একুশের গল্প অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর : তপু একজন স্বপ্নবান তরুণ ছিল। ডাক্তারি পাশ করার পর সে গ্রামে চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত। সেখানে গিয়ে একটি ছোট্ট ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখত সে। যেখানে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য ছোট্ট একটি ডিসপেনসারি ছাড়া তেমন কোনো জাঁকজমক থাকবে না। মাঝে মাঝেই নিজের এমন স্বপ্নের কথা বলত সে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
একুশের গল্প অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. তপু ফিরে আসায় সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল কেন?
উত্তর: তপু ফিরে আসার পর সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল কারণ চার বছর আগে হাইকোর্টের মোড়ে মিছিলে তপু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিল, আর তার মৃতদেহ মিলিটারিরা নিয়ে গিয়েছিল। কেউ ভাবেনি তপু আর কখনো ফিরে আসবে। অথচ এখন তার অবয়ব ও কঙ্কাল ফিরে এসেছে এমন অবস্থায়, যা দেখে সবাই ভীত ও বিস্মিত। বিশেষ করে তার কঙ্কালের কপালে গুলির গর্ত এবং বাঁ পায়ের হাড় ছোট থাকার বিষয়টি দেখে তারা নিশ্চিত হয় যে এটি তপুর দেহাবশেষ। এই অপ্রত্যাশিত ও অদ্ভুত ঘটনার জন্যই তারা শঙ্কিত ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল।
২. রাহাত তপু বলে আর্তনাদ করে উঠল কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে তপু লুটিয়ে পড়ায় রাহাত তপু বলে আর্তনাদ করে উঠল।
মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে গল্পকথক, রাহাত ও তপু মিছিলে যোগ দেয়। কিন্তু মিছিলটি হাইকোর্টের মোড় পৌঁছতেই পুলিশ সেই মিছিলের ওপর গুলি চালায়। এমতাবস্থায় কিছু বুঝে ওঠার আগেই তপুর কপালে গুলি লেগে একটি গর্তের সৃষ্টি হয় এবং প্ল্যাকার্ডসহ তপু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। চোখের সামনে সেই দৃশ্য দেখে হতবাক রাহাত তপু বলে আর্তনাদ করে উঠল।
৩. কঙ্কালটি যে তপুরই ছিল, সেটি গল্পকথকরা কীভাবে নিশ্চিত হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: শহিদ তপুর সাথে কঙ্কালটির বৈশিষ্ট্য তুলনা করে এটি যে তপুরই কঙ্কাল, গল্পকথকরা সেটি নিশ্চিত হয়।
ভাষা-আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে তপু শহিদ হয়। এসময় তার লাশ মিলিটারিরা তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনার বছর চারেক পর হঠাৎ করে তাদের কাছে একটি কঙ্কাল আসে। কঙ্কালটির কপালে ছিদ্র ছিল। তাছাড়া ওর বাঁ পায়ের হাড়টাও ইঞ্চি দুয়েক ছোটো ছিল। এসকল বৈশিষ্ট্য দেখে তারা নিশ্চিত হয় যে, এটি আসলে তপুরই কঙ্কাল।
৪. ‘দোহাই তোমার, বাড়ি চলো, মা কাঁদছেন।’—কে, কেন বলেছিল?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে বিপদের আশঙ্কা থেকে রেণু তপুর মিছিলে যাওয়া আটকানোর চেষ্টা করেছে।
গল্পকথক, রাহাত এবং তপু—এই তিন বন্ধু ছিল দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত। সংগত কারণেই তারা মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের বিষয়েও সোচ্চার ছিল। এ কারণে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তারা ভাষা-আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেয়। কিন্তু এসময় সেখানে ১৪৪ ধারা জারি ছিল, যাতে করে মিছিল সমাবেশে পুলিশের গুলি করার অনুমতি ছিল। বিপদের আশঙ্কায় তপুর স্ত্রী রেণু তাই তাকে আটকানোর চেষ্টা করে। এজন্য সে মায়ের কান্নার দোহাই দিয়ে তাকে বাড়ি ফিরতে অনুরোধ করে।
৫. ‘মাঝে মাঝে এমনি স্বপ্ন দেখায় অভ্যস্ত ছিল তপু’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: আলোচ্য উক্তিটিতে তপু যে একজন স্বপ্নবান তরুণ ছিল, সে কথাই বোঝানো হয়েছে।
তপু একজন স্বপ্নবান তরুণ ছিল। ডাক্তারি পাশ করার পর সে গ্রামে চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করত। সেখানে গিয়ে একটি ছোট্ট ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখত সে। যেখানে গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য ছোট্ট একটি ডিসপেনসারি ছাড়া তেমন কোনো জাঁকজমক থাকবে না। মাঝে মাঝেই নিজের এমন স্বপ্নের কথা বলত সে। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
একুশের গল্প সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর
