এই অক্ষরে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর : বাংলা অক্ষর আমাদের জাতীয় পরিচয়ের অবিনাশী সম্পদ। এ অক্ষর বা বর্ণমালা বাঙালির প্রাণের সঙ্গে, অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে। বর্ণমালা যেন অন্ প্রহরী হয়ে পাহারা দিয়ে রাখছে আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিকে। বাংলা অক্ষর বাঙালির মনকে আনন্দে ভরিয়ে রাখে, বাঙালিকে করে তোলে স্বপ্নমুখী ।
বাল অক্ষর বাঙালির চোখে দেখা দেয় মায়ের রূপ ধরে। কখনো তার চিত্তে বাজায় সুখের নূপুর। আমাদের অক্ষরসমূহ আপন-পর সকলকে কাছে টানে, দূর করে দেয় সব ভেদ ৷ এই অক্ষরের শক্তিতে প্রাণিত হয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাঙালি স্বাধীন করেছে তার মাতৃভূমি। আলোচ্য কবিতাটিতে এভাবেই বাংলা অক্ষর তথা বর্ণমালার প্রতি কবির অবারিত ভালোবাসা ও গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।
এই অক্ষরে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
সৃজনশীল—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
আর তাই তো কখনো আমি পড়তে দিই নি ধুলো, এই কালো
এ-কারে আ-কারে
তারা যেন ক্ষেতের সোনালি পাকা ধান থোকা থোকা
পড়ে থাকা জুঁই।
তোমার জন্য জয় করেছি একটি যুদ্ধ
একটি দেশের স্বাধীনতা।
ক. কঠিন পাথরে কী লেখা হয়?
খ. ‘এই অক্ষরে মাকে মনে পড়ে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ‘তারা’ ‘এই অক্ষরে’ কবিতার কিসের সাথে তুলনীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘উদ্দীপকের শেষ দুটি চরণে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবার্থ ফুটে উঠেছে।’ উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কঠিন পাথরে শিলালিপি লেখা হয়।
খ. কবি ‘এই অক্ষরে মাকে মনে পড়ে’ বলার মাধ্যমে বাংলা অক্ষরের প্রতি বাঙালির গভীর সম্পর্ক এবং ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বাংলা অক্ষর বাঙালির পরিচয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এবং মায়ের মতোই তা আমাদের চেতনা ও অস্তিত্বের অংশ। বাংলা ভাষা আমাদের আত্মবিশ্বাস ও ঐক্যকে শক্তিশালী করে এবং মনের অঙ্গনে সুর ও আনন্দ সৃষ্টি করে, যা মায়ের আশীর্বাদ ও স্নেহের মতোই আমাদের জীবনে প্রভাব ফেলে।
গ. উদ্দীপকের ‘তারা’ শব্দটি ‘এই অক্ষরে’ কবিতার বাংলা অক্ষরের সঙ্গে তুলনীয়, কারণ উভয়েই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী উপাদান হিসেবে প্রতীকিত হয়েছে।
উদ্দীপকে ‘তারা’ বলতে ক্ষেতের সোনালি পাকা ধান এবং জুঁই ফুলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা প্রকৃতির উজ্জ্বলতা এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। এই ধান এবং জুঁই ফুলগুলি একটি দেশের সমৃদ্ধি, স্বাধীনতা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে, যা মানুষের জীবনে শক্তি এবং আনন্দ আনে।
“এই অক্ষরে” কবিতায় বাংলা অক্ষর বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয়ের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। বাংলা অক্ষরগুলি বাঙালির চিত্তে আনন্দ, আশা, এবং ঐক্য সৃষ্টি করে, এবং এটি বাঙালি জাতির অস্তিত্ব এবং সংগ্রামের প্রতীক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, ‘তারা’ এবং ‘অক্ষর’ উভয়ই এমন একটি শক্তি হিসেবে কাজ করে যা মানুষের জীবনে প্রেরণা, সুখ, এবং উন্নতি আনে।
উদ্দীপকের ‘তারা’ এবং কবিতার বাংলা অক্ষর একে অপরের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে জাগ্রত করে এবং জাতিগত ঐক্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করে।
ঘ. ‘উদ্দীপকের শেষ দুটি চরণে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবার্থ ফুটে উঠেছে’—এই উক্তিটি যথার্থ।
প্রখ্যাত কবি মহাদেব সাহা তার ‘এই অক্ষরে’ কবিতায় বাংলা বর্ণমালা এবং ভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলা ভাষা বাঙালির প্রাণের ভাষা, এটি মায়ের ভাষা, এবং বাঙালির প্রথম শেখা বুলি। এই ভাষাকে বাঙালিরা মায়ের মতোই বুক দিয়ে আগলে রাখে, কারণ এটি তাদের শেকড়, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের প্রতীক। মাতৃভাষার মাধ্যমেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, এবং এই ভাষার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। উদ্দীপকেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলা ভাষার অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রথম ধাপ, যা বাঙালির মধ্যে অধিকার সচেতনতা এবং সংগ্রামের প্রেরণা জুগিয়েছে। এই আন্দোলনই ছিল বাঙালির জাতীয় সংগ্রামের সূচনা, যা তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে এবং তারা তাদের স্বাধীনতা অর্জন করে।
সুতরাং, বলা যায় যে, ‘এই অক্ষরে’ কবিতায় কবি বাংলা ভাষার অবদানের কথা তুলে ধরেছেন, যা উদ্দীপকের শেষ দুটি চরণের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
সৃজনশীল—২: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
বাঙালির প্রাণের সঙ্গে, অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে মাতৃভাষা বাংলা। এ ভাষার জন্য ১৯৫১ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। তাদের মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার পেয়েছি। এই ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছি। তাই সকল বাঙালির কাছে বাংলা ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।
ক. উদাস কবি কখন সুরের নূপুর বাজান?
