অর্থনীতি ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কোনো রাজনৈতিক দল নয়। এদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকে না। এরা সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থকে যথাযথভাবে আদায় করতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে। শিক্ষক সমিতি, বণিকসংঘ, শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্যাংক কর্মচারী ফেডারেশন, সুশীল সমাজ প্রভৃতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ।
অর্থনীতি ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১: ‘অ’ দেশে অনেক গুলো তেলের বৃহৎ খনি আবিষ্কৃত হওয়ায় বিদেশি তেল উত্তোলনকারী কিছু কোম্পানি ঐ দেশের সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তেল উত্তোলন করে। এ কার্যক্রমে সরকারি তেল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানও যুক্ত হয়। এসব কাজে দেশি-বিদেশি প্রচুর লোক নিয়োজিত হওয়ায় মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়। দেশে ব্যাংক বিমাসহ নানা রকম আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিকশিত হয়। কিন্তু তেল ছাড়া অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে সেভাবে বিকশিত না হওয়ায় ব্যাংকে অলস টাকা জমার পরিমাণ বাড়তে থাকে। অথচ জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় দেশীয় কৃষি, শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্যে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে এমনটি হতো না।
ক. সঞ্চয় কী?
খ. চলতি মূলধনকে আবর্তিত মূলধনও বলা হয় কেন?
গ. ‘অ’ দেশে মূলধন গঠনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক ক্ষেত্রগুলো চিহিৃত করো।
ঘ. ‘অ’ দেশের সঞ্চয়কে মূলধনে রূপান্তরের উপায় নিয়ে তোমার মতামত উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
১ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষ তার আয়ের যে অংশ বর্তমান ভোগের জন্য ব্যয় না করে ভবিষ্যতে ভোগের জন্য রেখে দেয় তাই সঞ্চয়।
খ. উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বৃত্তের মতো আবর্তিত হয় বলে চলতি মূলধনকে আবর্তিত মূলধনও বলা হয়।
সাধারণত যেসব মূলধন একবার ব্যবহার করে নিঃশেষ হয়ে যায় বা একবার ব্যবহার করলেই অন্যরূপ ধারণ করে তাদেরকে চলতি মূলধন বলে। এ ধরনের মূলধন উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৃত্তের মতো আবর্তিত হয়। যেমন- ধান উৎপাদনে বীজ হলো মূলধন। এই মূলধন তথা বীজ দ্বারা ধান উৎপাদিত হলে তার কিছু অংশ আবার বীজ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এজন্যই চলতি মূলধনকে আবর্তিত মূলধনও বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত ‘অ’ দেশে মূলধন গঠনে যে ইতিবাচক ও নেতিবাচক ক্ষেত্রগুলো পরিলক্ষিত হয় তা নিচে চিহিৃত করা হলো:
মূলধন গঠন বলতে অধিক পরিমাণে মূলধনসামগ্রী উৎপাদন ও মূলধন বৃদ্ধি এর প্রক্রিয়াকে বোঝায়। যেমন- মানুষ তার অর্জিত আয়ের কিছু অংশ ভোগের জন্য ব্যয় না করে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে। আর এই সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগে রূপান্তরিত হলেই মূলধন গঠিত হয়। তাই যে দেশের সঞ্চয় গঠনের হার বেশি, সে দেশের মূলধন গঠনের হারও বেশি।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায় ‘অ’ দেশটিতে অনেক গুলো তেলের খনি আবিষ্কৃত হওয়ায় সরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ দ্বারা মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই আয় বৃদ্ধির ফলে মানুষের সঞ্চয়ের আগ্রহও বেড়েছে। এর ফলে দেশটিতে ব্যাংক বিমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিকশিত হয়েছে। যা মূলধন গঠনে ইতিবাচক দিক। কিন্তু তেল ছাড়া অন্যান্য উৎপাদন ক্ষেত্রে বিকশিত না হওয়ায় ব্যাংকে তারল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগে রূপান্তারিত হচ্ছে না তথা মূলধন গঠন ব্যাহত হচ্ছে।
ঘ. উল্লেখিত ‘অ’ দেশের সঞ্চয়কে মূলধনে রূপান্তরিত করার উপায় সম্পর্কিত আমার মতামত নিচে আলোচনা করা হলো: মূলত সঞ্চয় হলো মূলধন গঠনের প্রাথমিক পর্যায়। যা ‘অ’ দেশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন সঞ্চিত অর্থ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উৎপাদনক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবহার করতে পারলেই মূলধন গঠন বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ সঞ্চিত অর্থকে বিনিয়োগে রূপান্তরিত করতে পারলে তা মূলধন গঠনে বৃদ্ধি করবে।
‘অ’ দেশটির মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় সঞ্চয়ের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ব্যাংকে নগদ জমার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন সরকার দেশটিতে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করলে সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগে পরিণত হবে। জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলে মূলধন গঠন বৃদ্ধি পাবে এবং দেশ আরও উন্নত হবে।
আবার ‘অ’ দেশটিতে ব্যাংক ঋণের উপর সুদের হার কমানো হলে উদ্যোক্তারা বেশি ঋণ গ্রহণে আগ্রহী হবে। এতে দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং বলা যায় উপর্যক্ত উপায়গুলো গ্রহণ করে সঞ্চয়কে মূলধনে পরিণত করা যাবে।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২: ২০১৫ সালের জুলাই মাসে ‘ক’ দেশের মোট ১০,০০০ কোটি টাকার মূলধন ছিল। ২০১৬ সালের জুন মাসে দেশের মোট মূলধনের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ১৪,০০০ কোটিতে দাঁড়ালো। উক্ত সময়ে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৫০০ কোটি টাকা। এদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথে প্রধান বাধা মূলধনের সমস্যা। এক্ষেত্রে সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে মূলধন গঠনের পথে বিদ্যমান সমস্যা সমূহ যেমন- স্বল্প আয়, জানমালের নিরাপত্তাহীনতা, অপর্যাপ্ত ব্যাংকিং কাঠামো, অশিক্ষা ইত্যাদি সমাধানের প্রচেষ্টায় অব্যাহত হয়েছে।
ক. মূূলধন গঠন কী?