৬. ‘দোহারা গড়ন, ছিপছিপে কটি, আপেল রংয়ের মেয়েটা প্রায়ই ওর সাথে দেখা করতে আসত এখানে’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে তপুর বউ রেণুর প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গল্পকথকদের মধ্যে তপু ছিল বয়সে সবথেকে ছোটো। কিন্তু তাদের মাঝেই সে-ই ছিল একমাত্র বিবাহিত ব্যক্তি। আর তার স্ত্রীর নাম রেণু। কলেজে ভর্তি হওয়ার বছরখানেক পরই তপু রেণুকে বিয়ে করে। রেণুর গায়ের রং ছিল ফর্সা এবং সে ছিপছিপে ও দোহারা গড়নের ছিল। মাঝে মাঝেই সে তপুর সাথে দেখা করতে আসত। এ বিষয়টিকে বোঝাতেই প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।
৭. ‘স্বপ্নালু চোখে স্বপ্ন নামতো তার’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে তপুর স্বপ্নালু মানসিকতার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।
গল্পকথক, রাহাত ও তপু—এরা তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। তাদের তিনজনই মেডিকেল কলেজের ছাত্র। এর মধ্যে তপু ছিল অত্যন্ত মুখর ও স্বপ্নবান একজন তরুণ। মাঝে মাঝেই নিজেকে নিয়ে সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখত সে। এরই অংশ হিসেবে কখনো সে ডাক্তারি শেষ করার পর গ্রামে যাওয়ার স্বপ্ন দেখত। আবার কখনো বন্ধুদের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে পথ যদি শেষ না হয়—সেই স্বপ্ন দেখত সে। প্রশ্নোক্ত কথাটির মাধ্যমে তার এমন মানসিকতাই ফুটে উঠেছে।
৮. ‘তপুকে ফিরে পাব, এ কথা ভুলেও ভাবিনি কোনো দিন’—কথাটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: মৃত্যুর কয়েক বছর পরে অপ্রত্যাশিতভাবে তপুর কঙ্কাল পাওয়াকে ইঙ্গিত করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।
তপু ছিল গল্পকথকদের রুমমেট। তাছাড়া সে তাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠও ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে ভাষা-আন্দোলনের মিছিলে গেলে কপালে গুলি লেগে তপুর মৃত্যু হয়। সেদিনের সেই দুঃখজনক ঘটনার পর কেটে গেছে প্রায় চার বছর। কিন্তু এত বছর কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ করে একটি কঙ্কাল আসে তাদের হাতে। কপালের গর্তসহ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে তারা নিশ্চিত হয় যে, এটি তপুরই কঙ্কাল। এত বছর পর অকস্মাৎ তপুর দেহাবশেষ হাতে আসার এ বিষয়টিকে ইঙ্গিত করেই গল্পকথক প্রশ্নোক্ত কথাটির অবতারণা করেছেন।
৯. ‘শুধু ওর শূন্য বিছানার দিকে তাকিয়ে মনটা ব্যথায় ভরে উঠত।’—কেন? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: তপুর শূন্য বিছানা তার অনুপস্থিতির জানান দিত বলে সেদিকে তাকিয়ে গল্পকথকদের মন ব্যথাতুর হয়ে উঠত।
গল্পকথকদের রুমমেট ছিল তপু। গল্পকথক ও রাহাতের সাথে সে-ও ভাষা-আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেয়। একপর্যায়ে সেই মিছিলে পুলিশ গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তপু মারা যায়। কিন্তু তপু ছিল গল্পকথকদের অনেক কাছের। গল্পকথকরা তাই কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছিল না। তপুর শূন্য বিছানা তার অনুপস্থিতির কথা জানান দিত আর তাতে গল্পকথকদের মন বিষাদে ভরে উঠত। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এ কথাই বোঝানো হয়েছে।
১০. ‘চেনার কোনো উপায় থাকলে তো চিনবে।’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: তপুর দেহাবশেষকে ইঙ্গিত করে প্রশ্নোক্ত উক্তিটির অবতারণা করা হয়েছে।
গল্পকথকদের রুমমেট ছিল তপু। সে ছিল মুখর প্রকৃতির এবং মিশুক স্বভাবের। স্বাভাবিকভাবেই গল্পকথকদের সাথে তার সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। বছর চারেক পূর্বে ভাষা-আন্দোলনের মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তপুর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর এত বছর পর গল্পকথকদের হাতে তার কঙ্কালটি আসে। সংগত কারণেই কঙ্কাল দেখে তপুকে তাদের চেনার কথা নয়। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।
আরও দেখো— নবম দশম শ্রেণির বাংলা সকল গল্প-কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর
শিক্ষার্থীরা, উপরে তোমাদের বাংলা মূল বই থেকে একুশের গল্প অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এ প্রশ্নগুলো খুব ভালোভাবে অনুশীলন করার পরামর্শ থাকবে। পিডিএফ ফরমেটে উত্তরমালা সংগ্রহের জন্য ‘Answer Sheet’ অপশনে ক্লিক করো।
Discussion about this post