আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : দশ বছরের ছেলে আবুর খুব ইচ্ছে বর্ষার বৃষ্টিঝরা রাতে বড়ো ভাইদের সঙ্গে বিলে মাছ ধরতে যাবে। কিন্তু ছোটো বলে তারা আবুকে সঙ্গে নিতে চায় না। তাই মাছ ধরতে যাওয়ার দিন আবু আগেই নৌকার খোলে লুকিয়ে রইল। একপর্যায়ে আবু ধরা পড়লেও তাকে শেষপর্যন্ত সঙ্গে নেওয়া হয়। দেখা যায়, সে মাছ ধরার জন্য অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে তেলাপোকাও নিয়ে এসেছে।
এ নিয়ে বড়োরা বেশ হাসি-তামাশা করে। বিলে গিয়ে আবুকে নৌকায় রেখে সবাই মাছ ধরতে চলে গেলে সে বড়শি ফেলে অপেক্ষা করতে থাকে। অবশেষে নানা কৌশলে আবু বড়ো একটা মাছ ধরে ফেলে। বড়ো ভাইয়েরা অবশ্য সে-রাতে পুঁটিমাছ ছাড়া আর কোনো মাছই ধরতে পারেনি। তারা নৌকায় বিশাল আকৃতির বোয়াল মাছ দেখে অবাক হয়ে যায়। বয়সে ছোটো বলে কাউকে অবহেলা করতে নেই, কিংবা বয়সে বড়ো হলেই কোনো কাজে কেউ সফলতা লাভকরবে, তাও নয়- গল্পটিতে এই সত্য ধরা পড়েছে।
আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বিদ্যে বোঝাই এক বাবু মশাই শখের বশে বোটে চড়লেন এবং বিদ্যার আস্ফালন দেখিয়ে নদীতে কেন জোয়ার-ভাটা হয়, কেন সাগরের পানি লবণাক্ত হয়, আবার নদীর উৎস ধারা কোথায়- এ রকম নানা প্রশ্ন করে মাঝিকে। মাঝি এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় তার জীবন আট আনা ফাকি বলে মন্তব্য করে। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যে বোঝাই বাবু সূর্য গ্রহণ কেন হয়, চন্দ্র গ্রহণ কেন হয়, আকাশের চূড়া নীল হয় কেন—এসব প্রশ্ন তুলে মাঝিকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে এবং মাঝি উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে তার বারো আনা জীবন যে নিরর্থক তা সগর্বে উচ্চারণ করে। কিন্তু খানিক বাদে ঝড় উঠলে বিদ্যে বোঝাই বাবু অসহায় হয়ে পড়েন। কারণ তিনি সাঁতার জানেন না। আর মাঝি তখন বলে ওঠে, তোমার জীবন তো দেখছি যোলো আনাই বৃথা। কারণ বাঁচলেই তো জীবনের হিসাব।
ক. আবুর বয়স কত?
