উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : সমাজে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সকলেই মানুষ। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের সমাজের তথা কথিত ভদ্র সম্প্রদায়ের মাঝে এই ঔচিত্যবোধ নেই। তারা কথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে সব সময় উপেক্ষা করে। অথচ এই ছোটলোক সম্প্রদায়ের ওপরই নির্ভর করে দেশের উন্নয়নের দশ আনা শক্তি। কাজী নজরুল মানুষে মানুষে এমন দূরত্ব চান না। তিনি চান ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি। বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে লেখকের এই আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নকেই বোঝানো হয়েছে।
উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. আমাদের দেশে জনশক্তি গঠন হতে পারছে না কেন?
উত্তর: আমাদের দেশে জনশক্তি গঠন হতে পারছে না, কারণ সমাজে শ্রেণি, ধর্ম ও জাতিগত বিভেদ এখনো প্রচলিত রয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলামের মতে, তথাকথিত ‘ছোটোলোক’ বা নিম্নবর্গের মানুষদের অবহেলা ও উপেক্ষা করার ফলে তারা নিজেদের শক্তি ও মূল্য বুঝতে পারে না, যা জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় বাধা। সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষরা তাদের দমন করায় তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। পাশাপাশি, শিক্ষিত ও প্রভাবশালী সমাজ সমস্যাটি উপলব্ধি করলেও বাস্তবে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না, বরং নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে আরও পিছিয়ে রাখছে। নজরুল মনে করেন, যদি এই অবহেলিত শক্তিকে জাগ্রত করা যায়, তাদের মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া যায়, তবে তারাই দেশ ও জাতির উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তিতে পরিণত হবে।
২. উপেক্ষিতরা নিজেদের ছোট মনে করে কেন?
উত্তর: ভদ্র সম্প্রদায়ের অবহেলার কারণে উপেক্ষিতরা নিজেদের ছোট মনে করে।
ভদ্র সম্প্রদায়ের লোকেরা সর্বদা ছোটলোকদের ওপর অত্যাচার করে। ছোটলোকেরা জন্ম থেকেই ঘৃণা, উপেক্ষা পেয়ে থাকে। ফলে সংকোচ জড়তা তাদের স্বভাবে গেঁথে যায়। জন্ম থেকে এই উপেক্ষার কারণে উপেক্ষিতরা নিজেদের ছোট মনে করে।
৩. আমাদের এত অধঃপতনের কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: লেখকের মতে তথাকথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের লোকদের প্রতি অবহেলার কারণেই আজ আমাদের এত অধঃপতন।
আমরা নিজেদের ভদ্র সম্প্রদায় দাবি করি। আত্মগৌরবের আভিজাত্যে নীচু শ্রেণির মানুষদের আমরা উপেক্ষা করি। অথচ তাদের হৃদয় কাচের মতো স্বচ্ছ। আমাদের উন্নতির দশ আনা শক্তিই নির্ভর করছে এসব উপেক্ষিত মানুষের ওপর। কিন্তু তাদের উপেক্ষা করে চলেছি আমরা ভদ্র সম্প্রদায়। আর এ কারণেই আজ আমাদের এত অধঃপতন বলে লেখক মনে করেন।
৪. দেশের অধিবাসী লইয়াই তো দেশ এবং ব্যক্তির সমষ্টিই তো জাতি—বাক্যটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: আলোচ্য বাক্যটিতে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন সকল মানুষের সমষ্টিতেই গণতন্ত্র গঠিত হয়।
‘উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন’ প্রবন্ধে লেখকের সাম্যবাদী চেতনার প্রতিফলন ঘটেছে। একটি দেশে ধনী-গরিব উঁচু-নীচু ভেদাভেদ থাকা ঠিক না। কেননা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়েই একটি দেশ গঠিত হয়। গণতন্ত্র সকলকে এক কাতারে দাঁড় করায় বিভেদের দেয়াল ভেঙে সকলকে একত্র করে গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের এই মূল কথাই প্রশ্নোক্ত বাক্যে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন।
৫. বোধন বাঁশিতে সুর দেয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে মানুষের মাঝে সাম্যবাদী চেতনার বোধ জাগিয়ে তোলার কথা বলা হয়েছে।
সমাজে ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র সকলেই মানুষ। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা ঠিক নয়। কিন্তু আমাদের সমাজের তথা কথিত ভদ্র সম্প্রদায়ের মাঝে এই ঔচিত্যবোধ নেই। তারা কথিত ছোটলোক সম্প্রদায়কে সব সময় উপেক্ষা করে। অথচ এই ছোটলোক সম্প্রদায়ের ওপরই নির্ভর করে দেশের উন্নয়নের দশ আনা শক্তি। কাজী নজরুল মানুষে মানুষে এমন দূরত্ব চান না। তিনি চান ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ একটি জাতি। বোধন বাঁশিতে সুর দেওয়া বলতে লেখকের এই আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নকেই বোঝানো হয়েছে।
উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর
৬. উপেক্ষিত শক্তি সরল মুক্ত মন নিয়েও কোনো কাজ করতে পারছে না কেন?
