ইমার্জেন্সি পিল যা একাধারে হরমোনাল ঔষধ, জন্ম নিরোধক বড়ি কিংবা ক্যাপসুল। যখন অন্য কোন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি কাজে দেয় না। তখন এই ইমার্জেন্সি পিল কাজে আসে। ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে নারীদেহে অনেক সমস্যা হয়ে থাকে। ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয় ও সেই সমস্যাগুলো নিয়ে আজকে জানবো।
অযাচিত গর্ভধারণ রোধে এই পিল ব্যবহৃত হয়। অনেক মহিলা সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে বারে বারে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করে। যার ফলে ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। অনেক মহিলা ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার খেয়ে এই সমস্যা থেকে বের হলেও বেশীরভাগ নারীই পড়েন সমস্যায়।
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয়
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে দু’ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে স্বল্পমেয়াদী অন্যটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি। ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার সাথে সাথে যে সমস্যাগুলো হয়ে থাকে সেগুলো স্বল্পমেয়াদী সমস্যা। ইমার্জেন্সি পিল বেশী ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেকদিন ধরে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা সৃষ্টি হয়। তেমনই সমস্যা থেকে উত্তরণ হতেও অনেক সময় লেগে যায়।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে স্বল্পমেয়াদী সমস্যা
নিয়ম অনুযায়ী ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পরেও কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। একটি ইমার্জেন্সি পিল এর কার্যকারিতা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এই ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কিছু সমস্যা শুরু ও হয় আবার সেরে যায়। আবার কিছু সমস্যা রয়েছে যে সমস্যাগুলো যতদিন না মাসিক হবে ততদিন পর্যন্ত থেকে যায়। এই সমস্যাগুলো হচ্ছে-
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- মাথাব্যথা ও মাথাঘোরা
- সাদা স্রাব
- ফোটা ফোটা রক্ত যাওয়া
- স্তনে ব্যথা হওয়া
- ঋতুস্রাব সময়ের আগে বা পরে হওয়া
- ঋতুস্রাব এর সময় অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া
প্রতি ঋতুস্রাবে একটি বা প্রতি মাসিকে একটি পিল খেলে এই ধরনের সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলো একাধারে কয়েকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে। এই পিল খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা ও স্তনে ব্যথা হওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। পিলের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যাগুলো এমনিতেই সেরে যায়।
তবে, পিরিয়ড দেরিতে কিংবা আগে শুরু হওয়া এর নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। এটি আগে, পরে বা নির্দিষ্ট সময়েও হতে পারে। অনেকের সাদাস্রাব এর সমস্যা দেখা দেয়। অনেকে মেয়েদের সাদাস্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ গুলো ব্যবহার করেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ হয়ে যান। তবে বেশীরভাগ মহিলা উক্ত কারণগুলো না জানার কারণে এই সমস্যা নিয়েই মাসের পর মাস পার করে দেন।
ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয় সেই সমস্যাগুলো এখন আমরা দেখবো। ইমার্জেন্সি পিল বেশী খাওয়ার ফলে শরীরে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং এই সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণ হতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই আমাদের উচিত এই পিল নিয়ম অনুযায়ী খাওয়া। ইমার্জেন্সি পিল বেশী খাওয়ার ফলে যেসব সমস্যা হয়-
- চর্ম ও যৌনরোগ
- গর্ভধারণে সমস্যা
- একসময় ইমার্জেন্সি পিল কাজ না করা
অনিরাপদ মিলনের পরে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করা উচিত এবং প্রতি মাসিকে একটির বেশী পিল ব্যবহার করা কখনোই উচিত নয়। যারা বছরের পর বছর নিয়ম না মেনে এই পিল খান তাদের এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলো অনেক সময় গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়। অনেক সময় দেখা যায় বেশী পিল ব্যবহার করার ফলে প্রসূতি মায়েদের দুগ্ধ আসে না। তাদের মধ্যে অনেকে প্রসূতি মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির উপায় গুলো ফলে করে সুস্থ হলেও বেশীরভাগ মহিলাকেই ডাক্তারের কাছে যেতে হয়।
ইমার্জেন্সি পিল বেশী ব্যবহার করার ফলে এই পিল এক সময় কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ফলে অনিরাপদ মিলন করে ফেললে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয় | ইমার্জেন্সি পিল কাদের খাওয়া উচিত
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয় তা তো আমরা জানলাম। একান্তই ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করা ছাড়া অন্য উপায় না থাকলে এই পিল খেতে হবে। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে সবসময় এই পিল খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক পদ্ধতি রয়েছে। সেগুলো ব্যবহার করতে হবে। একাধারে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এই পিল ব্যবহার করা উচিত নয়। এই পিল যাদের ব্যবহার করা উচিত-
- সহবাসের সময় কনডম নষ্ট হয়ে গেলে
- একাধারে কয়েকদিন জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল খেতে ভুলে গেলে
- কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার না করে সহবাস করলে
- অনিরাপদ মিলনের পরে
উক্ত জরুরী সময়গুলো ছাড়া অন্য কোন সময় কখনোই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইমার্জেন্সি পিল কাদের খাওয়া উচিত নয়
ইমার্জেন্সি পিল মানেই ভালো এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই। সব মহিলাদের এই পিল ব্যবহার করাও উচিত নয়। তারা এই পিল ব্যবহার করলে তাদের ক্ষতিই বরং বেশী হবে। এমন মহিলাদের দেখে আসা যাক-
- ইমার্জেন্সি পিল খাওয়ার পরে যাদের অ্যালার্জি হয়
- যারা গর্ভধারণ করেছেন
- যাদের ঋতুস্রাব অনিয়মিত
- যাদের ঋতুস্রাবের সময় বেশী রক্ত যায়
উক্ত সমস্যাগুলো যেসব মহিলার আছে তাদের কখনোই ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করা উচিত নয়।
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয় | কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত
স্বল্পমেয়াদী যে সমস্যাগুলোর জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়া সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা ও স্তনের ব্যথা এই ধরনের সমস্যাগুলো একাধারে ১ সপ্তাহ বা ১০ দিনের বেশী চললে। পিরিয়ড শুরু হতে ১৫ দিনের বেশী হয়ে গেলে। ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
আপনি যদি অনেক দিন ধরে ইমার্জেন্সি পিল ব্যবহার করেন। এবং দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাগুলো আপনার শরীরে দেখে থাকেন তাহলে আপনার উচিত অতিসত্বর ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা।
শেষ কথা
ইমার্জেন্সি পিল বেশি খেলে কি হয় সেই সমস্যাগুলো এবং সমস্যা কোন পর্যায়ে গেলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত আপনাদের সকল বিষয়ে জানানো হয়েছে। ইমার্জেন্সি পিলকে সাধারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার না করে শুধুমাত্র জরুরী সময়েই এই পিল ব্যবহার করা উচিত। নাহলে এই পিল ধীরে ধীরে শরীরের ক্ষতি করতেই শুরু করে। যার ফল কখনোই ভালো হয় না।
Discussion about this post