ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করার পরে, কোন কারণে সে মাসে মাসিক দেরিতে হলে নারীরা চিন্তায় পরে যান। তারা ভাবেন হয়তো ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করার কারণেই এমনটি হয়েছে। ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় তখন তাদের মনে এই প্রশ্নটিই ঘুরপাক খায়। আসলেই ইমার্জেন্সি পিল খেলে কি মাসিক সত্যিই দেরিতে হয়? দেরিতে হলেও কারণটা কি?
মাসিক নারীর একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি হয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে এই প্রক্রিয়া সময়ের আগেই হয়ে যায় বা কখনো সময়ের পরে হয়ে থাকে। বিশেষ করে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পরে নারীদের মনে হয় হয়তো এই ঔষধটি ব্যবহার করার কারণেই তাদের সাথে এমনটি হয়েছে।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয়
আগেই বলে রাখি ইমার্জেন্সি পিল মাসিক দেরিতে বা তাড়াতাড়ি হওয়ার ঔষধ নয়। এটি হচ্ছে হরমোনাল ঔষধ। যে ঔষধ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু ওভুলেশনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয় কিংবা নিষিক্ত ডিম্বাণুকে প্রতিস্থাপিত হতে দেয় না। এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে শরীরের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়ে থাকে। যার জন্য মাসিক হওয়ার সময় অনেক সময় পিছিয়ে যায়।
সাধারণত ২১-৩৫ দিন পর পর মাসিক হয়ে থাকে। তবে, শরীরে হরমোনের প্রভাব, ঔষধের প্রভাব এর কারণে অনেক সময় মাসিক ৫/৭ দিন আগে কিংবা পরে হয়। তেমনই ইমার্জেন্সি পিল খেলে অনেক সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তনের ফলে ৫/৭ দিন দেরিতে মাসিক শুরু হতে দেখা যায়।
সমীক্ষা করে দেখা গেছে ইমার্জেন্সি পিল বা অন্য কোন পিল ব্যবহার করার ফলে বেশীরভাগ মহিলাদের মাসিক এর সময় পরিবর্তন হয় না। কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। পিল খাওয়ার ফলে যাদের হরমোনের তারতম্যর প্রভাবে মাসিক শুরু হতে ৫/৭ দিন দেরি হয়।
এমনটি হওয়া খুব স্বাভাবিক। মাসিকের ডেটের ১০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মাসিক না হলে অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত। এই সময় ২০/২৫ দিনের বেশী হলে ডাক্তার দেখানো উচিত। পিল গ্রহণ করার পরে হরমোনের তারতম্য এর প্রভাবে বেশী সাদাস্রাব হতে দেখা যায়। এমনটি হলে অবশ্যই মেয়েদের সাদাস্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ গুলো ব্যবহার করে দেখতে হবে।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় তা আপনাদের জানালাম। তবে ইমার্জেন্সি পিল নিয়ম অনুযায়ী না খেলে এই সময় আরও পরিবর্তন হতে পারে। ডাক্তাররা বলে ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে অপরিকল্পিত সহবাসের ১২ ঘণ্টার মধ্যে এই পিলটি খাওয়া উত্তম। সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এই পিলটি খেতে হবে। নয়তো এই পিল কাজ করবে না। এই পিল খাওয়ার পরে বমি বমি ভাব হতে পারে কিংবা বমি হতে পারে।
অনেক সময় দেখা সাধারণ পিলের পরিবর্তে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করলে মাসিক হওয়ার সময় বা পরে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমতে শুরু করে। যার ফলে শরীরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা শুরু হয়। আপনার ঘরেই ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত অনেক খাবার রয়েছে। যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে আপনার শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন এর তারতম্য বজায় থাকবে।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় | কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: ইমার্জেন্সি পিল কাদের খাওয়া উচিত?
উত্তর: অনাকাঙ্খিতভাবে গর্ভধারণ রোধ করার জন্য ইমার্জেন্সি পিল খাওয়া উচিত। যেমন- কনডম নষ্ট হয়ে গেলে, একাধারে কয়েকদিন পিল খেতে ভুলে গেলে বা জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্য কোন পদ্ধতি ব্যবহার না করলে।
প্রশ্ন: ইমার্জেন্সি পিল কাদের খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর: যারা গর্ভধারণ করে ফেলছেন, যাদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত বা অতিরিক্ত রক্ত যায় তাদের এই পিল খাওয়া উচিত নয়।
প্রশ্ন: ইমার্জেন্সি পিল কতবার খাওয়া যায়?
উত্তর: একবার ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার পর থেকে আবার ঋতুস্রাব শুরু হওয়া পর্যন্ত সর্বোচ্চ একবার খাওয়া উচিত। এর বেশী খেলে সমস্যা হতে পারে।
প্রশ্ন: ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পরে কি কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: ইমার্জেন্সি পিল খেলে বমি ভাব, মাথা ব্যথা, ঋতুস্রাব আগে বা দেরিতে হওয়া এবং এই পিল বেশী খেলে গর্ভধারণেও সমস্যা হতে পারে।
শেষ কথা
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার কত দিন পর মাসিক হয় এবং মাসিকের সময় কেন পিছিয়ে থাকে এই সম্পর্কে এতক্ষণ জানানো হলো। অবশ্যই মনে রাখবেন যে ইমার্জেন্সি পিল কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নয়। অযাচিত গর্ভধারণ রোধে এই পিল ব্যবহৃত হয়। তাই তুলনামূলক এই পিল বেশী ব্যবহার করলে সেটা লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশী বয়ে আনবে।
জন্মনিয়ন্ত্রণ এর জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে সবসময় ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করলে পরবর্তী গর্ভধারণে, ঋতুচক্রে ও নারীস্বাস্থ্যে খুবই খারাপ প্রভাব ফেলবে। তাই শুধুমাত্র জরুরী প্রয়োজনেই এই পিলটি ব্যবহার করা উচিত।
আমরা আছি ইউটিউবেও। ইউটিউবে আমাদের চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন কোর্সটিকা।
Discussion about this post