উত্তর: ভদ্র সম্প্রদায়ের অত্যাচারের কারণে উপেক্ষিত শক্তি সরল মুক্ত মন নিয়েও কোনো কাজ করতে পারছে না।
উপেক্ষিত শক্তির মানুষদের অন্তর কাচের মতো স্বচ্ছ। তবুও সমাজের ভদ্র সম্প্রদায় তাদের ছোটলোক বলে অত্যাচার করে। ফলে সংকোচ ও জড়তার কারণে তারা কোনো কাজ করতে পারে না।
৭. কারা দেশে যুগান্তর আনবে বলে কবি মনে করেন?
উত্তর: উপেক্ষিত শক্তিকে জাগিয়ে তুললে তারা দেশে যুগান্তর আনবে, অসাধ্য সাধন করবে বলে কবি মনে করেন । লেখক উপেক্ষিত শক্তিদের মহা আহবানে ডাকতে বলেছেন। যেমনি করে মহাত্মা গান্ধী ডেকেছেন। বুকভরা স্নেহ দিয়ে ডাকলে তারা সাড়া দেবেই। তাই উপেক্ষিত শক্তিতে বোধন করলে এরা দেশে যুগান্তর আনবে। অসাধ্য সাধন করবে।
৮. ‘বোধন-বাঁশি’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: ‘বোধন-বাঁশি’ বলতে বোধ জাগিয়ে তোলার বাঁশিকে বোঝানো হয়েছে
আমাদের সমাজে মানুষে মানুষে প্রচুর বৈষম্য রয়েছে। এ শ্রেণিবৈষম্যের কারণে আমরা অধঃপতিত। আমাদের কোনো উন্নতি নেই। কিন্তু উপেক্ষিত শক্তির জাগরণ ছাড়া কোনোভাবেই উন্নতি সম্ভব নয়। এ বোধ আমাদের ভদ্র সম্প্রদায়ের নেই। তাই তাদের মধ্যে বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য লেখক বোধন বাঁশিতে সুর দেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
৯. ‘আত্মার অধর্ম’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: আত্মার অধর্ম বলতে বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যকার হিংসা, বিদ্বেষমূলক কাজ করাকে বোঝানো হয়েছে আমাদের সমাজে মূলত দু’শ্রেণির লোকের বসবাস। এক শ্রেণি হলো তথাকথিত ভদ্রসমাজ, যারা ছোটলোকদের সব সময় হিংসা বিদ্বেষ করে থাকে। আরেক শ্রেণির লোক হলো ছোটলোক, যা ভদ্রসমাজের কাছ থেকে শোষিত হয়। লেখক ভদ্রসমাজের নীতি বহির্ভূত এ ধরনের গর্হিত কাজকে আত্মার অধর্ম বলেছেন।
১০. ‘ছোট লোকের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ।’—ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘ছোটলোকের অন্তর কাচের ন্যায় স্বচ্ছ’—উক্তিটি দ্বারা কাজী নজরুল ইসলাম কথিত ছোটলোকদের উদার দৃষ্টিভঙ্গির কথা বুঝিয়েছেন। সমগ্র বিশ্ব আজ দু’শ্রেণিতে বিভক্ত। শোষক ও শোষিত। কাজী নজরুল ইসলাম সারা জীবন এই শোষিত শ্রেণির জাগরণ প্রত্যাশা করেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধে কথিত ছোটলোক সম্প্রদায়ের সরল স্বচ্ছ মনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি তাদের মনকে কাচের ন্যায় স্বচ্ছ অন্তর বলেছেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post