মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ গড়ে উঠা থেকে শুরু করে প্রজননতন্ত্র, স্তন ও রক্তনালী গঠনের মতো কাজে অংশ নেয় এই হরমোন। বিশেষ করে মেয়েদের ঋতুচক্র ও গর্ভধারণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এই হরমোন নিয়ন্ত্রণ করে। স্বাভাবিক ভাবে ঋতুচক্র শেষ হওয়ার পরে শরীরে এই হরমোন এর প্রভাব কম লক্ষ্য করা যায়। ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার খেলে হরমোনের তারতম্য শরীরে স্বাভাবিক থাকবে।
নারীদের জন্য এই হরমোন যতটা গুরুত্বপূর্ণ পুরুষদের জন্যও এই হরমোন ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা হার্ট, হার্ট ও স্বাস্থ্যর ভালো রাখার জন্য এই হরমোন খুবই ভালো কাজ করে। তাই নারী-পুরুষ সকলেরই এই খাবারগুলো খাওয়া উচিত। এতে শরীর তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারবে। নয়তো বাধাগ্রস্ত হতে পারে। যা শরীরের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়।
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার
ঋতুচক্র হওয়ার পর বা মেনোপজ যখন হয় তখন স্বাভাবিকভাবে নারীর দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোন এর ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। তখন অনেক নারীরা বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় পড়েন। তারা এটাকে শারীরিক অসুস্থতা বলে চালিয়ে দেন। এসব অসুস্থতার মূল কারণ হচ্ছে ইস্ট্রোজেন হরমোন।
ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধি করার জন্য অনেক মহিলা ঔষধের আশ্রয় নিয়ে থাকে। তবে, ডাক্তারদের মতে ঔষধ খেয়ে ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধির চেয়ে, ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধিকারক খাবার খাওয়া উচিত। আজকে আমরা সেগুলো নিয়েই আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক ইস্ট্রোজেন হরমোন বৃদ্ধির জন্য কি কি খাবারগুলো বেশী খাবেন।
প্রোটিনজাতীয় খাবার
প্রোটিনজাতীয় খাবারে প্রোটিন এর পাশাপাশি এতে বিভিন্ন ধরনের হরমোনও লক্ষ্য করা যায়। যেমন দুগ্ধজাতীয় খাবারে রয়েছে ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন। এই ধরনের দুগ্ধজাতীয় খাবারগুলো হতে পারে চিজ, দুধ, দই বা দুধের সরে। এই খাদ্যগুলোতে সরাসরি ইস্ট্রোজেন হরমোন উপস্থিত থাকে। যা গর্ভবতী মায়েদের ও সন্তান জন্মদানের পরে স্তনদুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে।
তাছাড়া অন্যান্য প্রোটিনজাতীয় খাবার রয়েছে যেমন- মাছ, মাংস ও ডিম। এই খাদ্যগুলো শরীরে হরমোনের তারতম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত কিছু পরিমাণ প্রোটিনজাতীয় খাদ্য রাখা উচিত।
রসুন
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার এর তালিকায় আরও একটি খাবার রয়েছে সেটি হচ্ছে রসুন। রসুন স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোরেন দুই ধরনের হরমোনই বাড়াতে রসুন দারুণ কার্যকারী। এই পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাণীদের উপর গবেষণা করে পাওয়া গেছে রসুন রক্তে ইস্ট্রোজেনের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। তাই আপনার যদি শরীরে ইস্ট্রোজেনের অভাব থাকে তাহলে দৈনিক কয়েকটি রসুনের কোয়া খাওয়া শুরু করুন।
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার ছোলা
ছোলা আমিষের বিকল্প পদ্ধতি হতে পারে। হিসেব করে দেখা গেছে প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় যেটুকু আমিষ থাকে মাছ ও মাংসেও প্রায় ততটুকুই পাওয়া যায়। তাছাড়া ছোলা সরাসরি ইস্ট্রোজেন হরমোন তৈরিতে অংশ নেয়। গবেষণা করে পাওয়া গেছে যে দৈনিক ১০০ গ্রাম ছোলা খেলে শরীরে উল্লেখযোগ্য হারে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বাড়ে।
তাই শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোন বাড়াতে স্বল্পব্যয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে ছোলার ব্যবহার। অবশ্য শুধু ছোলা নয়। ছোলার পাশপাশি প্রোটিনযুক্ত উপাদান রাজমা ও মটরশুঁটি ও দারুন কার্যকারী। অনেকে ছোলার ডালও খেয়ে থাকেন। যা হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে দারুণ কার্যকারী।
বাদাম
কাজু, কাঠবাদাম, আমন্ড, আখরোট ও অন্যান্য যত রকমের বাদাম রয়েছে প্রায়ই সব বাদামের মধ্যেই রয়েছে লিনোলেইক অ্যাসিড, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ফাইটোইস্ট্রোজেন হরমোন। উক্ত উপাদানগুলো শরীরের হরমোন নিঃসরণ বাড়িয়ে ভারসাম্য বজায় রাখে। ফাইটোইস্ট্রোজেন হরমোন উপাদানটি নারীদের স্তন গঠনে ও নারীদের প্রজনন ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