খ. ‘অক্ষর’ বলতে কবি প্রকৃত অর্থে কী বোঝাতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? নিরূপণ কর।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার মূল উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে কি? বিশ্লেষণ কর।
২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদাস কবি সকাল-দুপুর সুরের নূপুর বাজান।
খ. ‘অক্ষর’ বলতে কবি প্রকৃত অর্থে মাতৃভাষা বাংলাকে বোঝাতে চেয়েছেন। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এ বাংলার সঙ্গে প্রত্যেক বাঙালির রয়েছে গভীর সম্পর্ক। কবি মহাদেব সাহা ‘এই অক্ষরে’ কবিতায় অক্ষর বলতে সীমিত অর্থে হরফ বা বর্ণ এবং বৃহৎ অর্থে অর্থাৎ প্রকৃত অর্থে মাতৃভাষাকে বুঝিয়েছেন।
গ. উদ্দীপকটিতে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার মাতৃভাষার মোহনীয় শক্তির দিকটি ফুটে উঠেছে। বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কবি মহাদেব সাহা। তার ‘এই অক্ষরে’ কবিতায় বাংলার অক্ষর তথা মাতৃভাষার গুরুত্বের দিকটি তুলে ধরেছেন। কারণ বাংলা বর্ণমালা বাঙালির প্রাণের সঙ্গে মিশে আছে। বর্ণমালা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে যেন পাহারা দিয়ে রেখেছে আমাদের এই প্রিয় জন্মভূমিকে।
উদ্দীপকটিতে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে যে সংগ্রাম করতে হয়েছে সেই বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ভাষার জন্য ১৯৫২ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দিয়েছে। ‘এই অক্ষরে’ কবিতার কবি বাংলা ভাষার এ গুরুত্বের দিকটি, এ ভাষার সংগ্রামমুখর দিকটি তুলে ধরেছেন। বাংলার মানুষ সংগ্রাম করে এ ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার কারণেই আজ এর সুফল ভোগ করছে। উদ্দীপকটিতেও আলোচ্য কবিতার সেই দিকটিই ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকটিতে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার মূল উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে। মহাদেব সাহার ‘এই অক্ষরে’ কবিতার মূল উদ্দেশ্য হলো মাতৃভাষার প্রতি শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ও সহজবোধ জাগরণ করা। কারণ এ ভাষার অক্ষর বাঙালির চিত্ত আনন্দে ভরিয়ে দেয়, বাঙালিকে করে তোলে স্বপ্নালু। বাংলার অক্ষর বাঙালির চোখে দেখা দেয় মায়ের রূপ ধরে।
উদ্দীপকটিতে বলা হয়েছে, মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা আমাদের মায়ের ভাষার অধিকার রক্ষা করতে পেরেছি। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষার সঙ্গে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের ভাষার তুলনা হয় না। এ ভাষার কারণেই ১৯৫২ সালে বাঙালিরা যুদ্ধ করেছে। বাংলা ভাষার এই মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য কবি ‘এই অক্ষরে’ কবিতাটি রচনা করেছেন এবং উদ্দীপকটির উদ্দেশ্যও তাই।
উল্লিখিত আলোচনায় বলা যায়, উদ্দীপকটিতে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার মূল উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে।
এই অক্ষরে কবিতা মহাদেব সাহা
সৃজনশীল—৩: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালিদের ইতিহাসে প্রথম স্বাধিকার আন্দোলন সংগঠিত হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার ঘোষণার বিরুদ্ধে বাংলার আপামর জনতা আন্দোলনে ফেটে পড়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’র দাবিতে আন্দোলনরত মানুষের মিছিলে পাকিস্তানি সরকারের পুলিশ বাহিনী গুলি করে হত্যা করে রফিক, জব্বার, বরকত, সালামসহ নাম না জানা আরো অনেককে।
ক. কার কাছ থেকে আমরা প্রথম মাতৃভাষা শিখি?
খ. ‘এই অক্ষর যেন নির্ঝর’—বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকটির সঙ্গে ‘এই অক্ষরে’ কবিতার সম্পর্ক নির্ণয় কর।
ঘ. ‘বাংলা ভাষা বাঙালির প্রাণের ভাষা’। উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘এই অক্ষরে’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।
সৃজনশীল—৪: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
“মাগো, ওরা বলে
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা,
তাই কি হয়?”
[কোনো এক মা’কে : আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ]
ক. রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল তাকে কী বলা হয়?
খ. ‘পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে মায়ের ভাষার জুড়ি নেই।’—ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কিশোর আর মায়ের কথোপকথন ‘এই অক্ষরে’ কবিতার কোন চরণের সাথে মিলে যায় তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. খোকার মনে সংশয় দানাবাঁধার কারণটি বিশ্লেষণ কর।
আরও দেখো—সপ্তম শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
সপ্তম শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের সপ্তবর্ণা বাংলা বই থেকে এই অক্ষরে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষা প্রস্তুতির জন্য ৪টি প্রশ্ন উত্তরসহ দেওয়া হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post