বর্তমান অনলাইন পণ্য বিপণন ব্যবস্থায় ই-কমার্স একটি বিপ্লবের নাম। প্রচলিত পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ধারণাকে বদলে দিয়ে নতুন একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এই ই-কমার্স পদ্ধতি। তাই ডিজিটাল ব্যবসা বাণিজ্যে ই-কমার্সের ভূমিকা উল্লেখ না করলেই নয়।
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের গতপর্বে আমরা শিখেছি কিভাবে প্রয়োজনীয় নীতিমালা অনুসরণ করে একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে হয়। দ্বিতীয় পর্বে আমরা জানার চেষ্টা করবো ই-কমার্স ওয়েবসাইটের এসইও এর বিষয়টি।
ই-কমার্স ওয়েবসাইট এসইও করা
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেই সাথে সাথে আপনি কাঙ্খিত ট্রাফিক পাবেন না। তা সে যেকোন ওয়েবসাইটই হোক। আর বিষয়টি যদি হয় ই-কমার্সের ক্ষেত্রে, তাহলে তো এসইও’র ব্যপারটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি অনলাইন ব্যবসায়ের জন্যই ই-কমার্স এসইও করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ, আপনি এসইও না করলে ওয়েবসাইটের ভিজিটর হারাবেন, পাশাপাশি আপনি সেল করা থেকে বঞ্চিত হবেন।
কোর্সটিকায় আজকের এই আর্টিকেলটি আমরা মূলত তাদের জন্য লিখছি, যারা নতুন ওয়েবসাইট খুলেছেন কিংবা আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ভালো ফলাফল দেখতে চান।
কেন ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য এসইও প্রয়োজন?
একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৪৪% গ্রাহক তাদের অনলাইন শপিং এর প্রক্রিয়া শুরু করে গুগলে সার্চ করার মধ্যমে। অনলাইনে কোন কিছু ক্রয় করার আগে তারা গুগলে নির্দিষ্ট পণ্য সম্পর্কে খোঁজ নেয়। একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের মোট ট্রাফিকের ৩৭.৫% ট্রাফিকই আসে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে।
আর পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ২৩.৬% অর্ডারই আসে অরগানিক সার্চ ট্রাফিকদের মাধ্যমে। সুতরাং এটি আর বলার অপেক্ষা রাখে না, আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইটের জন্য এসইও ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাই কাঙ্খিত সেল পেতে ওয়েবসাইট তৈরি এবং প্রোডাক্ট আপলোডের পরই আপনার উচিত হবে ওয়েবসাইটের এসইও এর বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করা।
ই-কমার্স কীওয়ার্ড রিসার্চ
প্রত্যেকটা এসইও ক্যাম্পেইনের ভিত্তি হচ্ছে কীওয়ার্ড রিসার্চ। কিওয়ার্ড রিসার্চের উপর ভিত্তি করে আপনি ওয়েবসাইটের প্রতিটি বিষয়কে সাজাতে পারেন এবং পরবর্তী কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করতে পারেন। একটি ইকমার্স ওয়েবসাইটে মূলত ৬ টি ধাপে কীওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয়।
১. ওয়েবসাইটের সবগুলো পেজের একটা তালিকা তৈরি করা।
২. প্রতিটি পেজে কতগুলো কীওয়ার্ড থাকতে পারে এর সম্ভাব্য একটি তালিকা তৈরি করা।
৩. কীওয়ার্ড রিসার্চ টুলগুলো ব্যবহার করা এবং এর মাধ্যমে কীওয়ার্ডের মাসিক সার্চ ভলিউম ও কীওয়ার্ডের অন্যান্য কম্পিটিশন খুঁজে বের করা।
৪. প্রথম দিকে সার্চ ভলিউম বেশি কিন্ত কম্পিটিশন কম এমন কীওয়ার্ড নিয়ে কাজ শুরু করা।
৫. লং টেইল কীওয়ার্ড ব্যবহার করা অর্থাৎ যে কীওয়ার্ডগুলো ৪ থেকে ৬ ওয়ার্ডের হয়। লং টেইল কীওয়ার্ডের কম্পিটিটর সাধারণত কম থাকে। কিন্তু প্রকৃত প্রোডাক্ট ভিজিটরদের খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
৬. কীওয়ার্ড প্রয়োগের ক্ষেত্রে গুগলের গাইডলাইন মেনে চলা এবং Keyword Golden Ratio – KGR পদ্ধতি মেনে চলা।
বিভিন্ন কীওয়ার্ড রিসার্চ টুল