খ. বড় ভাইয়েরা নৌকায় ফিরে এসে অবাক হয় কেন? ব্যাখা কর।
গ. উদ্দীপকের বিদ্যে বোঝাই বাবুর আস্ফালনে ‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের ফুটে ওঠা দিকটি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকে ‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের মূল চেতনাই ভাস্বর হয়ে ওঠে—তোমার দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আবুর বয়স দশ বছর।
খ. আবু একটা বড় বোয়াল মাছ ধরেছে, এ জন্য বড় ভাইয়েরা নৌকায় ফিরে এসে অবাক হয়।
আবুর অনেক দিনের শখ মৌরিবিলে বড় ভাইদের সাথে মাছ ধরতে যাবে। কিন্তু ছোট বলে তাকে কেউ সাথে নেয় না। একদিন সে নৌকার খোলে লুকিয়ে ভাইদের সাথে মৌরিবিলে যায়। তার ভাইয়েরা জাল পেতে মাছ ধরে, আর আবু বড়শির টোপ দিয়ে বড় একটা বোয়াল মাছ ধরে। তার ভাইয়েরা নৌকায় ফিরে এসে এত বড় বোয়াল মাছ দেখে অবাক হয়।
গ. উদ্দীপকের বিদ্যে বোঝাই বাবুর আস্ফালন আর ‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের বড় ভাইদের কাজকর্ম একই পর্যায়ের।
অহঙ্কার, দম্ভ, অপরের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা কখনই ভালো নয়। ছোট, গরিব, মূর্খ ইত্যাদি শ্রেণির মানুষও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দর্জির তৈরি পোশাক এবং মুচিদের তৈরি জুতা স্যান্ডেল আমরা সর্বদা ব্যবহার করি। তাই কোনো ব্যক্তিকেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা অনুচিত।
উদ্দীপকের বিদ্যে বোঝাই বাবু একদিন নৌকায় চড়ে মাঝির প্রতি ব্যঙ্গ-বিদ্রপ শুরু করে। নদীতে জোয়ার কেন হয়, সাগরের পানি লবণাক্ত কেন, সূর্য গ্রহণ কেন হয় ইত্যাদি প্রশ্ন করে মাঝিকে বিপদে ফেলে। এসব প্রশ্নের উত্তর মাঝি দিতে পারে না বলে বাবু সাহেব বিদ্যের আস্ফালন করেন। ‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের বড় ভাইয়েরাও আবুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও বকাঝকা করে। সে ছোট মানুষ মাছ ধরতে পারবে না, আবুর বড়শি ও টোপ নিয়েও তারা বিদুপ করে। আবুও যে মাছ ধরতে সক্ষম, বড় ভাইয়েরা তা মানতে নারাজ। আর এই ব্যঙ্গ-বিদুপ উদ্দীপকের বিদ্যে বোঝাই বাবুর আস্ফালনেও প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও উদ্দীপকে ‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের মূল চেতনাই ভাস্বর হয়ে ওঠে।
সমাজে যাদেরকে অবহেলা করা হয়, তারাও সমাজে মর্যাদা পাওয়ার যোগ্য। শ্রমিক, মাঝি, কুলি, চাষি, ছোট-বড়, ধনী-গরিব সবাইকে নিয়ে সমাজ অগ্রসর হয়। তাই যারা ছোট, তাদেরকেও মূল্যায়ন করতে হবে। উদ্দীপকের বিদ্যে বোঝাই বাবু নৌকার মাঝিকে অযোগ্য ও অবহেলা করে।
মাঝিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সে উত্তর দিতে ব্যর্থ হলে পণ্ডিত সাহেব জানান, তার জীবনের বারো আনাই বৃথা। কিন্তু যখন নদীতে ঝড় ওঠে, তখন পণ্ডিত বিপদে পড়েন, কারণ তিনি সাঁতার জানেন না। তখন মাঝি তাকে লক্ষ করে বলে, আপনার জীবনের ষোলো আনাই তো বৃথা। আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের আবু বয়সে ছোট বলে তার বড় ভাইয়েরা তাকে মাছ ধরতে নেয় না।
কিন্তু দেখা যায় বিপুল, মাজেদ, বায়েজিদ জাল পেতে মাছ না পেলেও আবু ঠিকই বড় একটি বোয়াল মাছ ধরেছে। বড় ভাইদের জালে পুঁটি মাছ পড়লেও আবুর বড়শিতে ঠিকই বড় মাছ ধরা পড়ে। সে আত্মবিশ্বাসের সাথে তার মাছ ধরার কথা জানায়। উদ্দীপক ও গল্পে ছোট শিশু এবং শ্রমজীবী মানুষের গুরুত্ব বোঝানো হয়েছে।
প্রয়োজন বা কাজের সময় যে অবদান রাখতে পারে, সে-ই আসলে যোগ্য ব্যক্তি। আমরা উদ্দীপকের মাঝি এবং গল্পের আবু চরিত্রের মাধ্যমে তা লক্ষ করি। তাই বলা যায়, প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও গল্পের মূল চেতনা উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে আষাঢ়ের এক রাতে গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post