আষাঢ়ের এক রাতে class 7 বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ : হালিমা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালে এবং মৃত্যু ২০১৮ সালে। তিনি ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন: এজন্য তাঁকে ভাষাসৈনিক বলা হয়। হালিমা খাতুন ছোটোদের জন্য অনেক লিখেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে “পাখির ছানা”, “পিকনিকে” ইত্যাদি। নিচে তাঁর লেখা একটি গল্প দেওয়া হলো।
আষাঢ়ের এক রাতে class 7 বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ
গুরুত্বপূর্ণ শব্দের অর্থ
এলোপাথাড়ি: এদিক ওদিক।
কিষান: কৃষি-মজুর।
খালুই: নাছ রাখার বুড়ি।
গলুই: নোকার দুই মাথার সরু অংশ।
জোনাকি: অন্ধকারে জ্বলে-নেভে এমন এক ধরনের পোকা।
টোপ: মাছ ধরার জন্য বড়শিতে গেঁথে দেওয়া খাবার।
ধস্তাধস্তি: কোস্তাকুস্তি।
নৌকার খোল: নৌকার পাটাতনের নিচের ফাঁকা জায়গা।
পাকাপাকি প্লান: চূড়ান্ত পরিকল্পনা
পাটাতন: কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি নৌকার মেঝে
পুচকে: খুব ছোটো।
ফাতনা: বড়শির সুতায় বাঁধা ভাসমান কাঠি বা শোলা।
বড়শি: বীকা ও আলযুক্ত লোহার কাঁটা যাতে মাছের টোপ গাঁথা হয়।
মাথাল: রোদ-বৃষ্টি থেকে মাথা বীচানোর জন্য বাঁশ বা পাতা দিয়ে তৈরি টুপি।
মাদল: এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র।
রাতকানা: রাতে ভালো দেখতে পায় না এমন।
হাল: নোকার দিক ঠিক রাখার জন্য বিশেষ ব্ঠো।
হেরিকেন: হারিকেন: কাচ দিয়ে ঘেরা কেরোসিনের বাতি।
গল্প বুঝি
শিক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী তোমরা দলে ভাগ হও। উপরের গল্পে কী বলা হয়েছে, তা দলে আলোচনা করে বোঝার চেষ্টা করো। কোন দল কেমন বুঝতে পেরেছে, তা যাচাই করার জন্য এক দল অপর দলকে প্রশ্ন করবে। এজন্য আগেই দলে আলোচনা করে কাগজে প্রশ্নগুলো লিখে রাখো। (মূল বইয়ের ১৫৭ নম্বর পৃষ্ঠা)
১. ‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের রচয়িতা কে?
উত্তর: হালিমা খাতুন
২. আবুর বয়স কত?
উত্তর: দশ বছর।
৩. আবুর বড় ভাইয়ের নাম কী?
উত্তর: সাজেদ।
৪. মৌরী বিলে কী কী মাছ পাওয়া যায়?
উত্তর: মৌরী বিলে বোয়াল, পাঙ্গাস থেকে শুরু করে ট্যাংরা, পুঁটি, পারশে, বেলে সবই পাওয়া যায়।
৫. সাজেদ কাদের সাথে নিয়ে মাছ ধরার প্ল্যান করেছিল?
উত্তর: দুই বন্ধু বিপুল আর বায়েজিদকে নিয়ে।
৬. মাছ ধরার জন্য সাজেদ আর তার বন্ধুরা সাথে করে কী নিয়ে গিয়েছিল?
উত্তর: কয়েকরকম জাল, হেরিকেন, মাছ আনার বড় খালুই আর অতিরিক্ত দুটো বৈঠা।
৭. হেরিকেনের আলো দেখলে মাছেরা কেমন হয়ে যায়?
উত্তর: রাতকানা।
৮. আবু মনের সুখে কী গান ধরল?
উত্তর: আবু মনের সুখে ‘চল্ চল্ চল্ ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল!’ গানটি ধরল।
৯. আবু মাছ ধরার জন্য কী নিয়ে এসেছিল?
উত্তর: বড়শি আর টোপ।
১০. আবু টোপ হিসেবে কী নিয়ে এসেছিল?
