আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর : হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে বাগেরহাটে। তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং নেতৃত্বও দেন। এ কারণে তাঁকে পরে ভাষাসৈনিক উপাধি দেওয়া হয়। হালিমা খাতুন শিশুদের জন্য বহু গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা ৩০টির বেশি। ‘পিকনিকে’, ‘স্কুল পালিয়ে’, ‘ছাগল ছানার গল্প’, ‘কুমিরের বাপের শ্রাদ্ধ’ প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। কর্মজীবনে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান এবং ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে একুশে পদকে ভূষিত হন। হালিমা খাতুন ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন।
আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—১: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. আবুর বড়ো ভাইয়েরা মাছ ধরতে যাওয়ার সময় আবুকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চায় না কেন?
খ. আবু কোন কৌশলে তার বড় ভাইদের সাথে মাছ ধরতে গিয়েছিল?
১ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. আবুর বড়ো ভাইয়েরা যখন মাছ ধরতে যায়, তখন তারা সাধারণত তাকে সঙ্গে নিতে চায় না। তার প্রধান কারণ হলো, আবু বয়সে অনেক ছোট, মাত্র দশ বছর। এই বয়সে বর্ষার রাতে গভীর জলাশয়ে মাছ ধরা তার জন্য বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। বড়োদের মনে হয়, আবু গেলে সে ভয় পাবে কিংবা অসাবধানতাবশত পানিতে পড়ে যেতে পারে। তাছাড়া, বড়োরা যখন মাছ ধরে, তখন তাদের অনেক মনোযোগ ও ধৈর্যের প্রয়োজন হয়। তারা মনে করে, আবু গেলে হয়তো দুষ্টুমি করবে, অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে কিংবা তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাবে। তাই তারা তাকে সঙ্গে নেওয়ার পক্ষপাতী নয়।
এছাড়া, মৌরিবিলে মাছ ধরতে গেলে অনেক ধরণের সরঞ্জাম ও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, যা আবুর মতো ছোট ছেলের পক্ষে সামলানো কঠিন। বড়ো ভাই সাজেদ ও তার বন্ধুরা অভিজ্ঞ, তাই তারা নিজেরাই মাছ ধরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। তারা মনে করে, আবুর উপস্থিতি তাদের জন্য শুধু বাড়তি ঝামেলা সৃষ্টি করবে। এসব কারণেই তারা তাকে কখনোই সঙ্গে নিতে চায় না।
খ. আবু যখন বুঝতে পারে যে বড়ো ভাই সাজেদ ও তার বন্ধুরা তাকে সঙ্গে নিতে চাইবে না, তখন সে নিজেই এক কৌশল অবলম্বন করে। সে চুপিচুপি গিয়ে নৌকার খোলের (নৌকার নিচের অংশ যেখানে সাধারণত জিনিসপত্র রাখা হয়) মধ্যে ঢুকে লুকিয়ে পড়ে। কেউ যেন তাকে না দেখতে পায়, তাই সে সেখানে শুয়ে থাকে এবং অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে।
নৌকা যখন মাঝপথে পৌঁছে যায়, তখন বড়ো ভাই সাজেদ ও তার বন্ধুরা হারিকেনে তেল ঢালার জন্য পাটাতন সরায়। তখনই তারা আবুকে দেখতে পায় এবং চমকে ওঠে। সাজেদ প্রথমে রেগে গিয়ে তাকে বকা দেয় এবং বলে, “আজ তোকে পিটিয়ে ঠান্ডা করব।” কিন্তু পরে যখন আবু কাঁদতে কাঁদতে জানায় যে সে লুকিয়ে এসেছে কারণ সে বড়ো মাছ ধরতে চায়, তখন তারা হাসতে থাকে এবং তাকে মাফ করে দেয়।
আবুর এই কৌশল সফল হয়েছিল কারণ সে খুব সতর্কতার সঙ্গে লুকিয়ে ছিল এবং আগে থেকেই সব পরিকল্পনা করে রেখেছিল। এমনকি সে তার এক বন্ধুকে বলে এসেছিল, যদি কেউ খোঁজ করে তাহলে যেন বলে দেয়, সে মাছ ধরতে গেছে। এই কৌশল দেখিয়ে দেয় যে আবু কতটা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং মাছ ধরার প্রতি তার কতটা আগ্রহ!
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—২: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. আবু কীভাবে তার বড় ভাইদের সাথে মাছ ধরতে গিয়েছিল?
খ. আবুর বড় ভাইয়েরা কিষান তিনুকে তাদের সঙ্গে নিয়েছিল কেন?
২ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. আবুর বড় ভাই সাজেদ ও তার বন্ধুরা মাছ ধরতে গেলে আবুকে সঙ্গে নেয়নি, কারণ সে ছোট ছিল। তবে আবু লুকিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যখন তারা নৌকায় উঠে, তখন আবু চুপিচুপি নৌকার খোলের নিচে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে ঘুমিয়ে যায়। মাঝপথে হারিকেনের তেল আনতে গিয়ে বড় ভাইরা আবুকে খুঁজে পায়। প্রথমে সাজেদ রেগে গেলেও পরে হাসতে হাসতে তাকে সঙ্গে রাখতে রাজি হয়।
আবুর এই কৌশল ও সাহসিকতা প্রমাণ করে যে, সে মাছ ধরার ব্যাপারে কতটা আগ্রহী ছিল। শেষ পর্যন্ত সে সত্যিই বিশাল এক বোয়াল মাছ ধরে সবার প্রশংসা অর্জন করে।
খ. আবুর বড় ভাই সাজেদ ও তার বন্ধুরা যখন মাছ ধরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে, তখন তারা কিষান তিনুকে সঙ্গে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনুকে নেওয়ার প্রধান কারণ ছিল তার দক্ষ মাঝি হওয়া। বর্ষাকালের রাতে, বিশেষ করে আষাঢ়ের বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায়, বিলের জলে নৌকা চালানো সহজ কাজ নয়। স্রোতের টান, বাতাসের গতি এবং পানির গভীরতা বুঝে নৌকা চালানোর জন্য একজন অভিজ্ঞ মাঝির প্রয়োজন হয়। তিনু এই ধরনের পরিস্থিতিতে দক্ষতার সঙ্গে নৌকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারত, যা সাজেদ ও তার বন্ধুদের জন্য নিরাপদ এবং সুবিধাজনক ছিল।
তাছাড়া, মাছ ধরার সময় নৌকাকে স্থির রাখা, দিক ঠিক রাখা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ব্যবস্থাপনায়ও তিনু সাহায্য করতে পারত। মাছ ধরার জন্য জাল ফেলা, জাল টেনে তোলা এবং দরকার হলে বৈঠা চালানো—এসব কাজেও তিনু পারদর্শী ছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, গভীর পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে যদি কোনো বিপদ ঘটে, তবে তিনু তা দক্ষতার সঙ্গে সামলাতে পারবে বলে সাজেদরা বিশ্বাস করত।
পরবর্তীতে দেখা যায়, তিনুর উপস্থিতি আসলেই দলের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল। যখন আবু বিশাল বোয়াল মাছ ধরে ফেলে এবং সেটিকে নৌকায় তুলতে হিমশিম খাচ্ছিল, তখন তিনুই এগিয়ে এসে দড়ি ধরে সাহায্য করে। তার অভিজ্ঞতা ও শারীরিক শক্তির কারণে তারা সফলভাবে বোয়াল মাছটি নৌকায় তুলতে পারে। এই কারণে বোঝা যায়, তিনুকে সঙ্গে নেওয়া সাজেদ ও তার বন্ধুদের জন্য খুবই কার্যকর সিদ্ধান্ত ছিল, যা তাদের মাছ ধরার অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বর্ণনামূলক প্রশ্ন—৩: নিচের ক ও খ প্রশ্ন দুটির উত্তর দাও :
ক. হারিকেনের আলো দেখলে মাছদের কী অবস্থা হয়?
খ. বড় ভাইয়েরা নৌকায় ফিরে এসে অবাক হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
৩ নম্বর বর্ণনামূলক প্রশ্নের উত্তর
ক. রাতের অন্ধকারে মাছ ধরার জন্য হারিকেনের আলো একটি কার্যকর উপায়। গল্পে উল্লেখ আছে যে হারিকেনের আলো দেখলে মাছগুলো একধরনের “রাতকানা” হয়ে যায়।
এর অর্থ হলো, মাছেরা আলোতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং দিকনির্দেশনা হারিয়ে ফেলে। সাধারণত, মাছেরা অন্ধকার পরিবেশে চলাফেরা করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে, কিন্তু হঠাৎ করে উজ্জ্বল আলো পড়লে তাদের স্নায়ুবিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং তারা সহজেই শিকারিদের ফাঁদে পড়ে যায়। এ কারণেই আবুর বড় ভাই সাজেদ ও তার বন্ধুরা রাতে মাছ ধরার সময় হারিকেন ব্যবহার করেছিল, যাতে তারা সহজেই বিভ্রান্ত মাছগুলোকে জালের ফাঁদে ফেলতে পারে।
খ. সাজেদ ও তার বন্ধুরা যখন রাতভর পরিশ্রম করে জাল ফেলেও বড় কোনো মাছ ধরতে পারেনি, তখন তারা হতাশ হয়ে নৌকায় ফিরে আসে। তারা আশা করেছিল যে অনেক মাছ ধরে ফিরতে পারবে, কিন্তু তাদের জালে শুধু ছোট ছোট পুঁটি মাছ ধরা পড়েছিল। কিন্তু নৌকায় ফিরে এসে তারা অবাক হয়ে যায়, কারণ দেখে যে ছোট্ট আবু বিশাল একটি বোয়াল মাছ ধরে ফেলেছে।
তাদের বিস্ময়ের প্রধান কারণ ছিল, আবু ছিল সবার ছোট এবং মাছ ধরার কাজে একেবারেই অনভিজ্ঞ। সে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছিল, যা সাধারণত বড় মাছ ধরার জন্য তেমন কার্যকর নয়। তাছাড়া, সে নিজের তৈরি বড়শি ব্যবহার করেছিল, যা ছিল টিনের আংটা দিয়ে বানানো। বড় ভাইয়েরা ভেবেছিল, এমন অদ্ভুত বড়শি দিয়ে মাছ ধরা সম্ভব নয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আবু তার কৌশল ও ভাগ্যের জোরে বিশাল একটি বোয়াল মাছ ধরতে পেরেছিল, যা দেখে তারা সত্যিই হতবাক হয়ে যায়।
তারা যে মাছ ধরতে ব্যর্থ হয়েছে, অথচ ছোট্ট আবু বিশাল একটি মাছ ধরে ফেলেছে—এটাও তাদের বিস্ময়ের কারণ। এমন ঘটনা তাদের কাছে অসম্ভব মনে হচ্ছিল। তাই তারা নৌকায় ফিরে এসে অবাক হয়ে যায় এবং কিছুটা হতাশও হয়।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের বর্ণনামূলক প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৩টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এখানে দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো। এছাড়াও বাংলা বইয়ের গল্প-কবিতার সৃজনশীল, জ্ঞানমূলক, অনুধাবনমূলক এবং বহুনির্বাচনি সমাধানের জন্য উপরের লিংকটি অনুসরণ করো।
Discussion about this post