ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : আলাওলের ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতাটি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পদ্মাবতী’র ঋতু বর্ণন খ- থেকে সংক্ষেপিত আকারে সংকলিত। প্রকৃতির বিচিত্র রূপ অভিব্যক্ত হয় আবহাওয়া ও ষড়ঋতুর প্রভাবে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে যুগে যুগে মানুষ হয়েছে মুগ্ধ। মুগ্ধ হয়েছেন সংবেদনশীল কবিগণও। ঋতু বর্ণনা মধ্যযুগের কাব্যের এক স্বাভাবিক রীতি। কবি আলাওল এই ঋতু বর্ণনায় প্রকৃতির রূপবৈচিতত্র্যের সাথে মানব মনের সম্পর্ক ও প্রভাব তুলে ধরেছেন।
বসন্তের নবীন পত্রপুষ্প, মলয় সমীর, ভ্রমর গুঞ্জন ও কোকিলের কুহুতান; গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তপনের রৌদ্র ত্রাস ও ছায়ার গুরুত্ব; বর্ষার মেঘ গর্জন, অবিরল বৃষ্টিজলে স্নাত প্রকৃতি, একটানা দাদুরী শিখীনি রব; শরতের নির্মল আকাশ, ফুলের চামর দোলা, খঞ্জনার নাচ; শরৎ বিদায়ে হেমন্তে পুষ্পতুল্য তাম্বুলের সুখ এবং শীতের ত্রাসে ত্বরিত সূর্য ডুবে যাওয়া, রজনীতে সুখী দম্পতির চিত্তসুখ ইত্যাদি চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে কবিতাটিতে। ষড়ঋতুর বর্ণনার ভেতর দিয়ে কবি বাংলার প্রকৃতির রূপ-মাধুরী তুলে ধরেছেন। ষড়ঋতুর বৈচিত্র্য বাংলার নিসর্গ-রূপকে যে সমৃদ্ধ করেছে তা এ কাব্যাংশ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ।
ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন ১.
আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে।
ক. মল্লার কী?
খ. ‘রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে “ঋতু বর্ণন” কবিতার বসন্ত ঋতুর সাদৃশ্য আছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকটি “ঋতু বর্ণন” কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি”-মূল্যায়ন কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মল্লার হলো সংগীতের একটি রাগ; রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরে গাওয়া হয়।
খ. ‘রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণ’ বলতে গ্রীষ্মে সূর্য্যরে প্রখরতায় মানুষের ছায়াও চরণতলে আশ্রয় নেওয়ার বিষয়টি বোঝানো হয়েছে। ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় কবি আলাওল গ্রীষ্মের তাপদাহের কথা বলেছেন। এ সময় সূর্য্যরে প্রচ- তাপ থাকে। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের আগমনে চারদিক প্রচন্ড উত্তাপে ফেটে পড়ে। সূর্য তার সমস্ত রাগ নিয়ে যেন হাজির হয়। রৌদ্রের এই প্রখরতার জনজীবন অতীষ্ঠ হয়ে পড়ে। সূর্য্যরে কিরণ থাকে মাথার উপর। ফলে দুপুরে ছায়াও মানুষের সোজা পায়ের নিচ বরাবর যেন আশ্রয় নেয়। আর এ বিষয়টি বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে বসন্তের সৌন্দর্য্যরে কথা বর্ণিত হয়েছে যা ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার বসন্ত ঋতুর বর্ণনার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে। এই ঋতুতে চারিদিক ফুলে ফুলে শোভিত থাকে। দখিনা বাতাস প্রেমের দেবতার বার্তাবাহক হয়ে হাজির হয়। চারপাশের গাছপালায় নতুন পাতা এবং ফুলের সমারোহ থাকে। ফলে বনে বনে সৌন্দর্য উপভোগের সাড়া পড়ে যায়। উদ্দীপকে বসন্তের অপরূপ সৌন্দর্য্যরে কথা বলা হয়েছে। এই সময় জোছনা রাতে সবাই বনে বনে সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়েছে। বসন্তের মাতাল সমীরণ সবাইকে সৌন্দর্য উপভোগের বার্তা দিয়ে গিয়েছে। বসন্তের এই অপরূপ সৌন্দর্য ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায়ও আমরা দেখতে পাই। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের সজো ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার বসন্ত ঋতুর সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বাংলার ষড়ঋতুর অপরূপ সৌন্দর্য্যরে কথা বলা হলেও উদ্দীপকে কেবল বসন্ত ঋতুর কথা বর্ণিত হয়েছে বিধায় উদ্দীপকটি কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করেনি।
‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় ষড়ঋতুর রূপবৈচিত্র্য এবং এর সঙ্গে মানবমনের সম্পর্কের দিকটি বর্ণিত হয়েছে। বাংলার প্রকৃতিতে বসন্তে নবীন পত্র-পুষ্প, গ্রীষ্মের সূর্যতাপ, বর্ষার অবিরল জলধারা, শরতের নির্মল আকাশ, হেমন্তের পুষ্পতুল্য তাম্বুল, শীতের দীঘল রজনি যে পরিবর্তন সাধন করে তা কবি তাঁর কবিতায় সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রকৃতির এই রূপমাধুরী মানুষের মনেও প্রভাব ফেলে। প্রকৃতির মতোই মানুষের মনও একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে। উদ্দীপকে বসন্তের মাতাল সমীরণের কথা বলা হয়েছে। এই ঋতুতে জোছনা রাতে সবাই বনে সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়েছে। কেননা বসন্তের বন ফুলে ফুলে শোভিত থাকে। এই শোভা উপভোগ করার আনন্দ সবাই পেতে চায়।
বসন্তের এই অপরূপ সৌন্দর্য তুলে ধরার জন্যই উদ্দীপকটির অবতারণা করা হয়েছে। ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায়ও বসন্ত ঋতুর প্রায় একইরকম বর্ণনা ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে বসন্তের রূপ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় বসন্তের রূপ ছাড়াও বাংলার সব ঋতুর বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। কবিতায় গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত ঋতুর রূপমাধুরী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া ঋতুর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানবমনের সম্পর্কের দিকটিও আলোচ্য কবিতায় তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকে বসন্ত ঋতুর সৌন্দর্য ব্যতীত অন্যান্য দিক অনুপস্থিত। ফলে উদ্দীপকটি ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার সমগ্র ভাব ধারণ করতে পারেনি।
সৃজনশীল প্রশ্ন ২.
