের মূলভাব হলো নিশানাথ বাবুর মনুষ্যত্ব এবং নির্লোভ চেতনা। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু কিশোর অন্তুর কৈশোরিক চাওয়া-পাওয়া ফুটে উঠেছে। তাই বলা যায়, সরলতার বিষয়ে সাদৃশ্য থাকলেও গল্পের মূলভাব উদ্দীপকে অনুপস্থিত।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে আলাউদ্দিনের চেরাগ গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post