উমর ফারুক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা)-এর জীবনাদর্শ, চরিত্র-মাহাত্ম্য, মানবিকতা এবং সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। খলিফা উমর (রা) ছিলেন একজন মহৎ ব্যক্তিত্ব। তাঁর চরিত্রে একাধারে বীরত্ব, কোমলতা, নিষ্ঠা এবং সাম্যবাদী আদর্শের অনন্য সমন্বয় ঘটেছিল। বিশাল মুসলিম রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হয়েও তিনি অতি সহজ, সরল, অনাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন।
উমর ফারুক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
কাজী পাড়ার চেয়ারম্যান আব্বাস আলী। একবার তার নির্বাচনি এলাকার অধিকাংশ মানুষ ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু বানভাসি মানুষ একদিনও চেয়ারম্যান সাহেবের দেখা পেলেন না। কারণ তিনি নাকি ঢাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত আছেন। অসহায় লোকগুলো খোলা আকাশের নিচে বোবা চাউনি মেলে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটায়। বন্যা শেষে একদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেয়ারম্যানের বাগানবাড়ি তল্লাশি করে ত্রাণের প্রচুর টিন ও খাদ্যসামগ্রী উদ্ধার করে।
ক. ‘উমর ফারুক’ কবিতা কোন কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে?
খ. হজরত উমরকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ বলার কারণ কী?
গ. চেয়ারম্যান আব্বাস আলী যেদিক থেকে হজরত উমরের সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. আব্বাস আলী চেয়ারম্যানকে উমরের মতো আদর্শ মানুষ হতে হলে কী কী করতে হবে ‘উমর ফারুক’ কবিতার আলোকে ব্যাখ্যা কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘উমর ফারুক’ কবিতা কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘জিঞ্জীর’ কাব্য থেকে সংকলিত হয়েছে।
খ. হজরত উমরকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ (মুমিনদের নেতা) বলা হয়েছে কারণ তিনি ইসলামের ন্যায় ও নীতি অনুযায়ী শাসন করেছেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার শাসন ছিল অত্যন্ত কঠোর, তবে ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক। তিনি একজন সৎ, মিতব্যয়ী নেতা ছিলেন এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জন্য সঠিক পথপ্রদর্শক ছিলেন। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে ইসলামী সমাজ সুসংহত ও শান্তিপূর্ণ ছিল, এবং তার এই অসামান্য নেতৃত্বগুণের কারণেই তাকে ‘আমিরুল মুমেনিন’ বলা হয়।
গ. চেয়ারম্যান আব্বাস আলী এবং হজরত উমরের মধ্যে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তাঁদের শাসন ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধের মধ্যে দেখা যায়। চেয়ারম্যান আব্বাস আলী যখন তাঁর নির্বাচনী এলাকার বন্যায় আক্রান্ত মানুষের সাহায্য করার জন্য কিছুই করেননি, তখন হজরত উমর তাঁর দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত ত্যাগী এবং দায়িত্বশীল ছিলেন।
উদাহরণস্বরূপ, হজরত উমর যখন খলিফা ছিলেন, তখন তিনি নিজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে জনগণের কষ্ট দেখতে এবং তাঁদের সমস্যার সমাধান করতে প্রচেষ্টা চালাতেন। তিনি একবার মরুভূমির তপ্ত বালুতে উটের রশি ধরে একদম নিঃস্ব ভাবে ভ্রাম্যমাণ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, এবং এমনকি তাঁর পায়ে রক্ত ফোটার মতো অবস্থা হলেও তিনি তাঁর জনগণের পাশে থাকতে এক মুহূর্তও শিথিল হননি।
