ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন বলে কুতুবউদ্দিনের এ রাজবংশকে ‘মামলুক’ বা ‘দাস বংশ’ নামে অভিহিত করেছেন।
১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন আইবেক সুলতান উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন। কুতুবউদ্দিন আইবেকের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন ও একটি নতুন রাজবংশের সূচনা হয়। কুতুবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত এ রাজবংশই ইতিহাসে ‘দাস বংশ’ নামে পরিচিত।
ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. আলাউদ্দিন খলজির মোঙ্গলনীতি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আলাউদ্দিন খলজির শাসনামলে দিল্লি সালতানাতে প্রায় সাত বার মোঙ্গল আক্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তাই মোঙ্গলদের প্রতিহতকরণে তিনি কতিপয় কার্যকর মোঙ্গলনীতি গ্রহণ করেন। আলাউদ্দিন খলজি মোঙ্গলদের মোকাবিলায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সাথে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মোঙ্গলদের আক্রমণ পথে তিনি পুরাতন কেল্লা সংস্কার ও নতুন কেল্লা স্থাপন করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন।
তিনি উন্নতমানের অস্ত্রের জন্য কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব বিশ্বস্তদের ওপর ন্যস্ত করেন। এছাড়া তিনি মোঙ্গলদেরকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত সৈন্য সংগ্রহ করেন। এভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তিনি মোঙ্গল আক্রমণ মোকাবিলায় সাফল্য লাভ করেন। তার রাজত্বকালে মোঙ্গলরা আর ভারত আক্রমণে সাহস করেনি।
২. বলবনের ‘রক্তপাত ও কঠোর নীতি’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমন এবং মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত নিষ্ঠুর ও কঠোর পদক্ষেপই ‘রক্তপাত ও কঠোর নীতি’ (Blood and Iron policy) নামে পরিচিত। সিংহাসনে আরোহণ করেই বলবন নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল আমির-ওমরাহ ও অভিজাত সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান ঔদ্ধত্য, দ্বন্দ্ব-কলহ ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যকলাপ, দিল্লির সন্নিকটস্থ মেওয়াটি দস্যুদের উপদ্রব, উপর্যুপরি ল মোঙ্গল আক্রমণ প্রভৃতি।
এসব সমস্যা সাম্রাজ্যের ভিতকে হুমকির সম্মুখীন করে তোলে। তাই নিজের ক্ষমতা সুসংহত করে সাম্রাজ্যকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি গুপ্তচর প্রথা চালু, বিচার ব্যবস্থার পুনর্গঠন, মোঙ্গল নীতি প্রভৃতি বিষয়ে কঠোর ও নিষ্ঠুর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এগুলোই বলবনের ‘রক্তপাত ও কঠোর নীতি’ হিসেবে স্বীকৃত।
৩. তৈমুর লঙ এর ভারত আক্রমণের ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের ফলে দিল্লি সালতানাত পতনের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যায়।
দিল্লি সালতানাতের দুর্বলতার সুযোগে মধ্য এশিয়ার দুর্র্ধষ সমরনেতা আমির তৈমুর লঙ ভারত আক্রমণ করেন (১৩৯৮-৯৯ খ্রি.)। তার এ আক্রমণের ফলে দিল্লি সালতানাতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। এ সুযোগে সালতানাতের বিভিন্ন অঞ্চল কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং সালতানাতের পতনের বিষয়টি শুধু সময়ের ব্যাপারে পরিণত হয়।
৪. দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল বিত্তশালী কৃষকদের বিদ্রোহ দমন করা। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ছিল হিন্দু বিদ্রোহ দমন এবং জমিদারদের দর্পচূর্ণ করা। আবার অনেকেই মনে করেন রাজধানী স্থানান্তর, খোরাসান ও কারাচিল অভিযানের ব্যর্থতা এবং প্রতীকী মুদ্রার বিফলতার কারণেই সুলতান দোয়াব অঞ্চলে কর বৃদ্ধি করেন। কর বৃদ্ধির মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক বারানী বলেন সুলতান দোয়াবে দশ হতে বিশগুণ কর বৃদ্ধি করেন।
৫. কুতুবমিনার নামকরণের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মহান সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে কুতুবমিনারের নামকরণ করা হয়। দিল্লি সালতানাতের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন শিল্প- সংস্কৃতির প্রতি বেশ অনুরাগী। স্থাপত্য শিল্পের প্রতি তার বিশেষ আকর্ষণ ছিল। তাই তিনি ১১৯৯ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লিতে একটি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
এ সময় কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকী নামে একজন মহান সাধক সুলতানের সংস্পর্শে আসেন। তাকে সুলতান খুবই পছন্দ এবং শ্রদ্ধা করতেন। তাই তার নামানুসারে এ বিজয় স্তম্ভের নামকরণ করা হয় কুতুবমিনার।
৬. গিয়াসউদ্দিন বলবন কেন রক্তপাত ও কঠোরনীতি গ্রহণ করেন?
