ইনস্টাগ্রাম আবির্ভাব হওয়ার পর থেকে এটি ফটো শেয়ারের একটি অনন্য প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। ৮০০ মিলিয়নেরও বেশি মাসিক ব্যবহারকারী জনপ্রিয় এই প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় রয়েছে। যেখানে প্রতিদিন ৬০ মিলিয়নেরও বেশি ফটো আপলোড করা হয় এবং প্রতিদিনের ১.৬ বিলিয়ন লাইক দেওয়া হয়। আর তাই দিন দিন ঈর্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং এর জনপ্রিয়তা।
ফেসবুকের এই প্রোডাক্টটিতে আপনি প্রচুর পরিমাণে ফলোয়ার তৈরি করে এবং সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করে, নিজের ব্যবসার জন্য একটি প্রভাবশালী ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে পারেন। নতুন ফলোয়ারদের আপনার ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট করতে আপনার প্রয়োজন প্রাসঙ্গিক পোস্ট আপলোড করা।
আজ কোর্সটিকা ব্লগে আমরা ৮ টি পাওয়ারফুল এবং সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং টিপস শেয়ার করবো, যা আসলেই আপনার প্রোফাইলের জন্য কাজ করবে। এই ব্লগ পোস্টটির জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে খুব শক্তিশালী এক ইনস্টাগ্রাম নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন।
১. সাধারণ প্রোফাইলকে Business Profile এ পরিণত করুন
আপনি যদি সত্যি সত্যি আপনার ইনস্টাগ্রাম একাউন্টটি দিয়ে বিজনেস পরিকল্পনার চিন্তাভাবনা করে থাকেন, তাহলে এটা নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার একটি ইনস্টাগ্রাম বিজনেস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সাধারণ প্রোফাইল থেকে আপনার একাউন্টটি Business Profile এ পরিণত করা খুবই সহজ।
শুধু আপনার প্রোফাইলে প্রবেশ করে গোল আকৃতির সেটিংস গিয়ারে ক্লিক করুন এবং এখানে থাকা Switch to Business Profile এ ক্লিক করলেই আপনার একাউন্টটি Business Profile পরিণত হয়ে যাবে।
Business Profile তৈরি করার কিছু সুস্পষ্ট সুবিধা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ফলোয়াররা আপনার ইনস্টাগ্রাম পেজ থেকে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে এবং আপনার নিজস্ব ওয়েবসাইটের সাথে পরিচিত হতে পারবে। একটি Business Profile এর মাধ্যমে আপনি ফেসবুকের এডভারটাইজিং টুলস ব্যবহার করার প্রয়োজন ছাড়াই ইনস্টাগ্রাম বিজ্ঞাপন তৈরি এবং তা প্রকাশ করতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, আপনি এখান থেকে ইনস্টাগ্রামের এনালাইটিক্স টুলস ব্যবহার করতে পারবেন। যার ফলে আপনি পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন আপনার প্রোডাক্টের এনগেজমেন্ট সম্পর্কে।
►► এখান থেকে পড়ে নিন: ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং : হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের ফাইনাল গাইডলাইন
২. ইনস্টাগ্রামের ফ্রি টুলস ব্যবহার করুন
ইনস্টাগ্রামে Business profile গুলো ফেসবুক Business profile চেয়ে আলাদা নয়। তাই ফেসবুকের মতোই Insights দিয়ে আপনি আপনার পোস্টের পরিসংখ্যানগুলো যাচাই করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, আপনি একটি ডেমোগ্রাফিক চার্টের মাধ্যমে আপনার ফলোয়ার মধ্যে নারী ও পুরুষ কখন এবং কীভাবে আপনার পোস্টের সাথে সংযুক্ত হচ্ছে, সব দেখতে পাবেন। এটি ব্যবহারকারীর লিঙ্গ, লোকেশান এবং দিন ঘণ্টারও হিসেব রাখে।
