আশা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : সিকান্দার আবু জাফরের মালব কৌশিক কাব্য থেকে কবিতাটি সংকলিত হয়েছে। জাগতিক এই পৃথিবী ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। মানুষ ক্রমশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের বাড়ছে ব্যবধান। কারও মনেই যেন শান্তি নেই।
বিত্ত-বৈভব অর্জন করা আর সুখের দুর্ভাবনায় তাদের আয়ু কমে যাচ্ছে কিন্তু কবি এসব অতিক্রম করে যেতে চাইছেন সেইসব মানুষের কাছে যারা প্রকৃত অর্থেই মানুষ। মনুষ্যত্বের আলো যারা জ্বালিয়ে রেখেছেন। দরিদ্র হলেও এই মানুষ বিভ্তের পেছনে ছোটে না। সোনা-রুপার পাহাড় গড়ে তোলে না।
জীর্ণ ঘরে বসবাস করেও তারা সুখী । তুচ্ছ, ছোটো ছোটো আনন্দ অবগাহনেই কাটে তাদের দিন। সারাদিন তারা হাড়ভাঙা খাটুনি খাটে, তাতে হয়তো একটি দিনের আহার্যও জোটে না। তবু কোনো দুরাশা বা গ্লানি তাদের গ্রাস করে না। কোনো দীনতা বা সংশয়ে তাদের জীবন ক্রিষ্ট নয়। বরং দারিদ্র্যের মধ্যে থেকেও তারা মানুষকে ভালোবাসতে পারে। প্রতিবেশীকে সাহায্য করে।
কবি মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্ধ্য পেতে চাইছেন, হারিয়ে যেতে চাইছেন তাদের মাঝে । তিনি মনে করেন, এরাই হচ্ছে সত্যিকারের মানুষ৷ কবিতাটিতে গণমানুষের প্রতি একাত্মতা, মানবিকতা ও মনুষ্যত্বের সুগভীর সংবেদনা প্রতিফলিত হয়েছে।
আশা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
০১। মাদার তেরেসা আশৈশব স্বপ্ন দেখেন মানব সেবার। এক সময় যোগ দেন খ্রিস্টান মিশনারি সংঘে। মানুষকে আরো কাছে থেকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন মিশনারিজ অব চ্যারিটি। তাঁর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আরও অনেকেই এগিয়ে আসেন এ মহান কাজে। এক সময় এ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার। সারা জীবনের তাঁর সবটুকু উপার্জনই বিলিয়ে দেন মানবের কল্যাণে।
(ক) কোথায় মানুষেরা নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে থাকে?
(খ) বিত্ত-সুখের ভাবনাহীন মানুষেরা সংশয়হীন কেন?
(গ) মাদার তেরেসার মানসিকতা ‘আশা’ কবিতার কোন দিকটিকে তুলে ধরেছে? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) “মাদার তেরেসার দর্শনই যেন ‘আশা’ কবিতার ভাববস্তু” – যুক্তিসহ প্রমাণ কর।
১নং প্রশ্নের উত্তর
(ক) মানুষেরা জীর্ণ বেড়ার ঘরে নির্ভাবনায় ঘুমিয়ে থাকে।
(খ) বিত্ত-সুখের ভাবনাহীন মানুষেরা আত্মকেন্দ্রিক নয় এবং দুরাশার গ্লানিতে ভোগে না বলেই তারা সংশয়হীন। অর্থবিত্তের সুখ প্রকৃত সুখ নয়। প্রকৃত সুখের জন্য জীবনকে দুর্ভাবনামুক্ত করতে হয়। আর এজন্য প্রয়োজন অল্পে তুষ্ট থাকা এবং সোনা-রুপায় পাহাড় গড়ার মানসিকতা পরিহার করা। মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে অন্যের সঙ্গে ব্যবধান তৈরি করে। এতে মানুষের প্রকৃত সুখ নষ্ট হয়, সংশয় সন্দেহ তৈরি হয়। আর সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তা থেকে দূরে থাকে। তারা পরস্পরকে ভালোবাসে। এ কারণেই তাদের জীবন ক্লিষ্ট নয়। দরিদ্র হলেও তারা বিত্তের পিছনে ছোটে না।
(গ) মাদার তেরেসার মানসিকতা ‘আশা’ কবিতার মানবপ্রেম বা মানুষকে ভালোবাসতে পারার মাঝে জীবনের মহত্ত্ব নিহিত থাকার বিষয়টির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আত্মস্বার্থমগ্ন হয়ে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকা প্রকৃত মানুষের কাজ নয়। নিজের সুখ-সমৃদ্ধির জন্যই মানুষের এ পৃথিবীতে আগমন ঘটেনি। পরের কল্যাণের নিমিত্তেই মানবজীবন। আর সেই জীবনই সার্থক, যে জীবন মানবকল্যাণের সুমহান ব্রতে নিয়োজিত।
