উমর ফারুক কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের খলিফা হজরত উমর (রা) রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন মদিনার মসজিদে একটি খেজুরপাতার চাটাইয়ে বসে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা এখানে এসেই তাঁর সাথে দেখা করতেন।
এ সাধারণ ধূলি ধূসরিত চাটাইয়ে বসে তিনি রাজকার্য পরিচালনা করতেন বলে একেই বলা হয়েছে ধুলার তখত। মূলত এর মাধ্যমে হজরত উমর (রা)-এর অতি সাধারণ জীবনযাপনের মাধ্যমে অর্ধেক পৃথিবী শাসনের কৃতিত্ব চিত্রিত হয়েছে।
উমর ফারুক কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. হজরত উমরকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ বলার কারণ কী?
উত্তর: হজরত উমরকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ (মুমিনদের নেতা) বলা হয়েছে কারণ তিনি ইসলামের ন্যায় ও নীতি অনুযায়ী শাসন করেছেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার শাসন ছিল অত্যন্ত কঠোর, তবে ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক। তিনি একজন সৎ, মিতব্যয়ী নেতা ছিলেন এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য সঠিক পথপ্রদর্শক ছিলেন। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে ইসলামী সমাজ সুসংহত ও শান্তিপূর্ণ ছিল, এবং তার এই অসামান্য নেতৃত্বগুণের কারণেই তাকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ বলা হয়।
২. “সাইমুম-ঝড়ে পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’ নুয়ে”—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: উক্তিটির মাধ্যমে কবি হজরত উমর (রা)-এর চরিত্রের দৃঢ়তা বোঝাতে চেয়েছেন।
হজরত উমর (রা) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে অর্ধেক পৃথিবী শাসন করতেন, কিন্তু তাঁর জীবনে বিলাসিতার কোনো ছাপই ছিল না। তাঁর প্রাসাদ ও সিংহাসন দুটোই খেজুরপাতার তৈরি ছিল। অনেকবার ঝড়ে তার কুটির ধ্বংস হয়েছে, কিন্তু তিনি কখনোই তার নীতি ও আদর্শ থেকে সরে আসেননি। কোনো প্রলোভন, ঐশ্বর্য তাঁর সততাকে টলাতে পারেনি। তিনি এসব বাধা-বিপত্তি, ঝড়-ঝাপটাকে অগ্রাহ্য করে চারিত্রিক দৃঢ়তা সমুন্নত রেখেছেন।
৩. ইসলামকে পরশমানিক বলা হয় কেন?
উত্তর: ‘উমর ফারুক’ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ‘পরশমানিক’ বা পরশপাথর বলে উল্লেখ করেছেন।
পরশপাথর ও ইসলামের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য বিচারেই মূলত কবি তাদের মাঝে সাদৃশ্য তুলে ধরেছেন। পরশপাথরের সংস্পর্শে এলে যেকোনো বস্তুই খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। অনুরূপভাবে ইসলামও মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। ইসলাম গ্রহণের ফলে মানুষ সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। তাই কবি পরশপাথর ও ইসলামের মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাননি বিধায় ইসলামকে ‘পরশমানিক’ বলে অভিহিত করেছেন।
৪. আবু শাহমাকে হজরত উমর কেন বেত্রাঘাত করছিলেন, তার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আবু শাহমাকে হজরত উমর (রা) মদ্যপানের অপরাধে বেত্রাঘাত করেছিলেন।
হজরত উমর (রা) ছিলেন ন্যায়বান শাসক। তাঁর কাছে আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। তিনি আইনের অসম্মান করেননি কখনো। তিনি একদিকে ছিলেন কোমল, অপরদিকে আইনের ক্ষেত্রে ছিলেন খুবই কঠোর। তাই তিনি নিজ পুত্র আবু শাহমাকে মদ পান করার অভিযোগে বেত্রাঘাত করেছিলেন। ক্ষমা চাওয়ার পরেও তিনি তার পুত্রকে ক্ষমা করেননি। বেত্রাঘাতের ফলে আবু শাহমার মৃত্যু হয়েছিল।
৫. হজরত উমর (রা)-এর প্রাসাদ খসে গিয়েছিল কেন?
উত্তর: জীর্ণ ও পুরানো হওয়ার কারণে প্রাসাদ খসে গিয়েছিল।
‘উমর ফারুক’ কবিতায় হজরত উমর (রা)-এর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। এখানে হজরত উমর অর্ধেক পৃথিবীর শাসক হয়েও খেজুরপাতার কুটিরে বাস করতেন। মরুভূমির সাইমুম ঝড়ে তার আশ্রয়ের কুটিরটি উড়ে গেছে। তারপরও হজরত উমরের মনোবল ভাঙেনি। আদর্শ ও মহানুভবতাকে গেঁথে রেখেছিলেন আজীবন।
৬. ‘অর্ধ পৃথিবী করেছ শাসন ধুলার তখতে বসি’—এ পঙ্ক্তির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর: আলোচ্য উক্তির মাধ্যমে কবি হজরত উমর (রা)-এর সাধারণ জীবনযাপনকে নির্দেশ করেছেন।
বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের খলিফা হজরত উমর (রা) রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন মদিনার মসজিদে একটি খেজুরপাতার চাটাইয়ে বসে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা এখানে এসেই তাঁর সাথে দেখা করতেন। এ সাধারণ ধূলি ধূসরিত চাটাইয়ে বসে তিনি রাজকার্য পরিচালনা করতেন বলে একেই বলা হয়েছে ধুলার তখত। মূলত এর মাধ্যমে হজরত উমর (রা)-এর অতি সাধারণ জীবনযাপনের মাধ্যমে অর্ধেক পৃথিবী শাসনের কৃতিত্ব চিত্রিত হয়েছে।
৭. ‘পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’ নুয়ে’—এ চরণ দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘পড়েছে কুটির, তুমি পড়নি ক’ নুয়ে’—এ চরণ দ্বারা কবি হজরত উমর (রা)-এর দৃঢ় মনোবলকে বুঝিয়েছেন।
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা) বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের অধিপতি হয়েও বাস করতেন খেজুরপাতায় ছাওয়া পাথরের দেয়াল ঘেরা সামান্য গৃহে। মরুভূমির শুকনো উত্তপ্ত শ্বাসরোধকারী সাইমুম ঝড়ে তার আশ্রয়ের খেজুরপাতার প্রাসাদটি উড়ে গেছে। কিন্তু তার মনোবল এতটুকু ভাঙেনি। তিনি ইচ্ছে করলেই বিশাল অট্টালিকায় বাস করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা করেননি। সৎ পথে তিনি ছিলেন অটল, অবিচল।
৮. ইসলামকে ‘পরশমানিক’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর: ‘উমর ফারুক’ কবিতায় কবি নজরুল ইসলাম পবিত্র ইসলাম ধর্মকে ‘পরশমানিক’ বা পরশপাথর বলে উল্লেখ করেছেন।
পরশপাথর ও ইসলামের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য বিচারেই মূলত কবি তাদের মাঝে সাদৃশ্য তুলে ধরেছেন। পরশপাথরের সংস্পর্শে এলে যে-কোনো বস্তুই খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। অনুরূপভাবে ইসলামও মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দেয়। ইসলাম গ্রহণের ফলে মানুষ সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। কবি পরশপাথর ও ইসলামের মাঝে কোনো পার্থক্য খুঁজে পাননি। তাই ইসলামকে ‘পরশমানিক’ বলে অভিহিত করেছেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে উমর ফারুক কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post