ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন : ভারতের মুঘল শক্তির স্থায়িত্ব বিধানের জন্য হিন্দু-মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য ও প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল ‘দীন-ই এলাহী’ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য আলোচিত সমালোচিত বিষয় হলো সম্রাট আকবরের ‘দীন-ই-এলাহী’ ধর্মমত প্রচার। সম্রাটের এ ধর্মমত প্রচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত ছিল।
কেননা তিনি মনে করেন যে, হিন্দুদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য উদার ধর্মীয় নীতি গ্রহণ করা উচিত। তাই তিনি তার সাম্রাজ্যের সকলকে একটি কাঠামোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বিধানের জন্য নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। এটি ছিল ‘দীন-ই-এলাহী’ প্রবর্তনের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন
১. ‘মনসবদারি প্রথা’ কী? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : সম্রাট আকবর সেনাবাহিনীতে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের অব্যবস্থা দূর করার লক্ষ্যে ১৫৭১ খ্রিস্টাব্দে শাহবাজ খানকে মীর বকশী (সামরিক বাহিনীর প্রধান) নিয়োগ করে যে পরিকল্পনাটি গ্রহণ করেন তাই মনসবদারি প্রথা নামে পরিচিত। ‘মনসব’ শব্দের অর্থ পদ বা মর্যাদা। এ পদের অধিকারীকে ‘মনসবদার’ এবং সমগ্র ব্যবস্থাটিকে ‘মনসবদারি প্রথা’ বলা হয়। এ ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের মনসবদারের মোট দশ হাজার এবং সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১০ জন সৈন্য সংরক্ষণের নিয়ম ছিল।
২. সম্রাট আওরঙ্গজেবকে ‘জিন্দাপীর’ বলা হয় কেন?
উত্তর : ইসলামি অনুশাসনের প্রতি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান হওয়ার কারণে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে জিন্দাপীর বলা হতো। সম্রাট আওরঙ্গজেব ছিলেন খাঁটি সুন্নি মুসলমান। ব্যক্তিগত জীবনে ইসলামের বিধি-বিধান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চললেও তিনি পরধর্মের প্রতি সহিষ্ণু ছিলেন। আকবরের শাসনামলে যে ধর্মের বন্ধন অত্যন্ত শিথিল হয়ে পড়েছিল আওরঙ্গজেব তা পুনরুজ্জীবিত করেন। এটা করতে গিয়ে হিন্দুদের কাছে তিনি অপ্রিয় হলেও মুসলমানদের নিকট হতে ‘জিদাপীর’ উপাধি লাভ করেন।
৩. আইন-ই-আকবরী কী? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : আইন-ই-আকবরী হচ্ছে আবুল ফজলের রচিত একটি ঐতিহাসিক গ্রন্থ। আবুল ফজল উল্লিখিত গ্রন্থটি সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় রচনা করেন। আইন-ই-আকবরী গ্রন্থটিতে মুঘল সম্রাট আকবর এবং তার সাম্রাজ্য সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। আবুল ফজলের রচিত আইন-ই-আকবরীর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
৪. রাজপুত নীতি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর : মুঘল সম্রাট আকবর রণদক্ষ ও নির্ভীক উত্তর ভারতের রাজপুত জাতির সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সুচিন্তিত ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তাই রাজপুত নীতি নামে পরিচিত। সম্রাট আকবরের অর্ধ শতাব্দী রাজত্বকালে তার গৃহীত উল্লেখযোগ্য নীতিসমূহের মধ্যে রাজপুত নীতি অন্যতম। তিনি রাজপুত বংশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
রাজপুতদের দেশের সামরিক ও উচ্চপদে নিয়োগের মাধ্যমে তাদের আনুগত্য লাভ করেন। তিনি হিন্দু ও রাজপুতদের আনুগত্য ও সমর্থন লাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে জিজিয়া ও তীর্থকর প্রদান থেকে অব্যাহতি দেন। সম্রাট আকবরের রাজপুতদের প্রতি গৃহীত এ সকল উদার নীতিই হলো রাজপুত নীতি।
৫. ‘দীন-ই-এলাহী’ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?
