ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আগলারীয় বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ফাতেমি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক। আবু মুসলিমকে হত্যা করে আব্বাসি খলিফা আল-মনসুর যেমন আব্বাসি বংশের নিরাপত্তা বিধান করেন, ঠিক তেমনি মাহদী ও আবু আবদুল্লাহকে হত্যা করে নিজবংশকে কণ্টকমুক্ত করেন।
এছাড়াও তিনি প্রথমে আগলাবীয় রাজধানী রাজাদায় অবস্থান করে নব প্রতিষ্ঠিত ফাতেমি খিলাফতের শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সংহতি বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। তবে ৯১৬-৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কায়রোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ পূর্বে মাহদিয়া নগর প্রতিষ্ঠা করে সেখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন।
ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘আল-কাহিরা’ বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ফাতেমি খলিফা আল-মুইজের শাসনামলে মিসরে প্রতিষ্ঠিত রাজধানী ‘আল-কাহিরা’ নামে পরিচিত।
আল-কাহিরা অর্থ ‘বিজয়ী শহর’। চতুর্থ ফাতেমি খলিফা আল-মুইজের সেনাপতি জওহর ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মিসর জয় করেন এবং খলিফার নির্দেশে কায়রোকে রাজধানীর উপযোগী করে নির্মাণ করেন। সরকারিভাবে কায়রোর নামকরণ করা হয় ‘আল-কাহিরা’ বা বিজয়ী শহর। ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে ‘আল-কাহিরা’ বা কায়রো রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।
২. দারুল হিকমা বলতে কী বোঝ?
উত্তর : ফাতেমি বলিফা আল-হাকিম ১০০৫ খ্রিস্টাব্দে কায়রোতে একটি বিখ্যাত বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ করেন। এটি দারুল হিকমা নামে পরিচিত। বাগদাদের বায়তুল হিকমার অনুকরণে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মিশরের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলী-ইবন-ইউসুফ এ জ্ঞানগৃহ নির্মাণে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এখানে শিয়া ধর্ম বিষয়ে আলোচনা ও গবেষণা হতো। এখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বহু অমূল্য গ্রন্থরাজি সংগৃহীত ছিল। দেশ-বিদেশের বহু প্রখ্যাত পণ্ডিত ব্যক্তি এখানে হাজির। হতেন এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাপ-আলোচনায় অংশগ্রহণ করতেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রখ্যাত দার্শনিক ও পদার্থবিজ্ঞানী ইবনে হায়সাম।
৩. উত্তর আফ্রিকায় প্রতিষ্ঠিত খিলাফতকে ফাতেমি খিলাফত বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী রা. ও নবিকন্যা হযরত ফাতেমা রা.-এর বংশধরগণ ফাতেমি খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।’ মূলত শিয়াদের ইসমাঈলীয়গণই উত্তর আফ্রিকায় ওবায়দুল্লাহ আল মাহনীর নেতৃত্বে ৯০৯ সালে ফাতেমি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন। আর হযরত ফাতেমা রা.-এর নামানুসারে বংশের নামকরণ করা হয়েছে বলে একে ফাতেমি খিলাফত বলা হয়।
৪. আল-মুইজের মিসর বিজয়ের বর্ণনা দাও।
উত্তর : সেনাপতি জওহর আল-সিকিল্পির সহায়তায় খলিফা আল-মুইজ ৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে মিসর জয় করেন। মিসর বিজয় ছিল খলিফা আল-মুইজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এটি তার জীবনের স্বপ্ন ছিল। তৎকালীন মিসরীয় শাসক কাফুরের অযোগ্য ও কুশাসনে অতিষ্ঠ জনগণ আল-মুইজকে মিসর বিজয়ে আমন্ত্রণ জানালে তিনি সেখানে অভিযান প্রেরণ করেন। প্রায় বিনা বাধায় তার সুযোগ্য সেনাপতি লওহর আল-সিকিল্লি প্রথমে আলেকজান্দ্রিয়া ও পরে রাজধানী মুস্তাত দখল করেন। এভাবে আল-মুইজের মিসর জয়ের স্বপ্ন পূরণ হয়।
৫. কাকে এবং কেন পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়?