ই-কমার্স এসইও করার জন্য বেশ কিছু ফ্রি এবং পেইড কীওয়ার্ড রিসার্চ টুল আছে। যা ব্যবহার করে আপনি সহজেই একটি গুছানো কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে পারবেন। অনেক সময় বিভিন্ন টুল থকে ভিন্ন ভিন্ন রেজাল্ট পাবেন। তবে বেস্ট প্র্যাকটিস হচ্ছে আপনি যদি সবগুলোর সমন্বয়ে সবচেয়ে ভালো কিওয়ার্ড বেছে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে নিচে দেয়া টুলগুলো আপানকে যথেষ্ট সাহায্য করবে।
- Keyword Tool Dominator
- Ubersuggest
- Google Keyword Planner
- Moz – SEO Software for Smarter Marketing
- SEM Rush ইত্যাদি।
ই-কমার্স ওয়েবসাইটের অন পেজ এসইও
একটি ওয়েবসাইটের অন পেজ এসইও ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলি করে তোলে। পাশাপাশি ওয়েবসাইটকে ভিজটরদের কাছে ইউজার ফ্রেন্ডলি করে তোলে। এক কথায় অন পেজ এসইও হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন ও ইউজারদের কাছে গুছিয়ে তথ্য বা প্রোডাক্ট উপস্থাপন করার সামগ্রিক পদ্ধতি।
ওয়েবসাইট SEO কি? SEO এর প্রয়োজনীয়তা কি? জানুন এখান থেকে। পাশাপাশি ওয়েবসাইট এসইওর কিছু ভুল ও বিপজ্জনক প্রাকটিস দেখুন এখান থেকে। ১০ টি ধাপে ওয়েবসাইটের অন পেজ এসইও করা উচিত। চলুন জেনে নেই ধাপগুলো।
১. আপনার প্রোডাক্টের কীওয়ার্ড লিস্ট তৈরি করুন যা প্রতিটি প্রোডাক্টের অন পেজ এসইওতে ব্যবহার করতে হবে।
২. অন পেজ এসইও করার জন্য বিভিন্ন প্লাগিন ব্যবহার করুন। যেমন Yoast SEO, Rank Math বা All in one SEO ইত্যাদি।
৩. বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে এখন ভয়েস সার্চের পরিমাণ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ই-কমার্স প্রোডাক্টের জন্য প্রচুর ভয়েজ সার্চ হচ্ছে। তাই এসব ভয়েস সার্চ কিওয়ার্ড অন পেজ এসইওতে যুক্ত করতে হবে।
৪. প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশন গুছিয়ে লিখুন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে এসইও এক্সপার্টরা প্রোডাক্ট ডেসক্রিপশনে “Lowest Price” “Best Product” “Free Delivery” বা কোন প্রমোশনাল শব্দ ব্যবহার করেন। ফলে নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড ছাড়াও বেশ কিছু কীওয়ার্ড ওয়েবসাইট র্যাংক করে।
৫. ইমেজ ও ভিডিও পোস্ট করার ক্ষেত্রে ছোট JPG ইমেজ ও MP4 ভিডিও ব্যবহার করুন। আপনার পেজের ইমেজ ও ভিডিও সাইজ যত ছোট হবে তত দ্রুত ওয়েবসাইট লোড হবে। তাই ফাইল অপটিমাইজেশনের বিষয়টি লক্ষ্য রাখুন।
৬. প্রোডাক্ট পোস্টের সাথে রিলেটেড প্রোডাক্ট সাজেশন যেন থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এতে করে বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ার সম্ভবনা থাকে। সেক্ষত্রে ইন্টারনার লিংকিং যথাযথভাবে করতে হবে।
৭. প্রোডাক্ট টাইটেল ও মেটা ট্যাগ যত সম্ভব ছোট কিন্তু অর্থবোধক হতে হবে।
৮. পেজে অবশ্যই H1, H2, H3 হেডিং ট্যাগ ব্যবহার করতে হবে। এই এলিমেন্টগুলো সার্চ ইঞ্জিন ফ্রেন্ডলী।
৯. ওয়েবসাইটের যেন ভালো রিভিও থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে ওয়েবসাইটের রিভিউ ভালো সেই ওয়েবসাইটে তুলনামূলক বেশি ভিজিটর আসে।
১০. ইউনিক ও মানসম্পন্ন কন্টেন্ট লিখুন এবং কনটেন্টের অন পেজ এসইও করুন। অবশ্যই র্যাংক পেতে হলে কপি কনটেন্ট পরিহার করতে হবে।
ই-কর্মাস ব্যবস্থাপনার পরবর্তী বিষয়গুলো এই লেখাটির তৃতীয় পর্বে শেয়ার করা হয়েছে।
►► ই-কমার্সের সবগুলো পর্ব দেখুন এখানে: প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব এবং তৃতীয় পর্ব।
প্রিয় পাঠক, কোর্সটিকায় আপনি কোন বিষয়ে লেখা চান, তা জানিয়ে নিচে কমেন্ট করুন। ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট এবং ফ্রিল্যান্সিং শিখতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।
Discussion about this post