উত্তর : ভারতের মুঘল শক্তির স্থায়িত্ব বিধানের জন্য হিন্দু-মুসলিম নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য ও প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল ‘দীন-ই এলাহী’ এর প্রকৃত উদ্দেশ্য। মধ্যযুগের ভারতের ইতিহাসে অন্যতম উল্লেখযোগ্য আলোচিত সমালোচিত বিষয় হলো সম্রাট আকবরের ‘দীন-ই-এলাহী’ ধর্মমত প্রচার। সম্রাটের এ ধর্মমত প্রচারের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত ছিল।
কেননা তিনি মনে করেন যে, হিন্দুদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়ার জন্য উদার ধর্মীয় নীতি গ্রহণ করা উচিত। তাই তিনি তার সাম্রাজ্যের সকলকে একটি কাঠামোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ করেন এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বিধানের জন্য নতুন ধর্মমত প্রচার করেন। এটি ছিল ‘দীন-ই-এলাহী’ প্রবর্তনের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
৬. বাবরনামা কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বাবরনামা হলো তুর্কি ভাষায় রচিত মুঘল সম্রাট জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবরের একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ।
তুযুক-ই-বাবরী বা বাবরনামা গ্রন্থটি ইতিহাস অধ্যয়নে একটি আকরগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। চমৎকার রচনাশৈলী, ভাষার মাধুর্য ও কারুকাজ, উন্নত বর্ণনা রীতি এবং তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার জন্য এ গ্রন্থটি পাঠক সমাজের প্রশংসা লাভ করেছে।
এ গ্রন্থে এশিয়া ও আফগানিস্তান বিশেষ করে সমকালীন ভারতের রাজনৈতিক ও আর্থ সামাজিক অবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। তাছাড়া এ গ্রন্থে বাবর তার ব্যক্তিজীবনের নানা দিক, যেমন: দোষ-গুণ, দূরদর্শিতা, সীমাবদ্ধতা, সুখ-দুঃখ এবং সাফল্য-ব্যর্থতার কথা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন।
৭. কবুলিয়ত ও পাট্টা বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কবুলিয়ত ও পায়া বলতে ভূমির ওপর প্রজাদের স্বত্ত্ব (অধিকার) রক্ষার জন্য ভারতবর্ষের সম্রাট শেরশাহের (১৪৭২-১৫৪৫) প্রবর্তিত এক অভিনব ব্যবস্থাকে বোঝায়। পাট্টা ছিল জমির অধিকার সংক্রান্ত দলিল। জমির ওপর কৃষকের অধিকার স্বীকার করে সরকারের পণ্য হতে পাঠা দেওয়া হতো। অন্যদিকে প্রদেয় করসহ ভূমিতে নিজের দায় ও কর্তব্য বর্ণনা করে কৃষক রাষ্ট্রকে কবুলিয়ত নামক দলিল সম্পাদন করে দিতেন।
৮. পানিপথের ১ম যুদ্ধে বাবরের জয় লাভের কারণ কী? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : ভারত উপমহাদেশে সাম্রাজ্য বিস্তারের অদম্য স্পৃহা ও অসামান্য নির্ভীকতা বাবরের জয় লাভের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। তৎকালীন ভারত উপমহাদেশে ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও বিশৃঙ্খলা তাকে সহজেই সাফল্য এনে দেয়।
চীন দেশে আবিষ্কৃত বারুদের সাহায্যে বাবরের বাহিনী কামান ও গাদা বন্দুকের ব্যবহার করে সাফল্য নিশ্চিত করে। সর্বোপরি বাবর ছিলেন একজন বিজ্ঞ ও সুনিপুণ রণসেনানী। তার সৈন্যবাহিনী ছিল সুশৃঙ্খল, যা ইব্রাহিম লোদির বিশৃঙ্খল বাহিনীর বিরুদ্ধে সহজেই জয়লাভ করে।
৯. সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম সেলিম রাখার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বিখ্যাত সাধক শেখ সেলিম চিশতির নামানুসারে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম সেলিম রাখা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন সম্রাট আকবরের পুত্র। একাধিক শিশু সন্তানের মৃত্যু হওয়ায় উত্তরাধিকার হিসেবে পুত্রসন্তান লাভের আশায় সম্রাট আকবর প্রতি বছর আজমিরে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির দরগাহ জিয়ারত করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন।
একই উদ্দেশ্যে সম্রাট প্রতি সপ্তাহে ফতেহপুর সিক্রির বিখ্যাত সাধক শেখ সেলিম চিশতির খানকাহতে যেতেন। পরবর্তী ১৫৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ আগস্ট রানি যোধবাঈ-এর গর্ভে এক সন্তানের জন্ম হয়। বহু সাধনার পর পুত্রের জন্ম হওয়ায় তাকে ‘A Child of Many Prayers’ বলা হয়।
১০. সম্রাট শাহজাহানের পুত্রদের মধ্যে সংঘটিত উত্তরাধিকার যুদ্ধের প্রধান কারণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : শাহজাহানের জীবদ্দশায় তার চার পুত্রের মধ্যে যে সংঘর্ষ হয় তার প্রথম কারণ ছিল মুঘল সাম্রাজ্যে সুষ্ঠু ও সুনির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতির অভাব। বলাবাহুল্য যে, হুমায়ুন, আকবর, জাহাঙ্গীর এবং শাহজাহানকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে যুদ্ধ করে সিংহাসন লাভ ও সংরক্ষণ করতে হয়েছিল। শাহজাদা সেলিম ও শাহজাদা খুররম মুঘল সিংহাসনে সমাসীন হওয়ার পূর্বে তাদের পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সুতরাং সিংহাসনকে কেন্দ্র করে ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব অথবা পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মূল কারণ সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব।
আরো দেখো: ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
উপরে দেয়া Answer Sheet বাটনে ক্লিক করে ইসলামের ইতিহাস ২য় পত্র ৩য় অধ্যায় অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর ডাউনলোড করে নাও। ডাউনলোড করতে অসুবিধা হলে আমাদের ফেসবুক পেজে ইনবক্স করো। শিক্ষার্থীরা অন্যান্য বিষয়ের নোট ও সাজেশান্স পেতে আমাদের YouTube চ্যানেলটি SUBSCRIBE করতে পারো এই লিংক থেকে।
Discussion about this post