সি ফুড
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার এর তালিকায় সি ফুড না থাকলেই নয়। যতরকমের সামুদ্রিক মাছ রয়েছে প্রায়ই সব মাছেই প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া যায়। এই উপাদানটি মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোন বাড়াতে ও মহিলাদের শরীরের বিভিন্ন টিস্যু গঠনে সাহায্য করে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ইস্ট্রোজেন হরমান বাড়াতে চাইলে সি ফুড খেতে পারেন।
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার তিসি
তিসিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, তেল ও কার্বোহাইড্রেট। যা মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনে উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মেনোপজ শুর হওয়ার পরে মহিলাদের স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তিসিতে থাকা ফাইটো ইস্ট্রোজেন নামক এক ধরনের যৌগ মহিলাদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমিয়ে দেয়।
সয়াবিন
সয়াবিন, টেম্পেহ ও সয়া খেলে স্বাভাবিকভাবে শরীরে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে তা আমরা সবাই জানি। এরা পাশাপাশি সয়াবিন উল্লেখযোগ্য হারে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়ক। আপনার নিঃসন্দেহে এই খাবারগুলো খেতে পারেন। এগুলো খেলে প্রোটিন ও ইস্ট্রোজেন হরমোন দুটোরই অভাব শরীর থেকে দূর হবে।
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার তিল
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার হিসেবে তিলের গুরুত্ব অনেক। শরীরে পুষ্টির অভাব দূর করতে তিল ব্যবহার করা হয় তা আজ প্রমাণিত সত্য। তবে শুধু পুষ্টির অভাব নয় বরং ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদনেও তিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মেনোপজ শুরু হওয়ার পরে মহিলাদের শরীরে অস্বাভাবিকভাবে ইস্ট্রোজেন হরমোন কমতে শুরু করে। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তিল খেলে মেনোপজ শুরু হওয়া মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রিত থাকে।
ইস্ট্রোজেন হরমোন কম হওয়ার প্রভাবে মহিলাদের সাদা স্রাবের মতো সমস্যা হতে দেখা যায়। মহিলাদের সাদাস্রাব এর ঘরোয়া ঔষধ অনেক রয়েছে। কোন রকম ঔষধের সহায়তা না নিয়ে উক্ত উপায়গুলো ব্যবহার করেই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
সবুজ শাক সবজি ও ফলমূল
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাক সবজি রাখা উচিত। সবুজ শাক সবজি যেমন- গাজর, পালংশাক ও টমেটোর মতো সবজিগুলো শরীরে হরমোনের তারতম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। গাজরে ইস্ট্রোজেন সরাসরি উপস্থিত থাকে। যা স্তনদুগ্ধ উৎপাদনে সাহায্য করে। উক্ত কাজগুলো ছাড়াও সবুজ শাক-সবজি ফ্যাট টিস্যু গঠন ও স্তন গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে গেলে কি কি অসুবিধা হয়ে থাকে?
উত্তর: ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে গেলে যোনি শুকিয়ে যাওয়া, মিলনের সময় যন্ত্রণা, মূত্রনালিতে সংক্রমণ, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, স্তন নরম, মাথা ব্যথা কিংবা মাথা ঘুরানোর মতো সমস্যা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন: ইস্ট্রোজেন হরমোন কি কাজ করে?
উত্তর: ইস্ট্রোজেন হরমোন নারীদের শরীরের ঋতুস্রাব, গর্ভধারণ, স্তন গঠন, দুগ্ধ উৎপাদন এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এবং পুরুষদের শরীরে হাড় ও হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
প্রশ্ন: ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে কি কি সমস্যা হয়?
উত্তর: ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে গেলে স্তনে ফোলা ও ব্যথাভাব, মুড ওঠানামা, স্তনে ফিব্রোসিস্টিক লাম্প, চুল ঝরা, ওজন বাড়তে থাকা, অনিয়মিত পিরিয়ড, সারাক্ষণ ক্লান্ত লাগা এর মতো সমস্যা হয়ে থাকে।
শেষ কথা
ইস্ট্রোজেন হরমোন যুক্ত খাবার ও সেগুলো শরীরের মধ্যে কীভাবে ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদনে কাজ করে তা এতক্ষণ আপনাদের সাথে আলোচনা করলাম। ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা নারীদের শরীরে উঠানামা করে। তবে, বেশীরভাগ নারীর ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোন কম হওয়ার সমস্যাটি লক্ষ্য করা যায়। সেসব মহিলারা তখন ঔষধের আশ্রয় নেয়। আপনারা উক্ত খাদ্যগুলো নিয়মিত খেলে ঔধষের আশ্রয় নিতে হবে না।
Discussion about this post