ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : ইরাকের বন্দিদের মুক্তিদানের জন্য খলিফা সুলায়মানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়। উমাইয়া শাসনামলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুফা ও বসরায় ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)-এর অনুসারীদের বিদ্রোহ দমন করে ইরাকের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। সময় তিনি ইরাকের হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। খলিফা সুলায়মান ক্ষমতায় আরোহণের পর হাজ্জাজের বন্দিকৃত কয়েদিদের মুক্ত করে দেন। এ কারণে তাকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।
ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. খলিফা আবদুল মালিক কর্তৃক আরবি ভাষা জাতীয়করণ বিষয়ে ধারণা দাও।
উত্তর : খলিফা আবদুল মালিক রাষ্ট্রকে জাতীয়করণ এবং রাষ্ট্রে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য আরবিকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দান করেন অর্থাৎ আরবি ভাষা জাতীয়করণ করেন। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের রাজত্বকাল উমাইয়া বংশের সবচেয়ে গৌরবময় যুগ। তার শাসননীতি মূলত আরব জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশের জন্য বিখ্যাত ছিল। তিনি শাসনক্ষমতায় বসে দেখলেন যে আরব মুসলিমরা রাজ্যশাসন করলেও মূলত অনারব জনগোষ্ঠীই উমাইয়া খিলাফতের প্রশাসন ব্যবস্থাকে পরিচালিত করছে। ফলে আরব মুসলিম শাসননীতি কার্যকর হচ্ছে না। এ কারণেই খলিফা মালিক আরবি ভাষাকে জাতীয়করণ করেন।
২. খলিফা আবদুল মালিককে ‘রাজেন্দ্র’ বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিকের চারজন পুত্র পরবর্তীতে খলিফা হওয়ায় তাকে রাজেন্দ্র বা ঋধঃযবৎ ড়ভ শরহমং বলা হয়। আবদুল মালিকের চার পুত্র আল ওয়ালিদ (৭০৫-৭১৫ খ্রি.), সুলাইমান (৭১৫-৭১৭ খ্রি.), দ্বিতীয় ইয়াজিদ (৭২০-৭২৪ খ্রি.) এবং হিশাম (৭২৪-৭৪৩ খ্রি.) পরবর্তীকালে খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তারা সুযোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা উমাইয়া বংশকে সমৃদ্ধির স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দেন। ঐতিহাসিক পি. কে. হিট্টি বলেন, ‘আবদুল মালিক এবং তার উত্তরাধিকারী চার পুত্রের শাসনকালে দামেস্কের এ রাজবংশ শৌর্যবীর্য ও গৌরবের চরম শিখরে আরোহণ করে। এ কারণে আবদুল মালিককে ‘রাজেন্দ্র’ বলা হয়।’
৩. কারবালার কাহিনিকে মর্মান্তিক বলা হয় কেন?
উত্তর : কারবালার যুদ্ধে অত্যন্ত করুণভাবে মুসলমানদের হত্যা করা হয় এবং অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে নবি করিম (স)-এর দৌহিত্র ইমাম হোসেনের । শিরñেদ করা হয়। তাই এ হত্যাকা-কে মর্মান্তিক বলা হয়।
৬০ হিজরির ১০ই মহররম কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেনের বাহিনী ও ইয়াজিদের সেনাবাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শুরু হয়। ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাত নদীর পাড় দখল করে ইমাম হোসেনের বাহিনীকে পানি থেকে বঞ্চিত করে। ফলে পানির অভাবে ইমাম হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাসেম মৃত্যুবরণ করেন। পরে ইমাম হোসেন নিজপুত্র শিশু আসগরকে নিয়ে ফোরাত নদীতে পানির জন্য গেলে আসগর শরবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। পরে ইয়াজিদের নির্দেশে পাপিষ্ট সীমার তরবারি দ্বারা ইমাম হোসেনের শিরশ্ছেদ করে। নবি করিম (স)-এর দৌহিত্রের এ বেদনাদায়ক হত্যাকা-কে তাই মর্মান্তিক ঘটনা বলা হয়।
৪. খলিফা সুলাইমানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয় কেন?