উত্তর: তেলাপোকা।
১১. আবু বড়শির দড়ির সাথে জোনাকি পোকা পলিথিনে ভরে পানিতে ফেলেছিল কেন?
উত্তর: যাতে বড়শিতে মাছ আটাকালে সে বুঝতে পারে।
১২. আবু অবশেষে কী মাছ ধরেছিল?
উত্তর: বোয়াল মাছ।
১৩. বোয়াল মাছটির আকার কেমন ছিল?
উত্তর: প্রায় আবুর সমান।
১৪. সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর: আবু সত্যি সত্যি বোয়াল মাছ ধরেছিল বলে।
বলি ও লিখি
‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পটি নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো। (মূল বইয়ের ১৫৮ নম্বর পৃষ্ঠা)
‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পটি আবু ও তার ভাই সাজেদ এবং সাজেদের দুই বন্ধু বিপুল ও বায়েজিদদের মাছ শিকারের একটি গল্প। আবু বয়সে ছোট বলে সাজেদরা তাকে এমনিতে বললে সাথে নিয়ে যেত না। সেজন্য আবু বুদ্ধি করে নৌকায় যাওয়ার আগেই চুপি চুপি নৌকার খোলের মধ্যে শুয়েছিল। আবু সেখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিল।
সাজিদরা নৌকায় রওনা হয়ে কিছুদূর যাবার পরে বৃষ্টি শুরু হল। হেরিকেনের তেল রাখা ছিল নৌকার খোলের মধ্যে। তেল আনতে গিয়ে সাজেদ আবুকে দেখে চেঁচিয়ে ওঠে। প্রথমে ওরা ভেবেছিল হয়তো ধানের বস্তা কৃষকরা নামাতে ভুলে গেছে। পরে ডাকাডাকিতে আবু হুরমুর করে ঘুম থেকে ওঠে এবং বলে ‘আমি আবু’। এতটুকু বলেই সে কেঁদে দেয়। সাজিদ তাকে অনেক বকাবকি করে।
যাইহোক আবু বড় মাছ ধরবে একথা শুনে সবাই খুব মজা করেছিল তাকে নিয়ে। অত ছোট মানুষ কীভাবে মাছ ধরবে কেউ বিশ্বাস করছিল না। আবুকে রেখে বাকিরা মাছ ধরতে যায়, আর আবুকে বলে যায় সে যেন নৌকায় ঘুমিয়ে থাকে। কিষান তিনু থাকবে নৌকায়। কিন্তু আবুর মাছ ধরার নেশা প্রবল। নৌকায় ঘুমিয়ে থাকার জন্য সে যায়নি। কাজেই সে তার বরশি ও টোপ নিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিল। টোপ হিসেবে আবু নিয়ে এসেছিল- তেলাপোকা।
আবুর বরশি আর টোপ দেখেও সবাই আবুকে নিয়ে ঠাট্টা করছিল। আবুর মনে শুধু একটাই ভয় ছিল, তার বড়শিতে মাছ উঠবে কিনা। অত কষ্ট করে লুকিয়ে এসে মাছ না ধরতে পারলে তো সবাই খুব খেপাবে। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ সে দেখে কোন একটা মাছ বড়শিতে বিঁধেছে। সে বড়শির দড়ি ছাড়তে লাগল।
একটু পরে দড়িতে ভার বোধ হতে লাগলো আর খুব টানাটানি শুরু হতে লাগলো। আবু তিনুকে ডেকে আনলো। তিনু প্রথমে পাত্তা দিতে চায়নি। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী আবু দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যে সে মাছ পেয়েছে। আর মাছ সে ঠিকই পেয়েছিল। তার বড়শিতে আবুর সমান বিশাল আকৃতির এক বোয়াল মাছ ধরা পড়েছিল। এই আনন্দে সে নাচানাচি শুরু করে।
প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে আবু আর তিনু মিলে বিশাল বোয়ালটিকে নৌকার খোলের মধ্যে নিয়ে আসে। অন্যদিকে সাজিদরা আজ পুঁটি ছাড়া আর কিছুই পায়নি। তারা এসে আবুল বোয়াল মাছটি দেখে কেউ বিশ্বাসই করতে চায় না। তাদের প্রশ্নের উত্তর আব্বু বলেছিল- আমিই ধরেছি!