উত্তর : শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের জন্য আল মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়।
মূলত আল-মুইজের সময়কাল ছিল মিসরে ফাতেমি শাসনকালের স্বর্ণযুগ। আল-মুইজ মিসরে ফাতেমি শাসন সুদৃঢ় করে রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধনে মনোনিবেশ করেন এবং সমৃদ্ধিশালী একটি সাম্রাজ্য। প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সৈয়দ আমীর আলী তাকে পাশ্চাত্যের মামুন বলে অভিহিত করেছেন।
৬. স্পেনের ধর্মান্ধ আন্দোলন সম্পর্কে দেখো।
উত্তর : ইসলামি আচার-আচরণ, রীতিনীতি অনুসরণকারী খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে গোঁড়া ও ধর্মান্ধ খ্রিস্টানরা এক জঘন্য আন্দোলন ৮৫০-৮৫২ খ্রি.. শুরু করে, ইতিহাসে যা ‘ধর্মান্ধ আন্দোলন’ বা Zealot Movement নামে পরিচিত। আমির দ্বিতীয় আব্দুর রহমানের শাসনকালের শেষ দিকে কর্ডোভার এক দল গোঁড়া ও ধর্মান্ধ খ্রিষ্টান ইসলাম ও আরবদের শিক্ষা ও কৃষ্টিতে আকৃষ্ট খ্রিষ্টানদের দ্রুত আরবীয়করণের বিরুদ্ধে এ উদ্ভট ও অভিনব আন্দোলন শুরু করে। তাদের এ আন্দোলন ছিল স্পেনে উদীয়মান ইসলামি শক্তি, কৃষ্টি-কালচারকে স্পেন হতে চিরতরে বিতাড়নের প্রাথমিক মহড়া।
৭. ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী সম্পর্কে কী জান?
উত্তর : খলিফা ওবায়দুল্লাহ আল-মাহদী ৯০৯ খ্রিস্টাব্দে আগলারীয় বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ফাতেমি শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন একজন সুদক্ষ শাসক। আবু মুসলিমকে হত্যা করে আব্বাসি খলিফা আল-মনসুর যেমন আব্বাসি বংশের নিরাপত্তা বিধান করেন, ঠিক তেমনি মাহদী ও আবু আবদুল্লাহকে হত্যা করে নিজবংশকে কণ্টকমুক্ত করেন। এছাড়াও তিনি প্রথমে আগলাবীয় রাজধানী রাজাদায় অবস্থান করে নব প্রতিষ্ঠিত ফাতেমি খিলাফতের শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সংহতি বজায় রাখতে সচেষ্ট হন। তবে ৯১৬-৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি কায়রোয়ানের ১৬ মাইল দক্ষিণ পূর্বে মাহদিয়া নগর প্রতিষ্ঠা করে সেখানে রাজধানী স্থানান্তর করেন।
৮. খলিফা মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয় কেন?
উত্তর : শিল্প সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবদানের জন্য -মুইজকে পাশ্চাত্যের মামুন বলা হয়। মূলত আল-মুইজের সময়কাল ছিল মিসরে ফাতেমি শাসনকালের স্বর্ণযুগ। আল-মুইজ মিসরে ফাতেমি শাসন সুদৃঢ় করে রাজ্যের প্রভূত উন্নতি সাধনে মনোনিবেশ করেন এবং সমৃদ্ধিশালী একটি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, বিজ্ঞানমনস্কতা ও জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য সৈয়দ আমীর আলী তাকে পাশ্চাত্যের মামুন বলে অভিহিত করেছেন।
৯. দারাজি বলতে কাদেরকে বোঝায়?
উত্তর : আল-হাকিমের প্রবর্তিত নতুন ধর্মের অনুসারীদেরকে দারাজি বা দ্রুজ বলা হতো।
উদ্ভট ও খামখেয়ালি চিন্তার ধারক আল-হাকিম ইসমাঈলীয় মতবাদের সূত্র ধরে নিজেকে আল্লাহর অবতার মনে করেন। তার ধারণা ছিল তার মধ্যে আল্লাহর নিজের রূপ পরিগ্রহ করেছেন। আর এ ধরনের মতাদর্শে যারা বিশ্বাসী ছিল, তারাই দারাজি বা চুজ নামে পরিচিত ছিল।
১০. আল-হাকিমের সিংহাসনারোহণের ঘটনা বর্ণনা কর।
উত্তর : ৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পিতা আল-আজিজের মৃত্যুর পর মাত্র ১১ বছর বয়সে আল-হাকিম ফাতেমি সিংহাসনে আরোহণ করেন। অতি অল্প বয়স হওয়ায় পিতার সময়কার প্রাদেশিক শাসনকর্তা বারজোয়ান তার প্রতিনিধি হিসেবে শাসন ক্ষমতা পরিচালনা করেন। তবে বারজোয়ান ইবনে আমরকে হত্যা করে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হলে খলিফা হাকিম তার ঔদ্ধত্য সহ্য করতে না পেরে গুপ্তখাতকদের সহায়তায় বারজোয়ানকে হত্যা করে খিলাফতের সমস্ত ক্ষমতা নিজ হাতে গ্রহণ করেন।
আরো দেখো: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ইসলামের ইতিহাস ১ম পত্র ৭ম অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post