উত্তর : অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বহিরাক্রমণ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষার জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন। গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময় তুর্কি অভিজাতদের ষড়যন্ত্র এবং বহিরাক্রমণ মারাত্মক রূপ ধারণ করে। সুলতান বলবন ষড়যন্ত্রপরায়ণ অভিজাতদের দমনের জন্য কঠোর শাসন নীতি গ্রহণ করেন।
তাছাড়া মোঙ্গলদের আক্রমণ মোকাবিলা করার জন্যও তিনি কঠিন দৃঢ়তার পরিচয় দেন সুতরাং অভ্যন্তরীণ কলহ ও শত্রু দমনের জন্য গিয়াসউদ্দিন বলবন রক্তপাত ও কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।
৭. কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রতিষ্ঠিত বংশকে দাসবংশ বলা হয় কেন?
উত্তর : কুতুবউদ্দিন আইবেক প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন বলে এবিএম হবিবুল্লাহ কুতুবউদ্দিনের এ রাজবংশকে ‘মামলুক’ বা ‘দাস বংশ’ নামে অভিহিত করেছেন। ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জুন আইবেক সুলতান উপাধি গ্রহণ করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
কুতুবউদ্দিন আইবেকের সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে ভারতে স্বাধীন মুসলিম শাসন ও একটি নতুন রাজবংশের সূচনা হয়। কুতুবউদ্দিনের প্রতিষ্ঠিত এ রাজবংশই ইতিহাসে ‘দাস বংশ’ নামে পরিচিত।
৮. দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ভৌগোলিক অবস্থান ও গুরুত্ব, প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন, অনুকূল আবহাওয়া প্রভৃতি কারণে মুহাম্মদ বিন তুঘলক দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করেন। দাক্ষিণাত্যের হিন্দুদের বিদ্রোহাত্মক মনোভাব লক্ষ করে তাদের ওপর আধিপত্য ও ও কর্তৃত্ব বজায় রাখতে সুলতান দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করেেিছলন মোঙ্গল আক্রমণের আশঙ্কা দূর করে রাজধানী নিরাপদ রাখার ক্ষেত্রে দৌলতাবাদই ছিল উপযুক্ত স্থান। দাক্ষিণাত্যের প্রাচুর্য ও সম্পদের অধিকতর সদ্ব্যবহারের জন্য সুলতান দৌলতাবাদে রাজধানী স্থাপন অধিক সমীচীন বলে মনে করেছিলন। মূলত শাসনকার্যের সুবিধার জন্য তিনি দৌলতাবাদে রাজধানী স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।
৯. ফিরোজ শাহ ছিলন ক্রীতদাসদের প্রতি অনুরক্ত- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ফিরোজ শাহ ছিলেন ক্রীতদাসদের প্রতি অনুরক্ত। ফিরোজ শাহ একটি বিরাট ক্রীতদাস বিভাগ গড়ে তোলেন। তার আমলে ১,৮০,০০০ জন ক্রীতদাস ছিল। এর মধ্যে দরবারে প্রায় বারো হাজার ক্রীতদাস বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত থেকে পারদর্শী হয়ে ওঠে। ক্রীতদাসদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ‘দিওয়ান-ই-বন্দেগান’ নামে একটি নতুন বিভাগ স্থাপন করা হয়।
যুদ্ধবন্দিদের অযথা হত্যা না করে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য সুলতান তাদের প্রতি উদার নীতি গ্রহণ করেন। এ ব্যবস্থা মানবোচিত হলেও এতে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি পায়। ফলে পরবর্তীকালে রাজ্যে আর্থিক সংকট দেখা দেয় এবং এসব দাস দিল্লি সালতানাতের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে।
১০. গিয়াউদ্দিন বলবন এর মোঙ্গল নীতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : মোঙ্গলদের প্রতিহত করার জন্য সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের গৃহীত নীতিই মোঙ্গল নীতি নামে পরিচিত।
মোঙ্গলদের আক্রমণ প্রতিহত করতে বলবন সেনাবাহিনী পুনর্গঠন এবং তাদেরকে সামরিক সরঞ্জামে সুসজ্জিত করেন। গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সুলতান নতুন দুর্গ নির্মাণ এবং পুরাতন দুর্গগুলো পুনর্র্নিমাণ করেন। মোঙ্গলদের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখার উদ্দেশ্যে তিনি সর্বদা রাজধানীতে অবস্থান করতেন। মূলত বলবন নতুন রাজ্য বিজয়ে উৎসাহিত না হয়ে রাজ্যে স্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং সাম্রাজ্যকে শঙ্কামুক্ত রাখতে মোঙ্গল আক্রমণ প্রতিহতের জন্য বেশি সচেষ্ট ছিলেন।
আরো দেখো: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ২য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post