এই ফ্রি টুলসটি সম্পূর্ণই বিনামূল্যে, যা ব্যবহারের ফলে ব্যবহারকারীরা আপনার সামগ্রীর সাথে কীভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করছে তা বুঝতে পারবেন।
৩. প্রোডাক্টের সংক্ষিপ্ত টিজার প্রকাশ করুন
কেমন হয় যদি কেবল আপনি ইনস্টাগ্রামে প্রোডাক্টের টিজার পোস্ট করে পণ্য বিক্রি করতে পারেন? হ্যাঁ, এটা সম্ভব। টিজার হচ্ছে কোন প্রোডাক্টের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আর আপনার প্রোডাক্টগুলোর টিজার দেয়ার জন্য ইনস্টাগ্রাম একটি দুর্দান্ত জায়গা। কিন্তু আপনি আপনার ফলোয়ারদের এমন কোন টিজার দেখাবেন না, যাতে তারা বিরক্ত হয়। সর্বদা প্রাসঙ্গিক টিজার প্রদর্শন করাতে হবে।
আপনি যদি খুব প্রত্যয়বান হন তবে আপনার ফলোয়াররা আপনার বিজনেসের প্রতি মাছিদের মতো উগে আসবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে প্রকাশিত টিজার যেন আপনার প্রোডাক্টের কথা সংক্ষিপ্ত আকারে বলে। যা আপনার ক্রেতাদের আরো বেশি আকর্ষিত করবে।
৪. স্পনসরড এড তৈরি করুন
যারা প্রতিনিয়ত তাদের প্রোডাক্ট ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে সেল করে থাকেন, তাদের কাছে ইনস্টাগ্রাম এড একটি কমন জায়গা। এখানে আপনি আপনার প্রোডাক্টর বিজ্ঞাপন শুধুমাত্র নিজের ফলোয়ারদের কাছেই না, বরং অন্যান্যদের কাছেও পৌঁছে দিতে পারেন।একটি বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি কত পরিমাণে অর্থ খরচ করতে চান, তাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এখান থেকে।
আপনি আপনার ক্যাজুয়াল ফিচারগুলো সাথে শুধুমাত্র একটি স্পনসরড এড অথবা বহু এড তৈরি করতে পারেন। এর ফলে আপনার ব্র্যান্ড তার ফলোয়ারদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন উপায়ে পৌঁছে যায় এবং শুধুমাত্র যাদেরকে টার্গেট করা হয়, তাদের কাছেই পৌঁছে যায়।
স্পনসর এড তৈরি করার পূর্বে আপনার কাস্টম পোস্টগুলো শুধুমাত্র আপনার অ্যাকাউন্ট অনুসরণকারীরাই তার আপডেট এবং ফটো দেখতে পাবেন। আর এভাবেই স্পনসরড এড আপনাকে সাহায্য করে একাউন্টে থাকা ফলোয়ারদের বাইরেও আপনার প্রোডাক্টের পরিচিতি বাড়াতে।
স্পনসরড এড তৈরির জন্য আপনার প্রয়োজন হবে এমন কিছু ছবি যা সত্যিই ক্রেতারা পছন্দ করবে। এক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রোডাক্টের জন্য ভালো কিছু ব্যানার তৈরি করবেন। প্রফেশনাল মানের বিজ্ঞাপনের জন্য আপনি প্রফেশনাল কোন ডিজাইানারের সাহায্য নিতে পারেন।
৫. ইনস্টাগ্রাম স্টােরি ব্যবহার করুন
ইনস্টাগ্রাম স্টাোরিগুলো ইনস্টাগ্রামের অন্যান্য সাধারণ পোস্টগুলো থেকে আলাদা হয়ে থাকে। কারণ এটি স্লাইড শো আকারে প্রদর্শন করানো হয়। এগুলো শুধুমাত্র ২৪ ঘণ্টার জন্য সক্রিয় থাকে এবং আপনার প্রোডাক্টের প্রতি এনগেজমেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে। এটি পূর্ণাঙ্গ একটি পোস্ট নয়, বরং নিউজফীডে সবার উপরে অবস্থা করে। যার ফলে এটা খুব সহযেই ব্যবহারকারীর নজরে আসে।
যখনই কোন ব্যবহারকারী উক্ত স্টোরিজ অপশনে ক্লিক করে, তাদের কাছে আপনার প্রোডাক্টের ছবিগুলো পপআপ আকারে প্রদর্শিত হয়। যা স্লাইড শো এর মত একটির পরে আরেকটি আসতে থাকে।
৬. জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সাহায্য নিন
