একটি সুখী গাছের গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর : শেল সিলভারস্টাইনের বিখ্যাত রচনা ‘দ্য গিভিং ট্রি’ গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ ‘একটি সুখী গাছের গল্প’। ছোটো একটি ছেলের বেড়ে ওঠা থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে একটি আমগাছের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে রচিত এই গল্প। বলা যায়, বিভিন্ন প্রয়োজনে ধাপে ধাপে গাছটির কাছ থেকে মানুষের একতরফা সুবিধা নেওয়ারই গল্প এটি। গাছটির সব কিছু নিয়েও মানুষটি সুখী হতে পারল না।
শেষপর্যন্ত ফিরে এল কাণ্ড কেটে নেওয়া আমগাছের সেই গুঁড়ির কাছেই। সেখানেই সে খুঁজে পেল প্রশান্তি। প্রকৃতি ধ্বংস করে আধুনিক সভ্যতা গড়ে তুলতে গিয়ে মানুষ যে নিজেকে নিঃস্ব ও অসহায় করে ফেলছে তারই প্রতীক গল্পের মানুষটি। সবকিছু বিলিয়ে দিয়ে আমগাছটির যে সুখের অনুভব- মানুষ হিসেবে অপরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার এই মহত্তম শিক্ষাও এ গল্পের বিশেষ দিক।
একটি সুখী গাছের গল্প সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
সৃজনশীল প্রশ্ন—১: নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:
১. তরুতলে বসি পান্থ শ্রান্তি করে দূর,
ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর।
বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙ্গে লয়,
তরু তবু অকাতরে কিছু নাহি কয়।
২. পরার্থে আপন সুখ দিয়া বিসর্জন,
তুমিও হও গো ধন্য তরুর মতন।
জড় ভেবে তাদের করিও না ভুল
তুলনায় বড় তারা মহত্ত্বে অতুল।
ক. শেল সিলভারস্টাইনের বিভিন্ন গ্রন্থ কতটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে?
খ. গাছটির সবকিছু নিয়েও মানুষটি সুখী না হওয়ার কারণ কী? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপক-১-এ ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ গল্পের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক-২-এর চেতনাই গল্পকারের অন্বিষ্ট ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ গল্পের আলোকে যৌক্তিকতা যাচাই কর।
১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. শেল সিলভারস্টাইনের বিভিন্ন গ্রন্থ প্রায় ত্রিশটি ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
খ. প্রশান্তির অভাবে গাছটির সবজি নিয়েও মানুষটি সুখী হতে পারেনি। মানুষ ব্যক্তিস্বার্থ এবং স্বেচ্ছাচারিতার জন্য অনেক সময় বৃক্ষ নিধন করে। যেমনটি করেছে পঠিত গল্পের ছেলেটি। সে নিজের অভাব পূরণের জন্য গাছটির আম, ডাল, কাঠ, মূল সবকিছু গ্রহণ করে। কিন্তু এগুলো তাকে শান্তি দিতে পারে না। করণ বৃক্ষের ছায়া বা সবুজ প্রকৃতি মানুষের প্রশান্তির অন্যতম উৎস। তাই মানসিক প্রশান্তির অভাবে গাছটির সবকিছু নিয়েও মানুষটি সুখী হৃতে পারেনি।
গ. উদ্দীপক-১-এ ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ গল্পের বৃক্ষের প্রতি মানুষের নিষ্ঠুরতার দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ বৃক্ষ। মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য মহান স্রষ্টা অগণিত বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। এ সকল বৃক্ষ থেকে আমরা অক্সিজেন, ছায়া, ফল-মূল, কাঠ-বাকল, পাতা, শিকড় ইত্যাদি গ্রহণ করে থাকি। কিন্তু মানুষ এতই অকৃষ্ণ ও নিষ্ঠুর যে সে বৃক্ষের প্রতি ভালোভাবে যত্ন নেয় না।
উদ্দীপকের ১ নং কবিতাংশে অকৃতজ্ঞ পথিকের পরিচয় পাওয়া যায়। সে তরুতলে বসে শ্রান্তি ও কষ্ট দূর করে, আবার ফল খেয়ে প্রচুর আনন্দও পায়। কিন্তু বিদায়ের সময় এই পথিকই আবার গাছের ডাল ভেঙে নিয়ে যায়। পঠিত গল্পেও দেখা যায়, ছোট ছেলেটি আমগাছটিকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু ভালোবাসলেও সে বৃক্ষের কাছে নিজের অভাব তুলে ধরে। বৃক্ষটি তার ফলা, মূল, কাঠ, কান্ড দিয়ে মানুষটির উপকার করে সুখ লাভ করে। লোকটি শুধু নিজের স্বার্থের কথাই চিন্তা করে বৃক্ষটিকে নিঃস্ব করেছে। আর এই অকৃতজ্ঞতার দিকটি উদ্দীপক ১-এ প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. উদ্দীপক-২-এর চেতনাই ‘একটি সুখী গাছের গল্প’ গল্পের লেখকের অন্বিষ্ট।
বৃক্ষ মানুষের পরম বন্ধু এবং অমূল্য সম্পদ। বৃক্ষ মানুষকে অক্সিজেন দান করে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। বৃক্ষের ছায়া মানুষকে প্রশান্তি দেয়। তাই বৃক্ষের মতো আমাদের মানবসেবায় জীবন উৎসর্গ করা উচিত।
উদ্দীপকের ২ নং কবিতাংশে মানুষকে বৃক্ষের মতো হতে বলা হয়েছে। বৃক্ষ তার ফল-ফুল, অক্সিজেন, কাঠ, লতাপাতা দিয়ে মানুষের সেবা করে। তাই মানুষের উচিত বৃক্ষকে জড় না ভেবে তাদের মহত্ত্বকে ধারণ করা। ‘একটি সুখী গাছের গল্প’, গল্পে মানবসেবায় বৃক্ষের অনন্য অবদান দেখানো হয়েছে। বৃক্ষের ফল, কাঠ, মূল-কাণ্ড ইত্যাদি নিলেও গাছটি মানুষটির প্রতি খুবই খুশি। কারণ আমগাছটি তার সব কিছু দিয়ে সেবা করে পরম সুখ লাভকরে।
পরে ছেলেটি সেই কাটা গাছের কাছে এসেই প্রশান্তি খুঁজে পায়। উপরের আলোচনায় দেখা যায়, ২ নং উদ্দীপক এবং পঠিত গল্পে মানবজীবনে বৃক্ষের অবদান ফুটে উঠেছে। মানুষের উচিত বৃক্ষের মতো, উদার, পরোপকারী এবং সেবাপরায়ণ হওয়া। আর বৃক্ষের প্রতি যত্ন এবং তার থেকে শিক্ষা নিলেই আমাদের পরিবেশ আরও সুন্দর ও শান্তিময় হয়ে উঠবে।
আরও দেখো—ষষ্ঠ শ্রেণির বাংলা গল্প-কবিতার সমাধান
ষষ্ঠ শ্রেণির প্রিয় শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের আনন্দপাঠ বই থেকে আদুভাই গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর আলোচনা করা হয়েছে। Answer Sheet অপশনে ক্লিক করে উত্তরগুলো সংগ্রহ করে নাও। এছাড়াও অধ্যায়ভিত্তিক অনুধাবনমূলক, জ্ঞানমূলক এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্নের সমাধান পেতে উপরে দেওয়া লিংকে ভিজিট করো।
Discussion about this post