খ. অনুন্নত দেশে মূলধন গঠনের হার কম হয় কেন?
গ. মূলধন গঠন ও নিট মূলধন বৃদ্ধির পরিমাণ নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে সরকার বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিরাজমান সমস্যাসমূহ সমাধানে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে?
২ নং প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশ যে পরিমাণ মূলধনসামগ্রী বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় তাই হলো মূলধন গঠন।
খ. অনুন্নত দেশে জনগণের মাথাপিছু আয় স্বল্প হওয়ার কারণে মূলধন গঠন কম হয়।
সাধারণত অনুন্নত দেশে জনগণের আয় কম। এর ফলে সঞ্চয় কম হয়। সঞ্চয় কম বলে বিনিয়োগ কম যার কারণে মূলধন গঠনও কম। তাই বলা যায় অনুন্নত দেশে জনগণের আয় কম হওয়ায় মূলধন গঠনের হারও কম।
গ. একটি নির্দিষ্ট সময়ে একটি দেশ যে পরিমাণ মূলধনসামগ্রী বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় তাই হলো মূলধন গঠন। আর এই গঠিত মূলধন থেকে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি জনিত ব্যয় বাদ দিলে যা পাওয়া যায় তাই হলো নিট মূলধন বৃদ্ধির পরিমাণ তথা নিট মূলধন গঠন। উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, ‘ক’ দেশে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে মোট মূলধনের পরিমাণ ১০,০০০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালের জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪,০০০ কোটি টাকা। কাজেই এই এক বছরে মূলধন গঠনের পরিমাণ (১৪০০০ – ১০০০০) বা ৪০০০ কোটি টাকা। আবার উক্ত সময়ে মূলধনের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ ১৫০০ কোটি টাকা। সুতরাং নিট মূলধন বৃদ্ধির পরিমাণ (৪০০০ – ১৫০০) বা ২৫০০ কোটি টাকা।
ঘ. বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে বিরাজমান সমস্যাসমূহ সমাধানে সরকার নি¤েœাক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করতে পারে। মূলধন গঠনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্বল্প আয়। এই সমস্যা সমাধানে সরকার ‘ক’ দেশের সর্বত্র বিক্ষিপ্ত ও অব্যবহৃত থাকা সঞ্চয়সমূহ ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করে বিনিয়োগযোগ্য তহবিল গঠন করতে পারে।আবার জানমালের নিরাপত্তা না থাকলে সাধারণ মানুষ বিনিয়োগে উৎসাহী হয় না। তাই সরকারকে যথাযথ আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
‘ক’ দেশটিতে অপর্যাপ্ত ব্যাংকিংক সেবা পেীছে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলে সেখানে সঞ্চয় সংগ্রহীত হবে এবং মূলধন গঠন বৃদ্ধি পাবে।
উদ্দীপকে ‘ক’ দেশটিতে জনগণের শিক্ষার হার কম থাকায় সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারে না। তাই সরকার অশিক্ষিত জনগণের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ব্যধতামূলক শিক্ষাব্যবস্থা ও গণশিক্ষা চালু করতে পারে। এতে জনগণ শিক্ষিত হলে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ হবে ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন গঠন বৃদ্ধি পাবে।
◉ আরও দেখো: অর্থনীতি ১ম ও ২য় পত্র সকল অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির অর্থনীতি ১ম পত্র ৬ষ্ঠ অধ্যায় সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে মোট ৫টি প্রশ্ন উত্তর আমরা তোমাদের জন্য তৈরি করেছি। আশা করছি, এই প্রশ্নগুলো প্রাকটিস করলে তোমরা পরীক্ষার জন্য শতভাগ কমন পেয়ে যাবে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post