অন্যদিকে, চেয়ারম্যান আব্বাস আলী বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেও ঢাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকার অজুহাত দেখিয়ে তাঁর জনগণের দুর্ভোগে কোন সাহায্য করেননি। তাঁর এই আচরণ এক ধরনের অবহেলা এবং দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা। বন্যার পর যখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চেয়ারম্যানের বাগানবাড়ি তল্লাশি করে, তখন তারা প্রচুর ত্রাণ সামগ্রী উদ্ধার করে, যা ছিল জনগণের জন্য বরাদ্দ। এতে পরিষ্কার হয় যে, চেয়ারম্যান তার দায়িত্বের প্রতি ছিল উদাসীন এবং জনগণের প্রতি তাঁর কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না।
এটি স্পষ্ট যে, হজরত উমর ছিলেন জনগণের সত্যিকারের সেবক, যিনি ব্যক্তিগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন, যেখানে চেয়ারম্যান আব্বাস আলী ছিলেন একদম বিপরীত। উমর সেবা, সহানুভূতি এবং ন্যায়ের আদর্শ ছিলেন, যার ফলে তিনি জনগণের মাঝে এক অনন্য নেতৃত্বের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
ঘ. ‘উমর ফারুক’ কবিতার আলোকে আব্বাস আলী চেয়ারম্যানকে যদি উমরের মতো আদর্শ মানুষ হতে হয়, তবে তাঁকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী অর্জন করতে হবে।
প্রথমত, দায়িত্ববোধ এবং মানবতার প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। কবিতার মাধ্যমে আমরা দেখি, হজরত উমর কেবল নিজের পদমর্যাদা বা বিলাসিতার প্রতি আগ্রহী ছিলেন না, বরং জনগণের কল্যাণের জন্য তিনি সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছিলেন। যখন তাঁর জনগণ ক্ষুধার্ত বা বিপদগ্রস্ত ছিল, তখন তিনি নিজের আরাম বা নিরাপত্তার চিন্তা না করে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আব্বাস আলী চেয়ারম্যানকে যদি উমরের মতো আদর্শ মানুষ হতে হয়, তবে তাঁকে জনগণের সেবা করতে হবে, তাঁদের কষ্টের সময় পাশে দাঁড়াতে হবে এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে উদাসীনতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সততা এবং ন্যায়পরায়ণতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উমর তাঁর শাসনকালে কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি এবং সব ক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেছেন। তার শাসনকালে তিনি সর্বদা মানুষের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে চেয়েছেন। আব্বাস আলী যদি তাঁর পদে উমরের মতো হতে চান, তবে তাঁকে ত্রাণ সামগ্রী চুরি বা নিজের সুবিধার জন্য জনগণের অধিকার হরণের পরিবর্তে জনগণের জন্য কাজ করতে হবে এবং তাদের প্রতি সততা ও ন্যায়ের মনোভাব রাখতে হবে।
তৃতীয়ত, আত্মত্যাগ এবং সাধারণ মানুষের জন্য জীবনযাপন। উমর যেমন নিজের আরাম-আয়েশের কথা ভুলে গিয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করতেন, তেমনি আব্বাস আলীকেও তার ব্যক্তিগত সুখের চেয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে। কবিতায় উমরের জীবনধারা এমনভাবে চিত্রিত হয়েছে যে, তিনি কখনো নিজের ভোগের জন্য কিছু চাননি, বরং জনগণের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
সবশেষে, সীমাবদ্ধতার প্রতি সচেতনতা ও দ্বিধাহীনতার মাঝে সাহস থাকতে হবে। উমরের মতো একজন নেতা সাহসিকতার সাথে জনগণের সমস্যা সমাধান করতেন, এবং কোনও ভয় বা বাধা তার সংকল্পে বাধা সৃষ্টি করতে পারত না। আব্বাস আলীকে উমরের আদর্শ অনুসরণ করতে হলে নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে, যখন তার জনগণের কল্যাণের কথা আসে।
এইসব গুণাবলী অর্জন করলে আব্বাস আলী চেয়ারম্যান উমরের মতো আদর্শ নেতা হতে পারেন, যারা মানুষের জন্য কাজ করে তাঁদের জীবনে প্রভাব ফেলেন।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে উমর ফারুক কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও তোমাদের পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য অতিরিক্ত বেশকিছু সৃজনশীল প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post