আসমানি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : অর্থাভাবে চিকিৎসকের সেবা না নিতে পারায় বিষয়টি উপযুক্ত চরণে প্রকাশিত হয়েছে। আসমানি দরিদ্র ও অসুস্থ একটি মেয়ে। কবিতায় তার অসীম দারিদ্র্যের কথা প্রকাশিত হয়েছে। অনাহার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস আর জীবাণুযুক্ত পানি পানে সে অসুস্থ। নিজের অসুস্থ শরীরটানে সুস্থ করতে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য যাবে সে সামর্থ্যও তার নেই। সমাজের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ব্যবস্থায় প্রতিফলন আসমানি।
আসমানি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘একটুখানি হাওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে’—বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘আসমানি’ কবিতায় কবি জসীমউদ্দীন আসমানি নামের অসহায় মেয়েটির করুণ জীবন চিত্র ফুটে তুলেছেন। তার বাড়ি ঘর খুবই নড়বড়ে। একটুখানি বৃষ্টি এলে পানি গড়িয়ে পড়ে। সামান্য হাওয়া হলেই সেটা পড়ে যেতে পারে, পাখির বাসার মতো জীর্ণশীর্ণ। মানুষের মৌলিক চাহিদার সামান্যতমও যে পূরণ হয়নি সেটাই প্রকাশিত হয়েছে উক্ত চরণটির মধ্য দিয়ে।
২. ‘বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হলো তাই কেঁদে।’ এ চরণটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে। ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: বাঁশির মতো সুরটি গলায় ক্ষয় হল তার কেঁদে’—এ চরণটি দ্বারা আসমানিদের দারিদ্র্যের করুণ অবস্থা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু তার শরীরের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা অবহেলায়, সুযোগের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসমানির গলার সুর বাঁশির মতো মধুর। কিন্তু কখনো গান শেখার সুযোগ হয়নি তার। বরং খাদ্য বস্ত্রের জন্য কেঁদে কেঁদে জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ যেন প্রকৃতির দারুণ উপহাস।
৩. ব্যাঙের ছানা শ্যাওলা-পানা কিল-বিল করে কেন?
উত্তর: আসমানি দারিদ্র্যের কারণে পুকুরের যতœ নিতে না পারায় সেখানে শ্যাওলা ও পোকা কিল-বিল করে।
‘আসমানি’ কবিতার দরিদ্র মেয়ে আসমানিদের বাড়ি পদ্মপুকুরের ধারে। পদ্মপুকুর সৌন্দর্যের আধার। পদ্মপুকুরে ভাসমান পদ্মফুল সৌন্দর্য প্রকাশ করে। কিন্তু নিদারুণ দারিদ্র্য ও অসীম অসহায়ত্ব তাদের সেই পুকুরটাকে সুন্দর রাখতে পারেনি। পরিষ্কার করার অভাবে সেখানে শ্যাওলা জন্মেছে। কীট ও জীবাণু সেখানে কিল-বিল করে। এটা আসমানিদের অসহায়ত্বের প্রকাশ।
৪. আসমানির পেট ফুলেছে কেন?