‘হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায়,
বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায়?’
কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি-
‘দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি?
বাতাবি নেবুর ফুল ফুটেছে কি? ফুটেছে কি আমের মুকুল?
দখিনা সমীর তার গন্ধে গন্ধে হয়েছে কি অধীর আকুল?’
[সূত্র: তাহারেই পড়ে মনে—সুফিয়া কামাল।]
ক. ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় তপন কখন অতি প্রচ- হয়?
খ. পাবন সময়ে চারপাশ জলে ভরে যায় কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার কোন দিকটির ইঙ্গিত রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র’- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৩. বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছয় ঋতুর আবর্তনে আবর্তিত হচ্ছে আমাদের ঋতুবৈচিত্র্য। প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। একেক ঋতু আমাদের জীবনে নিয়ে আসে একেক রকম পরিবর্তন। বাংলার প্রকৃতিতে এ পরিবর্তন নিয়ে আসে অফুরন্ত সৌন্দর্য। এ সৌন্দর্য্যে আমাদের যেমন চোখ জুড়িয়ে যায়, তেমনি আমাদের হৃদয় ভরে ওঠে আনন্দে। গ্রীষ্মের দাবদাহ, বর্ষার বৃষ্টি, পরতের আলোঝলমল নীল আকাশ, হেমন্তের ফসলে ভরা মাঠ, শীতের কুয়াশাঢাকা সকাল আর বসন্তের ফুলের সৌরভ প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিতত্র্যের ছোঁয়া। বর্ষপঞ্জির হিসেবে বাংলা বছরের বারো মাসের প্রতি দুই মাসে এক ঋতু হয়। প্রকৃতির এক অলৌকিক নিয়মে ঋতুর এই আসা-যাওয়া। ঋতু পরিক্রমায় বাংলাদেশে যে বৈচিত্র্যময় রূপ দেখা যায়, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তা দেখা যায় না।
ক. ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত?
খ. ‘রৌদ্র ত্রাসে রহে ছায়া চরণে সরণ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ. ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতায় প্রস্ফুটিত কোন বিষয়ের সঙ্গে উদ্দীপকটি সামঞ্জস্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘ঋতু পরিক্রমায় বাংলাদেশে যে বৈচিত্র্যময় রূপ দেখা যায়, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে তা দেখা যায় না।’- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা উদ্দীপক ও ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৪. রাশেদ শহরে থাকে। শহরে বড়ো বড়ো দালানকোঠার কারণে আকাশ দেখা যায় না। ছুটিতে গ্রামে গিয়ে এবার সে দেখে আকাশ ফকঝকে পরিষ্কার। মাঝেমধ্যে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে যাচ্ছে। রাশেদ অবাক হয়ে আকাশ দেখে। ভাবে এত সুন্দর পুত্র নীলাকাশ শহরে থাকলে দেখার সৌভাগ্য হতো না।
ক. তাম্বুল কী?
খ. ‘শীতের তরাসে রবি তুরিতে লুকাএ।’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার যে দিকের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘অতু বর্ণন’ কবিতায় বর্ণিত প্রকৃতির সঙ্গে মানবমনের সম্পর্কের দিকটি উন্মোচিত হয়েছে কি? তোমার মতামত দাও।
সৃজনশীল প্রশ্ন ৫.
এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে;
বাইরে হয়তো শিশির ঝড়ছে, কিংবা পাতা
কিংবা প্যাঁচার গান, সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।
ক. কীটকুলের রব কোন ঋতুতে বারবার ধধ্বনিত হয়?
খ. ‘অতি দীর্ঘ সুখ নিশি পলকে শোধা’- বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার শীত ঋতুর বৈসাদৃশ্য তুলে ধরো।
ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশটি ‘ঋতু বর্ণন’ কবিতার খণ্ডাংশ মাত্র।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।
◉ আরও দেখ: একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সকল গল্প-কবিতার CQ-MCQ সমাধান
শিক্ষার্থীরা, উপরে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা মূল বই থেকে ঋতু বর্ণন কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। একই সাথে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য আরও অতিরিক্ত ৪টি প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে। সবগুলো সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর পিডিএফ আকারে সংগ্রহের জন্য উপরে ‘ANSWER SHEET’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post