আপনি যদি ইনস্টাগ্রামে সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে চান তবে তা করার দ্রুততম উপায় হল জানপ্রিয় যারা ইতোমধ্যে অনেক বড় পরিমাণে ফলোয়ার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছেন তাদের সাহায্য নেয়া।
বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই যখন দেখেন যে জনপ্রিয় কেউ আপনার প্রোডাক্টটি গ্রহণ করছেন, তখন তাদের মনে আপনার সার্ভিস সম্পর্কে বিশ্বাস তৈরি হয়। যদি আপনি এমন কোন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে আপনার পার্টরার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, যার বিজনেস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আছে, তাহলে তা আপনার প্রোডাক্ট অধিকমাত্রায় বিক্রি করতে সাহায্য করবে।
৭. আপনার ব্র্যান্ডযুক্ত হ্যাশট্যাগ নিয়ে গবেষণা করুন
যদি আপনি আপনার পোস্টগুলোর সাথে ব্যবহারকারীদের অধিক এনগেজমেন্ট চান, তাহলে সঠিক হ্যাশট্যাগ (#) হতে পারে আপনার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
একজন ক্রেতা এই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করার মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় পোস্টগুলো খুঁজে নিতে পারে, যেখানে সঠিক একটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে আপনার প্রোডাক্টিও তাদের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। আপনার কোম্পনি (এবং অন্যান্য ব্যবহারকারীরা) অনুসন্ধান করতে পারে এমন একটি হ্যাশট্যাগ তৈরি করুন যা মূলত একটি বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন।
৮. সঠিক সময়ে পোস্ট করুন এবং মাত্রাতিরিক্ত পোস্ট করবেন না
ইনস্টাগ্রামে মাত্রাতিরিক্ত পোস্ট করা আপনার ফলোয়ার কমে যাওয়ার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আপনি যদি একই বিষয়ের ওপর প্রচুর পরিমাণে পোস্ট করতে থাকেন, একটা সময়ে আপনার ফলোয়াররা বিরক্ত হয়ে আপনাকে আনফলো করে দেবে।
তাই আপনার করা পোস্টগুলো যদি ধারাবাহিক ভিত্তিতে তাদের নিউজ ফিডে নিয়মিত থাকে, সেক্ষেত্র কোন সমস্যা হবে না। তাই নির্দিষ্ট একটি সময় বেছে নিন পোস্ট করার জন্য। এটি করার সর্বোত্তম উপায়গুলির মধ্যে একটি হল আপনার অনুসরণকারীরা যখন বেশি অনলাইনে থাকে তখন সময় বুঝে পোস্টটি করা।
SimplyMeasured এর মতে, ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা সবচেয়ে খারাপ দিনগুলি বুধবার এবং রবিবার। তবে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার পোস্টের জন্য সেরা দিন। আর CoSchedule এর গবেষণা অনুসারে, পোস্টের জন্য দিনের সেরা সময়গুলি সকাল ৮:০০ টা থেকে ৯:০০ টা এবং দুপুরের মধ্যে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইনস্টাগ্রাম বিশ্বে প্রাধান্য পেয়েছে। ৮০০ মিলিয়ন মাসিকেরও বেশি ব্যবহারকারীদের সাথে ইমেজ শেয়ার করার এ এক চমৎকার জায়গা। এখানে প্রতিদিন কয়েক বিলিয়ন লাইক দেয়া হয়। তাই এর মধ্যে থেকেই আপনাকে খুঁজে নিতে হবে আপনার আসল টার্গেটটি। সুতরাং উপরের ট্রিকসগুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুন এবং নিজের ফলোয়ার ও বিজনেস growth rate এর ওপর বিশেষ খেয়াল রাখুন।
প্রিয় পাঠক, কোর্সটিকায় আপনি কোন বিষয়ে লেখা চান, তা জানিয়ে নিচে কমেন্ট করুন। ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।
Discussion about this post