উত্তর: প্লিহা রোগে আক্রান্ত হয়ে আসমানির পেট ফুলেছে।
আসমানি সমাজের অতি দরিদ্র্য একটা মেয়ের প্রতিচিত্র। তার সামর্থ্য খুবই নগণ্য। নিজের দারিদ্র্য আর অভাব তাকে কোনোমতেই সুস্থ রাখেনি। ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ভর্তি পুকুরের নোংরা পানি পান করে তার শরীর অসুস্থ। তখন তার প্রতিদিন জ্বর আসে। প্লিহায় তার পেটটি ফুলে গেছে।
৫. ‘বৈদ্য ডেকে ওষুধ করে পয়সা নাহি আর’—চরণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: অর্থাভাবে চিকিৎসকের সেবা না নিতে পারায় বিষয়টি উপযুক্ত চরণে প্রকাশিত হয়েছে।
আসমানি দরিদ্র ও অসুস্থ একটি মেয়ে। কবিতায় তার অসীম দারিদ্র্যের কথা প্রকাশিত হয়েছে। অনাহার, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস আর জীবাণুযুক্ত পানি পানে সে অসুস্থ। নিজের অসুস্থ শরীরটানে সুস্থ করতে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসার জন্য যাবে সে সামর্থ্যও তার নেই। সমাজের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ব্যবস্থায় প্রতিফলন আসমানি।
৬. ‘মিষ্টি তাহার মুখটি হতে হাসির প্রদীপ-রাশি, থাপড়েতে নিবিয়ে গেছে দারুণ অভাব আসি।’ এই চরণ দুটি দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: চরণদুটিতে আসমানির জীবনের কঠিন বাস্তবতা এবং তার অভাবের তীব্রতা ফুটে উঠেছে।
আসমানির মিষ্টি মুখের দারুণ হাসি যেন প্রদীপের রশ্নি ছড়ায়। কিন্তু বাস্তবে তার জীবন এতটাই দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত যে, তার হাসি তার অভাবের এবং দারিদ্রের আড়াল হতে পারেনি। তার মুখের হাসি যেমন একটি প্রদীপের মতো আলোকিত হতে চায়, তেমনি তার অভাব এবং কষ্টের অন্ধকার সেই হাসিকে অন্ধকারে ঢেকে দেয়। মূলত উল্লেখিত চরণদ্বয়ের মাধ্যমে কবি আসমানির জীবনের দুঃখ-কষ্ট এবং সামাজিক অবস্থা তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি হাসলেও তার জীবনযাত্রা সুখময় নয়।
৭. আসমানির চোখ দিয়ে কেন রাশি রাশি অশ্রু গড়িয়ে পড়ে?
উত্তর: মনের দুঃখ ও গভীর বেদনায় আসমানির চোখ দিয়ে রাশি রাশি অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে আসমানি জর্জরিত। অনাহারে অর্ধাহারে তার প্রাণ ওষ্ঠগিত। তাই দুঃখ সইতে না পেরে তার চোখ দিয়ে রাশি রাশি অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
৮. আসমানিদের বাড়িকে পাখির বাসা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: পাখির বাসার মতো নড়বড়ে বলে আসমানিদের বাড়িকে পাখির বাসার সাথে তুলনা করা হয়েছে।
যে বাড়ি বা ঘরের চাল ভেন্নাপাতা দিয়ে ছাওয়া, সামান্য বাতাসেই নড়বড় করে, একটু বৃষ্টি হলেই পানি গড়িয়ে পড়ে। এমন জীর্ণশীর্ণ ঘরকে কবি জসীমউদ্দীন পাখির বাসার সাথে তুলনা করেছেন।
৯. ‘আসমানির পরনে, শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস’—চরণটি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: আসমানির পরনে, শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস এ চরণটি দ্বারা নতুন কোনো কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই—তাই আসমানির পরনে শতেক তালির শতেক ছেঁড়া বাস। আসমানিকর আর্থিক দৈন্যতা এতটাই যে সে পেটপুরে খেতে পায় না। সেখানে পরনের বস্ত্র কেনার অবকাশ তাদের নেই।
১০. ছেঁড়া বাস আসমানিকে উপহাস করছে কেন?
উত্তর: আসমানির সৌন্দর্যের সঙ্গে তার পোশাক বেমানান, শাতেক তালি দেওয়া শাড়িটিকে আসমানির সোনালি গায়ের রং উপহাস করছে।
আসমানিরা অনেক গরিব সে ভাঙা কুঁড়েঘরে বসবাস করে। জোরে বাতাস বইলেই সে ঘর উড়ে চলে যাওয়ার মতন হয়। তাদের খাওয়া-দাওয়ারও কোনো ঠিক নেই। কিন্তু এত কিছুর পরেও আসমানির গায়ের রং সোনালি। আর তার এত সুন্দর শরীরে ছেঁড়া, তালি দেওয়া কাপড় যেন তার সৌন্দর্যকে উপহাস করছে। তার এত সুন্দর গায়ের রঙের সঙ্গে ছেড়া কাপড় একেবারেই বেমানান। এই কারণেই ছেঁড়া বাস আসমানিকে উপহাস করছে।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের চারুপাঠ বাংলা বই থেকে আসমানি কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য মোট ১০টি অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক জ্ঞানমূলক, সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post