তারা পৃথিবীর হিংস্রতা, হানাহানি ও বিদ্বেষের মধ্যেও মানুষকে ভালোবাসেন, মানুষের সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেন। উদ্দীপকে মাদার কতেরেসার মানবসেবার কথা বলা হয়েছে। মাদার তেরেসা ছিলেন একজন অসাধারণ মানবসেবী। যেখানে রোগ, শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের নির্মমতা সেখানে মাদার তেরেসা তাঁর সেবার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জীবনে যত পুরস্কার পেয়েছেন তার সমস্ত অর্থই খরচ করেছেন মানবসেবার কাজে।
তিনি দেশ, ধর্ম, জাতির পার্থক্য না করে সেবাকাজে মানুষকেই বড় করে দেখেছেন। মানুষকে ভালোবেসে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। তিনি নিজেও দুনিয়ার মানুষের ভালোবাসার পাত্রী হয়ে উঠেছেন। ‘আশা’ কবিতায় মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ এবং মানুষকে ভালোবাসার যে দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তার সঙ্গে উদ্দীপকটি সাদৃশ্যপূর্ণ। ‘আশা’ কবিতায় বলা হয়েছে কিছু মানুষ দুঃখ-কষ্টের মধ্যেও একে অন্যকে ভালোবাসে, মিথ্যা অহংকার করে না। বিত্তবৈভব অর্জনের জন্য দুর্ভাবনায় আয়ু কমায় না। তারা প্রতিবেশীর আঁধার ঘরে আলো জ্বালায়।
(ঘ) “মাদার তেরেসার দর্শনই যেন ‘আশা’ কবিতার ভাববস্তু” – মন্তব্যটি যথার্থ। মহামানবদের জীবন আদর্শ এবং মহত্ত্ব আমাদের অনুপ্রাণিত করে। অসহায় মানুষের সেবা ও মুক্তির জন্য কাজ করাই মানুওেষর ধর্ম। এ ধরনের কাজের মাধ্যমেই মানুষ আত্মতৃপ্তি লাভ করে। এর মধ্য দিয়েই সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়। মাদার তেরেসা চিরস্মরণীয় একজন মানবসেবী। তাঁর সেবামূলক কাজ কোনো একটি দেশ বা সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।
বিশ্বব্যাপী ছিল তাঁর মানবসেবার কার্যক্রম। তাঁর জন্মস্থান সুদূর আলবেনিয়ায় হলেও তিনি ভারত ও বিভিন্ন দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় বিচলিত হয়েছিলেন। এ কারণে তিনি ভারতবর্ষে গরিব ও অসুস্থ মানুষের জন্য বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মানবসেবার মহান ব্রত নিয়ে তিনি দুঃখী মানুষের কাছে এগিয়ে গেছেন। উদ্দীপকের এই বিষয়টির সঙ্গে ‘আশা’ কবিতায় প্রতিফলিত মানবসেবার বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ।
সেখানে দারিদ্র্যক্লিষ্ট মানুষ পরস্পরকে ভালোবাসে। একে অন্যের ভাই পরিচয়ে পাশে দাঁড়ায়। কবিও মনুষ্যত্বের অধিকারী এসব মানুষের সান্নিধ্য পেতে চেয়েছেন। ‘আশা’ কবিতায় বিত্ত-বৈভব অর্জনের লোভ ত্যাগ করে মানুষকে ভালোবেসে মনুষ্যত্বসম্পন্ন মানুষ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেখানে অসহায় অনাহারী মানুষের দুর্ভাবনাহীন জীবনের সঙ্গে কবি নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চেয়ে তাদের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথাই ব্যক্ত করেছেন।
উদ্দীপকের মাদার তেরেসাও মানবসেবা এবং মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসার কথা বলেছেন। তিনি আজীবন মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। এসব দিক বিচারের তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
০২। শুথু স্বপ্ন, শুধু স্মৃতি, তাই নিয়ে থাকি নিতি
আর আশা নাহি রাখি সুখের দুখের।
আমি যাহা দেখিয়াছি আমি যাহা পাইয়াছি
এ জনম-সব
জীবনের সব শূন্য আমি যাহে ভরিয়াছি
তোমার তা কই!