জীবনের সঙ্গে সম্পর্ক খুঁজি
‘আষাঢ়ের এক রাতে’ গল্পের সাথে তোমার জীবনের বা চারপাশের কোনো মিল খুঁজে পাও কি না, কিংবা কোনো সম্পর্ক খুঁজে পাও কি না, তা নিচে লেখো। (মূল বইয়ের ১৫৯ নম্বর পৃষ্ঠা)
গ্রীষ্মের এক রাতে আমি আমার বাবার সাথে জাল মাছ ধরতে যাই। বাবার মত আমিও সাথে একটি জাল, টর্চ এবং মাছ রাখার ছোট ব্যাগ নিয়ে নিলাম। নদীতে পৌঁছে দেখি, আমাদের মতো অনেকেই মাছ ধরতে এসেছে।
সেখানে আমার বয়সী ছেলোরও ছিল। নদীতে টর্চের আলো ছুড়ে দিতেই দেখি ট্যাংরা আর পুঁটি মাছের ঝাঁক। আমি জাল ফেলতেই মাছগুলো সব বিচ্ছিন্নভাবে এদিক-সেদিক পালিয়ে গেল। আমার জালে একটা মাছও পড়ল না। বাবা বললেন, এত ছোট জাল দিয়ে তুই মাছ ধরতে পারবি না। এ কথা শুনে আমি একটি শৌল মাছের দিকে জালটা নিক্ষেপ করলাম। কিন্তু এবারো ব্যর্থ হলাম। শেষ পর্যন্ত আমি জাল দিয়ে মাছ ধরা বাদ দিয়ে বাবার মাছ ধরা দেখতে লাগলাম।
গল্পের বৈশিষ্ট্য খুঁজি
গল্পের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার মাধ্যমে বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করো। (মূল বইয়ের ১৬০ নম্বর পৃষ্ঠা)
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই ছকভিত্তিক উদ্দীপকটি পিডিএফ উত্তরমালায় দেখো। )
গল্প কী? গল্প কাকে বলে?
কাহিনি বলার জন্য লেখক গদ্য ভাষায় যে রচনা তৈরি করেন, তাকে গল্প বলে। গল্প আয়তনে সাধারণত ছোটো হয়ে থাকে। তবে বড়ো আয়তনের গল্পকে বলে উপন্যাস। যিনি গল্প লেখেন তিনি গল্পকার; আর যিনি উপন্যাস লেখেন, তিনি গুপন্যাসিক। গল্পকার ও গপন্যাসিককে কথাসাহিত্যিক বলা হয়। প্রতিটি গল্পের মধ্যে কাহিনি থাকে।
যেমন, “তোলপাড়” গল্পের কাহিনি: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় কিছু লোক প্রাণ বাঁচানোর জন্য শহর থেকে গ্রামে চলে যাচ্ছে এবং গ্রামের মানুষ তাদের সহযোগিতা করছে। গল্পের কাহিনি গড়ে ওঠে কিছু চরিত্রের মধ্য দিয়ে। যেমন, “তোলপাড়” গল্পের কাহিনিতে আছে-সাবু, মিসেস রহমান, বৃদ্ধ লোক, গ্রামবাসী ইত্যাদি চরিত্র। গল্পের চরিত্র অনেক সময়ে কথা বলে, সেসব কথাকে সংলাপ বলা হয়। যেমন, “তোলপাড়” গল্পে মিসেস রহমানের মুখের সংলাপ: “বাবা, তুমি কিছু কিনে খেও।”
আরো দেখো: ৭ম শ্রেণির বাংলা সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা, উপরে আমরা তোমাদের বাংলা বইয়ের আষাঢ়ের এক রাতে class 7 বাংলা ৬ষ্ঠ অধ্যায় ৪র্থ পরিচ্ছেদ শেয়ার করেছি। তোমাদের মূল বইতে যেভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে, আমরা ঠিক সেভাবেই উত্তরগুলো তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের জন্য অনেক হেল্পফুল হয়েছে।
আমাদের ওয়েবসাইটে তোমার প্রয়োজনীয় সাবজেক্টের প্রশ্নের উত্তর না পেলে কোর্সটিকা ফেসবুক পেজে ইনবক্স করতে পারো। আমরা আছি ইউটিউবেও। আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post