উত্তর : ইরাকের বন্দিদের মুক্তিদানের জন্য খলিফা সুলায়মানকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।
উমাইয়া শাসনামলে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কুফা ও বসরায় ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)-এর অনুসারীদের বিদ্রোহ দমন করে ইরাকের শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। সময় তিনি ইরাকের হাজার হাজার মানুষকে বন্দি করে কারাগারে নিক্ষেপ করেন। খলিফা সুলায়মান ক্ষমতায় আরোহণের পর হাজ্জাজের বন্দিকৃত কয়েদিদের মুক্ত করে দেন। এ কারণে তাকে আশীর্বাদের চাবি বলা হয়।
৫. সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আরবদের কিছু বাণিজ্য তরী সিন্ধুর জলদস্যু কর্তৃক লুষ্ঠিত হলে হাজ্জাজের দাবি অনুসারে রাজা দাহির কর্তৃক ক্ষতিপূরণ দানে অস্বীকৃতিই ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।
অষ্টম শতকের শুরুতে আরবদের ৮টি বাণিজ্য ওরী সিন্ধুর দেবল বন্দরে জলদস্যু কর্তৃক লুষ্ঠিত হলে খলিফা আল-ওয়ালিদের পূর্বাঞ্ছনীয় শাসনকর্তা হাজ্জাজ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। কিন্তু রাজা দাহির এ ক্ষতিপূরণ দিতে অস্বীকার করেন। ফলে সিন্টু আক্রমণ । অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, যা ছিল সিন্ধু বিজয়ের প্রত্যক্ষ কারণ।
৬. ময়ূর বাহিনী বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : ময়ূর বাহিনী হলো হাজ্জাজ বিন ইউসুফ পরিচালিত একটি সুসজ্জিত সৈন্যদল। সিজিস্থানের রাজা জানবিল কাবুল থেকে কান্নাহার পর্যন্ত স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। জানবিলকে পরাস্ত করার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ময়ূর বাহিনী নামক সুসজ্জিত সৈন্যদল প্রেরণ করেন, এই বাহিনী কর্তৃক জানবিল পরাস্ত হন এবং ময়ূর বাহিনী জয়ী হয়।
৭. মুয়াবিয়াকে প্রথম রাজা বলা হয় কেন?
উত্তর : মুয়াবিয়া উমাইয়া খিলাফত প্রতিষ্ঠা করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রচলন করেন, তাই তাকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।
উমাইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা উচ্চাভিলাষী মুয়াবিয়া খিলাফত লাভের সাথে সাথেই সাধারণতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটিয়ে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। মুয়াবিয়া হযরত ইমাম হাসান (রা)-এর সাথে স্বাক্ষরিত সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে ৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে বসরার শাসনকর্তা মুগিরার প্ররোচনায় তার জ্যেষ্ঠপুত্র ইয়াজিদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের পথ সুগম করেন। এজন্য মুয়াবিয়াকে আরবদের প্রথম রাজা বলা হয়।
৮. অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেনের পরিণতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : অবরুদ্ধ কারবালায় ইমাম হোসেন অত্যন্ত করুণ পরিণতি বরণ করেন।
৬৮০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মহররম ইমাম হোসেনের সাথে ইয়াজিদ বাহিনীর যুদ্ধ বাঁধে। এটি ছিল একটি অসম যুদ্ধ। কেননা হোসেনের বাহিনীতে যুদ্ধক্ষম ব্যক্তি ছিল মাত্র ৭২ জন। অপরপক্ষে ইয়াজিদের বাহিনীতে ছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি। যুদ্ধে হোসেনের ভ্রাতুষ্পুত্র কাশিম ও শিশুপুত্র আসগর শহিদ হলে ইমাম হোসেন যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার প্রচ- আক্রমণে ইয়াজিদ বাহিনী ভীত হয়ে পালাতে থাকে। কিন্তু হঠাৎ একটি তীর তার বক্ষে বিদীর্ণ হলে তিনি ধরাশায়ী হন। অবশেষে নিষ্ঠুর সীমার অর্ধমৃত হোসেনের মস্তক ছিন্ন করেন।
৯. খলিফা আব্দুল মালিক কীভাবে শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন?
উত্তর : শাসনব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে আরবি ভাষা ব্যবহার করে খলিফা আব্দুল মালিক শাসনব্যবস্থা আরবীয়করণ করেন। আব্দুল মালিক বিজাতীয় প্রভাব থেকে সাম্রাজ্যকে মুক্ত করা এবং সাম্রাজ্যে একই ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই আরব জাতীয়তাবাদ ও আরবি ভাষার মর্যাদা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার মানসে এবং বিজাতীয় আঞ্চলিক ভাষার বৈচিত্র্য ও জটিলতা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার অভিপ্রায়ে সাম্রাজ্যে আরবিকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদাদান করেন। প্রশাসনিক সকল কাজে তিনি আরবি ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। এছাড়া আরবি বর্ণমালা লিখন, পঠন ও উচ্চারণ পদ্ধতির উন্নতি বিধান করেন এবং রাজ্যে প্রচলিত মুদ্রার পরিবর্তে আরবি মুদ্রা প্রচলন করেন। এভাবে আব্দুল মালিক তার শাসনব্যবস্থাকে আরবীয়করণ করেন।
১০. ইসলামের পঞ্চম খলিফা বলা হয় কাকে এবং কেন?
উত্তর : খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ উমাইয়া শাসনামলে খুলাফায়ে রাশেদিনের শাসনব্যবস্থা চালু করায় তাকে ইসলামের পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয়। উমাইয়া খলিফাগণের শাসনব্যবস্থা ছিল ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতায় পরিপূর্ণ। খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ অপরাপর উমাইয়া খলিফাদের ষড়যন্ত্র বিশ্বাসঘাতকতা ও নিষ্ঠুরতা পরিহার করে প্রজাদের কল্যাণে শাসন পরিচালনা করেন। এমনকি নিজের স্ত্রীর গহনাদিও রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেন। ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক শাসক হিসেবে তিনি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন। এসব কারণে তাকে পঞ্চম ধার্মিক খলিফা বলা হয়।
আরো দেখো: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র ৪র্থ অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post