(ক) ‘আশা’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
(খ) প্রতিবেশীর অন্ধকার ঘরে কীভাবে আলো জ্বালানো যায়? ব্যাখ্যা কর।
(গ) উদ্দীপকটি ‘আশা’ কবিতার কোন দিকটির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
(ঘ) ‘শূন্যতার মাঝেই রয়েছে জীবনের সকল প্রাপ্তি’ – যা ‘আশা’ কবিতাতেও প্রতিফলিত হয়েছে- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
০৩। নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
লোক : দুনিয়াতে আমার মতো সুখী কে? আমি সুখের ডরাজা। আমি মস্ত বড় বাদশা।
রহমত : ও বাদশা ভাই, তোমার গায়ের জামা কোথায়? ঘরের মধ্যে রেখেছ? তোমাকে একশ টাকা দেব। জামাটা নিয়ে এস।
লোক : জামা!
রহমত : জামা মানে জামা! এই যে, আমাদের এই জামার মতো জিনিস।…
লোক : আমার তো কোনো জামা নাই ভাই!
হাসু : মিছে কথা বল না।
লোক : মিছে বলব কেন? আমার ঘরে কিছু নাই। সেই জন্যই তো আমি সুখী মানুষ।
(ক) সিকান্দার আবু জাফর কর্মজীবনে কী ছিলেন?
(খ) ‘নির্ভাবনায় মানুষেরা ঘুমিয়ে থাকে ভাই’- এ কথাটি কেন বলা হয়েছে?
(গ) উদ্দীপকের সঙ্গে ‘আশা’ কবিতার মিলের ক্ষেত্রটি চিহ্নিত কর।
(ঘ) “উদ্দীপকের সুখী মানুষ ‘আশা’ কবিতার কবির ভাবনার প্রতিরূপ” মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
০৪। গ্রামের স্কুল মাস্টার নেপালের তেমন টাকা-পয়সা নেই। তারপরও প্রতিনিয়ত নেপাল অন্যের উপকার করেন। দরিদ্র ছেলেমেয়েদের পড়াশুনার জন্য নিজের কিছু টাকা এবং অন্যদের সহযোগিতায় ফান্ড গঠন করেন। সেই ফান্ড থেকে চলতে থাকে গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার খরচ। এতেই নেপাল জীবনের আনন্দ খুঁজে পান।
(ক) ‘আশা’ কবিতাটি কার লেখা?
(খ) মানুষকে ভালোবাসার বিষয়টির প্রতি কবি কেন গুরুত্ব দিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
(গ) উদ্দীপকের নেপালের ভাবনার সঙ্গে ‘আশা’ কবিতার কবির ভাবনার সাদৃশ্য বুঝিয়ে লেখ।
(ঘ) “উদ্দীপকের নেপাল মাস্টারের আনন্দের দিকটিই ‘আশা’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবার্থ নয়।” – মন্তব্যটি তুমি সমর্থন কর কি? তোমার মতের পক্ষে যুক্তি দাও।
০৫। ফরহাদ সাহেবের স্ত্রীর খুব মন খরাপ। তার স্বামী অনেক টাকা হাতে পেয়েও তার সবটাই এক বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসেন। তার স্ত্রীর অভিমানের সুরে বলেন, টাকাগুলো আমায় দিলে আমি গহনা বানাতে পারতাম। ফরহাদ সাহেব বলেন, তোমার গহনার চেয়েও সেসব অসহায় মানুষের হাসি আমার কাছে বেশি প্রিয়। হারানো বাবা-মায়ের মুখের হাসি আমি সেখানে খুঁজে পাই।
(ক) বিত্তসুখের দুর্ভাবনায় মানুষের কী কমে যায়?
(খ) ‘আমি সেই জগতে হারিয়ে যেতে চাই’ চরণটি দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
(গ) উদ্দীপকের ফরহাদ সাহেবের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ‘আশা’ কবিতার কবির মনোভাবের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
(ঘ) “উদ্দীপকের ফরহাদ সাহেবের স্ত্রীর ভাবনা ‘আশা’ কবিতার কবির ভাবনাকে কোনোভাবেই প্রতিনিধিত্ব করে না।” মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
উপরে দেয়া ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করে আশা কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর pdf ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post